05/05/2025
বোধহয় আপনিও এই ফাঁদে পড়ে অলরেডি ছটকাচ্ছেন ! "ভালো" স্কুলে আপনার বাচ্চাকে ভর্তি করে এখন কী করবেন আর ভেবে পাচ্ছেন না । বোধহয় সমস্যাটা কোথায় সেটাই ধরতে পারছেন না ।
আমি বলছি কোথায় সমস্যা কোথায়। মিলিয়ে দেখুন..মিলে যেতে পারে ।
আজকের জেনারেশন এর যাঁরা "এডুকেটেড" বাবা মা , এদের অনেকেরই ছোটোবেলার স্কুল এডুকেশন কেটেছে মফস্বলের পাতি বাঙালি বোর্ডের স্কুলে ।
আমার নিজেরও ক্লাস টুয়েলভ পর্যন্ত স্কুলিং তারকেশ্বর হাই স্কুলে ...নিতান্ত সাদামাটা বাংলা বোর্ডের অতি সাধারণ একটা স্কুল। এই সাধারণ স্কুলেরই শতবার্ষিকী অনুষ্ঠান হলো এই বছর ... দেখলাম লিস্টে কয়েকশো ডাক্তার , কয়েকশো ইঞ্জিনিয়ার , কয়েকশো বিজ্ঞানী ....অজস্র সফল মানুষের নাম!
শুধু এই স্কুল না , আপনি একশো বছরের পুরানো যেকোনো স্কুলের এলুমনি লিস্ট দেখুন... একই গল্প ।
কিন্তু এইসব স্কুল থেকে বেরিয়ে জীবনে সফল হওয়ার পর কিছু মানুষের ধারণা হলো এই স্কুলে ছেলে মেয়েদের পড়ালে কোনো ভবিষ্যত নেই। কথাটা ঠিকই .....কারণ সময় বদলেছে , টেকনোলজি বদলেছে .... কিন্তু এই স্কুলগুলো বদলায়নি!
তারওপর এখন যা অবস্থা .... পশ্চিমবঙ্গের বাংলা বোর্ডের স্কুলগুলোর ওপর নিজের বাচ্চার এডুকেশন এর দায়িত্ত্ব ছেড়ে দেওয়া আর সাপের হাতে ব্যাঙ এর দায়িত্ত্ব দেওয়া একই ব্যাপার ... সিম্পলি গিলে নেবে!
গত দশ বছরে এই সরকার আর যাই করুক ... সরকারি স্কুল শিক্ষার মেরুদণ্ড ভেঙে দিয়েছে । কেন করেছে সেটারও লজিক আছে । "এরা যতো শিখবে , এরা ততো প্রশ্ন করবে " ...সেই হীরক রাজার লজিক। স্কুল শিক্ষার মেরুদণ্ড ভেঙে দাও গুঁড়িয়ে দাও .... যতো বেশি অশিক্ষিত বেকার ছেলেমেয়ে রাজ্যে থাকবে ততো বেশি পার্টির ঝান্ডা নিয়ে বেরোনোর লোক পাওয়া যাবে । তোলাবাজি , দূর্নীতি এসব করার জন্য ভালোই লোকবল লাগে ।
শিক্ষিত মানুষ হলেই তো নৈতিকতার প্রশ্ন তুলবে!
অযোগ্য শিক্ষক এর থেকে ক্ষতিকর জিনিস সমাজের জন্য আর কিছু হয় না । এরা পচা আপেলের মতো ...পাঁচটা ভালো শিক্ষককেও সঙ্গগুনে যোগ্য থেকে অযোগ্য করে তোলে ।
এরা পার্টি অফিস সময় কাটাবে , দেরি করে স্কুলে আসবে ...ক্লাসে দেরি করে যাবে , ছেলেমেয়েদের দিয়ে একটা লাইন করে রিডিং পড়িয়ে ঘণ্টা বাজলেই ক্লাস থেকে বেরিয়ে যাবে । কেউ প্রশ্ন করলে এমন ধমক দেবে যে বাকিরা প্রশ্ন করতেই ভয় পাবে।
এদের দেখাদেখি যাঁরা ভালো শিক্ষক , যোগ্য শিক্ষক তারাও পড়ানোর উৎসাহ হারিয়ে ফেলে । ভাববে একই মাইনে আমিও পাচ্ছি , ওও পাচ্ছে .... আমিই বা গলায় রক্ত তুলে পড়াবো কেনো...
একদিক থেকে সুপ্রিম কোর্টের অর্ডার জাস্টিফায়েড। আমি তো বলবো প্রতি পাঁচ বছর অন্তর স্কুল টিচারদের ম্যান্ডেটরি পরীক্ষা নেওয়ার ব্যবস্থা করা হোক। পাস করলে চাকরি থাকবে নাহলে টাটা বাই বাই করে দেওয়া হোক ...দেখবেন কুড়ি তিরিশ বছরে সরকারি শিক্ষা ব্যবস্থাটাই পাল্টে যাবে ।
আসলে মাথার ওপর চাপ একটু থাকা ভালো। সরকারি চাকরি পেতে মানুষ ঘোড়ার মতো ছোটে আর সরকারি চাকরি করার দু এক বছর পর ঘোড়া থেকে গাধা হয়ে যায়.... এটা যেকোনো সরকারি প্রতিষ্ঠানে গেলেই দেখতে পাবেন । বিরক্ত হয়ে যাবেন এটা দেখে যে এরা সারাদিন এতো ধীরগতিতে কাজ করে কীভাবে!
দূর্নীতি সব সরকার করে । Power corrupts people... কিন্তু শিক্ষাক্ষেত্রে দুর্নীতি মানে সমাজের মেরুদণ্ডটাকে কমজোর করে দেওয়া।
যাইহোক নিজের বাচ্চাকে আর যেখানেই দিন না কেনো সরকারি স্কুলে বাংলা বোর্ডে দেবেন না । অন্তত আমি তো দেবো না । গত দশ বছরে পশ্চিমবঙ্গের সরকারি স্কুল শিক্ষার মেরুদণ্ড যেভাবে ভেঙেছে, এটা ঠিক হতে অন্তত সামনের কুড়িটা বছর লাগবে যদি সরকার বদলায় ... আর যদি এই শ্রী ওই শ্রীর টাকা হাতে পেয়ে সঠিক জায়গায় ভোট দিতে ভুলে যান ....জেনে রাখুন সামনের একশো বছরেও এই হাল শোধরানোর কোনো জায়গা থাকবে না ।
তাহলে কোন স্কুলে দেবেন ? অবশ্যই ভালো ইংলিশ মিডিয়াম প্রাইভেট স্কুলে । প্রাইভেট স্কুলে আর যাই হোক ঘুষ দিয়ে টিচার রিক্রুট হয় না বা হলেও এরকম মাস স্কেলে হয় না।
কিন্তু এই "ভালো" বাছতে গিয়েই সব গড়বড় হয়ে যায় মানুষের।
প্রথম ভুল - বাড়ি থেকে বহুদূরে "ভালো" স্কুল খুঁজে বের করা। বাচ্চা বাসে করে স্কুল যায় এক ঘণ্টা , ফেরে এক ঘণ্টা । আপনার বাচ্চার দিনে দু ঘণ্টা বাস জার্নি মানে কিন্তু আপনার নিজের দিনে চারঘন্টা অফিস জার্নি!
যাঁরা দিনে চার ঘণ্টা বাস জার্নি করে অফিস যান , তাঁরা এবার ভেবে দেখুন অফিস থেকে ফিরে পড়তে বসতে বললে আপনি পড়াশোনায় মন দিতে পারবেন ?
ঠিক এই একই কারণে আপনার বাচ্চা যদি স্কুল যেতে আসতে দিনে দু ঘণ্টা বাস জার্নি করে তাহলে সেও বাড়ি ফিরে পড়াশোনায় মন লাগাতে পারবে না...সে আপনি তাকে যতই টর্চার করুন না কেনো।
আপনি বলবেন বাড়ির কাছে সেরকম ভালো প্রাইভেট স্কুল নেই তো .... সেক্ষেত্রে নিজের বাড়িটাকেই উঠিয়ে নিয়ে সেই ভালো স্কুলের কাছে নিয়ে চলে যান বা কাছাকাছি একটু কম "ভালো" স্কুলে আপনার বাচ্চাকে ভর্তি করান । কিন্তু কোনোভাবেই বাচ্চাকে বাস জার্নি করাবেন না ....কারণ এক্ষেত্রে আপনার বাচ্চা এনার্জি পাবে না।
দ্বিতীয় ভুল - এই "ভালো" স্কুল গুলোর এক্সট্রা কারিকুলাম একটিভিটিগুলোতে নিজের বাচ্চাকে গলা পর্যন্ত ডুবিয়ে দেওয়া। বাচ্চা স্কুলে গেলো পড়লো , একটিভিটি করলো বাড়ি চলে এলো.... তাহলে বিসনেসটা হবে কোথা থেকে!
এই ভালো স্কুল গুলোর আপনাকে বোঝাবে অ্যাবাকাস করলে আপনার বাচ্চার ব্রেন ডেভেলপমেন্ট হবে , অলিম্পিয়াড এ পার্টিসিপেট করালে আইকিউ বাড়বে...ইত্যাদি ইত্যাদি....
এদিকে এই অ্যাবাকাস কোম্পানিগুলো , অলিম্পিয়াড কোম্পানিগুলো স্কুলকে কী বোঝাচ্ছে জানেন ?? "আপনারা একশো জন স্টুডেন্ট আমাদের দিলে আমরা আপনাকে দশ লাখ টাকা দেবো....দুশো জনকে দিলে পনেরো লাখ ..."
বিজনেস হচ্ছে মশাই....আপনার বাচ্চাকে নিয়ে বিজনেস হচ্ছে ...পিওর বিজনেস! আপনার বাচ্চাকে নিয়ে আপনার মনে যে উদ্বিগ্নতা আছে, সফট কর্নার আছে ...সেটাকেই এরা এক্সপ্লইট করছে ।
আপনার বাচ্চা যতই গবেট হোক না কেনো , এই প্রাইভেট অলিম্পিয়াডগুলোতে পার্টিসিপেট করিয়ে দেখুন আপনার বাচ্চা একটা না একটা কিছু পাবেই ....মিলিয়ে নেবেন। এইটুকু না পেলে আপনার এই অহেতুক টাকা খরচকে জাস্টিফাই করবেন কীকরে!
গাদা গাদা টাকা খরচ করলেন অথচ আপনার বাচ্চাটা কিছুই পেলো না আপনি যাবেন নেক্সট ইয়ার আবার ওই প্রাইভেট অলিম্পিয়াডগুলোতে ?? যাবেন না তাই তো? সেকারনেই আপনার বাচ্চাকে ওরা কিছু না একটা কিছু দেবে।
ফলটা সুদুরপ্রসারী। কষ্ট না করেও কিছু পাওয়া যায় এটা একবার আপনার বাচ্চাটা বুঝে গেলে খুব খুব মুস্কিল । এই মাইন্ডসেটটাই আপনার বাচ্চাকে ভিতর থেকে শেষ করে দেবে....আর এর বীজটা পুতছে এই প্রাইভেট কম্পিটিশন গুলো ....যেগুলোতে পার্টিসিপেট করলেই প্রাইজ পাওয়া যায়।
অনেক বাবা মা কে এগুলো নিয়ে গর্ব করতে দেখি। ফেসবুকে পোস্ট দেখি আমার ছেলে এই অলিম্পিয়াডে এই মেডেল পেয়েছে ...মানে শুধু বাচ্চাদের না এরা বাবা মা কেও ভিতর থেকে শেষ করে দিচ্ছে!
ভালো করে লক্ষ্য করলে দেখবেন এগুলো সবই প্রাইভেট অলিম্পিয়াড! যেগুলো আসল ভালো অলিম্পিয়াড ওগুলোতে আপনার বাচ্চাকে পার্টিসিপেট করিয়ে দেখুন...শুধু কোয়ালিফাই করতেই আপনার , আপনার বাচ্চা সবার ঘাম ছুটে যাবে , প্রাইজ তো অনেক দূরের গল্প।
তাহলে কী করবেন ?
প্রথম কথা আপনি দেখুন যে সাবজেক্টে অলিম্পিয়াড সেই সাবজেক্টে আপনার বাচ্চার জেনুইন ইন্টারেস্ট আছে কিনা । আম গাছে আম হয় , কাঁঠাল গাছে কাঁঠাল ..... আপনি যদি আম গাছের গোড়ায় সার জল দিয়ে বলেন লে গাছ এবার কাঁঠাল ফলা ...ফলবে না ।
আপনার বাচ্চাটা আম গাছ নাকি কাঁঠাল গাছ সেটা আগে জানার চেষ্টা করুন । সেই হিসেবে অলিম্পিয়াড বেছে নিন। স্কুল যে অলিম্পিয়াডকে রেকমেন্ড করবে সেটাকে প্রথমেই কিছু না দেখে বাদ দিয়ে দেবেন...ওগুলো বোগাস ... মোস্টলি মার্কেটিং গিমিক।এরপর আপনাদের কতোগুলো অলিম্পিয়াড এর নাম বলে দিচ্ছি , এগুলোর জন্য আপনার বাচ্চাকে প্রিপারেশন নিতে বলুন
Indian National Mathematical Olympiad (INMO)
National Science Olympiad (NSO)
Indian National Mathematical Olympiad (INMO)
National Cyber Olympiad (NCO)
প্রসঙ্গত বলে রাখি এই অলিম্পিয়াড গুলোতে মেডেল পেলে নিঃসঙ্কোচে সোশ্যাল মিডিয়াতে পোস্ট করতে পারেন , কারণ এগুলো সত্যিকারের আচিভমেন্ট!
"ভালো" স্কুলে বাচ্চাকে ভর্তি করুন খুব ভালো কথা...বাচ্চা চাইলে এক্সট্রা একটিভিটিতেও দিন সেটাও ঠিক আছে .....কিন্তু জোর করবেন না । বাচ্চার ইন্টারেস্ট আগে বুঝুন , ইন্টারেস্টেড হলে তবেই এগোন নাহলে নয়।
তৃতীয় ভুল : বাচ্চাকে গাদা গাদা টিউশন দেওয়া । রেডিমেড খাবার হাতের কাছে পেলে কেউ রান্না করতে শিখবে না...এটাই চিরকালের সত্য ।
আজকের দিনে কোনো বাচ্চা নিজে থেকে এক লাইন পড়তে পারে না ...সবটাই এই গাদা গাদা টিউশন এর সাইড এফেক্ট। টিউটর সব কিছু বুঝিয়ে দিচ্ছে .... সরি একটু বলতে ভুল হয়ে গেলো ...বুঝিয়ে দিচ্ছে না , হা করে গিলিয়ে দিচ্ছে। বাচ্চারা সেটা গিলছে আর এক্সাম হলে উগরে দিচ্ছে .... একদম ক্লিয়ার !
আপনার বাচ্চা ক্লাস সেভেনে পড়লে যে বইটা ক্লাস সিক্সে অলরেডি পড়ে এসেছে সেই বই থেকে দশটা প্রশ্ন ধরে দেখুন... একশো জনের মধ্যে নিরানব্বই জন দশটার মধ্যে পাঁচটা প্রশ্নও ঠিকঠাক বলতে পারবে না। এতোটাই বাজে অবস্থা। বিশ্বাস না হয় নিজের বাচ্চাটির সাথে এই এক্সপেরিমেন্ট করে দেখুন।
রেডিমেড নোটস, প্রশ্ন উত্তর শীট... বাচ্চাদের শেষ করে দিচ্ছে। কোনো একটা বিষয় অন্য কারো হেল্প না নিয়ে নিজে পড়তে পড়তে নোটস নেওয়াটা যে পড়াশোনায় কতোটা হেল্প করে সেটা আজকের বাবা মা বুঝতেই পারছে না।
বাচ্চা যখন নিজে পড়ে কোনো একটা জিনিস বুঝতে চেষ্টা করে সেটা একটা হোলসাম প্রসেস ... কিছুটা বুঝলো , কিছুটা বুঝলো না ....যেটা বুঝলো না সেটা কিছুটা কল্পনা করে নিলো ....বাদে আপনাকে জিজ্ঞেস করলো আপনি উত্তরটা দিলেন...সেটার সাথে নিজের কল্পনার জিনিসগুলো মিলিয়ে দেখলো ...যেগুলো মিললো সেগুলো মেমোরিতে রাখলো বাকিটা সময়ের সাথে মুছে গেলো.........
বাচ্চাকে সব কিছু গিলিয়ে দিলে এই পুরো প্রসেসটাই মিসিং! এটার গুরুত্বটা ভালো করে বুঝুন....যেকোনো ফান্ডামেন্টাল রিসার্চ এই পদ্ধতিতেই হয় ! পৃথিবীতে যেখানে যতো রিসার্চ পেপার পাবলিশ হচ্ছে তাদের ব্যাকগ্রাউন্ড সিন টাই এটা !
ঋত্বিক ঘটকের একটা বিখ্যাত উক্তি আছে "ভাবো, ভাবো ...ভাবা প্র্যাকটিস করো " । শুধু ভাবতে বললেই তো কাজ মিটে যেতো তাই না ....কিন্তু না ..."প্র্যাকটিস" করতে বলছেন ।
কারন এটা প্র্যাকটিস করার মতোই জিনিস। আপনার বাচ্চাকে ভাবা প্র্যাকটিস না করালে বড়ো হয়ে সুন্দর চাকর তৈরি হবে , যে ভাবতে জানে না ....শুধু অর্ডার ফলো করতে জানে।
যেহেতু মেশিন আপনার বাচ্চার থেকে ভালো অর্ডার ফলো করতে পারে তাই AI সেইসব কাজ খেয়ে নিচ্ছে আর খেয়ে নেবে। আজ থেকে কুড়ি বছর বাদের পৃথিবীতে শুধু তাদের কদর থাকবে যাঁরা ভাবতে পারবে।
এই ভাবার ট্রেনিংটাই আপনার বাচ্চাকে আজ থেকে দিতে হবে।
প্রাইভেট টিউশন খারাপ জিনিস বলছি না , কিন্তু যে পদ্ধতিতে আজ প্রাইভেট টিউশন হচ্ছে সেটা মারাত্মক ভুল ...প্রাইভেট টিউশন দিন কিন্তু স্ট্রিক্টলি বলে রাখুন যেনো বাচ্চাকে স্পুন ফিডিং না করে ।
অধিকাংশ সেনসিবল প্রাইভেট টিউটর কিন্তু এটাই চান ...বাবা মা রাই বাধ্য করেন বাচ্চাকে স্পুন ফিডিং করাতে । আসলে নাম্বারের চাপ ! স্পুন ফিডিং না করালে অবশ্যই নাম্বার কম আসবে ... তখন তো আবার প্রাইভেট টিউটর বদলে ফেলবেন।
ক্লাস এইট পর্যন্ত প্লীজ প্লীজ সাব্জেক্ট ওয়াইজ আলাদা আলাদা টিউটর দেবেননা। সব সাব্জেক্ট এর জন্য একটাই টিউটর রাখুন। এতে আপনার বাচ্চার অনেকটা সময় বাঁচবে । হাজার জায়গায় হাজারটা টিউশন ...সত্যি ওরা নিতে পারে না । পড়ার ইচ্ছাটাই ওদের নষ্ট হয়ে যায়....পড়া জিনিস টাকেই টর্চার হিসাবে ধরে নেয়।
ভালো না বাসলে কোনো জিনিস সত্যি শেখা যায় না। আপনার বাচ্চা পড়াশোনাটাকে একবার টর্চার হিসাবে ধরে নিলেই ব্যাস....করুন ধস্তাধস্তি...সারা বছর ধরে।
আর বাচ্চাদের জন্য ফ্রী টাইমটা খুব খুব গুরুত্বপূর্ণ জিনিস। ফ্রী টাইম পেলে বোর হবে ...বোর হলেই কিছু একটা জিনিস নিয়ে ভাববে.....মাইন্ড বোর না হলে ক্রিটিকাল থিংকিং আসে না ।
ফ্রী টাইম মানেই যে ওয়েস্টেড টাইম না , বরং এটা বাচ্চাদের জন্য লাইভ সেভিং মেডিসিন ....এটা যেদিন বুঝবেন সেই দিন থেকেই আপনার বাচ্চার মধ্যে ইমপ্রুভমেন্ট দেখতে পাবেন।
ফর গড সেক....বাচ্চাদের খেলতে দিন। খেলা মানে সময় নষ্ট না ...এটা মাথার মধ্যে গেঁথে নিন। খেলতে খেলতেই ওরা শেখে ...খেলাটাই ওদের শেখার মাধ্যম। খেলা বন্ধ করে পড়ানো মানে নিজের হাতে নিজের বাচ্চার ভবিষ্যত গলা টিপে মেরে ফেলা।
বাচ্চাকে নানা রকম খেলনা কিনে দিন.... একটু বড়ো হলে টুল কিট কিনে দিন ....নিজেকে খেলনা বানাতে বলুন । আজ খেলনা বানাবে ... কাল বড়ো হয়ে রকেটের ইঞ্জিন বানাবে.....পৃথিবীর সব বড়ো বড়ো রকেট সায়েন্টিস্ট দের ছোটবেলাটা এভাবেই শুরু হয়েছিলো। বীজটা আপনাকেই পুঁতে দিতে হবে । বাকিটা সময়ের অপেক্ষা।
প্রথম তিনটে ভুল আপনাদের জানালাম ...আমার অবজার্ভেশনে এরকম টোটাল দশটা ফান্ডামেন্টাল ভুল আছে যেগুলো অনেক বাবা মা করে চলেছে । বাকিগুলো পরের পোস্টে জানাবো....যে যাই বলুক আমি আমার নিজের স্টাইলেই বাচ্চা মানুষ করবো...নিজের মতো করে ... ভালো করে পড়াশোনা করে ।
সংগৃহীত