11/02/2023
রিভিউ দিলেন Arghajit Guha ―
“কল্পবিজ্ঞান ২ পড়তে শুরু করলাম এবং মাত্র দু দিনে শেষ করতে বাধ্য হলাম।
কীসব লেখা রে ভাই!!
কী দারুণ কনসেপ্ট!
১.সৈকত বাবু কেন "The SAIKAT" বোঝা যায়, রম্যের আড়ালে কী সুন্দর মজার একটা গল্প। পাঠক চাইলে বৈজ্ঞানিক সম্ভাবনার কথাও ভাবতে পারেন আবার নেহাতই মজার ছলেও নিতে পারেন।
২.দেবজ্যোতি বাবুর গল্পের নামে একটাই বলা যায় ধোনি সিনেমার সেই বিখ্যাত ডায়লগ,
―“উসকে বাদ আয়া দেবু, আহ কে হি ধাগা খোল দিয়া” কী দারুন প্লট, অসামান্য কনসেপ্ট ভাই! যেই গল্প ভাবার রসদ দেয় না সেটা কোন কল্পবিজ্ঞান হতেই পারে না। এই গল্প ভাবায়, ভাবতে বাধ্য করে।
৩. সাগরিকাদি বেশ ভালো। প্যারালাল টাইম জোন বা ইউনিভার্স বোঝাতে কোন হাই ফাই ব্যাপারের ধার ধারেননি।
৪.অভিজ্ঞানদারটা গল্প নয়, পাতি নগ্ন বাস্তব। সাই-ফাই লিখতে গেলেই যে সবসময় একটা জাকজমকপূর্ণ প্রেক্ষাপট, সুপার ডেভেলপড সিভিলাইজেশন লাগে না সে তো churuli প্রমাণ করেই দিয়েছে। এই গল্প চরম ভাবে বাস্তব। সাধারণ প্রেক্ষাপটে লেখা একটা অসামান্য গল্প...
৫. ‛স্থিরচিত্র এডনা লরেঞ্জ’ এক সময়যাত্রীর গল্প, যে পাল্টে দিয়েছিল এক নারীর চিন্তাধারা। কড়া ভাষায় কচকচানি নেই, জ্ঞানগর্ভ সাহিত্য নয়। একদম সহজ ভাষায় একটা গল্প। কিছু পয়েন্ট যোগ করলে হয়তো আরো ভালো হতো তবে সেটা কেবলই ব্যক্তিগত মত মাত্র।
৬. ‛বেলার বেতার’, এক কথায় বলতে গেলে মদন দার সাহায্য নিতে হয়, “O lovely!” এক লুপ্তপ্রায় সভ্যতায় সঙ্গ খুঁজে চলা দুটো সত্তার গল্প, তাদের একজন শরীরী আর একজন? এই প্রশ্নই পাঠককে টেনে নিয়ে যায় শেষ অব্দি। আর শেষটা? মানুষের অসহায়তা, নিঃসঙ্গতার অদ্ভুত আখ্যান এই গল্পটা।
৭.‛ভুলের গেরো’, যদিও ভাবানুবাদ। তবুও হালকা পুলকা মজার এই গল্পটা পড়তে খারাপ লাগে না, এমনকি এতগুলি গম্ভীর বা আধা গম্ভীর গল্পের মাঝে বেমানানও লাগে না।
৮.‛স্থাপত্য', টিপিকাল ঐষিকবাবু। মজার ছলে বলে চলা অনেক কিছু। ইতিহাস, ধর্ম, স্থাপত্য, সমান্তরাল সূত্র, অনেক কিছু। বেশ উপভোগ্য।
৯.অভিযোজন, এক মানুষের বদলে যাওয়ার গল্প।কীভাবে ? কেন? প্রশ্নটা সেটা নয়, প্রশ্ন হল আমরা অর্থাৎ ‛সমাজ’ কি মেনে নি সহজে সেটা? কল্পবিজ্ঞানের আড়ালে যেন সেই প্রশ্নটাই ছুঁড়ে দিয়েছেন লেখক। অল্প শব্দে, পরিমিত নাটকীয়তায় এক সুন্দর নিটোল গল্প।
১০.মিলন গাঙ্গুলিকে আমার বেশ underrated মনে হয়। ভদ্রলোক থ্রিলার, হরর লিখতেন জানতাম। ওঁর লেখা কল্পবিজ্ঞান প্রথম পড়লাম, এবং মুগ্ধ হলাম। এই সংকলনের গল্পগুলিকে রেটিং দেওয়ার কোন ইচ্ছে বা পাণ্ডিত্য আমার নেই, তবে যদি একান্তই দিতে হতো তবে এই গল্পটি একদম উপরের দিকে থাকতো। উপরিউক্ত দেবজ্যোতিবাবু এবং অভিজ্ঞানবাবুর গল্পের সমস্ত ফ্লেভার এই গল্পে উপস্থিত। ভদ্রলোক পেশায় শেফ, এটিও রেধেছেন ‛লা জবাব’।
১১.‛ত্রিমাত্রিক’―একটু তন্ত্র, একটু আধ্যাত্মিকতা, একটু বিজ্ঞান মেশানো কল্প-গল্প। কিছু একটা যেন মিসিং মনে হল, ওই ‛অল্প একটু লবন হলে ভালো হতো’ টাইপ। তবে তন্ত্র, মাতৃ সাধনা এবং সাই-ফাই, ঠিকঠাক অনুপাতে মেশালে সেই রান্নায় আঙ্গুল চাটবেই লোকে, আমিও তাদেরই একজন।
১২. ‛অন্য ভুবন’―মূলত ফ্যান্টাসি ধর্মী এই গল্প মুক্তির গল্প বলে, স্বাধীনতার গল্প বলে, বুক ভরে খোলা পৃথিবীতে শ্বাস নেওয়ার গল্প বলে, খালি পায়ে সবুজ ঘাসে হেঁটে যাওয়ার কথা বলে। এই গল্প আশা জাগায়, লড়াই এর মনোবল জাগায়।
১৩. ‛ময়যান’, প্রথম গল্প যাতে পুরাণের সরাসরি উল্লেখ আছে। মহাভারতে উল্লেখিত এক উন্নত যানের গল্প। এতেও অ্যাডভেঞ্চার অংশটা আরো একটু বাড়ানোর স্কোপ ছিল। তবে উপভোগ্য।
১৪. ‛একটি রোবটের মৃত্যু’ , সম্ভবত ওঁর লেখা এই প্রথমবার পড়লাম। মূল বক্তব্য দার্শনিকতা এবং জীবনবোধের উপর দাঁড়িয়ে আছে। ভালো লাগে পড়তে, শেষ দিকে predictable লাগলেও―“বাঙালির হালায় ওই এক হয়েছে। এক্কেবারে যাচ্ছেতাই, সবেতেই এক জায়গায় সুরসুরি...” এসব মনে আসে না।
১৫.‛৪১ মিনিট’―আগেও পড়েছি, শুনেওছি। ভারতীয় দলে একজন খেলোয়াড় আছে, চোট সারিয়ে আসে এবং একই ম্যাচে ৫ উইকেটও নেয়, হাফ সেঞ্চুরিও করে, তার নাম SIR Rabindra Jadeja। লেখকও তাই।
A perfect sci-fi!
১৬.‛ছায়া’―মোহনা দেবরায়। ভদ্রমহিলা যে সাহিত্যের ছাত্রী সেটা লেখার মুন্সিয়ানাতে ধরা যায়। মানসিক টানাপোড়েন, আত্মসমীক্ষার এক অদ্ভুত গল্প। সময় নিয়ে পড়তে হয়, ভাবতে হয়।
১৭. ‛গাণ্ডিব’―সম্ভবত এই সংকলনের সবচেয়ে বড় লেখা এটিই এবং কিছুটা জটিলও বটে। জটিল মনে হওয়ার কারণ পুরাণ সম্পর্কে আমার সম্যক ধারণা না থাকাটাই দায়ী, লেখকের লেখনী কখনই নয়। গল্পটা বার-দুয়েক পড়তে হয়েছে আমায়, তারপর ছেড়া ছেড়া সূত্রগুলি যখন জোড়া লাগলাম তখন এক দারুণ ছবি ভেসে উঠল চোখের সামনে। এক অদ্ভুত অভিজ্ঞতা। বহুদিন মনে থাকবে... ভাবাবে।
১৮. ‛এলিয়েন’, এই লেখকের কাজও সম্ভবত প্রথম পড়লাম। হয়তো অসাধারণ নয়, তবে প্রশংসা করতেই হয়। নির্মেদ, টানটান গল্প।
ধন্যবাদ সমস্ত লেখকদের, সম্পাদক ও প্রকাশককে আমাদের একরকম একটি বই উপহার দেওয়ার জন্য। এই সিরিজ আরও বড় হোক, আরও জনপ্রিয়তা পাক।
কিছু জায়গায় সামান্য মুদ্রন প্রমাদ ছাড়া অভিযোগ কিছু নেই। একটাই কথা বলার, পাঠক যদি কল্পবিজ্ঞান প্রেমী হোন তবে তার বইয়ের তাকে এই বইটা থাকাটা আবশ্যিক।”