21/09/2025
কালীয়নাগ দমন ভগবান শ্রীকৃষ্ণের বৃন্দাবন লীলার একটি ঘটনা । কালীয় নাগ ভগবান বিষ্ণুর বাহন খগরাজ গড়ুর দেবের ভয়ে বৃন্দাবনে যমুনার সংলগ্ন একটি হ্রদে আশ্রয় নিয়েছিলেন। সেই কালীয় নাগের বিষ এত তীব্র ছিলো যে তার প্রভাবে যমুনার জল টগবগ করে ফুটতো। সেই বিষের প্রভাবে আশেপাশে গাছপালা , পশু মারা যেতে লাগলো। কোন পক্ষী যমুনার ওপর দিয়ে উড়ে গেলেও বিষের প্রভাবে মারা যেতো। গোপেদের খেলাধূলা বন্ধ হল। কেও যমুনার ধারে খেলতে যেতো না। যশোদা দেবী, নন্দ রাজা - কানাই বলাইকে সাবধান করলেন যেনো যমুনার তীরে না যায় । কিন্তু ভগবান আসেন দুষ্টের দমনের জন্য । কালিয়নাগকে উচিৎ শিক্ষা দিতে একদিন ভগবান শ্রীকৃষ্ণ খেলাচ্ছলে যমুনার তীরে অবস্থিত এক কদম গাছ থেকে মল্লযুদ্ধের যোদ্ধার ন্যায় যমুনায় ঝাঁপ দিলেন। এই দৃশ্য দেখে গোপ সখারা নন্দ, যশোদা দেবীকে ডেকে আনলেন। যশোদা দেবী এই ঘটনা শুনে প্রথমে ভয়ে কালীয় হ্রদে ঝাঁপ দিতে উদ্যত হলে অনান্য গোপীরা তাঁহাকে ধরলেন। বিলাপ করতে করতে যশোদা মাতা মূর্ছা গেলেন । সকলে হা হুতাশ করে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ নিহত হয়েছেন ভেবে বিলাপ করতে লাগলেন ।
কিন্তু ভগবান পৌঁছে গেলেন একেবারে হ্রদের তলায়। সেখানে কালীয় নাগ তখন শয়ন করছিলেন । কালীয় নাগের স্ত্রীগণ , ভগবানকে দেখে অনুরোধ জানালেন- “বালক সত্বর এখান হইতে প্রস্থান করো। কালীয় জেগে গেলে সে তোমায় হত্যা করবে।” কিন্তু ভগবান শ্রীকৃষ্ণ কালীয়কে বিতরণ না করে যাবেন কি ভাবে! এই সময় কালীয় জেগে এসে সেখানে ভগবানকে দেখে আক্রমণ করে বসলো। প্রথমে কালীয় তার বিশাল শরীর দিয়ে ভগবানকে পেঁচিয়ে দম বদ্ধ করে দিতে চাইলো। কিন্তু ভগবান শ্রীকৃষ্ণ , তাঁর শরীর কে এত বৃদ্ধি করলেন যে কালীয়ের মনে হল তার সমস্ত শরীর বুঝি ছিঁড়ে যায় । কালীয় বাঁধন উন্মোচন করে ক্রোধে নিঃশ্বাস ফেলেতে লাগলেন। ফণা গুলি দিয়ে অগ্নির ন্যায় বিষ বহির্গত হতে লাগলো। কালীয় সমানে ভগবানকে দংশন করতে গিয়ে বিফল হল। ভগবান শ্রীকৃষ্ণ মুষ্টিপ্রহারে কালীয়কে শক্তিহীন করে দিতে লাগলেন । ভগবান শ্রীকৃষ্ণ লম্ফ দিয়ে কালীয়ের মস্তকে উঠে নৃত্য করতে লাগলেন। ভগবানের নৃত্যের তালে তালে কালীয়ের মস্তক যেনো চূর্ণ হতে লাগলো। কালীয় বিষ বমন করতে লাগলো। এভাবে কালীয়র মস্তকে নৃত্য করতে করতে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ জলের তল থেকে উঠে আসলেন । গোপ- গোপী, দেবতা, গন্ধর্ব, যক্ষ আদি প্রমুখেরা ভগবানের নামে জয় ধ্বনি করলেন ।
স্বামীর মৃত্যু আসন্ন দেখে কালীয়ের পত্নীগণ বুঝলো এই বালক সাধারণ কেও নন। উনি ভগবান। নাগ পত্নীরা অনেক স্তবস্তুতি করতে লাগলেন ভগবান শ্রীকৃষ্ণকে । কালীয় নিজেও অনুতপ্ত হয়ে ভগবান শ্রীকৃষ্ণের চরণে বারবার ক্ষমা চাইলেন। নাগ পত্নীরা দিব্যবস্ত্র, পুস্পমালা, মণি, রত্ন, দিব্যগন্ধ, অনুলেপন, পদ্মামালা দ্বারা ভগবান শ্রীকৃষ্ণের চরণ পূজা করলেন। ভগবান শ্রীকৃষ্ণ ভক্তের প্রার্থনায় তুষ্ট হয়ে কালীয়কে ক্ষমা করলেন। কালীয়কে আদেশ দিলেন যমুনা ছেড়ে চলে যেতে। কালীয় জানালো – সে গড়ুর দেবের ভয়ে এখানে আশ্রয় নিয়েছে। কারণ ভগবান বিষ্ণুর বাহন গরুড় দেব সর্প আহার করেন। ভগবান শ্রীকৃষ্ণ অভয় দিয়ে জানালেন- কালীয়ের নাগের মস্তকে ভগবানের চরণের যে চিহ্ন পড়েছে, তা দেখে গরুর দেব আর তাকে আক্রমণ করবে না। এরপর ভগবান শ্রীকৃষ্ণ , কালীয়কে আদেশ দিলেন রমণক দ্বীপে পরিবার নিয়ে চলে যেতে। কালীয় নাগ , ভগবানের আদেশ মেনে যমুনা ছেড়ে চলে গেলেন । এখনও কিছু জায়গায় কালীয়ের মস্তকে ভগবান শ্রীকৃষ্ণের নৃত্যরত বিগ্রহ পূজিত হয় ।
( শ্রীমদ্ভাগবত )
゚viralシfypシ゚ #শ্রীমদ্ভাগবত