07/10/2022
।। অথঃ শ্রী সারথী কথা ।।
" আমি নিঝুম গড়ের ডেরাইভার "
তখনও ওয়েব সিরিজ এর এই সব পিলে চমকানো ভয়ানক ভুতপ্রেত দের উপদ্রব শুরু হয় নি। যখন পেত্নীরা বিনা দাবিতে রাতের পর রাত বনে জঙ্গলে সাদা শাড়ি পরে আর মোমবাতি হাতে কালজয়ী সব গান শুনিয়ে বেড়াতো, তখন কুহেলী সিনেমার এই দৃশ্য আমাদের মা ঠাকুমাদের নাকি বুকের জল শুকিয়ে দিয়েছিল। সে যাই হোক আজকের বিষয় কিন্তু ভূত নয়, ভুতে পাওয়া ড্রাইভারদের নিয়ে। এই যেমন ধরুন শহরের এক নামকরা ডাক্তার বাবুর ড্রাইভার যখন ক্লিনিকের অনতিদুরে গাছতলায় অডি গাড়িতে বসে গুটকা চিবোন, তখন তাকে জিজ্ঞাসা করে জেনেছি, তিনি চশমা আনতে ভুলে যান বলে পেপকিপসন পড়তে পারেন না কিন্তু চাইলে জ্বর, সর্দি, পেটব্যথা, মাথাব্যথা এরকম কতশত রোগের ওষুধ ওনার মুখস্ত। প্রতি সপ্তাহে যখন উনি গ্রামের বাড়ি ফিরে যান, তখন নাকি তেনার নিজস্ব রুগীদের জন্য মনে করে ওষুধ নিয়ে যান শহর থেকে। কিন্তু এই "খেলা হবে" র বাজারেও উনি সহৃদয় মানুষ (হ্যাঁ কোনো কথা হবে না) উনি ওনার স্যারের মত গাদা গাদা ভিজিট নেন না, ওই যেটুকু কমিশন পান তাতেই সন্তুষ্ট।
সে যাই হোক ফেবু বাবুদের পোস্টে পড়েছি, আইনস্টাইন এর ড্রাইভারও নাকি কি সব থিসিস টিসিস মুখস্ত বলতে পারত। তা ফেবু পোস্টের সত্যতা যাচাই করার মতো কলিজার জোর আমার নেই, আর হবেও না। আর কলিজার জোর নেই বলেই আমার ছেলেবেলার বন্ধু হওয়া সত্বেও আমি এক জনের সঙ্গে তর্ক করি না, কারণ তিনি আমাদের ডিস্ট্রিক্ট জজ এর ড্রাইভার। যদিও সে মুখে বলে "জামিন লাগলে বলিস করে দেবো", কিন্তু আমি জানি ফাঁসি বা হাজতবাস করানো ওনার বাম হাতের মুঠোয়।
আসলে আমি কোনদিনই ড্রাইভার নামক এই বিশেষ গোষ্ঠীকে অসন্মান করার স্পর্ধা দেখাই না। কারন যখন "শ্রীমৎ ভাগবত গীতা" একজন ড্রাইভারের বাণী নিয়ে রচিত হয়েছে, তখন আমি তো নিমিত্ত মাত্র। বরং আমি ছোটো বেলায় স্বপ্ন দেখতাম, "বিশাল বপু একটি ট্রাকের ড্রাইভার হবো। দুর্বার গতিতে ছুটে চলবো আমার দেশের এক প্রদেশ থেকে অন্য প্রদেশে। একদিন ওই ট্রাকে চেপেই সানি দেওলের মত "উড়জা কালে কাওয়া তেরে" গাইতে গাইতে পালাবো আমার প্রেমিকাকে নিয়ে। আর আমার হবু শ্বশুর বাড়ির পাড়ার লোকেরা গাইবে
"ছো ছো ছো ছো ...
কেয়া শরম কি বাত,
ভদ্দর ঘরকা লেড়কি ভাগে
ডেরাইভার কে সাথ"।
এতে অমরেশ পুরির মতো দেখতে হবু শ্বশুরের মুখে চুনকালি লাগানোর একটা স্যাডিস্টিক ডিসায়ার আমার ছিলো। কিন্তু সে আর হলো কই? আমার ট্রাক ড্রাইভার হওয়াও হলো না, আর তিনিও হবু থেকে ডাইরেক্ট প্রাক্তন হয়ে গেলেন। শুনেছিলাম তার মেয়ে নাকি অন্য কারো ড্রাইভারের সঙ্গে পালিয়েছিল। এরকম দুর্ঘটনা অবশ্য সবার জীবনেই দু চার বার ঘটে। যখন জীবন চালক বিহীন গাড়ির ন্যায় এদিক ওদিক গুঁতো খেতে খেতে চলতে থাকে আর লোকজন দাগা খাওয়া কবিতা লিখে ডাইরি ভরায়; তারপর একদিন বিয়ে করে ফেলে। এরপর স্ত্রী বা পতি নামক জীবটি জীবনের স্টিয়ারিং ধরলে কি ঘটে সেটা এখানে লেখার মত দুঃসাহস আমার নেই, কারন অযথা বিতর্ক সৃষ্টি হবে। শুধু এটাই বলতে পারি "পরীক্ষা প্রার্থনীয়"।
তবে বাহন এর সঙ্গে ড্রাইভারের সম্পর্ক কিন্তু আত্মার সঙ্গে শরীরের মত। মালিকের নাম বাহনের সঙ্গে জুড়ে থাকে কিন্তু আপনার বাহনটি "কপিধ্বজ" না "পুষ্পক" সেটা নির্ভর করে চালকের আসনে কে বসে। একবার নাকি রাবণ কে বাঁচাতে পুষ্পক যুদ্ধ ক্ষেত্র থেকে ফিরিয়ে এনেছিল পুষ্পকের ড্রাইভার, এতে রাবণকে তীব্র সমালোচনার মুখে পড়তে হয়। রাবণ অবশ্য খুব বকেছিলেন তার ড্রাইভারকে। বলেছিলেন এর থেকে মৃত্যু তার কাছে প্রিয় ছিল। এখন অবশ্য রাবণের মত ভিলেন তো দুর হিরো পাওয়াও দূরহ। এখন হিরোরাও "হিট অ্যান্ড রান" মামলায় ড্রাইভার কে ফাঁসিয়ে দিয়ে নিজে কেটে পড়ে। তাই আজ আর কোন ড্রাইভার রণাঙ্গনে দাড়িয়ে বলে না,-
"হে পার্থ, তুমি কিসের জন্য কাঁদছ? টাকার বস্তা, অর্পিতা, ইডি সবই আমার সৃষ্টি, সবই আমার মায়া।"