
11/07/2025
ফিরে দেখার
আনন্দ
অন্যরকম বই
গৌতম বুদ্ধের জন্ম আনুমানিক খ্রিস্টপূর্ব ৫৬৭-৬৬ অব্দে। মহান এই ধর্ম প্রবর্তকের নামোচ্চারণ-মাত্র আমাদের মনে পড়ে যায় শান্ত, ক্ষমাসুন্দর এক মুখমণ্ডল। রবীন্দ্রনাথের কবিতায় যেমন চিত্রিত— ‘বুদ্ধের করুণ আঁখি দুটি/সন্ধ্যাতারা-সম রহে ফুটি।’ বিশ্বের নানা প্রান্তে বুদ্ধদেবের মূর্তি ছড়িয়ে রয়েছে।
কিন্তু সত্যিই কি বুদ্ধদের এইরকম দেখতে ছিলেন? যাঁরা তাঁর মূর্তি গড়েছেন, তাঁরা কেউ বুদ্ধদেবকে দেখেননি। দেখা সম্ভবও নয়। কারণ বুদ্ধের মূর্তি নির্মাণ শুরু হয় অনেক পরে। জীবদ্দশায় বুদ্ধদেব নিজের ছবি আঁকা বা মুর্তি গড়া পছন্দ করেননি। তিনি বলতেন, ‘এই নশ্বর দেহের ছবি এঁকে, মূর্তি গড়ে তাকে স্থায়ী রূপ দেবে কী করে? যা ধুলোয় মিশে যাবে তাকে ধুলো হয়ে যেতে দাও। আমায় প্রণাম না করে তোমরা যদি সদ্ধর্ম পালন করে নিজেদের উন্নতি করো তা হলেই আমি সুখী হব।’ স্তূপ নির্মাণের অনুমতি ছিল। বুদ্ধদেবের মহাপরিনির্বাণের পর বৌদ্ধধর্মের জনপ্রিয়তা বহুগুণ বৃদ্ধি পায়। ধর্মের প্রচার ও প্রসারের প্রয়োজনে দীর্ঘকাল পরে শুরু হয় বুদ্ধদেবের মূর্তি গড়া ও ছবি আঁকার কাজ। কিন্তু কীভাবে ছবি আর মূর্তি তৈরি করলেন শিল্পী-ভাস্করেরা? আনন্দ থেকে প্রকাশিত চিত্রা দেব-এর ‘বুদ্ধদেব কেমন দেখতে ছিলেন’ গ্রন্থে আলোচিত হয়েছে এইসব অমূল্য প্রসঙ্গ।
বুদ্ধদেব নিজেকে জানার কথা বলেছিলেন, তাঁকে পুজো করতে বলেননি। কিন্তু বৌদ্ধধর্ম চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ার পর বৌদ্ধ শ্রমণেরা অনুভব করছিলেন, মানস-নয়নে বুদ্ধদেবকে দেখার জন্য সাধারণ মানুষের মধ্যে ব্যাকুলতা বাড়ছে। ধর্ম প্রচারের জন্য বুদ্ধের স্মৃতি বা ছবির প্রয়োজন অনুভূত হল। ততদিনে বুদ্ধের সাক্ষাৎ শিষ্যরা সকলেই নির্বাণ লাভ করেছেন। দেশে দেশে শিল্পীর কল্পনায় ভিন্ন ভিন্ন বুদ্ধমূর্তি স্থাপিত হলেও সেটি বুদ্ধদেব বলেই চিনতে পারেন, এটাও একটা অদ্ভুত ঘটনা। কোনও কোনও মত আবার বলে, বুদ্ধের রূপ মনগড়া নয়। চিত্রা দেব-এর গবেষণাধর্মী গ্রন্থটিতে বুদ্ধের জীবন-কথার পাশাপাশি ভগবান বুদ্ধের রূপকল্পনা বা বামিয়ান-চিন-তিব্বত-নেপাল-ভুটান-শ্রীলঙ্কা প্রমুখ আরও নানা দেশের বৃদ্ধমুর্তি নিয়ে সুন্দর আলোচনা স্থান পেয়েছে। সুধী পাঠাকের কাছে ‘বুদ্ধদেব কেমন দেখতে ছিলেন’ গ্রন্থটির মর্যাদাই আলাদা।
[সংক্ষেপিত]
‘আনন্দ’ পত্রিকা। ত্রৈমাসিক। জানুয়ারি-মার্চ ২০১৩, ত্রয়োদশ বর্ষ, প্রথম সংখ্যা।
✅ ‘বুদ্ধদেব কেমন দেখতে ছিলেন’ গ্রন্থটি সংগ্রহ করতে ক্লিক করুন এই লিংকে: https://www.anandapub.in/book-details/571