01/11/2025
শীতের রাতে ঘড়ির কাঁটা অনুসারে আন্দাজ এগারোটার সময় সমগ্র ভারতবর্ষের সাথে যোগাযোগ স্থাপনকারী হাওড়া স্টেশনের সামনে একটা বিশাল বড় সাদা BMW গাড়ি এসে দাঁড়ায় , গাড়ি দরজা খুলে নেমে আসে একজন মহিলা , বয়স আন্দাজ তিরিশ বছর, ফরমাল dressed up করা , পরণে হালকা আকাশী রঙের শার্ট এন্ড ব্ল্যাক কালারের ফরমাল প্যান্ট , শার্টের উপর একটা গ্রে কালারের ব্লেজার, কাঁধে একটা লেডিস ব্র্যান্ডেড ব্যাগ। মহিলা গাড়ি থেকে নেমে সোজা স্টেশন এর দিকে হাঁটতে শুরু করে , মহিলার আশপাশ থেকে বিভিন্ন ধরনের হকার বিভিন্ন জিনিস বিক্রি করার জন্য চিৎকার করে যাচ্ছে, মহিলা কাউকে পাত্তা না দিয়ে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে গিয়ে লক্ষ্য করে স্টেশন এর ঢোকার মুখে একজন হকার চিৎকার করে " The voice " ম্যাগাজিন বিক্রি করছে, মহিলা লোকটাকে দেখে সামান্য হাসে, তারপর স্টেশনের ভিতরে ঢুকে পড়ে ।
স্টেশনে ঢুকে সে দেখে একটা জায়গায় বেশ লোকজনের ভিড় , অনেক মানুষ সেদিকে জড়ো হয়েছে, তার কারণ , " নিশান্ত রায়" বর্তমান যুগের বেঙ্গলী ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির একজন famous Hero... যার ফ্যান ফলোয়ারের সংখ্যা অগণিত, সেইরকমই কিছু ফ্যান তাকে ঘিরে সেলফি তোলার জন্য ভিড় করেছে, নিশান্তকে ঘিরে রেখেছে তার চার পাঁচজন বডিগার্ড , যারা তার ফ্যানদেরকে নিশান্ত এর ধারে কাছে আসতে দিচ্ছে না । ভিড় আস্তে আস্তে বাড়ছে।
মহিলার নাম অদ্রিজা মজুমদার , সে "The voice" ম্যাগাজিনের chief Editor and management head ..... একটা বিশেষ কাজের জন্য সে আজ হাওড়া স্টেশনে এসেছে । অদ্রিজা ভীষণ কাঠখোট্টা, আর একরোখা স্বভাবের মেয়ে, কারোর কথা শোনে না , নিজে যেটা মনে করে সেটাই করে । কিন্তু নিজের কাজের জগতে সে ভীষণ দক্ষ, তার বিচার বিবেচনাকে কেউ টক্কর দিতে পারে না ।
অদ্রিজা স্টেশনে ঢুকে একবার ভালো করে চারিদিকটা দেখে নেয়, তারপর কাউকে একটা কল করে, " Hello, where are you ? Why are you late ..... যার জন্য এখানে কাজে আসা সে অলরেডি এখানে এসে পড়েছে, ট্রেন টাইম মত ছেড়েও দেবে , come fast ......." বিরক্তি নিয়ে সে ফোন রেখে দেয়। তারপর স্টেশনের backside এ পনেরো নম্বর প্ল্যাটফর্মের দিকে এগিয়ে যায়, সেখানে গিয়ে দেখে অলরেডি হাওড়া থেকে দিল্লীগামী রাজধানী এক্সপ্রেস দাড়িয়ে রয়েছে । সে একবার নিজের রিস্টওয়াচ এর দিকে তাকায়, তারপর নিজের সিট নম্বর অনুযায়ী নিজের কেবিনে উঠে পড়ে ।
অদ্রিজা কেবিনের জানলা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে দেখে নিশান্ত রায় তার বডিগার্ড দের সাথে ট্রেনে ওঠার জন্য এদিকে আসছে, অদ্রিজা বিরক্ত হয়ে আবার ঘড়ির দিকে তাকায়, " এই বরুণ যে কখন আসবে god knows ..... বার বার করে টাইম বলে দিলাম, তাও সময়ে এসে পৌঁছতে পারল না , এরকম একটা সুবর্ণ সুযোগ হাত থেকে বেরিয়ে যাবে । আমার কাছে একদম পাক্কা খবর আছে নিশান্ত রায়ের ব্যাপারে, কিন্তু বরুণ না এলে কাজটা করবে কে? এমনিতে অদ্রিজা কোন কিছু নিয়ে টেনশন করে না, তার কাছে ফুলপ্রুফ প্ল্যান রেডি থাকে কিন্তু আজ অদ্রিজার মনে হচ্ছে, তার প্ল্যান ভেস্তে যাবে, এত তাড়াতাড়ি সবটা অ্যারেঞ্জ করতে হয়েছে যে, সে প্ল্যান B রেডি করতে পারে নি । এখন বরুণ সময় মত এখানে পৌঁছালে হয় ।
অন্যদিকে ঠিক এই সময় কলকাতার বড় বাজার থেকে হাওড়া ব্রিজে ওঠার আগে ফ্লাইওভারের নিচে পুলিশ রেড করে, সেখানে এক দিন আগেই একজন খুন হয়েছে, তাই পুলিশ ঘন ঘন সেখানে রেড করছে, ফ্লাইওভারের নিচে কতকগুলো লোক শুয়ে ছিল , পুলিশের হুইসিলের শব্দ শুনে লোকগুলোর মধ্যে তাড়াহুড়ো লেগে যায়, যে যেখানে পারে ছুট লাগায়, ওই লোকগুলোর মধ্যে একজন পঁয়ত্রিশ বছর বয়সী লোক শুয়ে ছিল, লোকটাকে দেখে মনে হবে অনেকদিন খাওয়া দাওয়া হয়নি , মাথায় বড় বড় চুল, দাড়ি গোঁফ অনেকদিন কাটা হয়নি মনে হচ্ছে , বাকি লোকগুলো দৌড়াতে শুরু করলে সেও দৌড়াতে শুরু করে, লোকটা হাওড়া ব্রিজের উপর দিয়ে ঊর্ধ্বশ্বাসে দৌড়াচ্ছে, একজন পুলিশ লোকটার পিছন পিছন দৌড়াচ্ছে, এবং বার বার তাকে থামতে বলছে , কিন্তু লোকটা কোনো কথা না শুনে দৌড়াচ্ছে , হাওড়া স্টেশনের মুখের কাছে এসে লোকটার সামনে আচমকা একটা বাইক এসে পড়ে, লোকটার ধাক্কার আঘাতে বাইকের আরোহী ছিটকে পড়ে যায়, লোকটা সেদিকে একবার তাকায় কিন্তু সেদিকে বেশিক্ষণ লক্ষ্য না দিয়ে স্টেশনের ভিতর ঢুকে পড়ে ।
বাইক থেকে ছিটকে পড়ে যাওয়া লোকটা অতিকষ্টে উঠে দাড়ায়, তারপর যে লোকটা তাকে ধাক্কা মেরেছিল, তার উদ্যেশ্যে একটা গরম গালাগালি দেয়, নিজের গায়ের ধুলো ঝাড়ে, সে দেখে একজন পুলিশ ওই লোকটার পিছন পিছন ছুটে গেলো । সেদিকে একবার তাকিয়ে দেখে ,সে নিজের বাইকটাকে মাটি থেকে টেনে তুলে আনে , তারপর ভালো করে বাইকটাকে খুঁটিয়ে দেখে, না বাইক একদম ঠিক আছে , এইসময় তার কিছু একটা মনে পড়ে যায়, " এই যা এই সবের জন্য তো আমার অনেকটা late হয়ে গেলো, অদ্রিজা ম্যাম খুব রাগারাগি করবেন , সব ওই লোকটার জন্য । এতক্ষণে মনে হয় ট্রেন ছেড়ে দিয়েছে , কাজটা কে করবে তাহলে .......
অন্যদিকে লোকটা ছুটতে ছুটতে হাওড়া স্টেশনে ঢুকে পড়ে, রাত হওয়ার জন্য স্টেশনে তুলনামূলক ভিড় কম, লোকটা পনেরো নম্বর প্লাটফর্ম এসে পড়ে, সে দেখে প্লাটফর্ম থেকে একটা ট্রেন ছেড়ে বেরিয়ে যাচ্ছে, লোকটা ছুটতে ছুটতে ট্রেনে ওঠার চেষ্টা করছে, কিন্তু রাজধানী এক্সপ্রেসের সব কেবিনের দরজা ভিতর থেকে বন্ধ।
অদ্রিজা কেবিনের জানলা দিয়ে এতক্ষণ বাইরের দিকেই তাকিয়ে ছিল, যাতে বরুণ এলে সে দেখতে পায়, কিন্তু না বরুণ এর কোনো দেখা নেই , শুধু একটা ঝাঁকড়া চুলের লোককে সে ছুটে আসতে দেখে, অদ্রিজা জানলা দিয়ে লোকটার মুখ ভালো ভাবে দেখে , লোকটার মুখ দেখেই সে চমকে উঠে ।
অদ্রিজা উঠে গিয়ে নিজের কেবিনের দরজা খুলে দেয়। লোকটা ছুটে এসে দরজার হাতল ধরে ট্রেনে উঠে পড়ে । আর সঙ্গে সঙ্গে ট্রেন প্লাটফর্ম থেকে বেরিয়ে স্পিড নিয়ে নেয়, পুলিশটা প্লাটফর্ম এর মধ্যে দাড়িয়ে পড়ে, " ইস একটুর জন্য লোকটাকে ধরতে পারলাম না "
লোকটা ট্রেনে উঠে জানলা দিয়ে মুখ বাড়িয়ে পুলিশটাকে দেখার চেষ্টা করে যাচ্ছে , অদ্রিজা এক দৃষ্টিতে লোকটার দিকে তাকিয়ে রয়েছে , লোকটা এবার অদ্রিজার দিকে ঘুরে দাঁড়ায়, অদ্রিজা লোকটাকে সিটে বসতে বলে, লোকটা কোনো কথা না বলে চুপচাপ বসে পড়ে , আর বলে, " Thank you আমাকে হেল্প করার জন্য ।
অদ্রিজা এবার প্রথম কথা বলে......
পুরো গল্পটি পড়তে ক্লিক করুন এই লিংকে:
The voice 🎤 পর্ব: ১ ভারতবর্ষের অন্যতম ব্যস্ত শহর কলকাতা, এখানে মানুষজন যেন প্রতিনিয়ত দৌড়ে বেড়াচ্ছে , কেউ কারোর দিকে ত....