08/10/2025
ঐতিহ্যের ধারায় তিন শতাব্দী মঙ্গলকোট বাজার গ্রামের মল্লিক রাজবাড়ির দুর্গোৎসব আজও টিকে গৌরবে
বাংলার প্রাচীনতম দুর্গাপূজাগুলির মধ্যে অন্যতম স্থান অধিকার করে আছে মঙ্গলকোটের বাজার গ্রামের মল্লিক রাজবাড়ির ৺শ্রী শ্রী দুর্গাপূজা। প্রায় এক সহস্রাব্দের ইতিহাস বহন করে চলা এই পূজা আজও ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির প্রতীক হিসেবে সমাদৃত
বাংলার ১০০১ সনে রাজা রাজ্যধর রায় (দত্ত) বাজার গ্রামে বসবাস শুরু করেন। সেই সময় তিনি প্রতিষ্ঠা করেন ৺শিব ঠাকুর, ৺জনার্দ্দন, ৺বাসুদেব ও ৺শ্রী শ্রী জয়দূর্গা ঠাকুরাণী এবং খনন করান সায়ের পুষ্করিণী। এই স্থাপনা থেকেই শুরু হয় রাজবাড়ির ধর্মীয় ও সামাজিক ঐতিহ্যের অধ্যায়
প্রায় ১৫০ বছর পর, অর্থাৎ ১১৫১ সনে, রাজা রাজ্যধরের ষষ্ঠ পুরুষ বিষ্ণুদাস মল্লিক ও মেদিনীদাস মল্লিক পৃথক হন। তৎকালীন রাজত্বও ভাগ হয়। ব্রিটিশ শাসনকালে রাজ্য হারালেও জমিদারি বজায় থাকে। সেই সময় থেকেই ‘মল্লিক জমিদার বাড়ি’ এই অঞ্চলের শিক্ষা, সংস্কৃতি ও সমাজকল্যাণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে
স্থানীয় বাসিন্দাদের মতে, বাজার গ্রাম ও বনকাপাসী গ্রামের প্রাথমিক বিদ্যালয়, স্থানীয় হাই স্কুল, খেলার মাঠ, হেলথ সেন্টার, পোস্ট অফিস, লাইব্রেরি, এমনকি স্টেশন পর্যন্ত গড়ে ওঠে মল্লিক জমিদার বাড়ির দানকৃত জমিতে। তখনকার দিনে স্কুল শিক্ষকদের বেতনও জমিদার বাড়ি থেকেই প্রদান করা হতো। শিক্ষা ছিল সবার জন্য উন্মুক্ত ও বিনামূল্যে, যা সেই সময়ে এক বিরল দৃষ্টান্ত
দুর্গাপূজাও সেই সময়ে দুই ভাগে বিভক্ত হয়। প্রতিষ্ঠিত হয় আরও এক ৺জয়দূর্গা ঠাকুরাণী, যিনি আজ “ছোট ঠাকুরাণী” নামে পরিচিত, আর প্রাচীন দেবী “বড় ঠাকুরাণী” নামে পূজিত হন। উল্লেখযোগ্য, রাজা রাজ্যধর দত্তের ‘রায়’ উপাধি পরবর্তীতে মুর্শিদাবাদের নবাব (সম্ভবত মুর্শিদকুলি খাঁ) পরিবর্তন করে দেন “মল্লিক” পদবীতে। সেই থেকেই বংশপরিচয়ে “মল্লিক” নামটি বহমান, যদিও পূজায় এখনও অনেক সময় ‘দত্ত’ পদবী ব্যবহৃত হয়
বর্তমানে আট প্রজন্ম অতিক্রম করে (প্রায় ২৮১ বছর পরেও) একই ঐতিহ্য ও গৌরব নিয়ে চলছে ৺শ্রী শ্রী জয়দূর্গা ঠাকুরাণীর ৺শ্রী শ্রী শারদীয়া পূজা। আজও নিত্যসেবায় পূজিত হন ৺শিব ঠাকুর, ৺জনার্দ্দন, ৺বাসুদেব, ৺শ্রী শ্রী জয়দূর্গা ঠাকুরাণী (বড়) ও ৺জয়দূর্গা ঠাকুরাণী (ছোট)
প্রতি বছর পূজার দায়িত্ব পালিত হয় পর্যায়ক্রমে — এক বছর বিষ্ণুদাস মল্লিকের বংশধররা “বড় ঠাকুরাণী”-র পূজা করেন এবং মেদিনীদাস মল্লিকের বংশধররা “ছোট ঠাকুরাণী”-র পূজা করেন। পরের বছর এই পালা বদল হয়। তবে চৈত্র মাসে ৺শিবঠাকুরের গাজন উৎসব দুই বংশের মানুষ একত্রে পালন করেন, যা মিলন ও ঐক্যের এক অনন্য উদাহরণ
এই বছর বিষ্ণুদাস মল্লিকের বংশধররা “বড় ঠাকুরাণী”-র পূজা এবং মেদিনীদাস মল্লিকের বংশধররা “ছোট ঠাকুরাণী”-র পূজা করছেন
ছবি: মেদিনীদাস মল্লিকের বংশধরদের বাড়ির ৺শ্রী শ্রী জয়দূর্গা ঠাকুরাণীর পূজা
Info : Avinab Mallick & Bardhaman buzz