06/10/2024
সেদিন রাতে ফিরতে প্রায় ১ টা বেজে গিয়েছিলো, পেটে দানাপানি কিছু নেই, ঘরে এসে দুটো রুটি আর তরকারি খেয়ে ঘুমোতে পারলে বাঁচি। সকাল থেকে আবার ছোটাছুটি। না, বিরক্তি এসেছে এমনটা না। মানুষের মেজাজটা এই পর্যায়ে পৌঁছেছে, এইটুকু ত্যাগ কিছুই মনে হচ্ছে না। হ্যাঁ, সেদিনের কথা বলছি মাননীয়া। যেদিন, আপনি মন্ডপের ফিতে কাটার ধান্দায় রাজ্যবাসীকে বললেন ‘১ মাস হয়ে গেছে, এবার উৎসবে ফিরুন'। কতটা লজ্জাহীন হ'লে রাজ্যের একজন মুখ্যমন্ত্রী মানুষকে এই কথা বলতে পারেন! কতটাই বা বেহায়া হলে! সেদিনই রাজ্যের মানুষ হাড়েহাড়ে টের পেয়েছেন। তবে হাড়ের কথা যখন এলো, এটাও মানুষ দেখিয়ে দিয়েছেন, ‘শিরদাঁড়া বিক্রি হয় না' এই হাটে। যাকগে, এমনিই আপনার কালঘাম ছুটে আছে, নতুন কিছু বলারইবা কী আছে আপনাকে? তবে কিছু প্রশ্ন থেকে যাচ্ছে তো মাননীয়া?
‘দিদিকে বলো’ টোল ফ্রি নং এ ফোন করলে উত্তর পাওয়া যাবে? নাকি ১৪ তলায় চিঠি পাঠালে কাজ হতে পারে!! ও আচ্ছা, কালীঘাটে পাঠালেই চলবে? হ্যাঁ, ঠিকই। আজকাল প্রশাসন তো ওখান থেকেই চলে! কদিন আগে চিকিৎসকদের সাথে বৈঠক দেখে তেমনই মনে হলো আরকি।
প্লিজ! উত্তর দেবেন কিন্তু মাননীয়া, প্রতিটি প্রশ্নের মান- ১০, সময় ৩ ঘন্টা। পরীক্ষার হলে ঘাড় ঘোরানো নিষেধ।
** প্রশ্ন ১-
কেন তড়িঘড়ি পোড়ানো হয়েছিলো তিলোত্তমার দেহ? পানিহাটির তৃণমূল বিধায়ক নির্মল ঘোষ কাকে বাঁচাতে ময়নাতদন্তের সময় থেকেই উপস্থিত ছিলেন চত্বরে। পানিহাটিতে নির্যাতিতার দেহ নিয়ে পৌঁছোনোর পরেই বাড়ির লোকের উপর তড়িঘড়ি দেহ সৎকারের জন্য চাপ শুরু হলো হয় কেন? মৃতার বাবা-মা প্রবল আপত্তি জানানোর পরও কেন দেহ বের করে নিয়ে গিয়ে শ্মশানে ঢোকান বিধায়ক স্বয়ং? শ্মশানের চালানে সই রয়েছে তৃণমূল কাউন্সিলারের। নির্যাতিতার পরিবারের কোন হনু এই আপনার দলের বিধায়ক, কাউন্সিলররা? কেনই বা শ্মশানের কর্মীদের দেহ পৌঁছোবার আগেই আগাম জানানো হয়, দ্রুত শেষ করতে হবে তিলোত্তমার সৎকার কাজ? "শ্মশানের টাকা কে দিল?" ঠিক কোন কারণে আর জি করেই পোস্টমর্টেম হয়েছিলো তিলোত্তমার? ঠিক কেন পরিবারকে "সাদা কাগজে সই করানোর চেষ্টা করা হয়েছিল?" ঠিক কোন কারণে ৯ তারিখ সকাল থেকে আর জি কর চত্বরে তৃণমূল নেতাদের মেলা বসে গেছিলো? উদ্দেশ্য কি ছিল তথ্যলোপাট?
প্লিজ জবাব দিন দিদিমণি!!
** প্রশ্ন ২-
•কার নির্দেশে সকাল ১০-০৩ মিনিটে খবর পেলেও এক ঘণ্টা পরে ঘটনাস্থলে পৌঁছেছিলেন টালা থানার ওসি।
•কেন চিকিৎসকরা মৃত বলে জানানোর পরেও জেনারেল ডায়েরিতে উল্লেখ হয় ‘অচৈতন্য’?
•কেন এমন গুরুতর শাস্তিযোগ্য অপরাধের ঘটনাতেও নির্দিষ্ট ধারা অনুযায়ী এফ আই আর দায়ের হয়নি?
•কেন ঘটনাস্থলকে কর্ডন করতে ব্যর্থ, যা তথ্য প্রমাণ বিকৃত করতে সাহায্য করেছে?
•কেন মৃত্যুর শংসাপত্র দিতে দেরি, যার ফলে ময়নাতদন্তের প্রক্রিয়ার বিলম্ব?
•কেন ২টা ৫৫ মিনিটে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের লিখিত অভিযোগের পরেও রাত সাড়ে এগারোটায় ‘অস্বভাবিক মৃত্যুর মামলা’ দায়ের?
•কেন ক্রাইম সিন থেকে পাওয়া জিনিসপত্র সিলের প্রক্রিয়ার ভিডিওগ্রাফি হয়নি?
•পরিবার দ্বিতীয়বার ময়নাতদন্ত চাইলেও কেন তড়িঘড়ি সৎকার করা হয়?
•ধৃত সিভিক সঞ্জয় রায়ের জামাকাপড় সিজ করতে অপ্রয়োজনীয়ভাবে দুদিন সময় নষ্ট কেন?
•কার নির্দেশে গুরুত্বপূর্ণ প্রমাণ, নথি বিকৃত করতে সাহায্য করেন টালা ওসি?
•কেন জেরার সময় তদন্তে অসহযোগিতা করা ও বিভ্রান্তিমূলক বয়ান দেওয়া হয়?
আপনিই তো পুলিশমন্ত্রী, জবাব দেবেন না?
** প্রশ্ন ৩-
কোনো পেশাদার হ্যাকারের সাথে আঁতাঁত করে সুপ্রিম কোর্টের ইউটিউব চ্যানেল হ্যাক? প্রশ্ন আসাই স্বাভাবিক কারণ, আর জি কর মামলার শুনানির লাইভ স্ট্রিমিং নিয়ে প্রথম দিন থেকে সুপ্রীম কোর্টে হুজ্জুতি করছিলেন পশ্চিমবঙ্গ সরকারের আইনজীবী কপিল সিব্বল অ্যাণ্ড কোং।
** প্রশ্ন ৪
কেন ৯ ই আগস্ট সকালে আর জি করের কুখ্যাত প্রিন্সিপাল সন্দীপ ঘোষের ফোন গেছিলো তৃণমূল ছাত্র নেতা আশিস পাণ্ডে, শ্রীরামপুরের তৃণমূল বিধায়ক, রাজ্য মেডিক্যাল বোর্ডের অন্যতম মাথা সুদীপ্ত রায়ের কাছে? কেন ৮ ই আগস্ট ঘটনার দিন রাতে হাসপাতালেই ছিলেন তৃণমূল নেতা আশিস। সকালে ঘটনার খোঁজ পাওয়ার পর তৃণমূলের ঘরে-বাইরের নেতারা আশিসকেই ফোন করতে শুরু করলেন কেন? কেন ওই সকালেই অ্যাপে হোটেলরুম বুক করে চম্পট দিলেন আশিস?
** প্রশ্ন ৫
কেন ঘটনার প্রতিবাদ করায়, হাসপাতালে চিকিৎসক ছাত্রীর ধর্ষণ ও খুনের সুবিচারের দাবিতে আন্দোলনে শামিল হওয়ায় বন্দি রয়েছেন বেহালার যুবনেতা চিরঞ্জিৎ রায়। কেন এক মাসের বেশি সময় ধরে মিথ্যা মামলায় জড়িয়ে জেলবন্দি করে রেখেছে আপনার দলদাস পুলিশ? কেন কলতান দাশগুপ্ত, রূপসা মন্ডলকে মিথ্যা মামলায় জেলে ভরা হয়? অথচ ‘রাত দখল’ কর্মসূচিতে শামিল হয়েছিলেন বহু মানুষ। ওই রাতেই আর জি কর হাসপাতালে হামলা চালায় তৃণমুলের দুষ্কৃতী বাহিনী। আপনি বললেন ‘রাম ও বামের কাজ’। তাহলে পুলিশ ঠেকাতে পারল না কেন? বিরাট বিরাট মিছিল বার করলেন। আপনিও নাকি বিচার চান। কে চাইছেন? কার কাছে চাইছেন? স্বাস্থ্যমন্ত্রী কি মুখ্যমন্ত্রীর কাছে বিচারপ্রার্থী? উত্তরটা কিন্তু দিয়ে যাবেন দিদিমণি!
** প্রশ্ন ৬
আপনার আমলে মৃতদেহ দুর্নীতির আখড়া আর জি কর। ওখান মর্গে নাকি রাতভর চলে কুকীর্তি যার রিং মাস্টার উত্তরবঙ্গ সিন্ডিকেট! অভিযোগগুলো জানেন তো? মৃতদেহের সঙ্গে সহবাসের ভিডিও তুলে পর্ন-ব্যবসা! ২০২১ সাল থেকে প্রতিটি অর্থবর্ষেই অন্তত ৬০-৭০টি করে দেহের হিসেবই নেই! গরমিল দেহাংশ কঙ্কাল নিয়েও! ঠিক হিসেব নথিভুক্ত নেই মর্গের খাতায়! মৃতদেহের ব্যবচ্ছেদ, সেলাই থেকে শুরু করে শ্মশান পর্যন্ত পৌঁছে দেওয়ার জন্য ন্যূনতম হাজার দশেকের চুক্তি!
আচ্ছা রাজ্যের স্বাস্থ্যমন্ত্রীর অনুপ্রেরণাতেই কি এসব হত? এই র্যা কেটে মাথায় কারা রয়েছেন? শুধু কি আর জি কর না রাজ্যের অন্য হসপিটালেও এই একই সিন্ডিকেটি চলে? তিলোত্তমা বহু প্রশ্ন তুলে দিয়ে গেছে! আর উত্তর তো আপনিই দেবেন মাননীয়া।
** প্রশ্ন ৭
ঘটনার দিন কেন বাম ছাত্র-যুব নেতৃত্বের সাথে কথা বলতে দেওয়া হলোনা মৃতার পরিবারকে? বুক দিয়ে মৃতদেহর গাড়ি আটক করার পর মহিলা নেত্রীর উপর কেন পুরুষ পুলিশ আক্রমণ চালালো?
** প্রশ্ন ৮
অন্ধ দলদাস হিসেবে খ্যাত ডঃ নির্মল মাজি ঠিক কী উদ্দেশ্যে ঘটনাস্থলে গিয়ে দু'ঘন্টা বসে ছিলেন? সেমিনার হলে খুব বেশি আসবাব নেই। যথেষ্ট বড় জায়গা। সেখানে একটা হেডফোনের তার আবিস্কার করতে পুলিশের ২৪ ঘন্টা লাগল কেন? সেমিনার হলের বাইরে ও করিডরে সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ সংগ্রহ করার কথা পুলিশ জানিয়েছিল। কিন্তু মাত্র কিছু মিনিটের ভিডিও পাওয়া গেলো? সেসবে বিকৃত করলো কে? কি চুপ কেন, উত্তর দিন দিদিমণি।
** প্রশ্ন ৯
নৃশংস বর্বরতায় ধর্ষণ ও খুন করা হয়েছে। সিসিটিভি ফুটেজ দেখে পুলিশের দাবি অনুযায়ী তা ৩০-৩৫ মিনিট সময়ের মধ্যেই করা হয়েছে। ওই সময়ের মধ্যে ৩১ বছর বয়সি একজন তরুণী চিকিৎসকের ওপর ওই পাশবিক যৌন অত্যাচার করে খুন করা আদৌ সম্ভব একজনের? কেন সেই প্রশ্নের উত্তর এড়িয়ে গিয়েছে আপনার পুলিশ?
** প্রশ্ন ১০
যদি একাধিক ব্যক্তি যুক্ত থাকে তাহলে বাকি অভিযুক্তরা কোথায়? প্রথম ৭দিন কোথায় গা ঢাকা দিতে সাহায্য করেছে আপনার সরকার? ময়নাতদন্তের রিপোর্ট বলছে, যে পরিমাণ বীর্য মিলেছে তা একজনের নাকি একাধিক জনের, তার উল্লেখ নেই। তৃণমূল ঘনিষ্ঠ ধৃত সিভিক সঞ্জয় রায়ের বীর্যের নমুনা ফরেনসিকে পাঠানো হলেও সেই রিপোর্টে বিলম্ব। কেন এই দেরি? পুলিশে একটি সূত্রের দাবি, দুজনের বীর্য নমুনার হদিশ মিলেছে। যদি তাই হয় তাহলে দ্বিতীয় ব্যক্তি কে??
** প্রশ্ন ১১-
প্রাক্তন পুলিশ কমিশনার বিনীত গোয়েল কার নির্দেশে তদন্ত ধামাচাপা দিতে উঠেপড়ে লেগেছিলো রাত ১২টা থেকে ১.৫০ মিনিট? আর জি কর ছিল লাঠি রড নিয়ে দুষ্কৃতীদের ধ্বংসলীলা চালাবার অবাধ বিচরণ ক্ষেত্র। প্রায় ২ ঘন্টা ধরে পুলিশ পরিকল্পনা মাফিক এটা হতে দিল - কার নির্দেশে? নিরাপদে দুষ্কৃতীদের চলে যেতে দেওয়ার পরে কলকাতা পুলিশ কমিশনারের আবির্ভাব ঘটলো কেন? কেন?
যারা ভাঙচুর চালালো তারা কারা? কে পাঠালো? ভাঙচুরের সময় পুলিশ নীরব দর্শক ছিল কেন? এমার্জেন্সি বিল্ডিংয়ের চেস্ট ডিপার্টমেন্ট পর্যন্ত এই দুষ্কৃতীদের যেতে দেওয়া হলো কেন? সংবাদমাধ্যম আক্রান্ত হলো কেন? কেন তৎকালীন পুলিশ কমিশনার উলটে নিজেদের কুকর্মের সাফাই দিলেন? আর জি করের জুনিয়র ডাক্তার, নার্সদের আঙুল যার দিকে সেই ইন্টার্নের বিরুদ্ধে কী তদন্ত করেছে পুলিশ? অসংখ্য কলরেকর্ড, অভিযোগ প্রকাশ্যে আসার পরেও কেন তাকে ধরাছোঁয়ার মধ্যেই আনা গেলোনা?
পুলিশকর্তা বিনীত গোয়েল বলছেন, মিডিয়া নাকি গুজব ছড়িয়েছে! কোনটা গুজব? আর জি করে এক তরুণী চিকিৎসককে পাশবিক ধর্ষণ করে খুন করেছে কমপক্ষে ৪-৫ জন দুর্বৃত্ত, গুজব? এক সিভিক ভলেন্টিয়ার ছাড়া আর কাউকে খুঁজেই পেলোনা কলকাতা পুলিশ, কোনটা গুজব? নাকি গত কয়েকদিনে তৃণমূলী মস্তান আর খোদ কতৃপক্ষের কোলাবরেশনে প্রমাণ লোপাটের কাজ চলছে আর জি করে, সেটা গুজব? একটা 'গুজবও' মিথ্যে প্রমাণ করতে পারবেন বিনীত গোয়েল? নাকি পুলিশমন্ত্রী তথা মুখ্যমন্ত্রীর পরবর্তী নির্দেশ না আসা অবধি মিডিয়া, সাধারণ প্রতিবাদী মানুষের ঘাড়ে বন্দুক রেখে পদোন্নতির জন্য অপেক্ষা করলেন?
এসব বাদই দিন। আপনি বরং বলুন, তাকে আপনি অপসারণ না করে পদোন্নতি করে বদলি করলেন। জবাব আছে? ইহা তিরস্কার নাকি পুরষ্কার?
** প্রশ্ন ১২
তিলোত্তমার পরিবারকে টাকার বিনিময়ে গোটা ঘটনা মিটিয়ে নেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছিল কলকাতা পুলিশের এক উচ্চপদস্থ আধিকারিক! আপনি পুলিশ মন্ত্রী, এমনকি যখন পরিবারের সদস্যদের কাছে টাকার ‘অফার’ দিয়েছে পুলিশ সেই সময় তাঁদের মেয়ের শেষকৃত্য পর্যন্ত সম্পন্ন হয়নি। কতটা অমানবিক, নৃশংস হতে পারলে সদ্য খুন হওয়া তরুণী চিকিৎসকের মাকে টাকার বিনিময়ে রফার প্রস্তাব দেওয়া যাতে পারে? আর কেনই বা এই রফা সূত্রের চেষ্টা করা হয়েছিল? একজন মহিলা হিসেবে প্লিজ এই উত্তরটা অন্তত দিন।
** প্রশ্ন ১৩
ধৃত সঞ্জয় বলতো সে “দাদার লোক"! সে কারণে তাকে উর্দি পরে দেখা যেত না। নিয়ম-বহির্ভূতভাবে সে পুলিশের ব্যারাকে থাকত। তার নামেই ছিল সরকারি টাকায় কেনা এবং সরকারি টাকাতেই তেল ভরে চলা মোটরবাইক। সেই বাইক নিয়েই সে ঘুরে বেড়াতো শহরের যেখানে খুশি! এর ফাঁকেই যাকে খুশি সে ভর্তি করাতো যে কোনও সরকারি হাসপাতালে। তার মর্জি মতো টাকাতে হাসপাতালের শয্যা পেতে অসুবিধা হত না। দ্রত হয়ে যেতো জরুরি অস্ত্রোপচারও! কে এই প্রভাবশালী দাদা? তিনি কেন তদন্তের আওতার বাইরে থাকবেন? আপনি স্বাস্থ্যমন্ত্রী হিসেবে কিছুই জানেন না?
** প্রশ্ন ১৪
মাননীয়া আপনিই তৃণমূল ছাত্র পরিষদের মঞ্চে দাঁড়িয়ে হালকা করে কী হুমকি দিলেন? এতে লাভ কিছু হলো? রাজ্যে এক জুনিয়র ডাক্তারের ধর্ষণ ও খুন আর জি করে, রাজ্যপুলিশ ১ সপ্তাহ ধরে প্রমাণ নিয়ে ডাংগুলি খেলেছে। ‘ম্যাডাম', আপনিই তো স্বাস্থ্যমন্ত্রী, আপনিই পুলিশমন্ত্রী! এই পুরো ঘটনায় সন্দেহের তির আপনার দলের হর্তাকর্তা আর তাদের চ্যালাচামুণ্ডাদেরই দিকে! আপনাকে তো জনগণ প্রশ্ন করছে। কেন সরকারি হাসপাতালে ঘটলো এরকম ভয়ংকর ঘটনা? কেন বদলির পরও তৃণমূলের কাছের মানুষ সন্দীপ ঘোষ বারবার ফিরে যেতেন আর জি করে? তৃণমূলের কোন দুর্নীতিচক্র কাজ করতো গোটা হাসপাতাল জুড়ে? 'ফোঁস' করার হুমকি দিয়ে জনগণকে ভয় দেখালে হবে?
** প্রশ্ন ১৫
এরই মাঝে
•১৩ আগস্ট বন্ধুর সঙ্গে মেলায় গিয়েছিলেন তরুণী, রাস্তায় বন্ধুর সামনেই ধর্ষিতা হন। বর্ধমানের দেওয়ানদিঘিতে।
•১৫ আগস্ট শিলিগুড়িতে নাবালিকাকে একাধিকজনের ধর্ষণ।
•১৮ আগস্ট এগরায় পাঁচ বছরের এক শিশুকে যৌন নির্যাতনের অভিযোগ প্রৌঢ়ের বিরুদ্ধে
•২১ আগস্ট বোলপুরে গৃহবধূর কপালে বন্দুকের নল ঠেকিয়ে ধর্ষণের অভিযোগ। আত্মহত্যারও চেষ্টা করেন ওই বধূ।
•২৩ আগস্ট রায়গঞ্জ ধর্ষিতা এক ছাত্রী।
•২৪ আগস্ট শিলিগুড়িতে এক কিশোরীকে ধর্ষণ।
•২৪ আগস্ট জয়পুরের জঙ্গলে খেতমজুর মহিলাকে ধর্ষণ।
•২৫ আগস্ট দিনহাটায় এক নাবালিকা ধর্ষিতা
•২৬ আগস্ট প্রতিবেশী তরুণীকে মাদক খাইয়ে ধর্ষণের অভিযোগ মালদহে
•২৬ আগস্ট কুচবিহারে নাবালিকা ধর্ষণ। অভিযুক্ত এলাকার তৃণমূল নেতা।
•২৮আগস্ট হাঁসখালিতে রেল স্টেশনের কাছে মিলল এক অর্ধনগ্ন নাবালিকার ক্ষতবিক্ষত দেহ।
•২৯আগস্ট বংশীহারীতে ধর্ষণের শিকার ১৩ বছরের আদিবাসী মেয়ে।
•৩১ আগস্ট ধর্ষণের ঘটনা মালদহে।
•৩১ আগস্ট ধর্ষণের ঘটনা নদীয়ার কৃষ্ণগঞ্জে
•৩১আগস্ট শ্লীলতাহানি হাসপাতালেই, হাওড়ায়।
•৩১আগস্ট শ্লীলতাহানি নার্সের। বীরভূমের ইলামবাজারে।
•আছে বাঁকুড়ার লোখ্যাশোল, আছে বাকাদহও
কদিন আগে কি একটা আইন পাশ করালেন বিধানসভাতে। কোথায় এই সব ঘটনায় সেই আইনের প্রয়োগ?
** প্রশ্ন ১৬
রাজ্য জুড়ে ঘটে চলা প্রতিবাদে সোদপুর, মাথাভাঙা, রায়গঞ্জ, বারাসাত সহ একাধিক জায়গায় কেন হয় তৃণমূল নয় পুলিশের হামলা?
প্রশ্নপত্র এবার শেষ করি মাননীয়া।
জানতাম আপনি ফাঁকা খাতাই জমা দেবেন, এসব প্রশ্নের কোন উত্তরই আপনার দেওয়ার ধক নেই জানে রাজ্যবাসীও। উল্টে মোহন ভাগবত-মোদীর সাথে সেটিং করে তদন্তকে পিছিয়ে ক্ষমতায় বসে থাকতে চান আপনি। যেটা বকলমে চায় আরএসএস-বিজেপিও। তাই জনগণের এই আন্দোলন থেকে উধাও বিধানসভার প্রধান ও একমাত্র বিরোধী দল। আর রাস্তায় আগুনে পুড়ে, জলে ভিজে, লাঠি খেয়ে লড়ছে সেই বামপন্থীরাই। ২০০ বছরের ইংরেজ শাসন টেকেনি, মুসোলিনি, হিটলাররা শেষ কথা বলেনি। বলেছে সেই মানুষই। এবারও মানুষই তাই বলবে, বলছেও। বিশিষ্ট মানুষ পুরষ্কার প্রত্যাখ্যান করেছেন, রান্নাঘরেই জীবনের একটা বড় অংশ কাটিয়ে ফেলা ‘মা’ স্লোগান তুলেছেন, ছোট্ট শিশু রাজপথ কাঁপাচ্ছে, আলপথ থেকে রাজপথে প্রতিবাদ লেখা হয়েছে। বাড়ি থেকে রসদ নিয়ে গিয়ে আন্দোলনরত চিকিৎসকদের হাতে তুলে দিয়েছেন মানুষই। পিঠে লাঠি পড়েছে, চোখে কাঁদানে গ্যাসের ধোয়া লেগেছে- মিষ্টি একটা হাসি হেসে সাধারণ মানুষ পুলিশকে ‘শিরদাঁড়া'ও উপহার দিয়েছে, রাজ্যের প্রত্যেক জেলায় মোমবাতি থেকে প্রতিবাদের মশাল জ্বলেছে। তাই এই আন্দোলন দেশ ছাড়িয়ে বিদেশের মাটিতেও। লোখ্যাশোল থেকে লক্ষ্ণৌ আপনাদের এই অরাজকতার বিরুদ্ধে এই লড়াই লড়ছে সারা পৃথিবীর সাধারণ মানুষ। দেশজুড়ে চাই নারী নিরাপত্তা, চাই ভয়হীন একটা সমাজ। তাই আরও একবার শুনে নিন ওই পাড়ার মোহন ভগবত বাবু, এই পাড়ার মমতা ব্যানার্জী। মানুষকে আর উৎসবে মাতিয়ে রাখা যাবে না।
কারণ মানুষই বলছে, সব মন্ডপেও সেই আওয়াজ ধ্বনিত হবে
‘বাজছে কাঁসর বাজছে ঢাক। তিলোত্তমা বিচার পাক।‘
✍️ Souma Subhra Chattopadhyay
(*যুবশক্তি শারদে প্রকাশিত)