02/12/2025
হিটলার বলেছিলেন, মানুষকে এতটাই বিপদের মধ্যে রাখো যে বেঁচে থাকাটাই তার কাছে উন্নয়ন বলে মালুম হয়! দুনিয়াজুড়ে শাসকের একটাই বক্তব্য ! বিনা পয়সায় যখন চাল দিচ্ছি, তখন প্রাণের উপরও আমার ষোলোআনা অধিকার। ব্যাপারটা এমন, আহার দিয়েছেন যখন মুণ্ডুর উপরও তাঁরই দখলদারি! শুধু ভোটাররা নন, বেচারা বিএলওরাও এই জাঁতাকলে পড়ে এখন কুল রাখেন না শ্যাম! কাজে ফাঁকি দিলেই চাকরি থেকে সাসপেন্ড। আবার রাতবিরেতের নানা আবদার অজুহাতের নিশিডাকা ফোনে তাঁদের রক্তচাপ, বুকের কোণে দমকা ব্যথা চাগাড় দেওয়া খুব অসম্ভব নয়। বহুদলীয় গণতন্ত্রের ফসকা গেরোয় কেউ হাসপাতালে, কেউ অন্তিম শয্যায়। যে যায়, সে যায়। স্বজনহারা পরিবারের খোঁজ কে রাখে? সবাই ছুটছে ক্ষমতা দখলের নেশায় মত্ত হয়ে। নিরীহ বিএলওদের প্রাণ যাচ্ছে। এ জগতে সাধারণেরই শুধু কোনও রক্ষাকবচ নেই, তাঁরা যুগে যুগে বিপন্ন। এর মধ্যেও যদি আপনার শ্বাস চলে, সেটাই তো কেন্দ্রের উন্নয়ন। মোদিজি মেহেরবান! এমপি এমএলএদের সুযোগ সুবিধা বৃদ্ধির বিল পাশ হয় চোখের পলক পড়ারও আগে! যে কোনও নির্বাচিত সরকারের একটাই লক্ষ্য, নানা অজুহাতে মানুষকে জীবন সংগ্রামে ব্যস্ত রেখে বেকারত্ব, দুর্নীতি, মূল্যবৃদ্ধি এবং নোট বাতিলের নামে প্রতিশ্রুতিভঙ্গের আখ্যানের উপর পর্দা টেনে ধরা। মন্দির মসজিদ নিয়ে হানাহানি, মানুষে মানুষে বিভাজন, শিক্ষা, স্বাস্থ্য সহ আরও দু’শো কুনাট্য থেকে দৃষ্টিটা ঘুরিয়ে ভোটার তালিকায় শুধু নামটা বাঁচিয়ে রাখার আড়ালে যে নাটকটা মঞ্চস্থ হচ্ছে তারসঙ্গে রুটিরুজির যোগ নেই, নেই জীবনধারণের কোনও সমস্যা সমাধানের চেষ্টাও। এই গোটা প্রক্রিয়াটাই তাই অবাধ্য জনগণকে সবক শেখানোর আয়োজন না তো! নামটা বাদ গেলেই আপনি অনুপ্রবেশকারী। দলবদলু নেতা থেকে দেশের মহামান্য স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর খাতায় স্রেফ ঘুসপেটিয়া! পরিণতি? যোগীজি উত্তরপ্রদেশে ডিটেনশন ক্যাম্প রেডি করতে বলেছেন। অযোধ্যার মন্দিরের মাথায় গেরুয়া পতাকা শোভা পাচ্ছে। হিন্দুরাষ্ট্রের অভিযাত্রা শুরু হয়ে গিয়েছে। যোগীজির আর তর সইছে না। এনকাউন্টারেও যাদের এখনও খতম করা যায়নি, তাদের চালান করো ক্যাম্পে। উত্তরপ্রদেশে পরের বিধানসভা ভোট ২০২৭ সালে। বিরোধী নিকেশের তাই এত বিরাট আয়োজন। পিছিয়ে নেই গুজরাত ও মধ্যপ্রদেশও, সেখানে নির্বাচন আগামী ২০২৮ সালে। সবমিলিয়ে ভোটের আগেই একটা চাপা আতঙ্ক চেপে বসেছে নির্বাচকদের মনে। জেলায় জেলায় ফর্ম জমা ও তা বিএলওরা ঠিকমতো আপলোড করছেন কি না, তা নিয়ে ব্যস্ততা তুঙ্গে। কোনও তথ্য বাদ গেল, ম্যাপিংয়ে ত্রুটি থাকলে সব ব্যাটাকে ছেড়ে দিয়ে বিএলও ব্যাটাকে ধর! বর্তমানে যখন সাইবার অপরাধ নিয়ে খোদ পুলিশই হিমশিম খাচ্ছে, তখন অন্য পেশার ৮১ হাজার বিএলও’র মোবাইল নম্বর গোটা পৃথিবীর সামনে প্রকাশ করে দেওয়ার অর্থ কী? কারও অনুমতি ছাড়া এই কাজ করা যায়? ওই ফোনের সংযোগ তো নির্বাচন কমিশন দেয়নি। তার রিচার্জও কমিশনের খরচে হয়নি। তাহলে এই তামাশা কেন? ইতিমধ্যেই বহু মহিলা বিএলওকে ফোনে হুমকি, ভয় দেখানো শুরু হয়ে গিয়েছে। বিএলও পিছু কেন্দ্রীয় বাহিনীর দু’জন করে জওয়ান দেওয়ার দাবি কি খুব অন্যায্য? যদি গেরুয়া শিবিরে যোগ দিলেই কোনও সরকারি পদ ছাড়া নিরাপত্তার বহর বেড়ে যায়, ওয়াই-জেড নিয়ে টানাপোড়েন শুরু হয়ে যায়, তাহলে বিএলওরা কী দোষ করল? আসলে কোনও রকম পরিকল্পনা না করেই গোটা কাজটায় হাত দেওয়া হয়েছে। তার ফলই ভুগতে হচ্ছে নিরীহ বিএলওদের। তাঁরা কেউ কমিশনের কর্মী নন। কেউ শিক্ষকতা করেন, কেউ আবার অন্য কাজ। গালভরা নির্বাচন কমিশনার কোথায়, তাঁর ফোন নম্বর তো কোথাও দেওয়া নেই! বাংলা সহ দেশের ১২ রাজ্যে এই বিএলওরাই কমিশনের মুখ। তাই আপাতত জ্ঞানেশ কুমারও নন, রাজ্যের সিইও নন, এই বিএলওদেরই পোয়াতে হচ্ছে ঝড়ঝাপটা। অথচ পুরোনো তালিকা মেনেই চব্বিশ সালে একের পর এক রাজ্যে জিতে তৃতীয়বার প্রধানমন্ত্রীর চেয়ারে বসেছেন নরেন্দ্র মোদি। পুরো ভোটার তালিকাটাই যদি ভুলে ভরা, তাহলে চব্বিশে মোদিজির ঐতিহাসিক জিতে আসাটাও কি সম্পূর্ণ বেআইনি ছিল?আরএসএসের অনুশাসন ভেঙে ৭৫ বছর পেরিয়েও তাঁর ক্ষমতায় থাকার এই যাত্রায় যে দু’টি লক্ষ্য পূরণ হতে বাকি, তারমধ্যে হিন্দুরাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার সঙ্গে অন্যতম অবশ্যই বঙ্গবিজয়। সর্বভারতীয় পরিসংখ্যান অনুযায়ী দেখা যাচ্ছে, কাজের চাপে-আতঙ্কে অসুস্থ হয়ে বিএলও মৃত্যুর সংখ্যা সর্বোচ্চ কিন্তু ডাবল ইঞ্জিন রাজ্যেই। সর্বশেষ হিসেব অনুযায়ী এই তালিকায় শীর্ষে মধ্যপ্রদেশ। তারপর যোগীরাজ্য উত্তরপ্রদেশ এবং মোদিরাজ্য গুজরাত। কিন্তু ডাবল ইঞ্জিন রাজ্যে ভোট শিয়রে নয়। সেখানে রাজনৈতিক দলগুলি এক বছর সময় পাবে গুছিয়ে নিতে। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গের তৃণমূল সেই সময়টুকু পাবে না। পশ্চিমবঙ্গকে দখল করার শেষ চেষ্টা, বাংলায় বিজেপি সরকার নেই বলে, কেন্দ্রের টাকা বন্ধ, একশো দিনের কাজ তিন বছর প্রায় স্থগিত রাখার পর সুপ্রিম কোর্টের গুঁতোয় মন্ত্রী ফাইলে সই করেছেন বলে খবর। বাস্তবে কবে আবার টাকা প্রান্তিক মানুষের কাছে পৌঁছবে কেউ জানে না! সব দিক দিয়ে বাংলায় একটা সামাজিক অশান্তি এবং বিভ্রান্তি তৈরি করার আপ্রাণ চেষ্টা। ক্ষমতা দখলের দৌড়ে নেতাদের ঢং বদলায়, রং বদলায়। আর সাধারণ মানুষ হিমশিম খেতে খেতে তলিয়ে যায় অন্ধকারে!
news district district district m***a