Akanta Apan

Akanta Apan "শীঘ্রই তোমার রব তোমাকে এতো বেশি দিবে যে তুমি খুশি হয়ে যাবে"! ~ সূরা দোহাঃ ৯৩ঃ৪

✨ বসিরহাট – এক ঐতিহ্যের শহর ✨বসিরহাট — উত্তর চব্বিশ পরগণার বুকে ইছামতী নদীর তীরে অবস্থিত এক সংস্কৃতির লীলাভূমি। এটি শুধু...
08/07/2025

✨ বসিরহাট – এক ঐতিহ্যের শহর ✨

বসিরহাট — উত্তর চব্বিশ পরগণার বুকে ইছামতী নদীর তীরে অবস্থিত এক সংস্কৃতির লীলাভূমি। এটি শুধু একটি শহর নয়, বরং ইতিহাস, ঐতিহ্য এবং মানুষের আন্তরিকতার এক অমূল্য নিদর্শন।

📅 ১৮৬৯ সালের ১লা এপ্রিল প্রতিষ্ঠিত বসিরহাট শহরটি পশ্চিমবঙ্গের অন্যতম প্রাচীন পৌর শহর। আজও এই শহর তার ঐতিহ্য, সংস্কৃতি ও সৌহার্দ্যের মাধ্যমে নতুন প্রজন্মকে আকৃষ্ট করে। বসিরহাট মহকুমার সদর দফতর হিসেবেও এর গুরুত্ব অপরিসীম।

🕌 বসিরহাট শাহী মসজিদ (স্থানীয়ভাবে ‘শালিক মসজিদ’ নামেও পরিচিত) এই শহরের একটি গর্বের স্থাপত্য। বসিরহাট টাউন স্কুলের কাছেই অবস্থিত এই ঐতিহাসিক মসজিদটি বাংলার অন্যতম প্রাচীন ইসলামিক স্থাপনা।
ধারণা করা হয়, এটি নির্মাণ করেছিলেন উলুগ মজলিসই আজম, ১৪৬৬ সালে ইউসুফ শাহের রাজত্বকালে। আবার অন্য মতে, ১৩০৫ সালে আলাউদ্দিন নামে এক ব্যক্তি এটি নির্মাণ করেন।

⏳ বয়সের বিচারে এটি বাংলার দ্বিতীয় প্রাচীনতম মসজিদ, হুগলির জাফর খাঁ গাজীর মসজিদের পরেই।
দুটি কারুকার্য খচিত পাথরের স্তম্ভের ওপর ছয় গম্বুজবিশিষ্ট এই মসজিদটির আয়তন ৩৬ ফুট × ২৪ ফুট — যা আজও প্রাচীন শৈলীর নিদর্শন বহন করে চলেছে।

📖 শহরের নামকরণ নিয়ে নানা মত থাকলেও, জনশ্রুতি অনুযায়ী “বসিরের হাট” থেকে এসেছে ‘বসিরহাট’ নামটি — একসময় যেখানে বসির নামে এক ব্যক্তির হাট বসত।

🍬 এখানকার মিষ্টির স্বাদ, মানুষের আন্তরিক আতিথেয়তা, আর প্রতিটি গলিতে গলিতে ছড়িয়ে থাকা স্মৃতিগাঁথা — সব মিলিয়ে বসিরহাট এক আবেগ, এক অনুভব।

🔹 এ শহর আমাদের গর্ব, আমাদের শিকড়
🔹 বসিরহাট মানেই হৃদয়ের টান ❤️
নিচে বসিরহাট মহকুমা সম্পর্কে সম্পূর্ণ ও স্বসংগঠিত বিবরণ তুলে ধরা হলো:

---

📍 ভৌগোলিক পরিচিতি

বসিরহাট মহকুমা উত্তর ২৪ পরগনা জেলার অন্তর্গত এবং গঙ্গেয় নিম্নাঞ্চলের Ichhamati–Raimangal সমতলের উপর অবস্থিত ।

মোট আয়তন প্রায় ১,৭৭৭.০২ বর্গকিলোমিটার ।

প্রধান নদী: ইছামতি, যা বাংলাদেশের সঙ্গে সীমানা গঠন করে ।

---

প্রশাসনিক কাঠামো

মহকুমায় ৩টি পৌরসভা: বসিরহাট, বাদুরিয়া ও তাকি ।

মোট ১০টি কমিউনিটি ডেভেলপমেন্ট ব্লক (C.D.Blocks):
Baduria, Haroa, Minakhan, Swarupnagar, Hasnabad, Hingalganj, Sandeshkhali-I, Sandeshkhali-II, Basirhat-I, Basirhat-II ।

---

জনসংখ্যা ও ঘনত্ব (২০১১)

বিভাগ জনসংখ্যা ঘনত্ব নগর গ্রাম পুরুষ/মহিলা অনুপাত

পুরো মহকুমা ২,২৭১,৮৮০ ~১,২৭৯/km² ~২৯৪,৪৩৬ বাকি পুরুষ ১,১৫৬,০০০ …

নগর লোকসংখ্যা ~১৩% ।

সেকেন্ডারি পঠন হার ~৭৪.১৫% ।

বিস্তারিত ব্লকভিত্তিক তথ্য

Basirhat I: জনসংখ্যা ১,৭১,৬১৩; ঘনত্ব ~১,৬২৫/km²; গ্রামে ১৫০,৫২০, নগরে ২১,০৯৩ জন ।

Basirhat II: জনসংখ্যা ২,২৬,১৩০; ঘনত্ব ~১,৬০৭/km²; নগর ১৭,২৯০, গ্রাম ২,০৮,৮৪০ জন ।

---

শহর ও মন্ত্রণালয়

বসিরহাট পৌরসভা: ২০১১-এ ১২৫,২৫৪ জন; লিঃ ৮৭.৩৫%; পুরুষ/মহিলা: ৯৮১:১০০০ ।

বাদুরিয়া ও টাকি – দুটি গুরুত্বপূর্ণ জেলা শহর (পৌরসভা)।

গোঝদাঙ্গা: মান লিস্ট পোর্ট, ভারতের বাণিজ্যে গুরুত্বপূর্ণ।

---

ইতিহাস ও সংস্কৃতি

বসল ১৮৬৯ সালে পৌরসভা হিসেবে ।

মিষ্টি “কাচা গোল্লা”–এর প্রায় ৪০০ বছরের ঐতিহ্য, GI ট্যাগ দাবি চলছে ।

তেবোঘা আন্দোলনসহ কৃষি–নির্ভর আন্দোলনের কেন্দ্র ছিল এই অঞ্চল ।

---

যোগাযোগ ও অবকাঠামো

রেলপথ: বসিরহাট স্টেশন (BSHT), Sealdah–Hasnabad লাইনের অংশ, ১৯৬২ স্থাপিত, ১৯৭২ বৈদ্যুতিকীকরণ ।

পথ যোগাযোগ: রাজ্য ও জাতীয় মহাসড়কের সংযোগ রয়েছে কলকাতা সহ আশেপাশের শহরে ।

ভবিষ্যৎ পরিকল্পনায় কলকাতা রিং রোডের পূর্বাংশ বসিরহাটের মধ্য দিয়ে যাবে ।

---

শিক্ষা ও প্রতিষ্ঠান

Basirhat College: প্রতিষ্ঠিত ১৯৪৭; ওয়েস্ট বেঙ্গল স্টেট ইউনিভার্সিটির অধীন ।

অন্যান্য কলেজ, বিদ্যালয় ও স্বাস্থ্য ও প্রশাসনিক কেন্দ্র রয়েছে মহকুমায়।

---

প্রস্তাবিত জেলা

পশ্চিমবঙ্গ সরকার গত কয়েক বছরে “বসিরহাট জেলা” প্রতিষ্ঠা করার প্রক্রিয়াধীন; ১০টি C.D.Block সহ দুই মহকুমা ভাগ হবে – থেকে মনাখানও একটি মহকুমা হিসেবে বিবেচিত হতে পারে ।

---

✅ সংক্ষেপে

বসিরহাট মহকুমা: উত্তর ২৪ পরগনার উত্তর-পূর্বাঞ্চলের বৃহৎ অঞ্চল, যেখানে নদী, জেলাজ বিষয়ক কাঠামো, সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য, শিক্ষা কেন্দ্র ও উন্নয়ন প্রকল্প রয়েছে। এটি ভবিষ্যতে একটি পূর্ণাঙ্গ জেলা হওয়ার পথে।

আরও কোনো নির্দিষ্ট বিষয়ে জানতে চাইলে বলুন!

#বসিরহাট #ইতিহাস #ঐতিহ্য #সম্প্রীতি

আঙুলের ছাপ ব্যবহার করে রেশন তুলতে গিয়ে সমস্যায় পড়ছেন অনেকেই। এই সমস্যার সমাধানে পশ্চিমবঙ্গের খাদ্য ও সরবরাহ দপ্তর উদ্যো...
20/06/2025

আঙুলের ছাপ ব্যবহার করে রেশন তুলতে গিয়ে সমস্যায় পড়ছেন অনেকেই। এই সমস্যার সমাধানে পশ্চিমবঙ্গের খাদ্য ও সরবরাহ দপ্তর উদ্যোগী ভূমিকা গ্রহণ করল। এখন থেকে উপভোক্তারা চোখ স্ক্যান করেও নিজেদের রেশনসামগ্রী সংগ্রহ করতে পারবেন।

যেখানেই থাকিনা কেন আসল শান্তি তো নিজের বাড়ি ফিরেই 😌 কি বলেন সবাই....💖   #বসিরহাট
01/06/2025

যেখানেই থাকিনা কেন আসল শান্তি তো নিজের বাড়ি ফিরেই 😌 কি বলেন সবাই....💖
#বসিরহাট

🫶যতই বাধা দাও আমি থামার পাত্র নই আমার শক্তি বাড়ছে প্রতিটা আঘাতে ....🌪️
28/05/2025

🫶যতই বাধা দাও আমি থামার পাত্র নই আমার শক্তি বাড়ছে প্রতিটা আঘাতে ....🌪️

ঘুম বা ভুলে যাওয়ার কারণে ফজর নামাজ ছুটে গেলে তার ওপর কাজা করা ওয়াজিব। কেননা, রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি নামাজ ...
14/05/2025

ঘুম বা ভুলে যাওয়ার কারণে ফজর নামাজ ছুটে গেলে তার ওপর কাজা করা ওয়াজিব। কেননা, রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি নামাজ আদায় করতে ভুলে যায় বা সে সময় ঘুমিয়ে থাকায় তা ছুটে যায়, তাহলে তার কাফফারা হলো সে যখনই তা মনে করবে, তখনই (সঙ্গে সঙ্গে) নামাজ আদায় করে নেবে।’ (মুসলিম: ৬৮৪)

ফজরের সুন্নত নামাজ সুন্নতে মোয়াক্কাদা। আবার অন্য সকল সুন্নতের চেয়ে এর গুরুত্বও বেশি। হজরত আয়েশা (রা.) বর্ণিত হাদিসে এসেছে, ‘ফজরের দুই রাকাত সুন্নত দুনিয়া ও দুনিয়ার মাঝে যা কিছু রয়েছে, তার চেয়ে উত্তম।’ (মুসলিম: ৭২৫)
অন্য হাদিসের বর্ণনায়, ‘ঘোড়া যদি তোমাদের রেখে চলেও যায়, তবুও ফজরের দুই রাকাত সুন্নত ত্যাগ করো না।’(আবু দাউদ: ১২৫৮)

ফজরের সুন্নতের গুরুত্ব এত বেশি হওয়ার কারণে কাজা করার সময় সুন্নতসহ পড়তে বলেছেন রাসুলুল্লাহ (স.)। অর্থাৎ সূর্য উদিত হওয়ার পরে দুই রাকাত করে— মোট চার রাকাত (দুই রাকাত সুন্নত ও দুই রাকাত ফরজ) নামাজ আদায় করে নেওয়া। নবীজি (স.) বলেন, ‘যে ফজরের দুই রাকাত (সুন্নত) পড়তে পারে না, সে যেন তা সূর্যোদয়ের পর পড়ে নেয়।’ (তিরমিজি: ৪২৩)

"সাফল্য ভাগ্য নয়, এটা ধৈর্য এবং কঠোর পরিশ্রমের খেলা। "
13/05/2025

"সাফল্য ভাগ্য নয়, এটা ধৈর্য এবং কঠোর পরিশ্রমের খেলা। "

"যদি তুমি একা অনুভব করো, শুধু চাঁদটাকে দেখো; বাইরে কেউ একজন তার দিকেও তাকিয়ে আছে। ”
07/05/2025

"যদি তুমি একা অনুভব করো, শুধু চাঁদটাকে দেখো; বাইরে কেউ একজন তার দিকেও তাকিয়ে আছে। ”

03/05/2025
একজন আইনজীবী একজন শিক্ষক'র একটি কূপ বিক্রি করলেন। দুই দিন পর, আইনজীবী সেই শিক্ষকের কাছে এসে বললেন,“স্যার, আমি তো আপনাকে ...
30/04/2025

একজন আইনজীবী একজন শিক্ষক'র একটি কূপ বিক্রি করলেন। দুই দিন পর, আইনজীবী সেই শিক্ষকের কাছে এসে বললেন,
“স্যার, আমি তো আপনাকে কূপ বিক্রি করেছি, কিন্তু কূপের ভিতরের পানি তো বিক্রি করিনি! আপনি যদি পানি ব্যবহার করতে চান, তবে অতিরিক্ত টাকা দিতে হবে।”

শিক্ষক হেসে উত্তর দিলেন,
“হ্যাঁ, আমিও আপনাকে বলতে যাচ্ছিলাম—আপনার পানি আমার কূপ থেকে নিয়ে যান, না হলে আগামীকাল থেকে আপনাকেই ভাড়া দিতে হবে।”

এটা শুনে আইনজীবী ঘাবড়ে গেলেন এবং বললেন,
“আরে না না, আমি তো মজা করছিলাম!”

শিক্ষক হেসে বললেন,“আমরাই আইনজীবী ও বিচারপতি তৈরি করি!”😀

গল্প: “সাঁকোর ঐ পাশে”সকালটা একটু ভেজা ভেজা। হালকা কুয়াশা গায়ে মেখে গ্রামের পথ ধরে হাঁটতে বেরোয় আকাশ। প্রতিদিনের মতো আজও ...
22/04/2025

গল্প: “সাঁকোর ঐ পাশে”

সকালটা একটু ভেজা ভেজা। হালকা কুয়াশা গায়ে মেখে গ্রামের পথ ধরে হাঁটতে বেরোয় আকাশ। প্রতিদিনের মতো আজও সে থামে সেই পুরনো বাঁশের সাঁকোর কাছে। ছোট্ট খালটা নিঃশব্দে বয়ে চলেছে, যেন শতাব্দীর পুরোনো কোনও গল্প বলছে। সাঁকোর পাশে গাঁদা ফুলের গন্ধে ভরে থাকে বাতাস। বটগাছটা আজও নিরবে দাঁড়িয়ে—সব দেখেছে, কিছু বলে না।

ওই সাঁকোর ও-পাশে একটা খড়ের ঘর, যেখানে থাকতেন আকাশের ঠাকুরদা। এখন ঘরটা খালি, তবু আকাশের মনে হয়, জানালার ফাঁক দিয়ে কেউ আজও তাকিয়ে থাকে, হয়তো ডাকে—"ফিরে আয়"।

এখানে শহরের দাগ নেই, নেই শব্দের জটলা। শুধু নিঃশব্দ প্রকৃতি আর ফেলে আসা শিকড়ের টান।

সাঁকোর এই পাশে দাঁড়িয়ে আকাশ বোঝে, মানুষ যতদূরই যাক, ফিরে তাকাতে হয় এইখানে। যেখানে গল্প থেমে থাকে না, কেবল বদলায় সময়।

অলক্ষুণে জুতোমোহাম্মদ নাসির আলীঅনেক কাল আগের কথা। আলী আবু আম্মুরী নামে একজন ধনীলোক বাস করত বাগদাদ শহরে। শহরের ওপরে তার য...
22/04/2025

অলক্ষুণে জুতো
মোহাম্মদ নাসির আলী

অনেক কাল আগের কথা। আলী আবু আম্মুরী নামে একজন ধনীলোক বাস করত বাগদাদ শহরে। শহরের ওপরে তার যেমন ছিল একখানা চমৎকার বাড়ি, তেমনি ছিল যথেষ্ট টাকা-পয়সা। শহরে সবাই তাকে ধনী বলে জানত। কিন্তু বিদেশী কেউ হঠাৎ এসে তার জামাকাপড় দেখে মোটেই ধারণা করতে পারত না যে, লোকটা সত্যি ধনী।

তার পাড়া পড়শিরা প্রায়ই বলাবলি করতোঃ আলী আবু ধনী হবে না কেন? লোকটা নিজের জন্য একটি দিনারও ব্যয় করে না। চেয়ে দ্যাখো একবার ওর জুতোজোড়ার দিকে, তাহলেই বুঝতে পারবে ও ধনী হয়েছে কী করে। বলেই তারা হাসতে থাকত।

আলী আবুর পায়ের নাগরাই জুতো নিয়ে বাগদাদ শহরের শিশুরা অবধি হাসাহাসি করে। হাসবে না-ই-বা কেন? এমন একজোড়া পুরোনো জুতো সারা বাগদাদ শহরে কেউ খুঁজে পাবে না। কেউ কেউ বলে, ও একজোড়া জুতো পরে আলী আবু জিন্দেগি কাবার করে দিয়েছে।

কিন্তু একজোড়া জুতো কী করে এতদিন টিকতে পারে? হ্যাঁ, আলী আবুর জুতোর কোনো জায়গায় একটি ফুটো হলেই সে বেরোয় মুচির সন্ধানে।

বাগদাদের মুচিরাও তাকে চিনে ফেলেছে। তাকে দেখলেই তারা বলে ওঠে, ওতে আর তালি লাগানো চলবে না সাহেব, ওটা বাদ দিয়ে একজোড়া নতুন জুতো কিনুন।

আলী আবু কিন্তু সে কথায় কান দেয় না। সে আর এক মুচির কাছে যায়। এমনি করে ঘুরতে ঘুরতে কেউ হয়তো একটা তালি লাগিয়ে দেয়। এমনি করে আলী আবুর নাগরাই জুতো সকলের পরিচিত হয়ে উঠল। এমনকি বন্ধুরা একে অপরকে বলতে লাগলো, আলী আবুর নাগরাই জুতোর মতো তোমার পরমায়ু হোক।

কিন্তু অবশেষে সেই বিখ্যাত জুতোই আলী আবুর দুর্ভাগ্যের কারণ হয়ে উঠলো। শহরের রাস্তায় বেরিয়ে একদিন সে যাচ্ছিল এক কাচের শিশি-বোতলের দোকানের পাশ দিয়ে। দোকানি তাকে দেখে বলে উঠল, এই যে আবু ভাই, আপনার জন্য একটা খোশ-খবর আছে। বিদেশি এক সওদাগর এসেছে, অনেকগুলো আতরের শিশি বেচতে। চমৎকার রঙিন ফুলকাটা শিশি। মোটে ৫০ দিনার দাম। কিনে একমাস ঘরে রাখলে তার দাম কম-সে-কম একশো দিনার দিয়েই আমি নেব। আমার বদনসিব যে এখন একটি দিনারও হাতে নেই।

অমন লাভের লোভ কে সামলাতে পারে, সামলানো সহজ বিষয় নয়। আলী আবুর রাতদিন চিন্তাই হচ্ছে, কী করে টাকা বাড়ানো যায়। কাজেই সে তৎক্ষণাৎ রঙিন শিশিগুলো কিনে বাড়ি নিয়ে গেল।

দিনকয়েক পরে আরেক বন্ধু এসে খবর দিল, একটা লোক এসেছে বসরাই গোলাপজল বেচতে। চমৎকার জিনিস কিন্তু দাম একেবারে সস্তা। কিছুদিন পরেই এর দাম দুইগুণ-তিনগুণ হতে বাধ্য। আর তোমার সেই রঙিন শিশি ভর্তি করে বেচলে, চাই কি চারগুণও পেতে পারো। আহা কী গোলাপ!

টাকা বাড়াবার কী অমূল্য সুযোগ। যোগাযোগটা চমৎকার—রঙিন শিশি, তাতে গোলাপজল। আলী আবু ৫০ দিনার দিয়ে গোলাপজল কিনে নিয়ে এলো।

শিশিগুলো গোলাপজলে ভর্তি করে সে যত্ন করে রেখে দিল জানালা বরাবর একটা তাকের উপর। শিশি-বোতল রাখার পক্ষে এই জায়গাটাই তার বাড়িতে সবচেয়ে নিরাপদ।

অল্প কয়েকদিনের ভিতর দু-দুটো লাভের কারবার করতে পেরে আলী আবুর মন খুশিতে আটখানা।

সেদিন দুপুরবেলা সে শহরের হাম্মামে গিয়ে ঢুকল গোসল করতে। ঠিক সে সময়ে হাম্মাম থেকে গোসল সেরে বেরিয়ে আসছিল ওমর বিন আদি নামে তার এক বন্ধু। আলী আবুকে দেখেই সে বলে উঠলো, আস্‌সালামো আলাইকুম, আবু ভাই।

আলী আবু সাথে সাথে জবাব দিল। এমন সময় ওমরের নজর পড়ল আবুর জুতোর ওপর। ধনী বন্ধুর জুতোর এ দুর্দশা দেখে সে মাথা নেড়ে বলল, ভাই আলী আবু, তোমার তো মা-শাল্লাহ টাকা-পয়সার কমতি নেই। একজোড়া নতুন জুতো কেন তুমি কিনছো না ভাই? সারাটা বাগদাদ শহর খুঁজেও তোমার নাগরাই জুতোর শামিল আর একজোড়া জুতো কেউ বের করতে পারবে না। সত্যি বলছি, তোমার এ জুতোকে এবার পেনশন দিয়ে একজোড়া নতুনের ব্যবস্থা করা উচিত।

এই বলে ওমর বিন আদি মাথা নাড়তে নাড়তে বেরিয়ে গেল। আবু কোনো জবাব না দিয়ে শুধু মুচকি হাসলো।

গোসল সেরে কাপড়-জামা পরে আবু বাইরে এসে দেখল, তার জুতোজোড়া জায়গামতো রাখা নেই। আসলে লোকের পায়ের ধাক্কায় দূরে এক বেঞ্চির তলায় দুখানা জুতো দুপাশে পড়ে আছে। আবুর পুরোনো জুতো যেখানে ছিল, সেখানে পড়ে আছে একজোড়া দামি চকচকে নতুন জুতো। চমৎকার জুতো, তাও ঠিক আবুর পায়ের মাপের।

আবু তখন মনে মনে ভাবল, আমার বন্ধু ওমরেরই এ কাজ। সে-ই নতুন জুতোজোড়া কিনে আমাকে উপহার দিয়ে গেছে। এজন্যই মাথা নাড়ছিল ওমর। প্রাণ খুলে বন্ধুকে ধন্যবাদ জানিয়ে আবু নতুন জুতো পায়ে দিয়ে বাড়ি চলে গেলো।

আসলে আবুর অনুমান কিন্তু মোটেই সত্য নয়। জুতোজোড়া ছিল শহরের কাজির। আবুর মতো তিনিও জুতো ছেড়ে হাম্মামে ঢুকেছিলেন গোসল করবার জন্য। বাইরে এসে কাপড় পালটাতে গিয়ে তিনি দেখলেন, জুতো নেই সেখানে। দেখেই তিনি চিৎকার করে উঠলেন, আমার জুতো কী হলো?

কাজির জুতো নিখোঁজ? খোঁজ খোঁজ সাড়া পড়ে গেল তক্ষুনি। চারদিকে খুঁজে পেতে অবশেষে পাওয়া গেল আলী আবুর রঙবেরঙের তালিওয়ালা সেই নাগরাই জোড়া।

সেই জুতো চিনতে কারও বাকি রইল না। তালিওয়ালা সেই জুতো বাগদাদ শহরের কে না চেনে?

এ জুতো সেই কমবখত আলী আবুর না হয়ে যায় না। আমার নতুন জুতো নিয়ে সে-ই পালিয়েছে। হাতে-নাতে এভাবে না ধরলে কে ভাবতে পারে যে, ব্যাটা জুতোচোর? ব্যাটাকে ধরে এনে আচ্ছা সাজা দিতে হবে আজ।

—বলে কাজি চিৎকার করতে লাগলেন।

তারপর লোকজনদের ডেকে পুরোনো জুতো পাঠিয়ে দিলেন আলী আবুর বাড়িতে। তারা গিয়ে দেখতে পেল, সত্যি সত্যি আলী আবুর পায়ে কাজির সেই নতুন জুতো।

আর যায় কোথায়? টানতে টানতে তারা বেচারা আলী আবুকে হাজির করলো কাজির দরবারে। কাজি রেগে বললেন, এক্ষুনি ওর পিঠে দশ দোররা মারো। মেরে নিয়ে যাও কয়েদখানায়। হাজার দিনার জরিমানা দিলে তবে ওর মুক্তি।
ব্যাপারটা যে ভুলবশতঃ হয়ে গেছে আবু তা বোঝাতে বারবার চেষ্টা করলো। কিন্তু কে শুনবে তখন তার কথা। অবশেষে কেবল এক হাজার দিনার জরিমানা দিয়ে আলী আবু সে যাত্রা রক্ষা পেল।

বাড়ি ফিরে আসতে আসতে সে ভাবল, যে অপয়া জুতোর জন্য এতটা হয়রানি আর বেইজ্জতি, তার মুখ আর জীবনে দেখতে চাইনে। আজ বাড়ি গিয়ে ও-দুটোকে শেষ করতে হবে।

এই ভেবে আবু বাড়ি ফিরে তার নাগরাই জোড়া নিয়ে এলো নদীর তীরে। তারপর বাড়ি থেকে বেশ খানিক দূরে একটা পুলের ওপর দাঁড়িয়ে এক এক করে দু-পাটি জুতোই ছুঁড়ে ফেলল নদীতে।

কিন্তু সেদিন বিকালে ঘটল এক কান্ড। এক জেলে এসে নদীতে জাল ফেলতেই মাছের পরিবর্তে সশরীরে উঠে এল আবুর সেই বিখ্যাত নাগরাই জোড়া। হরেক রকমের চামড়ার তালি লাগানো জুতো চিনতে জেলের দেরি হলো না। সেবারের খ্যাপে জালে মাছ না উঠলেও সে কিন্তু মনে মনে খুশিই হলো। বাড়ি ফিরে বউকে বললো, আলী আবু ধনী মানুষ— এতদিনের জুতোজোড়া ফেরত পেলে কম করেও দু-দিনার বকশিশ নিশ্চয় দেবে।

দুঃখের বিষয়, জেলে যখন আলী আবুর বাড়ি জুতো নিয়ে হাজির হলো, তখন বাড়িতে কেউ ছিল না। ঘরের দরজাগুলো সব বন্ধ। শুধু একটা জানালা খোলা ছিল। তাও ছিল অনেক উঁচুতে। জেলে মনে মনে বললো, এই নিয়ে আর তকলিফ করে ফিরে যাওয়া যাবে না। তার চেয়ে জানালা দিয়ে ছুড়ে দিলেই আবু এসে তার জুতো পেয়ে খুশি হবে। পরে যখন দেখা হবে, তখন বললেই হবে যে, আমি পেয়েছিলাম ওটা। বকশিশটাও তখন চেয়ে নেয়া যাবে।

এই বলে জানালা দিয়ে জুতো দু-খানা ছুড়ে মারতেই সেগুলো গিয়ে পড়ল গোলাপজলের শিশির ওপর। তার ফলে তাকের সবগুলো শিশি মাটিতে পড়ে ভেঙে গেল।

রাতে বাড়ি ফিরে আবুর তো চক্ষু চড়কগাছ। মাথা চাপড়ে সে কেঁদে উঠলো। আবার সেই অপয়া জুতোর কীর্তি। কী বদনসিবই হয়েছে আমার। আজই, এক্ষুনিই, এ অলক্ষুণে জুতোর হাত থেকে যে করেই হোক রেহাই পেতে হবে।

এই বলে বাগানের একপাশে দেয়ালের ধারে গিয়ে সে মাটি খুঁড়তে লাগলো। আঁধারে তখন কিছুই দেখা যায় না। কিন্তু কাল ভোর অবধি অপেক্ষা করবার মতন মনের অবস্থা আবুর মোটেই নেই। চোর যেমন আঁধারে সিঁধ কাটে আবুও তেমনি আঁধারেই মাটি খুঁড়তে লাগল।

দেয়ালের পাশে শব্দ শুনে পাশের বাড়ির লোকেরা এলো আলো নিয়ে। এসে দেখল আবুর কান্ড। তারা বলল, এই তোমার কীর্তি! আঁধারে বসে দেয়ালের তলায় সুড়ঙ্গ কেটে আমাদের সর্বস্ব চুরি করার মতলব? চলো এক্ষুনি কাজির কাছে।

এবার কাজি তাকে দেখেই বলে উঠলেন, আবার চুরি ! কদিন আগে আমার জুতো চুরি করে জরিমানা দিয়েছ। এবার বুঝি বড় রকমের দাঁও মারবার মতলবে ছিলে?

এই বলে আবুকে কথা বলবার সুযোগ না দিয়েই কাজি তাকে কয়েদখানায় পাঠিয়ে দিলেন।

বাড়ি এসে সে ভাবল-দু-বার দু-হাজার দিনার জরিমানা দিয়ে জেল খাটার হাত থেকে রেহাই পেলাম। কিন্তু জুতোর হাত থেকে রেহাই না পেলে চলবে না। এই অলক্ষুণে জুতো বাড়ির বার করতেই হবে।

অনেক ভেবেচিন্তে এবার সে জুতোজোড়া ফেলে এলো নর্দমায়। বাড়ি ফিরে শুয়ে শুয়ে ভাবতে লাগলো, এতদিনে সত্যিই রেহাই পেলাম। নর্দমায় কেউ জাল ফেলতে আসবে না।

পরের দিন ভোরে ঝাড়ুদার এলো নর্দমা পরিষ্কার করতে। এসে দেখলো একজোড়া ছেঁড়া জুতো আটকে নর্দমা বন্ধ হয়ে আছে। বলা বাহুল্য, জুতোর মালিককে চিনতে বেগ পেতে হলো না। ময়লা জুতোজোড়া সে আবুর বাড়ির দরজায় রেখে চলে গেল।

আবুর ঘুম ভাঙতে বাইরে এসে দেখলো, আবার সেই জুতো। আবু মাথায় হাত দিয়ে বসে পড়লো। এবার কী করবে তাই বসে সে ভাবতে লাগলো।

রাস্তা দিয়ে এক কুকুর যাচ্ছিল ছুটে। হঠাৎ আবুর বাড়ির কাছে এসেই থেমে পড়ল। তারপর মাটি শুঁকতে শুঁকতে এগিয়ে এলো জুতোর কাছে। এসেই একপাটি জুতো মুখে নিয়ে দে-ছুট।

অগত্যা আবুও ছুটল কুকুরকে তাড়া করে। ছুটতে ছুটতে সামনে পড়ল একটা দেয়াল। কুকুর দেয়াল টপকে যেতেই জুতোটা ফস্কে গিয়ে পড়ল দেয়ালের ওপাশে একটা ছোট ছেলের মাথায়। আবুর ভারী জুতোর ঘায়ে ছেলে অজ্ঞান হয়ে পড়ল। বাড়িতে হইচই পড়ে গেল। সবাই এলো ছুটে।

তারপর আবার সেই কাজির দরবার। আবুকে দেখে কাজি রেগে উঠে বললেন, ছেলেটার চিকিৎসার সব টাকা তো দিতেই হবে, তাছাড়া সমপরিমাণ টাকা খেসারতও দিতে হবে।

বেচারা এবার কেঁদেই ফেলল। দুবার জরিমানা আর শিশির কারবারে লোকসান দিয়ে আবুর হাতে নগদ টাকা-পয়সা কিছুই ছিল না। তাই এবার তাকে ধাক্কা সামলাতে হলো বন্ধুবান্ধবের কাছে ধার করে।

এ ঘটনার দিন-দুই পরে আবু এসে হাজির হলো কাজির দরবারে। কাজি তো তাকে দেখেই অবাক। সেদিকে লক্ষ না করে তালি দেয়া জুতোজোড়া কাজির সামনে রেখে আবু বলল, এবার আমার ফরিয়াদ রাখতে হবে হুজুর। আমার এই জুতোজোড়ার বিরুদ্ধে ফরিয়াদ। এ অলক্ষুণে জুতোর কারণে আমার যা-কিছু দুর্ভোগ ঘটেছে, তা শুনে হক ইনসাফ করুন, করে দোষীর সাজা দিন।

কাজি অবাক হয়ে চেয়ে রইল। লোকটা তামাশা করছে না কি! আবু আবার বলতে লাগলো, আমি সত্যি বলছি হুজুর। আমার বুড়োবয়সে সবকিছু দুর্ভোগের মূল ওই ছেঁড়া জুতোজোড়া। এ দুটোকে এমনভাবে কয়েদ করে রাখুন যাতে আমার নজরে আর না পড়ে।

এই বলে সে একে একে কাজিকে সব কথা খুলে বলল।

আবুর দুর্ভোগের কথা শুনে কাজির ভীষণ হাসি পেল। হাসতে হাসতে তিনি বললেন, সত্যিই তুমি জুতোর বদৌলতে কষ্ট ভোগ করছ দেখতে পাচ্ছি। যাও তোমার জরিমানার টাকা সব ফেরত দেবার হুকুম দিলাম। তাছাড়া এ জুতো আর তোমাকে দেখতে হবে না।

কাজি সত্যিই দয়ালু ছিলেন। তিনি আবুর দু-হাজার দিনার সাথে সাথে ফেরত দিয়ে দিলেন। জুতোজোড়ার ভাগ্যে কী ঘটেছিল কেউ বলতে পারে না। কিন্তু আবুর পায়ে সেগুলোকে আর দেখা যায়নি।

Address


Website

Alerts

Be the first to know and let us send you an email when Akanta Apan posts news and promotions. Your email address will not be used for any other purpose, and you can unsubscribe at any time.

Shortcuts

  • Address
  • Alerts
  • Claim ownership or report listing
  • Want your business to be the top-listed Media Company?

Share