Pratilipi Bengali

Pratilipi Bengali Discover, read and share your favorite stories, poems and books in a language, device and format of y
(2177)

Discover, read and share your favorite stories, poems and books in a language, device and format of your choice.

     আমি সুরবালা দেবী।আজ দুপুরে আমি আমার দুই ছেলের ঘরের দুই নাতনি, আর এক নাতিকে নিয়ে সুদূর কলকাতা থেকে আমার নিজের জন্ম ...
11/09/2025


আমি সুরবালা দেবী।আজ দুপুরে আমি আমার দুই ছেলের ঘরের দুই নাতনি, আর এক নাতিকে নিয়ে সুদূর কলকাতা থেকে আমার নিজের জন্ম ভিটে বটঝুড়ি গ্ৰামে এসেছি।আমার বড় ছেলে অভিরূপের মেয়ে অনুরাধা ,ছোট ছেলে অভিনবর মেয়ে শ্রবনা, আর ছেলে বাপ্পাদিত্য ,ওরফে বাপ্পা কে নিয়ে এই বট ঝুড়ি গ্ৰামে এসেছি।এখানে শুভাজিৎ নামে আমাদের নিজস্ব একটি অতিথি শালা আছে। আমি, আমার নাতি -নাতনি দের নিয়ে আমাদেরই এই অতিথিশালায় এসে উঠেছি।

এই গ্ৰামে আমাদের একটি বেসরকারি হাসপাতাল, একটি স্কুল,একটি অতিথি শালা, আর ছোট ছোট বাচ্চাদের জন্য একটা অনাথ আশ্রমও আছে।অতিথি শালায় এসে, দুপুরের খাওয়া দাওয়া সেরে একটু বিশ্রাম নিয়ে, বিকেলে আমি আমার নাতি নাতনিদের নিয়ে আমার নিজের পূর্ব পুরুষদের দ্বারা বাঁধানো নদীর ঘাটে এসে বসে আছি। নাতি নাতনিরা সবাই ঘুরে ফিরে জায়গাটা দেখছে, আর আমি আমার বার্ধক্য জনিত কারণে বেশি ঘোরাঘুরি না করে, নদীর ঘাটে বসে আমার বাল্য কালের পুরোনো স্মৃতি রোমন্থন করে চলেছি।

এই বটঝুড়ি গ্ৰাম আমার জন্মস্থান হলেও, মাঝে অনেক গুলো বছর বাদ দিয়ে আমি এই গ্ৰামে নূতন করে আজ ক'বছর ধরে আবারও নিজের প্রয়োজনে আসা যাওয়া করছি।এই গ্ৰামে নতুন করে ক'বছর ধরে আসা যাওয়া করলেও আমার পূর্ব পুরুষদের এই বাঁধানো নদীর ঘাটে আমি আজ প্রায় ষাট- পঁয়ষট্টি বছর পরে এসে বসেছি। এতোদিন আমার এদিকটায় আসার কোন প্রয়োজন হয়নি বা আমাকে আমার পরিবারের কেউ আসতে দেয় নি।আজ আমি আমার নাতনি দের একান্ত অনুরোধে শাসনের বেড়াজাল টপকিয়ে, আমি আমার শৈশবের স্মৃতি বিজড়িত জায়গাটা ওদেরকে দেখাতে,ও ঘুরাতে নিয়ে এসেছি।

আমার বাল্য স্মৃতি-বিজড়িত এই নদী,এই নদীর ঘাট, এখন আমার মতোই বার্ধক্যের ভারে জর্জরিত হয়ে, রুগ্ন হয়ে,ক্ষয়াটে দাঁত বেরিয়ে জরাজীর্ণ হয়ে পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে আছে।

আগে এই ঘাটকে লাহিড়ীদের ঘাট বলেই সবাই জানতো। পরিত্যক্ত ক্ষয়াটে এই ঘাটকে দূর থেকে দেখলে এখন আর বাঁধানো ঘাট বলে মনে হয় না। এই নদী যদিও এখন আগের থেকে একটু শীর্ণ কায়া হয়ে আছে, তথাপি আমার ছোট বেলায় দেখা সেই নদীর থেকে তার সৌন্দর্য কোন অংশে এতটুকু ও ম্লান হয়ে যায় নি। এই নদী খরার সময় টুকু বাদ দিয়ে বেশীর ভাগ সময় জলে ভরা থাকে।প্রতি বছর বন্যার সময় এই নদী ফুলে ফেঁপে উঠে বিপদ সীমা অতিক্রম করে আশে পাশে জনজীবনকে বিপর্যস্ত ও ক্ষতিগ্রস্ত করে তোলে।আর অন্য সব সময় এই নদী ধীর স্থির শান্তই থাকে ।

এই নদী বছরের কিছুটা সময় বাদ দিয়ে ,বেশীর ভাগ সময় ভরা-আর বর্ষায় ফুলে ফেঁপে উঠার জন্য সবাই এই নদীকে ফুলন্তি নদী নামেই চেনে।আমার ছোট বেলায় দেখেছি এই ফুলন্তি নদীতে নৌকা আর মানুষ জনে সব সময় অবিরাম যাওয়া আসা চলতেই থাকতো।বছরে দুবার ফুলন্ত নদীর পাড়ে লাহিড়ী দের নিদিষ্ট বারোয়ারী ঘাটে নৌকা নিয়ে ব্যবসায়ীরা তাদের পন্য বেচা কেনার উদ্দশ্যে পসরা সাজিয়ে আসতো।তাদের আগমনের বার্তা পেয়ে গাঁয়ের বৌ- ঝিয়েরা বড় বড় ঘোমটা টেনে তাদের অভিভাবকদের সাথে ফুলন্তির পাড়ে এসে জড়ো হয়ে ,নৌকা থেকে প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কিনে নিয়ে যেতো।আবার কখনো কখনো ব্যবসায়ীরা হকারদের মতো অন্যান্যদের পারিবারিক ঘাট গুলোতে এসেও জিনিস বেচাকেনা করতো।

আমি অনেকক্ষন হয় এখানে এসে বসেছি।এখন বিকেল হয়ে গেছে।সারাদিনের পরিশ্রমের পর- তপ্ত সূর্য ক্লান্ত হয়ে অস্তাচলে যাওয়ার পথে।একটু পরেই পাখিরা নিজের আলয়ে ফিরবে,নিজেদের মধ্যে এখন সেই প্রস্তুতি চলছে।আর কদিন পরেই দুর্গাপুজো।এই গ্ৰামেও তার ই প্রস্তুতি চলছে।

নদীর ওপারে ঘন কাশ ফুলের বন,আর এ পাড়ে একের পর এক সার দেওয়া বিশাল বিশাল সব বট বৃক্ষরা বার্ধক্যের ভারে ঝুরি নামিয়ে অহংকারে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে। ঘাটের থেকে একটু দূরেই দশ-বারো বছরের গুটি কয়েক দামাল ছেলে মেয়ে- সেই বট বৃক্ষের ঝুরি ধরে মনের আনন্দে দুলছে।আর এই পড়ন্ত বিকেলে সেই বট বৃক্ষের ঝুরি ধরে দোল খেয়ে নদীতে ঝাঁপিয়ে পড়ছে।গ্ৰাম বাংলার সে এক অভূতপূর্ব দৃশ্য।যা দেখলে নয়ন- মন সব জুড়িয়ে যায়।এইসব ছোট ছোট বাচ্চাদের দোল খাওয়া দেখে আমারও ছোটবেলার স্মৃতি চোখের সামনে ভেসে উঠলো।

এই গ্ৰামের নাম বটঝুড়ি কে রেখেছে তা আমি ঠিক জানি না।তবে আমি ছোট বেলায় আমার পিসি-ঠাম্মী আর জেঠী-ঠাম্মীর মুখে শুনেছি আমার দাদুর বাবার বাবা, অর্থাৎ পড়ন্ত জমিদার কীর্তি নারায়ন লাহিড়ীর ছেলে হরি নারায়ন লাহিড়ী এই গ্ৰামের নাম রেখেছেন বটঝুড়ি গ্ৰাম। শুনেছি আমার পূর্ব পু্রুষ হরি নারায়ন লাহিড়ীই এই বটঝুড়ি গ্ৰামের পত্তন করেছিলেন।

আমার দাদুর তিন পুরুষ আগের পূর্ব পুরুষ কীর্তি নারায়ন লাহিড়ী যখন কেতুগ্ৰামের শেষ জমিদার ছিলেন তখন থেকেই জমিদারি তলানিতে এসে ঠেকেছিলো।কীর্তি নারায়নের সময় থেকেই একটু একটু করে জমিদার বংশের ভাঙ্গন ধরতে শুরু হয়। কীর্তি নারায়ন খুব সৌখিন আর অত্যাচারী জমিদার ছিলেন।কীর্তি নারায়নের দুই ছেলে ছিলো।বড় ছেলে হরি নারায়ন এবং ছোট চন্দ্র নারায়ন।

দুই ভাইয়ের মধ্যে হরি নারায়ন খুব বিচক্ষণ বুদ্ধি সম্পন্ন ছিলেন এবং হিসেবী জীবন যাপন করতেই ভালোবাসতেন ।তাই প্রজারা হরি নারায়ন কে খুব ভালোবাসতো, শ্রদ্ধার চোখে দেখতো। ছোটভাই চন্দ্র নারায়ন কিন্তু বাবার মতোই প্রজাদের অত্যাচার করা,সুরা পান করা থেকে পুজোর সময় কলকাতা থেকে বাইজিদের এনে আসর বসানো, বিড়ালের বিয়ে থেকে শুরু করে সব কিছুই রপ্ত করে নিয়েছিলেন।

কীর্তি নারায়নের সময় থেকেই জমিদারীর টাকা পয়সা সব তলানিতে এসে ঠেকেছিলো।বাবার পথ অনুসরণ করে ছোট ছেলে চন্দ্র নারায়ন আরো এক ধাপ তলানিতে এগিয়ে নিয়ে গেল। এই সব নিয়েই বড় ছেলে হরি নারায়নের সাথে বাবা কীর্তি নারায়ন আর ভাই চন্দ্র নারায়নের প্রায়ই প্রকাশ্যে খিটিমিটি লেগেই থাকতো।

একদিন এই খিটিমিটির থেকেই ,টাকা পয়সার লেনদেনের হিসেব নিয়ে প্রচন্ড বাক বিতন্ডার সৃষ্টি হয়।এই বাক বিতন্ডার ফলেই আর সুরার নেশায় কীর্তি নারায়ন ,বড় ছেলে হরি নারায়ন কে সেই ক্ষনেই ত্যাজ্য পুত্র ঘোষণা করে বাড়ি থেকে বিতাড়িত করে দেন।

হরি নারায়ন সেই দিনই মায়ের, এবং আত্মীয় স্বজনদের শত বাঁধা অগ্ৰাহ্য করে ,সব সম্পর্ক ছিন্ন করে,ছয় মাস পূর্বে বিবাহিত নব বধূ প্রসন্নকে নিয়ে ঘর ছেড়ে বেরিয়ে আসেন। হরি নারায়ন পরিবার নিয়ে নৌকায় চলতে চলতে কেতুপুর গ্ৰাম থেকে প্রায় বিশ ক্রোশ দূরে উত্তরে নিরিবিলিতে এই নদীর পাড়ে এসে বসতি স্থাপন করেন।

জমিদার পুত্র হরি নারায়ন যখন এই গ্ৰামে বসতি স্থাপন করেছিলেন, তখন এই গ্ৰামের চারিদিক পাথুরে মাটি পরিবেষ্টিত ছিলো। পাথুরে মাটি পরিবেষ্টিত ছিল দেখে ক্রোশ কয়েক জমি কারো এক্তিয়ারভুক্ত ছিলো না। হরি নারায়ন পিতার দ্বারা বিতাড়িত হয়ে মনের দুঃখে, ক্ষোভে, বসবাস করার জন্য এই গ্ৰামটিকেই বেছে নেন।গ্ৰামটিকে সবুজে রূপান্তরিত করার জন্য,আর নদীর ভাঙ্গন প্রতিরোধ করার জন্য ,ত্যাজ্য জমিদার পুত্র হরি নারায়ন লাহিড়ী অনেক গুলো ছোট ছোট বট গাছের চারা এনে নদীর পাড়ে পাড়ে রোপণ করেন। কালক্রমে সেই চারা গাছ বড় হয়ে তার থেকে ঝুড়ি নেমে মহীরুহর আকার ধারন করে। নদীর তীরে এই বট বৃক্ষ অতীতের -বর্তমানের কত অভিজ্ঞতা ও কত ঘটনার সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে তার হিসেব নেই।

প্রথমে এই গ্ৰামের নাম ছিলো মাঠ পাথুরে। পরে এই বট বৃক্ষের থেকে বিশাল- বিশাল ঝুড়ি বেরিয়ে আসায় হরি নারায়ন সবার উদ্দেশ্যে বলেন ,এবার থেকে এই গ্ৰামের নাম মাঠ পাথুরে নয়,এই গ্ৰামের নতুন নাম হবে বটঝুড়ি গ্ৰাম।হরি নারায়নের অনুগত প্রজারা তাই মেনে নেয়। তারপর সবার মুখে মুখে এই গ্ৰামের নাম হয়ে যায় বটঝুড়ি গ্ৰাম।

হরি নারায়ন যখন এই গ্ৰামে বসতি স্থাপন করেন তখন কেতুগ্ৰাম থেকে হরি নারায়নকে ভালোবেসে, খবর জেনে নিয়ে কয়েক ঘর ব্রাহ্মন মুচি, নাপিত, মালী,ধোপা, বৈদ্য সবাই পর পর চলে এসেছিলেন অত্যাচারিত জমিদারের হাত থেকে রক্ষা পেতে।

চলবে---------
পুরো গল্পটি পড়তে ক্লিক করুন এই লিংকে:

আমি সুরবালা দেবী।আজ দুপুরে আমি আমার দুই ছেলের ঘরের দুই নাতনি, আর এক নাতিকে নিয়ে সুদূর কলকাতা থেকে আমার নিজের জন্ম...

     পিউ পরি তোমরা তোমাদের মামমামকে  এত জ্বালাতন করো কেন বল তো ? এসো সোনা মা আমার । চটপট ভাতটা খেয়ে নেও । ভাতটা লক্ষ্মী...
11/09/2025


পিউ পরি তোমরা তোমাদের মামমামকে এত জ্বালাতন করো কেন বল তো ? এসো সোনা মা আমার । চটপট ভাতটা খেয়ে নেও । ভাতটা লক্ষ্মী মেয়ের মত খেয়ে নিলে কি তুমি আমাদের গল্প বলবে ? পিউ বলে উঠলো । ও মামমাম উত্তর দিচ্ছ না কেন ? পরি ও গলা মিলিয়ে বলে উঠলো । বেশ ঠিক আছে বলবো । আগে তো খাবারটা খেয়ে নেও ।

পিউ পরি সৈকত - অনামিকা রায়ের জমজ মেয়ে। দুজনের বয়স আড়াই বছর । অনামিকা রায় বিখ্যাত নিউরো সাইক্রিয়াটিস্ট সৈকত রায়ের স্ত্রী । সৈকতের বাবা - দাদা জুয়েলারী ব্যবসার মালিক হলেও সৈকতের কোনদিনই বিজনেসে উৎসাহ ছিলো না । মানুষের মস্তিষ্ক নিয়ে নানা ধরনের গবেষণাই ওর পছন্দ । তাই আজ ও কলকাতার একটি বিখ্যাত নিউরো সাইন্স হসপিটালের নামকরা চিকিৎসক ।

সকাল থেকে রাত প্রায় সারাদিনই সে তার কর্মস্থলেই ব্যস্ত থাকে । দু দুটো ফুলের মত মেয়েকে কোলে নিয়ে আদর করারও সময় ওর নেই । হঠাৎই বাইরের কলিংবেলটা বেজে উঠলো । অনামিকা একটু চেঁচিয়ে বলে উঠলো শিবানীদি দেখো না কে বেল বাজাচ্ছে ? কথাটা বলে অনামিকা মেয়েদের দিকে তাকালো । মেয়েদুটো এখনও মুখে ভাত নিয়ে বসে আছে ।

এইযে তাড়াতাড়ি মুখ খালি করো । গল্প শুনতে হলে ঝটপট খাবারটা খেয়ে নিতে হবে । দুজনের গল্প শোনার জন্য তাড়াতাড়ি মুখের ভাতটা খেয়ে হাঁ করে বলে উঠলো দেখো মামমাম আমরা খাবারটা ফিনিশ করে ফেলেছি । এদিকে শিবানী টাওয়েলে হাতটা মুছে ড্রয়িং কাম ডাইনিং রুম পেরিয়ে বাড়ির মেন দরজার সামনে এসে হাঁপাতে লাগলো ।

এদিকে কলিংবেলটা আবার ও বেজে উঠলো । কি হলো শিবানীদি দেখো ? হ্যাঁ ছোট বৌদিমণি দেখছি। শিবানী দরজা খুলে পিয়ন রমেনকে দেখতে পেল । বছর ৩৮ এর রমেনের সঙ্গে বছর ৩৪ শিবানীর একটা মিষ্টি মধুর সম্পর্ক তৈরি হয়েছে । সম্পর্কটা এই " রায় প্যালেসে " চিঠি লেনদেনের সূত্রেই তৈরি হয়েছে । যদিও ওরা কোথাও দেখা-সাক্ষাৎ করে না । যেটুকু কথা হয় ফোনে । আর এই চিঠি দিতে এলে ।

শিবানী স্বামী পরিত্যক্তা । আর রমেন ভাই-বোনদের মানুষ করতে গিয়ে নিজের দিকে তাকানোর সময় পায়নি । দুই বোনের বিয়ে হয়ে গেছে । ছোট ভাই ও একমাস আগে একটা মেয়েকে ঘরে এনে তুলেছে । বাদ আছে কেবল রমেন । আজকাল মা প্রায়ই বলেন ওই বাড়ির ছোট বৌদিকে বল উনারা অন্য কাজের লোকের ব্যবস্থা করুক । তুই শিবানীকে নিয়ে কালীঘাটে গিয়ে বিয়ে করে আয় ।

ঠিক আছে বলবো । মাকে কথাটা বলে আশ্বস্ত করলেও ছোট বৌদিমণির সামনে কথাটা বলার সাহস রমেনের হয়নি । ছোট বৌদিমণি খুব ভালো মনের মানুষ । বড় বৌদিমণির মতোন অত দেমাকি নয় । আজকে একবার সাহস করে ছোট বৌদিমণিকে কথাটা বলতেই হবে । রমেন নিজের মনেই বলে উঠলো । কিরে তোরা এতক্ষণ ধরে কি গুজুর গুজুর ফুসুর ফুসুর করছিস ?

পিউ পরির খাওয়া শেষ । ওরা ওদের ঠাকুমার কাছে গেছে । শিবানীকে ঘরে আসতে না দেখে অনামিকাই দরজার সামনে এসে দাঁড়িয়েছে । না ছোট বৌদিমণি সেরকম কিছু না । তোমাকে বলবো বলবো করে একটা কথা বলা হয়নি । ঠিক আছে বলে ফেল । আর রমেন কি দিতে এসেছিস সেটা দে ?

এই নিন ছোট বৌদিমণি বলে রমেন একটা সিল করা খাম অনামিকার হাতে ধরিয়ে দিলো । অনামিকা ঘুরিয়ে ফিরিয়ে ব্রাউন রঙের খামটা দেখতে লাগলো । নিজের মনেই বলে উঠলো দেখে তো মনে হচ্ছিল ইয়ারের চিঠি ? কমলকান্তি শীল নামের একজন লইয়ার বাঁকুড়া থেকে সৈকতের নামে চিঠি পাঠিয়েছেন । কিন্তু একজন লইয়ার সৈকতকে বাড়ির এড্রেসে চিঠি পাঠাতে যাবেন কেন ?

ছোট বৌদিমণি এখানে একটা সই করে দিন । অনামিকা চুপ করে দাঁড়িয়ে রইলো । এখন সৈকতকে ফোন করে লইয়ারে চিঠির কথা বলতে গেলে হয় বিরক্ত হবে । নয়তো ফোনটা কেটে দেবে। ছোট বৌদিমণি ....? অনামিকাকে অন্যমনস্ক দেখে রমেন আর একবার ডেকে উঠলো । রমেন এই এলাকার যেসব ফ্ল্যাট আবাসন বা বাড়িতে চিঠি দিতে যায় সেখানে স্যার বা ম্যাডাম বলে সম্বোধন করে ।

কিন্তু সল্টলেকের " রায় প্যালেসের " ছোট বৌদিমণি এক্কেবারে মাটির মানুষ । প্রথম দিনেই বলেছিলেন ওসব ম্যাডাম বলে সম্বোধন আমার পোষাবে না । রমেন তুমি আমাকে ছোট বৌদিমণি বলেই ডেকো । সেই থেকে রমেন তাই ডাকে । হ্যাঁ কিছু বলছিলে রমেন ? ওই সিগনেচারটা....। পেনটা দেও । পেনটা রমেনের হাতেই ছিলো । অনামিকা রায়ের দিকে বাড়িয়ে দিলো । সিগনেচার করে ব্রাউন খামটা হাতে নিয়ে অনামিকা রায় অন্যমনস্কভাবে ঘরে ঢুকে গেল ।

আজ ও ছোট বৌদিমণিকে আমাদের বিয়ের কথাটা বলা হলো না । শিবানী আফশোসের ছুড়ে বলে উঠলো । রমেন ও অন্যমনস্ক হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো । কি হলো চুপ করে রইলে কেন ? শিবানী রমেনের উদ্দেশ্যে কথাটা বলে উঠলো। শোন শিবানী তোর ওই ছোট বৌদিমণির মুডটা যখন ভালো থাকবে তখন কথাটা বলিস । তারপর তোর ছোট বৌদিমণি বাড়ির সবাইকে কথাটা বলবে । আর স্যার বা ম্যাডাম আমাকে ডাকলে একটা ফোন করে দিস ।

আজ যাই রে । অনেক জায়গায় চিঠি বিলি করতে যেতে হবে । কথাটা বলে রমেন সিমেন্টের বাঁধানো রাস্তাটা দিয়ে দ্রুতপায়ে হেঁটে বাড়ির মেইন গেটের কাছে এসে দাঁড়ালো । দারোয়ান বাহাদুর সিং সকাল থেকে বিকেল অব্দি বাড়ি পাহারায় থাকে । সে এই বাড়ির সার্ভেন্ট কোয়ার্টারে থাকে । বাড়ির সকলে বিহারে থাকে । রাতের বেলা দুজন সিকিউরিটি গার্ড থাকে । রমেনকে তাড়াহুড়ো করে বেরোতে দেখে বলে উঠলো ডিউটি খতম ?

নেহি ভাইয়া । সরকারি নকরী । শ্যাম পাঁচ বাজে তক ডিউটি করনা পরতা হ্যায় । কথাটা বলে কাঁধে চিঠির ব্যাগ ঝুলিয়ে স্কুটিতে গিয়ে বসলো । তারপর দূর থেকে একবার শিবানীর দিকে তাকিয়ে স্কুটিটা স্টার্ট দিলো । চোখের সামনে থেকে স্কুটিটা চলে যেতেই শিবানী একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললো । কিছুদিন ধরে মা ফোনে খালি বিয়ের কথা বলছে ।

দুই দাদার সঙ্গে মা বারাসাতের পৈতৃক ভিটেয় থাকে । বারাসাতে জমির দাম হু হু করে বাড়ছে । দাদারা চাইছে সাড়ে চার কাঠা সহ জমিটা মা দুই ছেলের নামে করে দিক । মার খালি একটাই কথা । শিবানীর বিয়েটা হোক । তারপর লিখে দেব । তার আগে নয় । এখন জমি জায়গা নিজেদের নামে করে নেওয়ার জন্য মার পাশাপাশি দাদারা ওর পেছনে পরে গেছে ।

বাইরের গরম হাওয়া ভেতরে এসে ঢুকছে । শিবানী তাড়াহুড়ো করে ঘরে ঢুকে দরজাটা বন্ধ করে দিলো । এদিকে অনামিকা ব্রাউন রংয়ের খামটা নিয়ে নিজেদের ঘরে এসে ঢুকলো । ঘরের দরজাটা ভেজিয়ে এসি অন করে বিছানায় শরীরটা এলিয়ে দিলো । পিউ পরি দুজনেই আজ ঠাকুমার ঘরে ঘুমিয়েছে । শ্বশুরমশাই আর দাদা ( ভাশুর ) দুজনেই জুয়েলারীর দোকানে । বড় বৌদি সেক্টর ফাইভের একটা অফিসে কাজ করে ।

আর সে একজন লইয়ার হয়ে ঘরে শুয়ে বসে দিন কাটায় । তার কোর্টে যাওয়া পাঁচটা লোকের সঙ্গে কথা বলা সৈকতের পছন্দ নয় । অথচ বিয়ের সময় সৈকতের বাবা সুনির্মল রায় আর ভাশুর সিদ্ধার্থ রায় অনামিকা লইয়ার শুনে খুব খুশি হয়েছিলেন । তখন অনামিকা ল পাশ করে সিনিয়ার লইয়ার অবিনাশ গাঙ্গুলীর আন্ডারে প্র্যাক্টিস আরম্ভ করেছিলো ।

তখন অনামিকার দুচোখে বড় লইয়ার হওয়ার রঙিন স্বপ্নগুলো ঘোরাফেরা করতো । এই অবিনাশ গাঙ্গুলীর কাছে একটা কেস নিয়ে আলোচনা করতে ...
পুরো গল্পটি পড়তে ক্লিক করুন এই লিংকে:

পিউ পরি তোমরা তোমাদের মামমামকে এত জ্বালাতন করো কেন বল তো ? এসো সোনা মা আমার । চটপট ভাতটা খেয়ে নেও । ভাতটা লক্ষ্মী ম.....

     ‘ভাল’ সংজ্ঞাটা সময়ের সঙ্গে সঙ্গে কেমন যেন বদলে যায় মেয়েদের জীবনে। ছোটবেলায় যে মন দিয়ে পড়াশোনা করে, মা-বাবার ক...
11/09/2025


‘ভাল’ সংজ্ঞাটা সময়ের সঙ্গে সঙ্গে কেমন যেন বদলে যায় মেয়েদের জীবনে। ছোটবেলায় যে মন দিয়ে পড়াশোনা করে, মা-বাবার কথা শোনে, সে ‘ভাল মেয়ে’। কলেজে উঠলে পর আবার বিষয়টা অন্যরকম। তখন যে সব মেয়েরা লেটনাইট পার্টি করে না, বা মদ-সিগারেট চাখছে না, তারা ‘ভাল’। পড়া শেষ হয়ে গেলে ‘ভাল মেয়ে’ তাদের বলা হয়, যারা চাকরি পেয়ে গিয়েছে।

আর, তারও পর?

যখন কোনও মেয়ে ত্রিশের সীমানায় কিংবা মধ্য ত্রিশের ঘরে?

এই বয়সে এসে ‘ভাল মেয়ে’ শুধু তারাই, যারা গুছিয়ে ঘর-সংসার করছে। আর কিচ্ছুটি না...

সমাজের এই ‘আয়রনি’ যত স্পষ্ট হচ্ছে, ততই ভাল-মন্দের বোধ গুলিয়ে যাচ্ছে কলকাতার পাতিপুকুর লেনের ৪ নম্বর বাড়ির শ্বেতা গাঙ্গুলির। ছোট থেকে শ্বেতা শুনে আসছে, সে ভাল মেয়ে। ক্লাসে ফার্স্ট হয়... ঘুরে বেড়ায় না, প্রেম করে না... তার মতো লক্ষ্মী মেয়ে হয় না। ফিজিক্সে বিএসসি, এমএসসি পাশের পর এখন পিএইচডি করছে শ্বেতা। আগের মতোই সে পড়া নিয়ে থাকে.... । কলেজে পার্টটাইম লেকচার আর রিসার্চ ফেলোশিপ হিসাবে মাসোহারাও পায়। বন্ধুবান্ধব বিশেষ নেই... পার্টি বা লেটনাইট তো অনেক দূরের ব্যাপার। কিন্তু আগের মতো পাড়ার লোকেরা তাকে দেখিয়ে বলে না, ‘ওই দেখো ভাল মেয়ে, ওর মতো হতে হবে।’ কারণ, শ্বেতার বয়স ত্রিশ পেরিয়ে একত্রিশ ছুঁই, আর সে এখনও অবিবাহিত।

এই একত্রিশ বছরের গোটা একটা জীবন পড়াশোনা করেই কেটেছে। চোখের ভাল লাগা বা কোনও ছেলেকে দেখে বুকের তিরতিরে অনুভূতি যে হয়নি, এমন নয়। তবে যাকে বলে স্টেডি রিলেশনশিপ... সেটা হয়ে ওঠেনি। কারণ... ওই যে... শ্বেতা ছিল ‘ভাল মেয়ে’। হাইস্কুলে ভর্তি হওয়ার সময় মা বলে দিয়েছিল... প্রেম-ভালবাসা থেকে দূরে থাকতে। মায়ের সেই কথা অক্ষরে অক্ষরে মেনেছে সে। ছেলেরাও চশমিশ পড়াকু শ্বেতাকে সমীহ করে দূরে থেকেছে বরাবর। ছোট্টখাট্টো চেহারা.... শ্যামলা গায়ের রং... সামান্য বোঁচা নাক-- শ্বেতাকে সুন্দরী বলা যাবে না। তবে টানা-টানা উজ্জ্বল, মায়াময় চোখে স্নিগ্ধতা আছে, সারল্য আছে। গোলাপের পাঁপড়ির মতো নিখুঁত ঠোঁটের মিষ্টি হাসিতে রয়েছে আলগা আকর্ষণ।

শ্বেতার বাবা বছর পঞ্চান্নর বারীন মিউনিসিপ্যালিটি অফিসের ক্লার্ক, মা লিপিকা শহরতলীর একটি সরকারি স্কুলের শিক্ষিকা। পড়াকু মেয়ের বিয়ে দেওয়ার ভাবনা তাঁদের মাথায় আসেনি শুরুতে। আত্মীয়-পরিজনদের ঠেলায় যখন নড়েচড়ে বসলেন, ততদিনে অনেক দেরি হয়ে গিয়েছে। ‘অ্যারেঞ্জড ম্যারেজে’র বাজারে পঁচিশোর্ধ্ব কন্যার দাম পড়ন্ত। উচ্চশিক্ষিত হওয়ায় ঝামেলা বেড়েছে বই কমেনি। প্রাথমিক কথাবার্তা আর ফোটো চালাচালিতেই আটকে যাচ্ছে অধিকাংশ সম্পর্ক। তবু শেষ দু’বছরে ছ’টা পাত্রপক্ষ বাড়ি পর্যন্ত এসেছে। আজ যারা আসছে, তারা ৭ নম্বর। বাড়ির লোকেরা এসে পছন্দ করবে আগে, তারপর ছেলে আসবে শেষ রায় দিতে।

পাত্রপক্ষ আপ্যায়নের দায়িত্ব সেধে কাঁধে নিয়েছেন শ্বেতার জ্যেঠিমা মনোরমা। বাড়ির নীচতলায় স্বামী বংশী, ছেলে রাজীব, বউমা সেঁযুতিকে নিয়ে মনোরমাদের আলাদা হাঁড়ি। তবে দু’বাড়ির মধ্যে ঝগড়াঝাটি নেই। উল্টে দুই ভাইয়ের মধ্যে বেশ গলায় গলায় ভাব, অধিকাংশ দিন বাজার করতে যান একসঙ্গে। তাতে নাকি দরাদরি করতে সুবিধা হয়। গৃহবধূ মনোরমা আর লিপিকার সম্পর্ক তুলনায় অনেকটা ফর্মাল, ভাবও নেই, আড়িও নেই। দু’জনে পরস্পরকে এড়িয়ে চলেন, মনে মনে হয়তো অপছন্দও করেন। কিন্তু বাড়িতে বা বাইরের লোকদের সেটা জানতে দেন না কেউ। মনোরমা তাঁর একমাত্র মেয়ে জোনাকির বিয়ে দিয়ে দিয়েছিলেন খুবই অল্প বয়সে। স্বভাবতই লোক-লৌকিকতায় লিপিকার চেয়ে পারদর্শী তিনি .... জানেন পাত্রপক্ষ কিসে খুশি হয়, কিসে অখুশি। সকাল-সকাল দোতলায় উঠে হম্বিতম্বি শুরু করে দিয়েছেন মনোরমা।

কথায় বলে, ‘যার বিয়ে তার হুঁশ নেই, পাড়াপড়শির ঘুম নেই’। বাস্তবিকই বাড়িতে যখন এই দক্ষযজ্ঞ চলছে, তখন দিব্যি কাঁথায় মুড়ে নাক ডাকিয়ে ঘুমোচ্ছিল শ্বেতা দিদিমণি। অ্যালার্মের আওয়াজে ধড়ফড় করে বিছানায় উঠে বসে... বাইরের ঘরে জ্যেঠিমা আর মায়ের কথোপকথন কানে আসে শ্বেতার।

-‘ লিপিকা? কাল পুরনো খবর কাগজগুলো সব ডিভানে ঢুকিয়ে গেলাম... আজ দেখছি আবার মেঝেতে পরে আছে।’

-‘আসছি দিদি...’

বিরক্তির সঙ্গে মনোরমা বলেন, ‘আসতে হবে না... আমি ঢুকিয়ে দিচ্ছি। আর তোমায় যে বলেছিলাম শো-কেসে শ্বেতার প্রাইজগুলো সাজিয়ে রেখে দিতে... কিছুই করোনি দেখছি...’

-‘আসছি দিদি...এক মিনিট।’

- ‘বললাম তো, আসতে হবে না। আমি করে দিচ্ছি। তোমাকে দিয়ে ঘর গোছানো... ইমপসিবল.... বারীন কি ছেলেদের বাড়ি ফোন করেছে?’

লিপিকা চায়ের কাপ নিয়ে ঘরে ঢুকতে ঢুকতে বলেন, ‘আমি ফোন করেছিলাম... ছেলের মা বলেছে ৮টায় বেরোবে.. এখানে আসতে আসতে ৯টা... টাইম আছে।’

শ্বেতা এতক্ষণে ঘুমের ঘোর কাটিয়ে বাস্তবে আসতে পেরেছে। বিছানার বইপত্র দ্রুত হাতে দেরাজে তোলে সে। চাদর টেনে, বালিশ সাজিয়ে ঘরটা যতটা সম্ভব গোছানোর চেষ্টা করে। তারপর দরজা দিয়ে উঁকি মেরে দেখে, জ্যেঠিমা কোথায়। বাথরুমে যেতে হলে ড্রয়িংরুম পেরিয়েই যেতে হয়। কিন্তু শ্বেতা এখন জ্যেঠিমার সামনে পড়তে চায় না। এর থেকে এক গ্লাস কুইনাইন খাওয়াও ভাল।

মনোরমার হাতে চায়ের কাপ তুলে দিয়ে লিপিকা বলেন, ‘দিদি, তুমি যে আমাকে কি বাঁচালে... এত কিছু আমার একার দ্বারা হত না।’

মনোরমা চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে মৃদু হাসেন, ‘ আমি আছি যতদিন.... চিন্তা নেই... আগের বারগুলোও যদি আমাকে ডাকতে।’

লিপিকা লজ্জিত গলায় বলেন, ‘আসলে আমি ভেবেছিলাম কথাবার্তা একটু এগোলে তোমাদের জানাব... অ্যাটলিস্ট মেয়েকে ছেলের বাড়ির লোকেরা পছন্দ করলে পর...।’

মনোরমা চিন্তাগ্রস্ত গলায় জানতে চান, ' এটা কত নম্বর?’

লিপিকা ইতস্তত করে বলেন, ‘ নম্বর?...
পুরো গল্পটি পড়তে ক্লিক করুন এই লিংকে:

(১) ‘ভাল’ সংজ্ঞাটা সময়ের সঙ্গে সঙ্গে কেমন যেন বদলে যায় মেয়েদের জীবনে। ছোটবেলায় যে মন দিয়ে পড়াশোনা করে, মা-বা.....

     প্রথম পর্বকলকাতা পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের অন্যতম সক্রিয় অফিসার বিশ্বনাথ তালুকদার সদ্য অবসর নিয়ে সংসার পরিচর্য্যা...
11/09/2025


প্রথম পর্ব

কলকাতা পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের অন্যতম সক্রিয় অফিসার বিশ্বনাথ তালুকদার সদ্য অবসর নিয়ে সংসার পরিচর্য্যার দিকে নজর দিলেন ।

কর্মজীবনে ফুরসৎ পাননি কখনও। ব্যস্ততার আড়ালে সংসারের দিকে তেমন লক্ষ্য রাখতে পারেননি । এবার তাই ঠিক করলেন - আর নয় গোয়েন্দাগিরি । এবার পরিবার পরিজন নিয়ে বাকি জীবনটা কাটিয়ে দেবেন ।

কিন্তু ঈশ্বর বুঝি অন্য বন্দোবস্ত করে রেখেছেন । সেদিন এক বৃষ্টি ঝরা সন্ধ্যায় ব্যালকনিতে বসে বৃষ্টির গুঞ্জন শুনছিলেন । হাতে এক কাপ ধোঁয়া ওঠা গরম কফি । আলতো চুমুক দিয়ে উষ্ণতা মেপে নিচ্ছিলেন ।

হঠাৎ গেটের বাইরে একটি গাড়ির গোঙানির শব্দ শুনতে পেলেন । দেখলেন একটি কালো রঙের বিলাসবহুল গাড়ি মরচে পড়া লোহার দরজা ঠেলে লনে ঢুকে পড়ল ।

গাড়ি থেকে নামলেন জনৈকা ভদ্রমহিলা , পরণে দামী শিল্কের শাড়ি ; হাতে ব্র্যাণ্ডেড ব্যাগ । তাঁর পিছনে - সম্ভবত তাঁর প্রহরী মাথায় ছাতা ধরে মূল দরজায় এসে দাঁড়ালেন।

কলিং বেলে হাত দেওয়ার আগেই দরজা খুলে দিল সাহেবের বিশ্বাসভাজন, পুরোনো দিনের কর্মচারী গগন । বছর ষাটের গগন জিজ্ঞাসু দৃষ্টি নিয়ে বলল - " কে আপনি ম্যা'ম ? কি প্রয়োজনে এসেছেন ?"

ভদ্রমহিলার প্রহরী, গাট্টাগোট্টা চেহারার পালোয়ানটি বলল - " সাহেব বাড়ি আছেন " ?

ভদ্রমহিলা সে প্রশ্নের উত্তরের অপেক্ষায় না থেকে সরাসরি বললেন -" আমি শ্রীমতি নিবেদিতা রায় । ডিটেকটিভ তালুকদারের সঙ্গে আমার জরুরি কথা আছে ।"

মহিলার কন্ঠস্বরে অনেক চিন্তার প্রতিফলন দেখতে পেলেন মি: বিশ্বনাথ তালুকদার । গগনের খবর দেবার অপেক্ষা না করে নেমে এলেন দরজার সামনে । তাঁর চোখে কৌতুহল - এই বৃষ্টিবিঘ্নিত সন্ধ্যায় একজন অপরিচিতা মহিলা কেন এসেছেন !

" আসুন , ভেতরে আসুন " - মিঃ তালুকদার বিনয়ের সঙ্গে বললেন ।

নিবেদিতা ভেতরে এসে সোফায় বসলেন । তাঁর প্রহরীকে নির্দেশ দিলেন গাড়িতে যেয়ে বসতে । সে চলে গেল ।

নিবেদিতা রায় - বয়স আনুমানিক চল্লিশ । উজ্জ্বল দুই চোখে কান্নার ছাপ । তীক্ষ্ণ দৃষ্টি নিয়ে তাকালে দু' চারটে পাকা চুল দুই কানের পাশে স্পষ্ট দেখা যায় ।

মিঃ তালুকদার বললেন - " বলুন, আমি আপনার কি সাহায্য করতে পারি ? তবে এখনই বলে রাখি চাকরি থেকে অবসর নেবার পর আমি আর গোয়েন্দাগিরি করব না বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছি । তবে আপনি এসেছেন যখন , আপনাকে ফেরাব না । পরামর্শ দিয়ে অবশ্যই হেল্প করব ।

নিবেদিতার মুখ যেন নিমেষে কালো হয়ে গেল ।

" অনেক আশা নিয়ে আপনার নিকট এসেছি স্যার । আমার কথাগুলো শুনলে আমি সিদ্ধান্ত বদল করবেনই - এই আমার আশা ।"

কৌতূহল চারগুণ বেড়ে গেল তালুকদারের । বললেন - " বেশ বলুন তবে শুনি ।"

" আমার হাজব্যান্ড, মিঃ অরিন্দম রায় গত এক সপ্তাহ ধরে নিখোঁজ । পুলিশে জানিয়েছি ; কিন্তু তাঁরা এখনও পর্য্যন্ত কোন খোঁজ দিতে পারেননি । আমার মনে হচ্ছে এর পিছনে অবশ্যই কোন রহস্য আছে ।"

" আপনার হাজব্যান্ড কি করতেন ?"

" ওঁর বড়বাজারে সোনার একটা বড় ব্যবসা ছিল - ' রায় জুয়েলার্স ' - নামটা শুনেছেন নিশ্চয় !

মিঃ তালুকদার মাথা নেড়ে সম্মতি জানালেন । বললেন - " শুনেছি । রায় জুয়েলার্স কলকাতার এক নামী অভিজাত স্বর্ণ প্রতিষ্ঠান ।"

কিছুক্ষণ নিবেদিতার মুখের দিকে চেয়ে বললেন - " নিখোঁজ হবার আগে ওঁর আচরণে কোন অস্বাভাবিকতা ছিল কি ? "

নিবেদিতা একটু ভেবে নিয়ে বললেন - " হ্যাঁ ,বেশ কিছুদিন যাবৎ উনি ভীষণ চিন্তিত ছিলেন । ফোনে কারও সঙ্গে ফিসফিস করে কথা বলতেন । জিজ্ঞেস করলে বলতেন ব্যাবসা নিয়ে কথা চলছে । কিন্তু আমারমনে হত উনি কিছু গোপন করছেন ।"

" আর কিছু ? "

" হ্যাঁ, ওঁর মাথার চুলে কিছু অদ্ভুত ধরণের পরিবর্তন দেখেছিলাম । আমার মনে হয়েছিল রাতারাতি ওঁর চুলগুলো পেকে যাচ্ছে ।"

মিঃ তালুকদার ভ্রু কুঁচকে বললেন - " পাকা চুল ? এটা কি কোন অস্বাভাবিক ব্যাপার হল ? এখন তো চুল কম বয়সীদেরও অল্প বিস্তর পেকে যাচ্ছে । এই যেমন ধরুন আপনি । আপনাকে দেখে তো চল্লিশের বেশি তো মনে হয় না । তবু তো দেখছি কানের পাশে দু'চারটে চুলে পাক ধরেছে !"

নিবেদিতা নিশ্চিন্ত হলেন । এই গোয়েন্দাই পারবেন তাঁর হাজব্যান্ডের খবর নিতে - যা তীক্ষ্ণ দৃষ্টি ওঁর ! একেবারে শ্যেন পাখি যেন ! তর্ক না করে বললেন -

" সে না হয় ঠিক বলেছেন স্যার । কিন্তু চুলগুলো যদি সাদা না হয়ে ধোঁয়াটে বা ধূসর রঙের হয় ?

এই তথ্যটি তালুকদারের মনোযোগ আকর্ষণ করল । শুধু নিখোঁজ হওয়া নয় ; চুলের এ রকম পরিবর্তনে তিনিও ভাবিত হলেন ।

' আচ্ছা !" মিঃ তালুকদার বললেন " উনি শেষবার কোথায় গিয়েছিলেন বলতে পারবেন ?"

" গত সোমবার উনি ব্যবসার কাজে যাচ্ছেন বলে আর বাড়ি ফেরেননি । ওনার মোবাইল ফোনও নিষ্ক্রিয় আছে । "

মিঃ তালুকদার অনেকক্ষণ চিন্তা করলেন - " আপনার হাজব্যান্ডের কোন শত্রু আছে বলে আপনার মনে হয় ?"

" ঠিক জানি না স্যার ! ব্যবসায়িক প্রতিদ্বন্দ্বী থাকতেও পারে , তবে শত্রুতার কথা আমি কিছুই জানি না ।"

" আপনাদের বাড়িতে আর কে কে থাকেন ?"

" আমরা দু'জন আর আমার শ্বশুর-শাশুড়ি ।"

" কোন ঝি, চাকর বা অন্য রিলেটিভ ?"

" না । ঝি একজন ছিল বটে , বছর পাঁচেক আগে আমিই ওকে জবাব দিয়ে দিয়েছিলাম। বড় ফাঁকিবাজ ছিল মেয়েটা ।"

" তারপর থেকে সে কোনদিন আপনার সঙ্গে সম্পর্ক রাখেনি ?"

" একদমই না স্যার !"

" আপনার শ্বশুর মশাই বা শাশুড়ি মায়ের সঙ্গে আপনার কেমন সম্পর্ক ছিল ?"

" মোটামুটি ভালোই । শাশুড়ি মা ছেলের বিষয়ে খুব সংবেদনশীল ছিলেন বলে মাঝে মাঝে কথা কাটাকাটি হয়ে যেত অবশ্য । তবে এতে সম্পর্কের কোন হানি হয়নি । আর শ্বশুর মশাই তো মাটির মানুষ ! জানেন স্যার অরিন্দম নিখোঁজ হবার পর ওঁরা দু'জনই ভীষণ ভেঙে পড়েছেন ।"

মিঃ তালুকদার নিবেদিতার কথা মন দিয়ে শুনলেন । নিখোঁজ হয়ে যাওয়ার ঘটনা এবং পাকা চুলের রহস্য তাঁর মনে বিশাল প্রভাব ফেলে দিল । তিনি তাঁর পূর্বেকার সিদ্ধান্ত বদল করে এই মামলার তদন্ত করতে সম্মত হলেন।

" মিসেস রায় , আপনি আপনার হাজব্যান্ডকে খুঁজে পেতে যথাসাধ্য সাহায্য করব । তবে আপনাকেও সহযোগিতা করতে হবে । "

নিবেদিতা যেন হাতে স্বর্গ পেলেন - বললেন " আমি সব ধরণের সাহায্য করতে প্রস্তুত স্যার ।"

" তাহলে কাল সকালে আপনার স্বামীর কারেন্ট একটা ছবি এবং তাঁর সম্পর্কে কিছু তথ্য নিয়ে আমার নিকটে আসবেন । আর হ্যাঁ, আপনার হাজব্যান্ডের কিছু পাকা
চুল যদি সংগ্রহে থাকে ......"।

" অবশ্যই আনব স্যার । ওঁর বালিশে কিছু চুল লেখেছিল সেগুলো আমি একটা শিশিতে ভরে রেখেছি । আনব কাল ।"

নিবেদিতা রায়কে বিদায় করে মিঃ তালুকদার সোজা দোতলায় চলে গেলেন । গগনকে বললেন দরজা ভালো ভাবে বন্ধ রাখতে আর তাঁর রাতের খাবারটা যেন ওখানেই পৌঁছে দেয় ।

দোতলার সিঁড়ি বেয়ে ওঠার সময় আচমকা তাঁর মোবাইলে একটা ' কল ' এল । নাম্বারটা অজানা । কলার আইডেন্টিটিতেও কোন নাম এল না ।

তিনি ফোন তুলে ' হ্যালো' বলতেই অন্য পার থেকে একটি মেয়েলি গলায় কে যেন বলে উঠল - " বেঁচে থাকার ইচ্ছে থাকলে কেসটা নেবেন না স্যার । রিকোয়েস্ট করছি । শুনলে ভালো নইলে...
পুরো গল্পটি পড়তে ক্লিক করুন এই লিংকে:

প্রথম পর্ব কলকাতা পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের অন্যতম সক্রিয় অফিসার বিশ্বনাথ তালুকদার সদ্য অবসর নিয়ে সংসার পরিচ...

     চন্দনা ও সৌমেন্দ্র চ্যাটার্জি এসেছেন ডাঃ দিব্যেন্দু ঘোষের চেম্বারে। ডাক্তারবাবু এখনও আসেননি। ফোনে নাম লেখানো আছে। প...
11/09/2025


চন্দনা ও সৌমেন্দ্র চ্যাটার্জি এসেছেন ডাঃ দিব্যেন্দু ঘোষের চেম্বারে। ডাক্তারবাবু এখনও আসেননি। ফোনে নাম লেখানো আছে। প্রথমেই নাম বলে তাড়াহুড়ো করে সকাল সাড়ে ছটায় বেরিয়ে ছিলেন ওঁরা। সাঁতরাগাছি থেকে দেশপ্রিয় পার্ক আসতে পৌনে এক ঘণ্টা লেগেছে। ডাক্তারবাবু বসবেন ন’‌টায়। অন্য রোগীরা আসতে শুরু করেছে। রিসেপশনের তরুণী মাঝে মাঝে হাত দিয়ে চোখ রগড়াচ্ছেন। দেখে বোঝা যাচ্ছে ঘুমের ঘাটতি হয়েছে। এক মাঝ বয়সী মহিলা এসে সটান ডাক্তারের চেম্বারে ঢুকে গেলেন। ডাক্তারের সহকারী হবেন। তারপরই রিসেপশনের তরুণী টানটান হয়ে বসলেন। মাইকোফোনটা মুখের সামনে নিয়ে ঘোষণা করলেন—চন্দনা চ্যাটার্জি। সৌমেন্দ্রবাবু ও চন্দনাদেবী উঠে গেলেন। তরুণী বললেন, ‘এগারোশো টাকা দেবেন। ডাক্তারবাবুর ফি হাজার টাকা, একশো টাকা রেজস্ট্রেশনের জন্য।’‌ সৌমেন্দ্রবাবু দুটো পাঁচশো আর একটা একশো টাকার নোট এগিয়ে দিলেন। ঘড়ঘড় করে বিল বেরিয়ে এল। তরুণী সৌমেন্দ্র‌বাবুর হাতে বিলটা দিয়ে বসতে বললেন।এক এক করে রোগীর ভিড় বাড়ছে। সবাই কম বয়সী দম্পতি। চন্দনাদেবী তাদের মুখের দিকে একবার করে তাকান, মনটা কেমন করে, লজ্জা পান। সৌমেন্দ্রবাবু মাথা নীচু করে পেপার পড়ছেন। লজ্জা তাঁরও হয়তো পাচ্ছে। এই বয়সে...! চন্দনাদেবী অন্তঃসন্ত্বা মায়েদের দিকে একবার করে ঘাড় উঁচু করে দেখেন। বয়স আন্দাজ ‌করার চেষ্টা করেন। বেশির ভাগই তিরিশ–বত্রিশের মধ্যে, একজনের একটু বেশি মনে হল, তবুও কত হবে বড় জোর চল্লিশ–বিয়াল্লিশ।‌ চন্দনাদেবী হতাশ হন। সৌমেন্দ্রবাবু জামার হাতাটা তুলে ঘড়ি দেখলেন, এখনও দশ মিনিট বাকি ন’‌টা বাজতে। বেলা নিয়ে নিয়ে কোনও হেলদোল নেই চন্দনাদেবীর। এতটুকুও অধৈর্য হতে দেখা যাচ্ছে না। তিনি খুঁজে বেড়াচ্ছেন একটু বেশি বয়সী মায়ের মুখ। যা দেখে খানিক অন্তত আশ্বস্ত হবেন। এরই মধ্যে ঘোষণা হল—মিসেস চন্দনা চ্যাটার্জি।ডাক্তারের চেম্বারে ঢুকলেন সৌমেন্দ্রবাবু ও চন্দনাদেবী। বয়স্ক রোগী দেখে ডাঃ দিব্যেন্দু ঘোষ উঠে দাঁড়িয়ে তাঁদের বসতে বললেন। ‌দু’‌জনে পাশাপাশি বসলেন। ডাক্তারবাবু জানতে চাইলেন, ‘‌কী সমস্যা হল এখন?‌’‌ কারও মুখে কোনও সাড়া নেই। ডাক্তার বললেন, ‘‌লজ্জা পাবেন না, নিঃসঙ্কোচে আমাকে বলুন।’‌ সৌমেন্দ্রবাবু মুখ খুলতে যাচ্ছিলেন, সেই সময় চন্দনাদেবীর মুখ থেকে কথাটা যেন ছিটকে বেরিয়ে এল, ‘‌আমি মা হতে চাই ডাক্তারবাবু।’‌ বলেই লজ্জায় মুখটা নামিয়ে নিলেন। ডাক্তারবাবুর সহকারি মহিলা চন্দনাদেবীর দিকে সবিস্ময়ে তাকিয়ে। সৌমেন্দ্রবাবুও মুখ নীচু করে বসে। ডাক্তার ঘোষও খানিক হতভম্ব। একবার চন্দনাদেবীকে দেখেন একবার সৌমেন্দ্রবাবুকে। বয়স আন্দাজ করার চেষ্টা করছেন। তবুও জানতে চাইলেন, ‘‌আপনার বয়স কত?‌’‌চন্দনাদেবী ঘাড় একটু তুলে বললেন, ‘‌আমার পঞ্চান্ন, ওর বাহাত্তর।’‌ ডাক্তার ঘোষ বলতে যাচ্ছিলেন, ‌‘‌এই বয়সে...।’‌ চন্দনাদেবী উঠে পড়ে ডাক্তারের হাতটা খপ করে ধরে নিয়ে বললেন, ‘‌আমাকে নিরাশ করবেন না ডাক্তারবাবু। অনেক আশা নিয়ে আপনার কাছে এসেছি। কত ডাক্তার দেখালাম কেউ আমাদের আশা দেখাতে পারেননি। আপনিই পারেন আমার সন্তানকে ফিরিয়ে দিতে। আপনার কথা অনেক শুনেছি, পড়েছি, আপনিই শেষ আশা আমাদের।’‌ডাক্তার প্রশ্ন করলেন, ‘‌এত দেরি করলেন কেন? আরও আগে আসতে পারতেন। অনেক দেরি হয়ে গেছে। সন্তান নেওয়ার কথা কী আপনারা অনেক পরে ভেবেছেন?‌কাঁদতে শুরু করেন চন্দনাদেবী। সৌমেন্দ্রবাবু স্ত্রীকে সান্ত্বনা দিয়ে বললেন, ‘‌এটা ডাক্তারের চেম্বার চন্দনা, কেঁদো না। বাইরে কত রোগী আছেন। সময় নষ্ট হবে।’‌ডাঃ দিব্যেন্দু ঘোষও সান্ত্বনা দিয়ে বললেন, ‘‌কাঁদবেন না, আমি যথাসাধ্য চেষ্টা করব। তবে এখানে বয়স বড় ফ্যাক্টর। অনেক পরীক্ষার মধ্য দিয়ে যেতে হবে। উত্তীর্ণ হলে তবেই হবে। ’‌চন্দনাদেবী গলা তুলে বললেন, ‘‌আমার দৃঢ় বিশ্বাস, আমি সব পরীক্ষায় পাশ করব, ও যে বলছে, মা আমি তোমার কাছে আসতে চাই।’‌ সৌমেন্দ্রবাবু বললেন, ‘‌উত্তেজিত হও না চন্দনা। চিকিৎসা বিজ্ঞান অনেক দূর এগিয়েছে জানি কিন্তু তোমার অবাস্তব আবদার মেটানো সম্ভব নয়!‌ তুমি মিছে আশায় বুক বাঁধছ।’‌ চন্দনাদেবী আরও উত্তেজিত হয়ে বলেন, ‘‌তুমি আমাকে নিরাশ করো না তো। আমার বিশ্বাস ডাক্তারবাবু পারবেন আমার ঋককে ফিরিয়ে দিতে।’‌ ‌ ‌ডাক্তার ঘোষ এতক্ষণ গভীর মনোযোগে শুনছিলেন দম্পতির কথাবার্তা। এবার শান্ত গলায় বললেন, ‘‌আপনাদের কথা আমাকে খুলে বলুন। যতই পারিবারিক হোক আমাকে বলুন, যদি কিছু করতে পারি তাতে সুবিধে হবে।’‌সৌমেন্দ্রবাবু শুরু করলেন, ‘‌আমাদের একটা সন্তান ছিল ডাক্তারবাবু। আমরা তাকে হারিয়েছি। আর কোনওদিন সে ফিরবে না। আমার স্ত্রীর বায়না আবার সন্তান ধারন করবে, ওকে নাকি আমাদের ছেলে ঋক স্বপ্নে বলে—মা আমি তোমার কাছে ফিরতে চাই। জানেন ডাক্তারবাবু সন্তান হারিয়ে আমরা দু–জনেই এখন মানসিক রোগী। আমার চেয়ে ও একটু বেশি, আসলে ও তো মা। ও এসেছে অনেক আশা নিয়ে, আমি জানি এ আশা ওর কোনওদিন পূরণ হবে না, তবুও আমি নিয়ে এসেছি, আপনি যদি ওকে বুঝিয়ে বলে নিরস্ত করেন।’‌ চন্দনাদেবী হাতজোড় করে বলেন, ‘‌ডাক্তারবাবু ওর কথা শুনে আমাকে নিরাশ করবেন না। আপনিও তো কোনও মায়ের ছেলে, মায়ের যন্ত্রণা বোঝেন তো। প্রতি রাতে ঋক আমার কাছে আসে। আমার ঋক কী বলে জানেন, মা আমি তোমার কাছে আবার ফিরতে চাই, আমাকে দূরে সরিয়ে রেখো না। আমি আর তোমাদের ছেড়ে কোথাও যাব না। ছেলের এই আর্তি মা হয়ে ফেলি কী করে ডাক্তারবাবু!‌’‌ ডাক্তার বলেন, ‘‌চিকিৎসাশাস্ত্র তো বিজ্ঞান মা, তার বাইরে আমার কোনও হাত নেই। অলৌকিক কিছু ঘটানোর ক্ষমতা আমার নেই। আপনাদেরই পরীক্ষা দিয়ে পাশ করতে হবে। অনেক জটিল সব পরীক্ষা, এবয়সে শরীর সে সব নিতে পারবে কিনা তা দেখতে হবে। তা ছাড়াও কিছু আইনি ব্যাপার আছে। স্বাস্থ্য দপ্তরের অনুমতি লাগে। সেটা অনেক পরের কথা, আগে তো শারীরিক পরীক্ষায় পাশ করা।’‌ চন্দনাদেবী আবার কান্না শুরু করেন। সৌমেন্দ্রবাবু একটু দাবড়ে বলেন, ‘‌কী করছ চন্দনা, এটা ডাক্তারের চেম্বার। বাচ্চা ছেলের মতো তুমি চাঁদের জন্য বায়না করছো। কেউ তোমার সাধ মেটাতে পারবে না।’‌ ডাক্তার বলেন, ‘‌এভাবে বকবেন না। ওঁর মনের অবস্থা বুঝতে পারছি। ‌ওঁকে ঠান্ডা মাথায় বোঝাতে হবে।’‌ এবার চন্দনাদেবীর দিকে মুখ করে ডাক্তার বলেন, ‘‌আচ্ছা মা আপনার বয়স বললেন পঞ্চান্ন, ধরুন আপনার কোলে সন্তান এল, তাকে মানুষ করতে সময় লাগবে, পারবেন তো?‌ মানুষের কথা তো বলা যায় না, আপনাদের কারও যদি কিছু হয়ে যায় সে তো অনাথ হয়ে যাবে, তাকে দেখবে কে?‌ একটা ছেলেমেয়ে সাবলম্বী হতে কম করে পঁচিশ–ছাব্বিশ বছর সময় লাগবে। ততদিন তো আপনাদের বাঁচতে হবে। আপনাদের বয়সের সঙ্গে ওই সংখ্যাটা যোগ করে দেখুন কত বছর হচ্ছে। এভাবে ভাবুন, তখন সেই ছেলেমেয়ের কী হবে!‌ কোথায় যাবে!‌ কী করবে!‌ তাকে আপনারা জেনেবুঝে তো অন্ধকারে ফেলে দেবেন।’‌ চন্দনাদেবী হাউ হাউ করে কাঁদতে থাকেন। ‘‌এভাবে ওকে আমার কাছ থেকে দূরে সরিয়ে দেবেন না ডাক্তারবাবু। আমি এখনও যে বেঁচে আছি শুধু এই আশা নিয়ে, না হলে তো কবেই নিজেকে শেষ করে দিতাম। ওকে না পেলে আমি বাঁচব না। আজই আমি নিজেকে শেষ করে দেব। অনেকদিন হল আর তাকে ছেড়ে থাকতে পারছি না। আমি চললাম।’‌ উঠে পড়েন চন্দনাদেবী। দরজা ঠেলে বেরোতে যান। তখনই ডাক্তার ঘোষ শান্ত গলায় বলেন, ....
পুরো গল্পটি পড়তে ক্লিক করুন এই লিংকে:

( পর্ব -১ ) চন্দনা ও সৌমেন্দ্র চ্যাটার্জি এসেছেন ডাঃ দিব্যেন্দু ঘোষের চেম্বারে। ডাক্তারবাবু এখনও আসেননি। ফোনে নাম ...

     গুল নাহার, আঠারো বছরের এক স্বপ্নময়ী তরুণী। তার জীবনটা ছিল শহরের ছিমছাম মেসবাড়ির নিরালা ঘর, আর রুমালে সূঁচ-সুতোয় নকশ...
11/09/2025


গুল নাহার, আঠারো বছরের এক স্বপ্নময়ী তরুণী। তার জীবনটা ছিল শহরের ছিমছাম মেসবাড়ির নিরালা ঘর, আর রুমালে সূঁচ-সুতোয় নকশা তোলার দিনলিপি। ইউনিভার্সিটির পুঁথিগত বিদ্যা, লাইব্রেরির পুরোনো বইয়ের গন্ধ, আর অল্প কিছু সখীর সাথে চাপা হাসি-ঠাট্টা—এটাই ছিল তার চেনা পৃথিবী। হাতে হাতে মোবাইল ফোনের ঝলকানি বা ইন্টারনেটের দূর-দুরান্তের খবর তখনো সমাজের সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছায়নি। নিতান্ত প্রয়োজন থাকলে মানুষ সেকালের ভারী ল্যান্ডফোন ব্যবহার করত, যার ঘণ্টা বাজলে পাড়াসুদ্ধু লোক জেনে যেত কোনো জরুরি বার্তা এসেছে। নয়তো দূর-দূরান্তে খবর যেত চিঠির মাধ্যমে, ডাকপিয়নের লম্বা পথচলায়। গুল নাহারের দিনের বেশিরভাগ সময় কাটত শরৎচন্দ্র বা বঙ্কিমচন্দ্রের উপন্যাসের পাতায় ডুবে থেকে, নয়তো সূঁচ-সুতোয় কাঁথা বা রুমালে নতুন নকশা তুলে। একমাত্র দাদীর ছত্রছায়ায় সে এত বড় হয়েছে সে। মা-বাবার স্মৃতি বলতে তার জীবনে কিছুই ছিল না। তাদের মুখ কেমন ছিল, তাদের কণ্ঠস্বর কেমন শোনাতো, তাদের স্পর্শ কেমন ছিল—নাহারের মনে এসবের বিন্দুমাত্র ছাপ নেই। সে জানত না, তারা জীবিত নাকি মৃত। এই শূন্যতা এক অদৃশ্য ক্ষত হয়ে তার ভেতরে বাসা বেঁধেছিল, যা সে তার মনের কৌতূহল আর কল্পনার জগৎ দিয়ে ঢেকে রাখত।

সেই বর্ষার দুপুরে, যখন আকাশ মেঘে ঢাকা, মেসবাড়ির ল্যান্ডফোনটা আচমকা বেজে উঠল। তার কর্কশ রিং টোনে যেন নিস্তব্ধ দুপুর ভেঙে গেল। দাসী এসে জানাল, "নাহার দিদিভাই তোমার দাদিমা ফোন করেছেন!" গুল নাহারের বুক ধড়ফড় করে উঠল। কিশোরী বয়সে পদার্পণ করার পর দাদির সঙ্গে তার যোগাযোগ খুব একটা ছিল না, বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া ফোন আসত না বললেই চলে। তবে এই দাদীই এই ধরণীতে গুল নাহারের একমাত্র আপনজন।ফোনের ও প্রান্তে তার দাদি, যার সঙ্গে তার সম্পর্ক সেই মেয়েবেলা থেকে। তাঁর কণ্ঠে এক অনির্বচনীয় দৃঢ়তা আর চোখে এক অদ্ভুত দ্যুতি। দাদির প্রৌঢ়া, জীর্ণ শরীরেও যে এক ঝলমলে তেজ লুকিয়ে থাকে, তা নাহারের অজানা ছিল না। তবে আজকের সেই ডাক যেন অন্যরকম। দাদি শান্ত, অথচ দৃঢ় কণ্ঠে বললেন, "গুল নাহার, তোকে এখানে একবার আসতেই হবে। দেরি করিস না। এই মহল তোকে ডাকছে।"

নাহারের বুক ধড়ফড় করে উঠল। মহল? মুর্শিদাবাদের নবাবী আমলের পর থেকে তাদের পরিবার এই মহলের সঙ্গে এক অদৃশ্য সূত্রে বাঁধা—এ কথা সে দাদির কাছে বহুবার শুনেছে। কিন্তু এই মুহূর্তে দাদির কথাগুলো যেন এক গভীর রহস্যের জাল বুনে দিচ্ছিল। দাদির বয়স হয়েছে, হয়তো বাতিকগ্রস্ত হয়ে এমন কথা বলছেন, নাহার নিজেকে বোঝানোর চেষ্টা করল। সে প্রশ্ন করতে চাইল, কিন্তু দাদির কণ্ঠের সেই গুরুগম্ভীর সুর, যা আদেশ না হয়েও আদেশ ছিল, তা উপেক্ষা করার মতো নয়। নাহারের মনে দোলাচল শুরু হলো—এটা কি নতুন জীবনের সূচনা, এক গৌরবময় উত্তরাধিকারের প্রতি আমন্ত্রণ, নাকি এক অজানা ফাঁদের দিকে পা বাড়ানো? তার চেনা জীবনের নিরাপত্তা খসে পড়তে শুরু করল। ইউনিভার্সিটি, সখীরা, ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা—সবকিছুই যেন মুহূর্তে গুরুত্বহীন হয়ে পড়ল। মহলের প্রতি তার এই হঠাৎ টানাপোড়েন তাকে এক অদ্ভুত অস্বস্তিতে ফেলল, যা সে আগে কখনো অনুভব করেনি। দাদির কথার প্রতিটি শব্দ যেন তার মনে এক গভীর কৌতূহল আর এক অজানা ভয়ের বীজ বুনে দিল।

দ্রুত একটা ট্রেনের টিকিট কেটে গুল নাহার রওনা হলো। স্টেশনের ভিড়, ট্রেনের ঘর্ঘর শব্দ তার কানে বাজলেও, তার মন যেন দাদির বলা কথাগুলোর গভীরে ডুবে যাচ্ছিল। ট্রেনের জানালার বাইরে দিয়ে দ্রুত ছুটে যাচ্ছিল চেনা শহরের পরিচিত দৃশ্যগুলো—নতুন ওঠা পাকা দালান, ব্যস্ত রাস্তাঘাট, হাতে টানা রিকশার সারি। এসব যেন মুহূর্তে দূরবর্তী, অচেনা মনে হচ্ছিল। নাহারের মন ছিল এক অদ্ভুত ঘোরে। গ্রামের দিকে ট্রেন যত এগোচ্ছিল, তত যেন বাতাসে এক প্রাচীন রহস্যের ছোঁয়া লাগছিল। পরিচিত শহরের গন্ধ সরে গিয়ে এক পুরোনো কাঠ আর মাটির মিশেল গন্ধ তার নাকে আসছিল, যেন মুর্শিদাবাদের মাটি আর মহলের বাতাস তাকে দূর থেকেই ডাকছিল। সূর্যাস্ত তখনো হয়নি, কিন্তু দিগন্তে সিঁদুরে মেঘ আর গাছের ছায়াগুলো যেন আরও দীর্ঘ, আরও রহস্যময় হয়ে উঠছিল। মাঠের পর মাঠ পেরিয়ে যখন ট্রেনটা ছোট রেলস্টেশনে থামল, তখন চারপাশ নিস্তব্ধতায় ভরে গেছে, শুধু ঝিঁঝিঁ পোকার একঘেয়ে ডাক শোনা যাচ্ছিল। শহরের যান্ত্রিক জীবনের পর এই গ্রামের নিস্তব্ধতা নাহারের কাছে এক অন্যরকম অনুভব নিয়ে এল—যেন সে এমন এক জায়গায় এসে পৌঁছেছে যেখানে সময়ের গতি শ্লথ হয়ে গেছে, আর প্রতিটি বাতাস যেন অতীতের এক নিশ্বাস।

রেলস্টেশন থেকে মহলটা বেশ খানিকটা দূরে। গ্রামের একমাত্র গরুর গাড়ির চালক, যার নাম 'ফজল মিয়া', সে নাহারকে নিয়ে মহলের দিকে রওনা দিল। সেকালের যান বলতে গরুর গাড়িই ছিল প্রধান ভরসা। গরুর গাড়ির চাকার ক্যাঁচক্যাঁচ শব্দ আর ফজল মিয়ার ধীরগতির চলা নাহারের অস্থির মনকে আরও উত্তেজিত করে তুলল। সন্ধ্যার আবছা আলোয়, মহলের দিকে এগোতে এগোতে নাহার দেখল চারপাশের রাস্তাঘাট আরও নিস্তব্ধ হয়ে আসছে। গাছের ছায়াগুলো যেন আরও ঘন হয়ে পথ আটকে দাঁড়িয়েছে। আকাশে চাঁদ তখনো পুরোপুরি ওঠেনি, শুধু তার আবছা আলোয় পথের পাশের গাছপালাগুলো ভৌতিক রূপ ধারণ করছিল। অবশেষে, ফজল মিয়া যখন মহলের গেটে গরুর গাড়ি থামাল, তখন চারপাশের নিস্তব্ধতা আরও গভীর হয়েছে।

মহলের উঁচু কাঠের দরজা, যা শত শত বছর ধরে ইতিহাস আর রহস্যের নীরব সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে, তা দেখে নাহারের মনে এক অদ্ভুত অনুভূতি হলো। দরজাটা এত বিশাল আর প্রাচীন যে, তার দিকে তাকালে যেন সময়ও থমকে যায়। কাঠের গায়ে খোদাই করা নকশাগুলো অস্পষ্ট, কিন্তু তারা যেন এক প্রাচীন ভাষার কথা বলছে, যা নাহার বুঝতে না পারলেও তার কানে এক অদ্ভুত প্রতিধ্বনি তুলছিল। ফজল মিয়া গরুর গাড়ি থেকে নামতেই দ্রুত দূরে অদৃশ্য হয়ে গেল, যেন সে এই মহলের রহস্যের অংশ হতে চায় না। গুল নাহার একা দাঁড়িয়ে রইল বিশাল দরজার সামনে, তার হাতে নিজের প্রয়োজনীয় সরঞ্জামে ভর্তি ছোট্ট একটি ব্যাগ। তার চোখ তখনো অতীতের নবাবী আমলের ছায়া খুঁজছিল, যে আমলের কথা সে দাদির মুখে শুনেছে।

ধীরে ধীরে, ক্যাঁচক্যাঁচ শব্দে দরজাটা খুলে গেল, যেন বহুদিনের সুপ্ত কোনো আত্মা জেগে উঠল। শব্দটা এত করুণ আর পুরোনো ছিল যে, নাহারের গা ছমছম করে উঠল। ভেতরে ঢুকতেই নাহারের নাকে তীব্রভাবে ভেসে এল সেই অদ্ভুত গন্ধ—পুরোনো কাঠ আর মাটির এক অদ্ভুত মিশেল, যা শত সহস্র স্মৃতি আর গোপন কথার সাক্ষী। মহলের ভেতরটা বাইরে থেকে যত বড় মনে হয়েছিল, তার চেয়েও যেন বিশাল। এক আদিম অন্ধকার প্রতিটি কোণায় জাঁকিয়ে বসেছিল, যেন আলোর প্রবেশের সাহসটুকুও নেই।

মহলের ভেতরে প্রবেশ করে প্রথমেই চোখে পড়ল বিশাল ঝাড়লণ্ঠনগুলো, যা এখন কেবলই নিস্তেজ। তাদের ফাটল ধরা কাঁচের টুকরোগুলোতে যেন অতীতের গল্প প্রতিফলিত হচ্ছে। নাহারের মনে পড়লো, একসময় এই লণ্ঠনগুলো হয়তো শত শত তেলের প্রদীপশিখা দিয়ে এই বিশাল মহলের প্রতিটি কোণ আলোকিত করে রাখত। আজ সেগুলো শুধু নীরব দর্শক, তাদের একসময়ের জৌলুসের নীরব সাক্ষী।
সুবিশাল কক্ষের চার দেওয়ালে শুধুই আরশি । দেওয়ালে ঝোলানো তেলরঙা ছবিগুলো যেন জীবন্ত। তাদের চোখের ভাষা এক গভীর রহস্যের ইঙ্গিত দিচ্ছে, যেন প্রতিটি ছবির চরিত্রই নাহারকে নীরবে স্বাগত জানাচ্ছে, অথবা কোনো গোপন বার্তা দিচ্ছে। কোনো ছবিতে একজন গম্ভীর চেহারার পুরুষ, কোনোটিতে এক বিষণ্ণ নারীর মুখ, আবার কোনোটিতে শিশুদের নিষ্পাপ হাসিমুখ। তাদের সবার চোখে এক অদ্ভুত দ্যুতি, যা নাহারকে বারবার তাদের দিকে তাকাতে বাধ্য করছিল। প্রতিটি ছবি, প্রতিটি ভাস্কর্য যেন মহলের গোপন কথাগুলো ফিসফিস করে বলতে চাইছে, কিন্তু তাদের ভাষা এতটাই অস্পষ্ট যে নাহার তা বুঝতে পারছিল না...
পুরো গল্পটি পড়তে ক্লিক করুন এই লিংকে:

গুল নাহার, আঠারো বছরের এক স্বপ্নময়ী তরুণী। তার জীবনটা ছিল শহরের ছিমছাম মেসবাড়ির নিরালা ঘর, আর রুমালে সূঁচ-সুতোয় নক...

Address

Nasadiya Technologies Private Limited, Sona Towers, 4th Floor, No. 2, 26, 27 And 3, Krishna Nagar Industrial Area, Hosur Main Road
Bangalore
560029

Alerts

Be the first to know and let us send you an email when Pratilipi Bengali posts news and promotions. Your email address will not be used for any other purpose, and you can unsubscribe at any time.

Contact The Business

Send a message to Pratilipi Bengali:

Share