29/10/2023
∆∆ শুধু কবিতার জন্যে ∆∆
১) উতল হাওয়া
ড. দেবীপ্রসাদ মজুমদার
উতল হাওয়া নামলো যখন
তখন তুমিই ছিলে আমার ঘরে
হাওয়া বসলো ঘুরে ঘুরে দ্যাখে
যেখানে যত বিস্তৃত আকাশ ।
হাওয়া বলল, আকাশ ধরবো একদিন ঠিক
ছুঁয়ে যাবো জেনো, আর
সেদিনটা কাছে আসবে, আর তুমি সময়ের
মুঠোয় ধরা দিয়ো না ।
হাওয়ার দেশে এখন বসন্ত
রঙিন ফুলের সম্ভারে সেজেছে মাঠ
মাঠের দিগন্তে ভেসে যাচ্ছে গোপন ছায়া
ওরা মাতাল হতে পারেনি বরং নিরীহ
আবেগে আকণ্ঠ নিমজ্জিত স্বপ্নমেদুরতায়।
হাওয়া সাহসী হলো, আর নির্মাল্য এলে
আকাশের গলে পরালো ছিন্ন মালা
অহংকার প্রকট হলে পর আবার ছুটলো তার রথ
আর সেই রথে সেজেগুজে বসে
পায়ে দোল দিচ্ছে এক খন্ড মেঘ
উৎফুল্ল দেখি তাকে, আর
চিহ্নিত সীমায় ধরতে চেয়ে একগুচ্ছ শিউলি
এনে দরজায় রেখে স্থির পায়ে বের হলাম ।
নূপুরের মধ্যে বাজে ক্ষণিকের সুর
এই সুর গোপন খেলায় মেতেছে যখন
তখন হওয়া এসে বন্ধ করে দেয়
দরজা জানলা প্রকোষ্ঠ সব ।
ধীরে হাঁটে সময় সারথি
প্রদক্ষিণ করে খিড়কি থেকে সদর
তারপর একমুঠো সকাল হাতের মধ্যে রেখে
উদাস হয়ে বসে রইলো ।
২) পুজোর নতুন আশায়
অনিন্দিতা দে
শরতের রোদ আর শিউলির ফুলে,
আনন্দের জোয়ার আনে হৃদয়ের কুলে।
বাতাসে বয়ে যায় খুশির আমেজ,
মনে হয় জীবনটা যেন ফ্রী ফ্রম বন্ডেজ।
ভুলিয়ে সব দু:খ কষ্টের দিন
মানুষ হয়েছে সব ভেদাভেদহীন।
"মা আসার " রব আমাদের কানে
এই চারটি দিন প্রত্যেক বাঙালির ই হৃদয় টানে।
হঠাৎ করেই শুরু হল থিমের পুজো,
অনেকেই যা মেনে নিতে পারেনি আজও।
লক্ষ লক্ষ টাকা খরচ হচ্ছে এখন,
সে টাকা অসহায়ের দরকার যখন।
পুরস্কারই হয়ে উঠেছে পুজোর প্রধান লক্ষ্য,
এ শুধু সসম্মানিত নয় পুজো নিয়ে কটাক্ষ।
মন্ডপে দেখা যাচ্ছে আফ্রিকা বা রোম,
প্রতিমা তৈরীতে প্রধান দ্রব্য হয়ে উঠেছে মোম।
কিন্তু একদিন সেই পুরনো দিনে ফিরে যেতেই হবে-
অপেক্ষা করছি বসে,জানিনা
সে দিন আসবে ফিরে কবে।
৩) দুটি অনু কবিতা
সৃজন পোড়েল
অ) নীল আকাশের কালো মেঘ দেখতে লাগে ভালো
হঠাৎ করে জীবনে অন্ধকার নেমে এলো।
মনের মাঝে একটা প্রদীপ জ্বালছে আলো রোজ
শত মানুষের মাঝে একটা মানুষ নেয় প্রতি দিন খোঁজ
আশা জাগায় রোজ
কাটবে অন্ধকার ফুটবে আলো
মনের ঘরের দরজা খোলো
জীবন হবে রামধনু নেয়
সাথে থেকো তুমি
নতুন দিন করবো শুরু শপথ করছি আমি
থেকো তুমি আমার পাশে হাতটি ধরে রেখো
হঠাত করে হোঁচট খেলে সামলে তুমি নিয়ো
আ) ভোরের বাতাসে শিউলি দোলে গন্ধে মাতে ভুবন ।
মাতাল হওয়ায় দুলছে কাশ ফুলেদের রাশি ।
মায়ের মুখে ফুটলো হাসি মা দেবে মর্তে পারি
ঢাকে পরলো কাটি বেজে উঠলো আগমনীর সুর মা আসছে তাড়াতাড়ি ।
উজ্জ্বল হলো বাতি
দিন গুনছে পৃথিবী বাসি ।
৪) ইচ্ছে ডানা
অর্ধেন্দু পাল
অনেকেই মনে করে যদি পাখি হতাম,
খোলা আকাশে উড়ে বেড়াতাম
যেদিকে মন চায়।
আমার মনে হয় যদি আকাশ হতাম!
এই রং বেরঙের পাখিগুলোকে,
উড়তে দিতাম, আমার বক্ষ মাঝে।
বুকের মাঝে জড়িয়ে ধরে,
কত যে আদর দিতাম।
আবার অনেকে ভাবে যদি মাছ হওয়া যেত,
গভীর জলে ঘুরে ফিরে কত স্বপ্ন বোনা যেত।
আমার ইচ্ছে করে ওই গভীর জল হতে!
মাছগুলো সেই গভীর জলে রেখে আসতো অনেক গোপন কথা,
আমি সেই সবকিছুর সাক্ষী হয়ে থাকতাম,
আর সেই সব গোপনীয়তা আগলে রেখে দিতাম।
স্বপ্ন দেখে অনেকে নদী হওয়ার,
এঁকেবেঁকে পথ চলা কত দেশ কত মহাদেশ পার করা।
আমি ভাবি যদি নদীর দুপাশের পার হতাম !
ভাঙা গড়া উঁচু নিচু সামলে ,
নদীর চলন পথ করে দিতে পারতাম।
বসন্তের স্বপ্ন দেখে সবাই ।
তবে আমি ওই বসন্তের ফাগ হতে চাই,
যে ফাগের স্পর্শে রাইয়ের লাজুক লাজুক মুখ ,
যে ফাগের গন্ধে রাই কিশোরীর প্রেমের সাগরে ডুব।
৫) মনেপড়ে
রাজীব মল্লিক
এখন যখন দুপুর বেলা
একলা থাকি ঘরে ,
ছোটো বেলার দিন গুলো
বড্ড মনে পড়ে।
অপলক দৃষ্টিতে
খোলা জানালায় ,
মনে পড়ে বন্ধুদের
ডাকতো ইশারায় ।
চুপি চুপি বলতো ওরা
এখনো বসে ঘরে !
বিকেল তো হয়ে এলো
খেলতে যাবিনা রে !
সে দিনের বন্ধু গুলো
আজ হারিয়ে গেছে ,
ঝাপসা হয়নি ওদের মুখ
আজ ও মনে আছে।
সময় গুলো পেরিয়ে এলাম
কাজের ব্যস্ততায় ,
কতো দুপুর পেরিয়ে যায়
ঘড়ির কাঁটায় !
এখন যখন দুপুর বেলা
একলা থাকি ঘরে ,
কেউ ডাকেনা আগের মতো
খেলতে যাবিনা রে !
দুপুর শেষে বিকেল হয়
নামে সাঁঝবেলা ,
চেনা মুখ হারিয়ে গেছে
এখন আমি একলা ।
৬) পূজো মানে
অনুশ্রী রায়
শরৎকালের আকাশ জুড়ে,
তুলোর মতো মেঘ।
পূজো মানে শৈশবের
অনেক আবেগ।
মা আসছেন আনন্দে তাই
রোজ রোজ দিন গোনা।
আসছে পূজো শুরু হবে,
নতুন জামা কেনা।
বাচ্চা বুড়ো সবাই মিলে,
অনেক ঠাকুর দেখা।
নর্থে যাবো সাউথ এ যাবো
অনেক মজা করা।
দিনের শেষে ক্লান্ত হয়ে,
নিজের ঘরে ফেরা।
চারটে দিনের হুটোপুটি,
আর হরেক রকম খাবার,
মা দুগ্গা চলে গেলে ,
মুখগুলো সব বেজার।
আসছে বছর আবার হবে,
আনন্দের এই মেলা।
ছুটির দিন গুলো সব শেষ,
এবার পড়তে বসার পালা।।
৭) শরৎ ও শারদীয়া
রাজীব মল্লিক
শরৎ হাজির বর্ষা শেষে ,
শুভ্র মেঘ নীলাকাশে ।
শিউলির ঘ্রান ভোরের বাতাসে ,
ঝরে আছে সবুজ ঘাসে।
মাঠ ভরা কাশফুল হিমেল বাতাসে দোলে,
দীঘি ভরা শতদল আছে পাপড়ি মেলে।
শরতের নীলাকাশে ঝল মলে রোদ্দুর,
আকাশে বাতাসে বেজে উঠেছে আগমনীর সুর।
শারদীয়ার প্রস্তুতি পুজো পুজো রব,
পুজোর আনন্দে মাতোয়ারা সব।
দিকে দিকে উঠবে বেজে ঢাক কাঁসর,
শরতে শারদীয়া পুজোর আসর।
৮) রোমন্থন
অনসূয়া চন্দ্র
(ক্যালিফোর্নিয়া)
একটা সকাল স্বপ্নের মত ঝাপসা
ধূসর মেঘের ডানা ঝাপটে
খড়কুটো তার জোটেনা।
একটা বিকেল কাদা মাখামাখি
ক্ষত স্থান অনেক গভীর
মাটির প্রলেপ,কাজ দেবে কি?
একটা রাত,আকাশনীলে কালো
দানা দানা সব মরীচিকাময় আলো।
এ সময়টা একটু যেন অন্য
নিস্তব্ধতা ,শিশিরের কাছে ঘেঁষে
গল্প জোড়ে আলগা নরম বাতাসে।
চোখ খুলে গেলে হঠাৎ ভোরাকাশে
বাইরে এস, বসো নিজের কাছে।
কড়িবরগা বেয়ে যে চিলতে আলো
এই তো ছিল হঠাৎ ফুরিয়ে গেল!
শ্যাওলা ধরা ছাত পাঁচিলের গল্প
দস্যি দুপুর বেঁধেছিল অল্পস্বল্প।
পাতাগুলো তার হলদে আজ
বইটা বুকের মাঝে
নতুন নতুন সকাল আসুক
বেঁচে নিই পুরনো আঁচে।
৯) ভালোবাসার ঠিকানা
শঙ্কর কুমার রায়
আকাশে যখন ঝমঝমিয়ে বৃষ্টি নামে
মধুর ধ্বনি বাজে কানে
বাতাস ভরে সোদা ঘ্রাণে ,
মনে কি তোমার
কোন খুশিই জাগে না ?
জাগে যদি প্রেমিক তুমি,
আছে তোমার হৃদয় মাঝে
ভালোবাসার ঠিকানা।
মেঘলা দিনে আকাশে যখন
রামধনুতে রং ছড়ায় ,
দেখেও তা কি
মন কি তোমার
খুশির দোলায় দোলে না?
দোলে যদি প্রেমিক তুমি,
আছে তোমার হৃদয় মাঝে
ভালোবাসার ঠিকানা ।
বসন্তে সবুজ বনে
কোকিল ডাকে কুহু তানে,
মুগ্ধ হয়ে তাহার গানে
মন কি তোমার উদাস হয়ে
সঙ্গ কারও খোঁজে না?
খোঁজে যদি প্রেমিক তুমি,
আছে তোমার হৃদয় মাঝে
ভালোবাসার ঠিকানা।
ফুলের বনে মৌমাছিরা
গুনগুনিয়ে আপন মনে
মত্ত যখন মধু পানে,
দেখে তোমার মন ভোমরা
খুশির তুফান তোলেনা?
তোলে যদি প্রেমিক তুমি,
আছে তোমার হৃদয় মাঝে
ভালোবাসার ঠিকানা।
মেঘ দেখে বর্ষাকালে
ময়ূর যখন পেখম তুলে
নাচে মনের খুশিতে,
দেখে তোমার মন-ময়ূরী
নেচে কিগো ওঠে না?
নাচে যদি প্রেমিক তুমি ,
আছে তোমার হৃদয় মাঝে
ভালোবাসার ঠিকানা।
১০) আবছা স্মৃতি
সঞ্জয় সাধুখাঁ
যদি কাল খুব মেঘ করে আসে,
বৃষ্টি নামে মনের জানলা জুড়ে
বলো আসবে না আমার ডাকে?
মনে কি পড়ে এই দিনটায় বছরখানেক আগে
হাতে হাত দিয়ে হেঁটেছিলাম কলেজ স্ট্রিটের রাস্তা ধরে
কত হাসিমাখা কবিতা আর লুকোনো গল্পের আনাগোনা..
উপহার, হ্যাং-ওভার সব মিলেমিশে আজ একাকার স্মৃতির কোণে
সত্যি করে বলো তো
যদি কাল খুব মেঘ করে আসে,
বৃষ্টি নামে মনের জানলা জুড়ে
বলো আসবে না আমার ডাকে?
তুমি আমি আমাদের পৃথিবী
ছোট্ট ঘর আদরমাখা সংসার
আমি বুঝেছি ভুল তাই ফিরিনি সেই ঠিকানায়
যন্ত্রণা নিয়ে হাতড়ে খুঁজেছি শুধু তোমায়
হ্যাঁ আমি বুঝেছি এখন আমায় ঘৃণা করো
ক্ষমা চাইতে চাইতে তাই আমি আজ ব্যর্থ
বারবার কথা দিয়েও রাখতে পারিনি তাই
এগিয়ে গেছি আজ মৃত্যুর দিকে
আধো আলো ঝড় মাখা কাব্যে ভালোবাসা আজ মৃত
প্রকৃতি জানে কত ভালোবাসা দিয়েছি তাকে
প্রমাণ চাইনা, থাক পড়ে দলিলের ব্যাগে
স্টেথোস্কোপ চালিয়ে দেখো আমার বুকে,
কত দুঃখ জমে আছে বাক্সবন্দী ফুসফুসে...
ঝড় আসে আর উড়ে যায় ভালোবাসা,
জানালার ধারে পোড়া গন্ধ পেয়ে।
১১) সুমিতা দাস
তাপস জানা
আজি সেই বসন্ত বিকেল, কেটে গেছে বিরহের কতো
গুলো বছর, কতগুলো মাস। স্মৃতি জুড়ে রয়ে গেছো তুমি, সুমিতা দাস। আজ আর নেই কোনো ভয়, নেই কোনো অবসাদ । মনের আকাশ জুড়ে কালবৈশখী করে গেছে কতো আর্তনাদ। এ মহাজীবনের পথে, তুমি আজ কতোটা সফল ?
প্রেম আজ অসহায়, তবু তা মানুষের জীবনের শেষ অবলম্বন । একদিন ঠিকই চলে যাবো আমি ।
রবে নীরবে দাঁড়িয়ে, যেমন আছো তুমি !
আমি তোমার থেকে নিয়েছি মিতার মাধুর্য্য, আছে
তোমার পাশে ' সু ' , তব সংসার সাজাতে ! চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ুক তোমার সৌন্দর্য্য ।
একাকী হৃদয় মাঝে বিরাজিবে তব মাধুর্য্য ।
হায় ! এযে একান্তই আমার, নেই এতে করুর অধিকার। এখানেই জিতে যাবে প্রেম , ভালোবাসা করে অঙ্গীকার ।
১২) ছদ্ম প্রেমীক:
সৌম্য সরকার
শেষ বর্ষার ছন্নছাড়া মেঘের
ভেতর থেকে দুরন্ত চাঁদ এসে
রাশিচক্রের ঘর বদলের
মতো , এক জন থেকে অন্যের
মনে স্রোত আর বিরহের
ছবি এঁকে যায়;
সেই চাঁদই কোনো
এক পূর্ণিমায় দেখা দেয়
আমাকে, পাশের ব্যালকনি থেকে;
কফি খেতে খেতে সদ্য পড়া
রোম্যান্স নভেলের গল্প বলি তাকে।
কথা বলা দুই চোখ, শিকারী হাঁসি
তাবড় খাঁজ আর ভাঁজ তার শরীরের
দিয়ে যায় উস্কানি!
মহাভারতের মহাপ্রস্থান পর্ব,
রেড ফ্ল্যাগ দেখায়!
সামলে নিই নিজেকে,
কখনো ভান করি
নেশা গ্রস্থের;
অভিনয় আমার পেশা নয়,
ধরা পড়ে যাই, তবু খুশি
হয় সে, প্রেমীক হতে পারিনি তার
ছদ্ম প্রেমীক হয়ে ধ্রুবক থেকে যাই
ধ্রুব তারারই মতো।
১৩) মন হারাতে চায়
শঙ্কর কুমার রায়
আকাশ ভরা সজল মেঘ
ঝরছে বারিধারা,
চারিদিকে ঘোর আঁধারে
দৃষ্টি হলো হারা ।
মন কেন আজ বাঁধনহারা
শ্রাবণ বরিষায় ;
কারো মনে মন কেন আজ
হারিয়ে যেতে চায়!
-----------------------