02/09/2022
–House Husband –
ফোনে ভোর পাঁচটার এলার্ম বাজছে | প্রতিদিনের মতো সবার আগেই উঠে পরে দেবজিৎ | ঘুম থেকে উঠেই চটপট ফ্রেশ হয়ে প্রথমে চা ব্রেকফাস্ট তৈরি করে এবং ঠিক পৌনে ছটা নাগাদ ঘুম থেকে তুলতে হয় সৃষ্টিকে | দেবজিৎ খুব নরম গলায় ও মাথায় আলতো করে হাত বোলাতে বোলাতে ডাকতে থাকে “ সৃষ্টি এই সৃষ্টি কিগো ওঠো এবার অফিস যাবে তো লেট হয়ে যাবে তাড়াতাড়ি ওঠো ছটা বাজতে যায়" সৃষ্টি আধ খোলা চোখে আড়মোরা ভাঙতে ভাঙতে বলে, ধুর অফিস যাবনা আজকে ভালো লাগছে না আজ আমি তোমার সাথে থাকবো সারাদিন(এই বলে দেবজিৎকে জড়িয়ে ধরে)শুধু কম্পিউটারে চোখ ঢুকিয়ে বসে থাকা আর বসের চড়া মেজাজ, ধুর অফিস যাবোনা | দেবজিৎ তখন মৃদু হেসে বলে, ঠিক আছে অনেক হয়েছে এবার ওঠো তুমি প্রতিদিন এই একই কথা বলো, তাড়াতাড়ি নাও অফিস যেতে দেরি হয়ে যাবে ফ্রেশ হয়ে নাও আমি ব্রেকফাস্ট টেবিলে রেখে দিয়েছি | আমি পাখিদের ঘরে যাচ্ছি তুমি ফ্রেস হয়ে ততক্ষণ ব্রেকফাস্ট সেরে নাও |
ওর একটা ছোট্ট পাখির ফার্ম রয়েছে ওটা নিয়েই সারাদিন থাকে আর কয়েকটা ছেলেকে বাংলা, ইতিহাস আর ভূগোল পাড়ায় |
দেবজিৎ আর সৃষ্টির বিয়ে হয়েছে প্রায় ছয় বছর হলো ওদের একটা ছোট্ট ফুটফুটে ফুলের মত মেয়ে আছে “বরফি"এটা অবশ্য তার ডাকনাম ভালো নাম তুষারিকা | দেবজিতের তিন কুলে কেউ নেই ছোটবেলায় বাবা-মা মারা যায় ঠাকুমা দাদুর কাছেই মানুষ হয়েছে | ঠাকুমাও মারা গেছেন বছর চারেক আগে | কলেজে পড়াকালীন ওদের একে অপরের সাথে পরিচয় হয় তারপরেই প্রেম,ভালবাসা | একটা সময় আসে সৃষ্টির বাবা তাকে বিয়ের কথা বলে, বলা বাহুল্য তখন সৃষ্টি একটা ভালো প্রাইভেট সেক্টরের চাকরি পেয়ে গিয়েছিল মাইনেও ভালো ছিল।কিন্তু তখন দেবজিৎ ছিল সম্পূর্ণ বেকার | দেবজিতের কথা সৃষ্টি বাড়িতে জানিয়েছিল কিন্তু দেবজিৎ বেকার বলে বাড়ির কেউ তাতে রাজি হয়না। তখন সৃষ্টি বলেছিল, মানছি ওহ বেকার, তো কি হয়েছে আমি তো আছি আমি চাকরি করি আমি ঠিক সংসার চালিয়ে নিতে পারবো। তখন সৃষ্টির বাবা বলেছিল ছিঃ লজ্জা করে না তুই একটা মেয়ে হয়ে সংসার চালাবি আর ও একটা পুরুষ মানুষ হয়ে ঘরে বসে বসে খাবে | তখন সৃষ্টি বলেছিল তাতে কি হয়েছে পুরুষ মানুষরা কি একাই খাটবে শুধু ওরাই সংসার চালাবে মেয়েরা কি সংসার চালাতে পারেনা তারা কী স্বামীর দায়িত্ব নিতে পারেনা | তখন সৃষ্টির বাবা কড়া গলায় ধমক দিয়ে তাকে জানিয়ে দেয় অতসত জানি না তোকে আমি ওই ছেলের সাথে বিয়ে দেব না এটাই আমার শেষ কথা | সৃষ্টি দেবজিৎকে প্রচন্ড ভালোবাসতো আর এটাও জানতো তার পরিবার বলে কেউ নেই আছে শুধু এক বৃদ্ধ ঠাকুমা | সৃষ্টি জানতো ওর যদি অন্য কোথাও বিয়ে হয়ে যায় তাহলে দেবজিৎ ভেতরে ভেতরে শেষ হয়ে যাবে | তাই সৃষ্টি সোজা বাড়ি ছেড়ে চলে আসে দেবজিতের বাড়ি | দেবজিতের ঠাকুমা কোনো আপত্তি করেনি বরং ওকে হাসিমুখে বুকে টেনে নেয় এবং কিছুদিন পর ওদের বিয়ে দেয় | বিয়ের দিন ঠাকুমা সৃষ্টিকে বলেছিল আমি তো আর বেশিদিন নেই মা আমার এই বাপ-মা মরা নাতিটাকে তোমার হাতে তুলে দিলাম। ওর খেয়াল রেখো ছোট থেকে ছেলেটা বড্ড একা ওকে তুমি যত্ন করে আগলে রেখো মা |এই বুড়ি মানুষটা তোমার কাছে শুধু এই টুকুই চায় | কথাগুলো শুনে সৃষ্টি আবেগে চোখের জল ধরে রাখতে পারেনি এবং সেই দিনই ঠাকুমাকে কথা দিয়েছিল ও থাকতে দেবজিৎ কে আর কষ্ট পেতে দেবে না সে |
( পরবর্তী অংশ সামনের সপ্তাহে আসবে )