
31/05/2025
সরকারি কর্মচারী vs বেসরকারি কর্মচারী – ১০টি বড় পার্থক্য।
নিচে একজন সরকারি কর্মচারী (Government Employee) এবং একজন বেসরকারি কর্মচারী (Private Employee)-এর মধ্যে বিভিন্ন দিক থেকে সবরকমের পার্থক্য তুলে ধরা হলো।
🔹 ১. আয় (Salary):
সরকারি কর্মচারী:
আয় খুবই সীমিত, নির্ধারিত বেতনক্রম অনুযায়ী (Pay Scale)। কাজের ভিত্তিতে কোন প্রকার ইনসেনটিভ নেই। শুনতে খারাপ লাগলেও এটাই বাস্তব যে একজন চা বিক্রেতার মাসিক ইনকামের দশ ভাগের একভাগ একজন সরকারি কর্মচারীর বেতন। বাজার মূল্যের সাথে অসঙ্গতিপূর্ণ বেতন কাঠামো। কর্মচারীদের অধিকারের ডি.এ. দেওয়া হয় না। বেতন ছাড়া অন্য কোন উপার্জন নেই।
বেসরকারি কর্মচারী:
বেতন প্রতিযোগিতামূলক ও দক্ষতার ভিত্তিতে দ্রুত বাড়ে। বেতনের ছাড়াও পারফরমেন্স বোনাস, ইনসেনটিভ, স্টক অপশন ইত্যাদি পাওয়া যায়। বেসরকারি কর্মচারীরা বেতন তোলেন না বলে চলে। ইনসেনটিভ যা পান তা দিয়ে উচ্চতর বিলাসী জীবন কাটান, এবং মাসের শেষে মোটা অঙ্কের টাকা সেভিংস করেন।
🔹 ২. প্রমোশন ও ক্যারিয়ার গ্রোথ (Promotion & Career Growth):
সরকারি কর্মচারী: যে কোনো ব্যক্তি সরকারি চাকরি পেতে পারেন। এখানে শিক্ষার প্রয়োজন হয় না।
পদোন্নতি ধীরগতির হয় বা পদোন্নতি নেই বললেই চলে। একজন ত্রিশ বছরের সরকারি কর্মচারী কোনরকম পদোন্নতি ছাড়াই রিটায়ার করে যান। S.C. & S.T. দের ছাড়া পদোন্নতি হয় না। উচ্চ সম্প্রদায়ের কোন মান মর্যাদা দেওয়া হয় না।
বেসরকারি কর্মচারী: মা
প্রচন্ড মেধাবী না হলে এই চাকরি পাওয়া যায় না। বিদেশী ডিগ্রি থাকলে তার স্থান হয় সবচেয়ে উঁচুতে।
যোগ্যতা, কর্মদক্ষতা ও লক্ষ্যপূরণের ভিত্তিতে দ্রুত পদোন্নতি হয়। বলতে গেলে একজনের বছরে তিন চার বার পদোন্নতি হয় পারে। এখানে কোন মেরিট বা কাষ্ট যাচাই করে পদোন্নতি হয় না।
🔹 ৩. কাজের চাপ ও ডেডলাইন:
সরকারি কর্মচারী:
মূলত পরিসেবা মূলক কাজ করা হয়। কাজের চাপ নির্ভর করে সরকারের মতিগতির উপর। কাজ সরকারের ইচ্ছা অনুযায়ী চলে। প্রয়োজনে ওভার টাইম হয় কিন্তু তাতে বর্ধিত দৈনিক বা ওভার টাইমের জন্য কিছু পাওয়া যায় না। ছুটির দিনে কাজ করলেও কোন এক্সট্রা পাওয়া যায় না।
বেসরকারি কর্মচারী:
কাজের চাপ কোম্পানির উপর নির্ভর করে, কিছু লক্ষ্য (Target) পূরণ করতে হয়। তার জন্য যথেষ্ট পারিশ্রমিক পাওয়া যায়। ওভারটাইম করলে প্রচুর এক্সট্রা উপার্জন হয় যা বেতন বহিঃর্ভূত।
🔹 ৪. ছুটি ও সময়:
সরকারি কর্মচারী:
কিছু নির্দিষ্ট ছুটি থাকে। কাজের সময় নির্ধারিত। মাঝেমধ্যে অনির্ধারিত হয়। সময়মতো অফিসে ঢোকা-বেড়োনোর বাধ্যবাধকতা আছে।
বেসরকারি কর্মচারী:
ছুটি সীমিত, ছুটির আবেদন সহজে মঞ্জুর হয় না। সময়মতো কাজ না শেষ হলে অতিরিক্ত সময় দিতে হয়। তবে তার জন্য অতিরিক্ত উপার্জন হয়।
🔹 ৫. চাকরির নিরাপত্তা (Job Security):
সরকারি কর্মচারী:
চাকরি অত্যন্ত নিরাপদ। একবার চাকরি পেলে, চুরি না করলে ৬০ বছর পর্যন্ত থাকার নিশ্চয়তা থাকে।
বেসরকারি কর্মচারী:
কর্মক্ষমতা ও কোম্পানির অবস্থার ওপর নির্ভর করে চাকরি চলে যেতে পারে। তবে এখানে কর্মচারীরা নিজেরাই কোম্পানির পরিবর্তন করেন অতিরিক্ত সুযোগ সুবিধা ও উচ্চ বেতন ও ইনসেনটিভ পাওয়ার জন্য।
🔹 ৬. অর্থনৈতিক সুবিধা ও পেনশন:
সরকারি কর্মচারী:
স্থায়ী পেনশন বা পিএফ, গ্র্যাচুইটি, মেডিকেল রেয়াত, LTC ইত্যাদি থাকে, তবে তা পরিমাণে খুবই সীমিত।
বেসরকারি কর্মচারী:
পিএফ, হেলথ ইন্স্যুরেন্স, পারফরম্যান্স ইনসেনটিভ, স্টক অপশন, রিটায়ারমেন্ট ফান্ড ইত্যাদি সুযোগ থাকে অত্যাধিক বেশি পরিমাণে।
🔹 ৭. উন্নয়ন ও ট্রেনিং:
সরকারি কর্মচারী:
ট্রেনিং বা স্কিল ডেভেলপমেন্টের সুযোগ কম। নতুন টেকনোলজিতে ধীরে ধীরে মানিয়ে নিতে হয়। কর্মচারীরা নিজেদের উদ্যোগে নতুন টেকনিক্যাল বা অন্য কোন ট্রেনিং নিয়ে থাকেন। তবে তার জন্য সরকার এক টাকাও বেতন বাড়ায় না। ট্রেনিংয়ের যাবতীয় খরচ কর্মচারীকেই বহন করতে হয়।
বেসরকারি কর্মচারী:
নিয়মিত প্রশিক্ষণ, স্কিল আপগ্রেডেশন ও নতুন টেকনোলজিতে কাজ করার সুযোগ। প্রতি মূহুর্তে বর্ধিত বেতন পাওয়ার সুযোগ।
🔹 ৮. কাজের পরিবেশ (Work Culture):
সরকারি কর্মচারী:
ফর্মাল, নির্দিষ্ট ও নিয়ম-নীতিতে বাঁধা। উদ্ভাবনের সুযোগ কম।
বেসরকারি কর্মচারী:
ডায়নামিক, ফলাফলভিত্তিক পরিবেশ। উদ্ভাবনী চিন্তা ও সৃজনশীলতা বেশি উৎসাহিত হয়।
🔹 ৯. দায়িত্ব ও জবাবদিহিতা (Accountability):
সরকারি কর্মচারী:
প্রচুর দায়িত্ব বহন করতে হয়। রাজ্যের সব কিছুই সঠিক ভাবে চালানোর দায় ভার নিতে হয়। নিজের কাজের বাইরেও অধিক দায়িত্বভার গ্রহণ করতেই হয়।
বেসরকারি কর্মচারী:
নির্দিষ্ট KPI বা টার্গেট থাকে। এককথায় নিজের কাজের বাইরে কোন দায়িত্ব নেই।
🔹 ১০. সমাজে মর্যাদা:
সরকারি কর্মচারী:
সামাজিক মর্যাদা নেই বললেই চলে। সরকারি কর্মচারীদের সাথে সমাজে কুকুর ছাগলের মতো ব্যবহার করে সরকার। তাই দেখে সমাজের সবাই তাদের প্রতি তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করে।
বেসরকারি কর্মচারী:
শহরাঞ্চলে ও আধুনিক সমাজে প্রাইভেট কর্মচারীরা উচ্চ সম্মান পেয়ে থাকেন।