19/07/2025
ঘড়িতে সময় ৬.৪০, দামিনী নিজের ব্যালকনিতে রাখা টবের মাটি গুলো একটু খুঁড়ে গাছ গুলোর পরিচর্যা করছে। সকাল বেলাটা দামিনীর এই গাছ গুলোর পিছনেই কাটে। যদিও খুব বেশি গাছ নেই। এই একটা জবা, দুটো গাঁদা, একটা গোলাপ আর একটা পাতাবাহার। ছোট ব্যালকনি, ভাড়া নেওয়া ফ্ল্যাটে আর কত টব রাখা যায়! তবে দামিনী সকালে এই গাছ গুলো পরিচর্যা করতে আনন্দ পায়৷ এই সময় ঘরে দামিনীর মোবাইলের রিং টোন শোনা গেল। নোংরা হাতেই দামিনী ঘরে এসে মোবাইলের সামনে গিয়ে দেখল মোবাইল স্ক্রীনে ভেসে আছে... মা... । দামিনী বেসিনে হাত ধুয়ে আসতে আসতে রিং বন্ধ হয়ে গেল। দামিনী নিজেই মাকে ফোন করল৷ দু -তিন বার রিং হওয়ার পরই মা ফোন রিসিভ করে নিল। .. হ্যালো, ফোন করেছিলে কেন, মা? ... আরে, বৃষ্টিকে ফোন করেছিলাম, কিন্তু ওর ফোন রিং হয়ে গেল, ও ধরল না। ... বৃষ্টি ঘুমাচ্ছে তো, আর ওর ফোন নিশ্চয়ই সাইলেন্ট মুডে আছে৷ কেন কি দরকার গো ওর সাথে? .. জন্মদিনের উইশ করতাম। .... জন্ম দিন! ... কেন ভুলে গেছিস নাকি! আজ ৪ঠা আগাস্ট। বৃষ্টির জন্মদিন তো! .. আচ্ছা মা রাখো তো, আমি পরে তোমায় ফোন করব। ... তুই কি রে! নিজের মেয়ের জন্মদিন ভুলে গেলি! তুই ওকে দে না আমি একটু উইশ করে দেই। ... মা, মাগো একটু বোঝ... বৃষ্টি উঠলে আমি বলছি, ও নিজেই তোমায় ফোন করে নেবে। ... আচ্ছা, তবে বলিস কিন্তু। .. হ্যাঁ, গো বলছি। রাখলাম তবে। .. হ্যাঁ, রাখ।
দামিনী নিজেই নিজের কপাল চাপড়ে নিল নিজের ভুলের জন্য । তারপর বৃষ্টির ঘরে গিয়ে ঘুমন্ত বৃষ্টির গাঁ ঘেসে বসে দামিনী আলতো স্বরে বলল, ....
হ্যাপি বার্থ ডে মা, বৃষ্টি। ওঠ মা, একটু আদর করে দেই৷ ... বৃষ্টি উলটো পাশ ফিরে শুয়ে বলল,... যাও, বিরক্ত করো না৷ ঘুমাতে দাও তো।
দামিনী অস্ফুট স্বরে বলল.... কেন যে ভুলে গেলাম! এই জন্য তোর অভিমান হয়েছে, তাই না।
বৃষ্টি এবার আর শুয়ে থাকতে পারল না। উঠে বসে বলল, ... এমন কোন মা আছে যে নিজের মেয়ের জন্মদিন ভুলে যায়! কেমন মা তুমি! নিজেকে নিয়ে বেশি ব্যস্ত থাকলে এই হয়।
দামিনী মাথা নীচু করে বলল, ... আমি নিজেকে নিয়ে কোথায় এত ব্যস্ত থাকি রে, কিন্তু ভুলে যাওয়াটা...
দামিনীর কথা শেষ হওয়ার আগেই বৃষ্টি বিছানা ছেড়ে উঠে বাথরুমে ঢুকে পড়বার জন্য এগিয়ে গেল।
দামিনী চোখের কোণাটা মুছে বৃষ্টির বিছানার চাদর, বালিশ ঠিক করে গুছিয়ে রেখে ঘর থেকে বেরোতে গিয়ে দেখল বৃষ্টি আগেই নিজের আলমারি থেকে একটা সুন্দর চুড়িদার বের করে রেখেছে আজকে পরবে বলে।
দামিনী রান্না ঘরে গিয়ে খাবার বানাতে বানাতে বুঝল বৃষ্টি স্নান সেরে ঘরে ঢুকেছে। দামিনী তখন বৃষ্টিকে উদ্দেশ্য করে বলল.... মা সকালে ফোন করে তোকে জন্মদিনের উইশ করতে চেয়েছিল, তুই তখন ঘুমাচ্ছিলি, বলেছি পরে তুই ফোন করে নিবি।
বৃষ্টি কিছুটা ঝাঁঝ দেখিয়ে বলল, ... দেখ, সবার মনে থাকে, তুমি বাদে।
এরপর বৃষ্টি দিদুনকে ফোন করে বলল, ... বল দিদুন, তুমি আমায় ফোন করেছিলে দেখলাম। মা ও বলল। আসলে আমার ফোন সাইলেন্ট মুডে ছিল। আমি ঘুমাচ্ছিলাম। ... হুউউ, বুঝেছি দিদুভাই। তোমার জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানাই। ভালো থেকো, সুস্থ থেকো। অনেক বড় হও। .. প্রণাম নিও দিদুন। ... তা, কবে আসবে এখানে? আর কি চাও গিফটে? .. দেখি দিদুন আজ যদি কলেজ থেকে ফেরার সময়, সময় বের করতে পারি তবে যাব। কিন্তু প্রমিস করছি না, ট্রাই করব। আর গিফট কিচ্ছু চাই না। অনেক বড় হয়ে গিয়েছি, এখন তুমি একদিন তোমার হাতের বানানো রাবড়ি খাইয়ে দিও ব্যাস, তাহলেই হবে। ... সে তো খাবেই দিদুভাই, কিন্তু গিফট তো একটা দিতেই হয়। .. আচ্ছা, দিদুন সে না হয় আমি গিয়ে বলছি। অন্য একটা ফোন ঢুকছে দিদুন, আমি রাখছি। .....হ্যাঁ, আজ তো তোমারই দিন দিদুভাই, অনেক ফোনই আসবে তোমার। .. (একটু হেসে) হুমম, রাখছি দিদুন।
বৃষ্টির মোবাইলে একটার পর একটা ফোন ঢুকছে।
রান্নাঘর থেকে দামিনী দিদুন আর নাতনির সব কথাবার্তাই শুনতে পাচ্ছিল।
দামিনী বৃষ্টির জন্য থালায় খাবার সাজিয়ে ডাইনিং টেবিলে এনে রাখল। বৃষ্টি রেডি হয়ে কোন রকমে তাড়াতাড়ি খেয়ে কলেজের জন্য বেরিয়ে গেল। বেরোনোর সময় বৃষ্টি মাকে বলেও বেরোল না।
দামিনী জানে বৃষ্টি রেগে গেলে এই রকমটাই করে।
দামিনী ভাবল এখন বৃষ্টির জন্য একটু পায়েস বানিয়ে রেখে দেবে৷ এরপর স্কুল থেকে ফিরে এসে পায়েসটা বাটিতে তুলে তাতে গোলাপের পাপড়ি, চেরি এসব দিয়ে ডেকোরেট করে রাখবে। যেমন ভাবা তেমন কাজ।
দামিনী হাই স্কুলের টিচার। বাড়ি থেকে দশ মিনিটের ওয়াকেবল ডিসট্যান্সেই দামিনীর স্কুল। আর বৃষ্টির কলেজটা অনেক দূর, যেতে প্রায় এক, দেড় ঘন্টা লেগে যায়। তাই বৃষ্টি দামিনীর অনেক আগেই বেরোয়৷ দামিনী রান্না সেরে স্নান করে খেয়ে হাঁটতে হাঁটতে স্কুলে চলে যায়। আজও সেই মত রান্না শেষ হলে একটু খেয়ে দামিনী স্কুলের জন্য বেরোল।
স্কুলে যাওয়ার পথে হাঁটতে হাঁটতে দামিনী ভাবল বাড়ি ফিরে বৃষ্টির জন্য বৃষ্টির পছন্দ মতো বাটার নান আর বাটার চিকেন বানিয়ে নিয়ে বৃষ্টিকে ডিনারে দিলে বৃষ্টি খুব খুশি হয়ে যাবে৷ আর একটা বার্থ ডে কেক মিয়ো আমোরে থেকে কিনে নেবে৷ তখন আর বৃষ্টির রাগ, অভিমান থাকবে না। এই ভাবতে ভাবতে দামিনীর মনটাও ভালো হয়ে গেল।
দামিনী যখন স্কুলে পৌঁছালো তখনও প্রার্থনা হয় নি। এক এক করে ছাত্ররা আসছে৷ দামিনী ধীর পায়ে টিচারস রুমের দিকে গেল৷ এই স্কুল টা ছেলেদের বলে শিক্ষকই বেশি। শিক্ষিকা মাত্র তিন জন। তার মধ্যে দামিনী একজন। টিচারস রুমে ঢুকতে ঢুকতেই সুব্রত স্যার বললেন... গুড মর্নিং ম্যাডাম।
দামিনীও গুড মর্নিং বলে নিজের জায়গায় গিয়ে ব্যাগ রেখে বসল৷ এই টিচারস রুমে শিক্ষিকাদের বসার জায়গাটা আলাদা। সেখানে লিপি বসেছিল। দামিনী লিপির পাশে গিয়ে বসল।
লিপি বলল.... আজ ওয়েদারটা গুমোট হয়ে রয়েছে, মনে হয় বৃষ্টি নামবে৷
দামিনী বলল... বৃষ্টি নামা দরকার৷ প্রচণ্ড গরম পড়েছে৷ রাস্তাঘাটে মানুষগুলোর অবস্থা খুব কাহিল। জানিস তো লিপি, আজ বৃষ্টির জন্মদিন। যেদিন বৃষ্টির জন্ম হয়েছিল সেদিন কলকাতায় খুব ঝড় বৃষ্টি হয়েছিল৷ বোধ হয় সে বছর সেদিনই কলকাতায় বর্ষা ঢুকেছিল। তাই তো আমার শ্বশুর মশাই ওর নাম রেখেছিলেন বৃষ্টি।
লিপি দামিনীর দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করল, ... বৃষ্টির বয়স কত হল রে?
দামিনী একটু চিন্তা করে বলল, উনিশ৷
এরপর স্কুলে প্রার্থনার ঘন্টা বাজল। লিপি, দামিনী উঠে মাঠের দিকে এগিয়ে যেতে গিয়ে দামিনী বলল... রূদ্রানী আসে নি?
লিপি বলল... না, রুদ্রাণীর শরীর ভালো নেই।
দামিনী বলল... কি হয়েছে? ...
পুরো গল্পটি পড়তে ক্লিক করুন এই লিংকে:
ঘড়িতে সময় ৬.৪০, দামিনী নিজের ব্যালকনিতে রাখা টবের মাটি গুলো একটু খুঁড়ে গাছ গুলোর পরিচর্যা করছে। সকাল বেলাটা দামিন....