26/10/2024
মা কালী, হিন্দু ধর্মের একটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ দেবী এবং বহু প্রাচীন সময় থেকে তার আরাধনা চলে আসছে। তার প্রতীক শক্তি, ধ্বংস এবং পুনর্জন্মের প্রতীক হিসেবে বিবেচিত হয়। মা কালীর উদ্ভব ও তার পূজা প্রাচীন ভারতে দাক্ষিণাত্যের উপজাতীয় সংস্কৃতি থেকে এসেছে বলে মনে করা হয়।
প্রাচীন যুগে মানুষ তাকে শত্রু নিধনের দেবী হিসাবে পূজা করত। মহাভারতের যুগে দেখা যায় যে মা কালীর আরাধনা মূলত যুদ্ধক্ষেত্রে বিজয় লাভের জন্য করা হতো। দেবী কালীর ইতিহাসে বলা হয়েছে, অসুরদের সঙ্গে দেবতাদের যুদ্ধের সময় দেবতা শিব নিজে তাকে যুদ্ধক্ষেত্রে প্রেরণ করেন।
মা কালীর রূপটি অত্যন্ত ভয়ঙ্কর। তার গলায় রয়েছে মানুষের খুলি দিয়ে তৈরি মালা, আর হাতের অস্ত্রগুলোর মধ্যে রয়েছে অসুর নিধনের জন্য প্রয়োজনীয় অস্ত্রশস্ত্র। তিনি একটি ভয়ঙ্কর রূপে দেখা দেন, যা মূলত সমস্ত অশুভ শক্তির ধ্বংসের প্রতীক।
কালীর পূজা সাধারণত মধ্যরাতে হয় এবং বিশেষ করে কালীপূজার সময় সারা ভারতবর্ষে, বিশেষত পশ্চিমবঙ্গ এবং আসামের কিছু এলাকায়, এটি ব্যাপকভাবে উদযাপন করা হয়।
মা কালীকে নিয়ে কিছু অজানা ও রহস্যময় কথা প্রচলিত রয়েছে, যা তার শক্তি ও মহিমার আরও গভীর অর্থ উন্মোচন করে। এখানে কিছু অজানা দিক তুলে ধরা হলো:
1. মা কালীর প্রথম আরাধনা: অনেকে বিশ্বাস করেন, মা কালী ছিলেন প্রাচীন উপজাতীয় দেবী। তার পূজার সূচনা মূলত অরণ্য ও পার্বত্য এলাকায় স্থানীয় উপজাতিরা করত। এই পূজা ছিল অশুভ শক্তিকে দমন করার উদ্দেশ্যে।
2. অপূর্ব এবং ভয়ঙ্কর রূপ: মা কালীকে সাধারণত ভয়ঙ্কর ও ক্রুদ্ধ মূর্তিতে চিত্রিত করা হলেও, কিছু পুরাণে বলা হয়েছে যে, তার অপূর্ব সুন্দর রূপও আছে। এই রূপে তিনি কোমল এবং মাতৃসুলভ, যা শুধুমাত্র তাকে তার ভক্তরা উপলব্ধি করতে পারেন।
3. জিভ বের করে থাকা: দেবী কালীর মূর্তিতে জিভ বের করে থাকা একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রতীক। কথিত আছে, যখন তিনি অসুরদের ধ্বংস করতে অপ্রতিরোধ্য রূপে বেরিয়ে আসেন, তখন তার ক্রোধ নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। শিব নিজে এসে তার সামনে শুয়ে পড়েন, আর দেবী তাকে পায়ে স্পর্শ করে লজ্জিত হয়ে যান, তখন তার জিভ বেরিয়ে আসে, যা সংকোচ ও সংযমের প্রতীক।
4. মা কালীর কালো রং: মা কালীর গায়ের রং কালো কেন? এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। কালো রং এখানে মহাশক্তির প্রতীক। এই রংটি মূলত সমস্ত সৃষ্টি ও ধ্বংসকে গ্রহণ করতে সক্ষম, এটি তার অসীম শক্তির পরিচয় বহন করে। কালো রং বলতে সবকিছু গ্রাস করার ক্ষমতাও বোঝায়।
5. ভয়ংকর কিন্তু স্নেহময়ী মা: মা কালীর চেহারা যতই ভয়ংকর হোক না কেন, তিনি তার ভক্তদের জন্য অত্যন্ত স্নেহময়ী। প্রাচীনকালে বিশ্বাস ছিল, তিনি শুধুমাত্র তার ভক্তদের রক্ষা করার জন্য এত ভয়ংকর রূপ ধারণ করেন। ভক্তদের কষ্ট দূর করতেই তিনি তাদের কাছে মাতৃরূপে আসেন।
6. তন্ত্র সাধনায় মা কালী: তন্ত্র সাধনায় মা কালী বিশেষ ভূমিকা পালন করেন। তাকে তন্ত্রের মূল দেবী বলা হয়। বিভিন্ন তান্ত্রিক সাধনার মাধ্যমে ভক্তরা মা কালীর কাছ থেকে অদৃশ্য শক্তি লাভের চেষ্টা করেন। এটি অত্যন্ত গোপনীয় এবং শক্তিশালী সাধনার একটি অংশ।
7. কালী এবং কৃষ্ণের মিল: অনেক পণ্ডিত মনে করেন, কালী এবং কৃষ্ণের মধ্যে একটি আত্মিক সংযোগ আছে, কারণ দুজনেরই রং কালো। তারা দুজনেই শূন্যের প্রতীক এবং সকল কিছু গ্রাস করার ক্ষমতা রাখেন।
জগন্নাথপুর রত্নেশ্বর মন্দির Economic Pulse