29/07/2025
ভূমিকা:
বাংলার মাটি ও মানুষের জীবনযাত্রার সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে জড়িয়ে আছে বিভিন্ন লোকজ উৎসব। এসব উৎসব শুধু আনন্দ ও বিনোদনের উপলক্ষ নয়, বরং মানুষের আধ্যাত্মিক বিশ্বাস, সামাজিক বন্ধন ও ঐতিহ্যের বহিঃপ্রকাশ। তেমনই একটি লোকজ উৎসব হলো নাংরানি উৎসব। এটি বাংলাদেশের বিশেষত পার্বত্য অঞ্চলের আদিবাসীদের মধ্যে পালিত একটি গুরুত্বপূর্ণ সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।
নাংরানি উৎসবের পরিচয় ও ইতিহাস:
নাংরানি (বা নাং লং রানি) উৎসব মূলত পার্বত্য চট্টগ্রামের মারমা, চাকমা, ত্রিপুরা এবং অন্যান্য আদিবাসী জনগোষ্ঠীর মধ্যে পালন করা হয়। এটি প্রধানত একটি নারী-ভিত্তিক উৎসব, যেখানে মাতৃত্ব, নারীত্ব এবং প্রাকৃতিক শক্তির পূজা ও সম্মান প্রদর্শন করা হয়। নাংরানি শব্দের অর্থ—“নতুন রানী” বা “পবিত্র নারী”। এই উৎসব মূলত বর্ষার শেষে বা ফসল তোলার আগে অনুষ্ঠিত হয়, যাতে প্রকৃতির কাছে ভালো ফসল ও শান্তি কামনা করা যায়।
উৎসবের আচার-অনুষ্ঠান:
নাংরানি উৎসবের আয়োজন অত্যন্ত ধর্মীয় ও সামাজিক নিয়ম-নীতি অনুযায়ী হয়। সাধারণত গ্রামের বয়োজ্যেষ্ঠ নারীরা এ উৎসবের কেন্দ্রবিন্দুতে থাকেন। তাঁরা বিশেষ পূজা পরিচালনা করেন, যেখানে নারী শক্তিকে কেন্দ্র করে প্রার্থনা, গান, নৃত্য ও নানা রীতিনীতি পালিত হয়।
এই সময়ে তরুণ-তরুণীরা ঐতিহ্যবাহী পোশাকে সজ্জিত হয়ে লোকগান, নৃত্য ও নাট্য পরিবেশন করে। পুজা ও সামাজিক অনুষ্ঠান ছাড়াও, উৎসবে ভোজ, মেলা এবং বিভিন্ন খেলাধুলারও আয়োজন হয়।
সামাজিক গুরুত্ব:
নাংরানি উৎসবের মধ্যে রয়েছে এক গভীর সামাজিক সংহতি। এটি নারীদের সম্মান ও নেতৃত্বের প্রতীক। পাশাপাশি, এই উৎসব সমাজে সাম্য, সম্প্রীতি ও পারস্পরিক সহযোগিতার পরিবেশ সৃষ্টি করে। এছাড়াও, এটি নতুন প্রজন্মের কাছে নিজেদের সংস্কৃতি, ইতিহাস ও ঐতিহ্য তুলে ধরার একটি উপযুক্ত মাধ্যম।
উপসংহার:
নাংরানি উৎসব শুধুই একটি ধর্মীয় বা লোকাচারিক অনুষ্ঠান নয়, এটি একটি সমাজ-সংস্কৃতির পরিচয়। বাংলাদেশের আদিবাসী জনগোষ্ঠীর সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য ও সৌন্দর্যের প্রতিচ্ছবি এই উৎসবের মাধ্যমে স্পষ্টভাবে প্রতিফলিত হয়। আমাদের উচিত এই ধরনের লোকজ উৎসব ও সংস্কৃতিকে গুরুত্ব সহকারে সংরক্ষণ করা এবং জাতীয় পর্যায়ে তুলে ধরা, যাতে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম ঐতিহ্য ও শিকড় ভুলে না যায়।