11/05/2025
বর্তমানে আমাদের সমাজ এক অদ্ভুত পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে চলেছে। আগেও যে সমাজের অধঃপতন হয়নি তা নয়, যুগের সঙ্গে সঙ্গে সেই সংজ্ঞা যেন পাল্টে যাচ্ছে। বেশ অল্পকালের মধ্যেই এ বঙ্গদেশে সমাজ ব্যবস্থায়, সমাজভাবনায় আমূল পরিবর্তন পরিলক্ষিত হচ্ছে। তাই কবিগুরুকে স্মরণ করতে তাঁর সমাজ ভাবনার কিছু দিক তুলে ধরতে চাইছি এই অনুষ্ঠানে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সমাজ ভাবনা ছিল প্রগতিশীল, মানবতাবাদী ও আধুনিক চিন্তাধারায় সমৃদ্ধ। তিনি সমাজের অবক্ষয়, কুসংস্কার, নারী-পুরুষের বৈষম্য, শিক্ষা এবং গ্রামীণ উন্নয়ন বিষয়ে গভীরভাবে চিন্তা করেছেন। তাঁর সমাজভাবনা ছিল গভীর, মানবিক এবং বাস্তবধর্মী। তিনি জীবনের প্রতিটি স্তরে, বিশেষ করে শিক্ষা, নারী স্বাধীনতা, ধর্মীয় সহনশীলতা, গ্রামীণ উন্নয়ন এবং জাতীয় ও আন্তর্জাতিক চেতনায় সমাজকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছিলেন। রবীন্দ্রনাথ বিশ্বাস করতেন, মানুষে মানুষে ভেদাভেদ মুছে ফেলা উচিত। জাতপাত, ধর্ম, বর্ণভেদ তিনি কখনোই সমর্থন করেননি। তিনি চেয়েছিলেন এমন একটি সমাজ, যেখানে সকল মানুষ সমান মর্যাদায় বাঁচবে। কিন্তু বর্তমানে আমরা দেখছি, সেক্যুলারিজম নামে এক তকমা হচ্ছে। অদ্ভুত এক তাচ্ছিল্য নজরে পড়ছে সেকুলার মনোবৃত্তির মানুষদের সম্বন্ধে। যদিও তার যথেষ্ট কারণও রয়েছে বলে মনে হয়। গ্রামবাংলার দুর্দশা রবীন্দ্রনাথকে ব্যথিত করেছিল। তিনি উপলব্ধি করেছিলেন, দেশের প্রকৃত উন্নয়ন সম্ভব নয় যদি গ্রামীণ সমাজ অবহেলিত থাকে। তাই তিনি 'পল্লিসংস্কার' কার্যক্রম শুরু করেন। কৃষি, হস্তশিল্প, স্বাস্থ্য ও শিক্ষা—এই চারটি স্তম্ভকে ভিত্তি করে তিনি গ্রামীণ সমাজকে সচল ও স্বনির্ভর করার প্রয়াস নেন। তিনি বিশ্বাস করতেন, প্রকৃত শিক্ষা হওয়া উচিত জীবনমুখী ও সৃজনশীল। ফাল্গুন ১৩১৪ বঙ্গাব্দে পাবনায় এক প্রাদেশিক সম্মেলনে কবি বলেন, "তোমরা যে পারো এবং যেখানে পারো, এক একটি গ্রামের ভার গ্রহণ করিয়া সেখানে গিয়ে আশ্রয় লও। গ্রামগুলিকে ব্যবস্থাবদ্ধ করো। শিক্ষা দাও, কৃষিশিল্প ও গ্রামের ব্যবহার সামগ্রী সম্বন্ধে নতুন চেষ্টা প্রবর্তিত করো। গ্রামবাসীদের বাসস্থান যাহাতে পরিচ্ছন্ন, স্বাস্থ্যকর ও সুন্দর হয়, তাহাদের মধ্যে সেই উৎসাহ সঞ্চার করো। এবং যাহাতে তাহারা নিজেরা সমবেত হইয়া গ্রামের সমস্ত কর্তব্য সম্পন্ন করে, সেইরূপ বিধি উদ্ভাবিত করো। এ কর্মে খ্যাতির আশা করিও না। এমনকি, গ্রামবাসীদের নিকট হইতে কৃতজ্ঞতার পরিবর্তে বাধা ও অবিশ্বাস স্বীকার করিতে হইবে। ইহাতে কোনও উত্তেজনা নাই, কোনও ঘোষণা নাই, কেবল ধৈর্য এবং প্রেম, নিভৃতে তপস্যা- মনের মধ্যে কেবল এই একটিমাত্র পণ, যে, দেশের মধ্যে সকলের চেয়ে যাহারা দুঃখী, তাহাদের দুঃখের ভাগ লইয়া সেই দুঃখের মূলগত প্রতিকার সাধন করিতে সমস্ত জীবন সমর্পণ করিব......
বর্তমানে আমাদের সমাজ এক অদ্ভুত পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে চলেছে। আগেও যে সমাজের অধঃপতন হয়নি তা নয়, যুগের সঙ্গে সঙ্গে স....