10/07/2025
অভিমানের শেষ পত্র🥺
রোহিত তার স্ত্রী সোমাকে ভীষণ ভালোবাসতো। এমন ভালোবাসা খুব কম মানুষ দিতে পারে—নিঃস্বার্থ, নিরব, আর একেবারে নিজের অস্তিত্ব হারিয়ে ফেলার মতো ভালোবাসা। সোমা সকালে উঠে রাগ করে থাকলে, রোহিত ওর জন্য চা বানিয়ে টেবিলে রাখত। রাতে অফিস থেকে ফিরে পা ব্যথা করে বললে, রোহিত কোনো অভিযোগ না করেই ওর পা টিপে দিত। এমনকি মাঝে মাঝে কিছু না বললেও রোহিত বুঝে যেত—সোমার মন খারাপ।
তবে এসবের মধ্যেও রোহিত টের পেত, ওদের সম্পর্কের কোথাও একটা শূন্যতা আছে। সোমা যেন রোহিতের পাশে থেকেও তার থেকে অনেক দূরে। হাসে, কথা বলে, একসাথে সময় কাটায়, কিন্তু মনের দরজাটা রোহিতের জন্য বন্ধই রাখে।
রোহিত মাঝে মাঝে গভীর রাতে চুপচাপ শুয়ে থাকত, পাশ ফিরেও তাকাত না। অথচ জানত, তার স্ত্রী মোবাইলে কারো সাথে কথা বলছে। একদিন হঠাৎ করেই সে দেখে ফেলেছিল সেই নাম—অর্ণব। বুঝতে বাকি ছিল না, এ সেই মানুষ, যাকে সোমা এখনও ভুলতে পারেনি, যাকে হয়তো সে আজও ভালোবাসে।
সোমা রোহিতের প্রতি যতটা নিরাসক্ত, অর্ণবের স্মৃতিতে ঠিক ততটাই আবিষ্ট। তিন বছর আগে অর্ণবের সাথে তার গভীর প্রেম ছিল। কিন্তু নানা কারণে সেই সম্পর্ক টিকে থাকেনি। সংসারের তাগিদে সে রোহিতকে বিয়ে করেছিল—একজন ভদ্র, স্নেহশীল, ভরসাযোগ্য পুরুষ। কিন্তু ভালোবাসা কি শুধু দায়িত্বে পূর্ণ হয়?
রোহিত কখনো এসব নিয়ে ঝগড়া করেনি, প্রশ্ন করেনি। শুধু মাঝে মাঝে সোমার দিকে তাকিয়ে মনে মনে বলত,
“একটু ভালোবাসা দাও সোমা, শুধু একটুখানি... আমার এতটুকুই প্রয়োজন।”
দিন গেল, রাত গেল, কিন্তু সোমার আচরণ বদলাল না। বরং আরও দূরে সরে যেতে থাকল সে। রোহিত বুঝল, তার অস্তিত্ব এই সংসারে শুধুই একটা অভ্যাস হয়ে গেছে।
একদিন সোমা বাজারে গিয়েছিল, ফিরে এসে দেখে ঘরের দরজা ভেজানো। ডাইনিং টেবিলের উপর রাখা একটা চিঠি, পাশে কিছু ওষুধের খালি পাতা। রোহিতের কোনো সাড়া নেই। হাঁকডাক করে যখন কোনো উত্তর পেল না, তখন ভেতরে গিয়ে দেখে বিছানায় পড়ে আছে রোহিতের নিথর দেহ।
সোমা ভেঙে পড়ে। চিৎকার করে কাঁদতে কাঁদতে চিঠিটা হাতে নেয়।
তাতে লেখা—
**“সোমা,
তোমাকে দোষ দিই না কখনও। হয়তো তুমি আজও অর্ণবকে ভালোবাসো। আমি জানি, তোমার মনে আমি কোনোদিন জায়গা করে নিতে পারিনি।
তবুও আমি চেষ্টা করেছি… তোমার পায়ের ব্যথা হোক কিংবা মনের, আমি সারিয়ে তুলতে চেয়েছি।
কিন্তু ক্লান্ত হয়ে গেছি সোমা। তুমি আমায় ভালোবেসে না, সেটা মেনে নিয়েও অনেকদিন বাঁচার চেষ্টা করেছি।
তবু আজ মনে হচ্ছে, এই অসম লড়াই থেকে নিজেকে মুক্তি দিই।
তোমার কাছে আমার শেষ অনুরোধ—তুমি সুখী হও, যেভাবেই হও।
তোমার,
রোহিত”**
চিঠির শেষ লাইনটা পড়েই ছিঁড়ে পড়ে যায় সোমার হৃদয়।
সে মনে করতে থাকে—রোহিতের মুখ, তার হাসি, তার নরম হাতের স্পর্শ, তার নিঃশব্দ ভালোবাসা।
সে যেন এক মুহূর্তে বুঝতে পারে, জীবনে কী হারিয়ে ফেলেছে।
সে ভাবে—রোহিত তো কোনোদিন কিছু চায়নি। শুধু একটু ভালোবাসা চেয়েছিল, একটু সঙ্গ, একটু দৃষ্টি। অথচ সে কী নির্মমভাবে সেই ভালোবাসাকে উপেক্ষা করেছে!
রোহিতের সৎকারের দিন, সোমা সাদা শাড়িতে চোখ ঝাপসা করে বসে থাকে শ্মশানে। তার হাতে ধরা রোহিতের শেষ চিঠি। চারপাশে ধোঁয়া, আগুন আর কান্নার গন্ধ।
মনের ভেতর একটা কবিতা বেজে ওঠে, নিজের অজান্তেই—
> “যে ভালোবাসা নিঃশব্দে সব দেয়,
তার কান্না কেউ শোনে না।😭
আমি হেরে গেছি রোহিত,
তুই জিতে গেছিস…
আমার সমস্ত অনুতাপ আর অভিমানে।”