03/11/2025
আলোর সাগরে চন্দননগর, জগদ্ধাত্রীর শোভাযাত্রায় জনসমুদ্র
শম্পি চক্রবর্তী পুরকায়স্থ
আলো, প্রতিমা আর ভক্তির জোয়ারে আজ সারারাত ধরে উৎসবে মেতে উঠল চন্দননগর। জগদ্ধাত্রী পুজোর সমাপ্তি মুহূর্তে ঐতিহ্যবাহী শোভাযাত্রায় ভাসল গোটা শহর। নদীর ধারে, গলিতে, রাজপথে— সর্বত্র একটিই দৃশ্য, দেবী জগদ্ধাত্রীর বর্ণাঢ্য মূর্তি আর হাজারো মানুষের উচ্ছ্বাস।
সন্ধ্যা নামতেই শুরু হয় আলোকসজ্জায় মোড়া শোভাযাত্রা। শহরের কানাইলাল পল্লি, কলেজপাড়া, লালদিঘী, তালডাঙা, কাঁটাপুকুর, কৃষ্ণপট্টি, বাগবাজার, মধ্যাঞ্চল, গঞ্জ, নিমতলা, তেঁতুলতলা— প্রতিটি এলাকার প্রতিমা যেন নিজস্ব থিমে ঝলমল করছে। বিশাল আলো-তোরণ, চলমান আলোকচিত্র, দেবীর থিমভিত্তিক প্রতিমা আর ঢাক-ঢোলের তালে শোভাযাত্রা এক অনন্য আবহ তৈরি করে। রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকা হাজার হাজার দর্শক মোবাইলের আলোয় বন্দি করছেন এই ঐতিহ্য।
চন্দননগরের শোভাযাত্রা যে শুধু ধর্মীয় নয়, সাংস্কৃতিক সম্প্রীতিরও প্রতীক— তা বারবার প্রমাণ করে এই শহর। হিন্দু, মুসলিম, খ্রিস্টান— ধর্ম নির্বিশেষে সকলেই এই উৎসবে অংশ নেয়। শহরের ফরাসি ঐতিহ্যবাহী রাস্তা জুড়ে আলোর কারুকাজে তৈরি হয় এক স্বপ্নলোক। আলোকসজ্জা দেখতে ভিড় জমে রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে। কলকাতা, হাওড়া, বর্ধমান, নদীয়া, এমনকি ঝাড়গ্রাম থেকেও বহু মানুষ উপস্থিত হন এই মহাযাত্রা প্রত্যক্ষ করতে।
পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে নিরাপত্তায় ছিল কড়া নজর। গোটা শহরে মোতায়েন করা হয়েছিল কয়েক হাজারেরও বেশি পুলিশকর্মী, ড্রোন ও সিসি ক্যামেরার মাধ্যমে নজরদারি চালানো হয়। বিশেষ নজর রাখা হয় স্টেশন চত্বর, ঘাট এলাকা ও প্রধান রাস্তাগুলিতে। শহরের বিভিন্ন জায়গায় ছিল মেডিক্যাল টিম ও কন্ট্রোল রুম।
রাত গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে শোভাযাত্রার জৌলুস আরও বেড়ে যায়। ঢাকের তালে তালে নাচ, আলোর রঙিন ছটা, বাজনার তালে মানুষের উল্লাস— সব মিলিয়ে চন্দননগর যেন এক জীবন্ত চিত্রকল্প। অনেক প্রতিমায় দেখা গেছে দেশাত্মবোধ ও সমাজবার্তা— কেউ দেখিয়েছে নারীশক্তির উদযাপন, কেউ তুলে ধরেছে পরিবেশ রক্ষার বার্তা।
রাত পেরিয়ে ভোরের আলো ফুটলেও থামেনি মানুষের ভিড়। গঙ্গার ঘাটে প্রতিমা নিরঞ্জনের সময়ও একই উৎসাহ। চোখের জলে বিদায় জানিয়েও সকলের মুখে একটাই কথা— “আবার আসিও মা”।
এলাকার বিখ্যাত সব পুজো কমিটির অংশগ্রহণে আয়োজিত এই শোভাযাত্রা শুধু হুগলির নয়, গোটা রাজ্যের এক অনন্য সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য। আলোকসজ্জা, সংগীত, শিল্পকলা ও নাগরিক সম্প্রীতির মেলবন্ধনে এ যেন এক মহোৎসব, যার তুলনা খুঁজে পাওয়া দুষ্কর।