02/09/2025
বর্ধমানে ভিএমএল কেলেঙ্কারি! সর্বস্বান্ত বহু আমানতকারী
প্রবীর মণ্ডল : ‘কম টাকায় বেশি মুনাফা’– এই টোপে রাজ্যজুড়ে কয়েকশো কোটি টাকা তুলেছে একটি অনলাইন সংস্থা (ভিএমএল)। প্রথমদিকে কিছু টাকা ফেরত দিলেও গত অগস্ট মাস থেকে গ্রাহকদের অর্থ ফেরত বন্ধ হয়ে যায়। ফলে বিপাকে পড়েছেন কয়েক লক্ষ আমানতকারী। সোমবার বর্ধমান সাইবার থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন ভুক্তভোগীরা।
অভিযোগকারীরা জানিয়েছেন, সংস্থার দাবি ছিল— ৫ হাজার টাকা বিনিয়োগ করলে ২০ দিন পর মিলবে ৪০ হাজার টাকা। ১৬ হাজার ৫০০ টাকায় জয়েন করলে প্রতিদিন ৮০০ টাকা আয় হবে, মেয়াদ শেষে পাওয়া যাবে প্রায় এক লক্ষ টাকা। এমনই নানা স্কিমের লোভ দেখিয়ে মানুষকে বিনিয়োগে প্রলুব্ধ করা হয়েছিল। যে যতজনকে জয়েন করাবে, সে তত বেশি কমিশন পাবে বলেও প্রচার চালানো হয়েছিল।
প্রথমদিকে কয়েকজনকে টাকা ফেরত দিয়ে বিশ্বাস অর্জন করলেও পরে বিভিন্ন অজুহাতে অর্থ আটকে দেয় সংস্থাটি। অভিযোগ, সম্প্রতি আবার কেওয়াইসির নামে কারও কাছে ৮১ হাজার, কারও কাছে এক লক্ষ টাকা পর্যন্ত দাবি করা হচ্ছে। টাকা না দিলে আইনি পদক্ষেপের হুমকিও দেওয়া হচ্ছে গ্রাহকদের।
তৃণমূল নেতা শ্যামল রায় অভিযোগ করে বলেন, “দেশজুড়েই এই প্রতারণা চলছে। শুরুতে বলা হয়েছিল দিনে ৪-৫টি বিজ্ঞাপন দেখলেই মোটা টাকা আয় হবে। ২ হাজার থেকে ১৬ হাজার ৫০০ টাকা দিয়ে জয়েন করতে হতো। সরল বিশ্বাসে অনেকেই যোগ দেন। পরে লোভ দেখিয়ে আরও নানা স্কিমে বিনিয়োগ করতে বলা হয়। পাঁচ থেকে আটগুণ মুনাফার আশায় অনেকে ধার করেছিলেন, কেউ আবার সোনা বন্ধক রেখেছিলেন। এখন সবই আটকে গেছে।”
তিনি আরও জানান, বর্ধমানের তিন-চারজন এই চক্রের মূল মাথা হিসেবে কাজ করেছে। তাঁদের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে।
এক আমানতকারী বলেন, প্রায় সাত মাস ধরে অ্যাপটি চলছিল। প্রথমদিকে প্রতিশ্রুতির মতো কয়েকজনকে টাকা দেওয়া হয়। সেই প্রলোভনে বহু মানুষ বিনিয়োগ করেন। হোয়াটসঅ্যাপে গ্রুপ খুলে আরও মানুষকে প্রভাবিত করা হয়। একটি লিঙ্ক ডাউনলোড করলেই বিনিয়োগের সুযোগ মিলত। শুরুতে বলা হয়েছিল, বিভিন্ন সংস্থার বিজ্ঞাপন প্রচারের জন্যই অ্যাপটি চালু হয়েছে।
অন্য এক আমানতকারী জানান, শুধু বর্ধমান শহরেই প্রায় ১০ হাজার যুবক-যুবতী ওই অ্যাপে টাকা দিয়েছেন। পাশাপাশি জেলার বাইরেও অসংখ্য বিনিয়োগকারী রয়েছেন।
প্রতারণার জালে ফেঁসে এখন লক্ষ লক্ষ আমানতকারীর ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত। পুলিশের তদন্ত শুরু হলেও এখনও মূল অভিযুক্তদের খোঁজ মেলেনি।