
05/08/2025
👻 গল্পের নাম: এভলিনের অভিশাপ
(The Curse of Evelyn)
অধ্যায় ১: আগমন
তিন বন্ধু—অভ্র, সায়ন্তন, আর তিয়াসা—কলকাতার গরম আর কাজের চাপ থেকে মুক্তি পেতে বেরিয়ে এসেছিল এক পাহাড়ি ট্রিপে। তারা পৌঁছায় কালিম্পং-এ, যেখানে প্রকৃতি যেমন মোহময়, তেমনই কোথাও যেন একটা চেপে থাকা অন্ধকার।
তিয়াসা আগে থেকেই ঠিক করে রেখেছিল,
“এইবার হোটেলে নয়, আমরা একরাত থাকব গ্রেভলিন কটেজে, আরেক রাত ব্রাউন সাহেবের ভিলায়।”
অভ্র অবাক,
“গ্রেভলিন কটেজ? ওইটা না ভূতুড়ে?”
তিয়াসা মুচকি হেসে বলল,
“যেখানে অতীত চাপা পড়ে থাকে, সেখানে কিছু না কিছু জেগে ওঠে... আমার ইচ্ছা, একবার ওকে দেখব। সামনে থেকে।”
অধ্যায় ২: গ্রেভলিন কটেজ
১৯০৩ সালে তৈরি এই পাহাড়ি কটেজটি একসময় ছিল লর্ড অ্যালবার্ট গ্রেভলিন ও তাঁর স্ত্রী লেডি এভলিন-এর।
এভলিন ছিলেন এক উচ্চশিক্ষিতা ব্রিটিশ নারী, কিন্তু নিঃসন্তান ও নিঃসহায়। তার স্বামী অ্যালবার্ট ছিল এক নিষ্ঠুর, অত্যাচারী মানুষ।
লোকমুখে শোনা যায়, এক রাতে এভলিন রহস্যজনকভাবে নিখোঁজ হয়ে যান। তার দেহ মেলেনি কখনও।
তবে কটেজের পরবর্তী বাসিন্দারা কেউ টিকতে পারেনি—কারও পিঠে অদ্ভুত আঁচড়, কেউ ঘুমের মধ্যে চেঁচিয়ে উঠত, কেউ নিজের গলায় নিজে হাত দিত।
এদের কেউ কেউ বলেছে—“রাত ২:৩৭”-এ সে আসে।
অধ্যায় ৩: প্রথম রাতের ছায়া
তারা তিনজন কটেজে পৌঁছে গেল এক বিকেলে। চারপাশে পাখির ডাক, ছায়ামাখা গাছগাছালি, আর নিঃশব্দ বাতাস।
রাতের খাবার শেষে সবার ঘুম এল দ্রুত।
কিন্তু সায়ন্তন ঘুম থেকে জেগে উঠল রাত ২:৩৭-এ।
সে শুনল—কাঠের ফ্লোরে ধীরে ধীরে হিলের টকটক শব্দ।
সে দরজার ফাঁক দিয়ে দেখল এক নারী সাদা গাউন পরে সিঁড়ি বেয়ে ওপরে উঠছে। তার পা মাটিতে নেই, সে যেন ভাসছে। চুল এলোমেলো, গায়ে ছেঁড়া কাপড়, ঠোঁট থেকে রক্ত ঝরছে। আর সে বারবার বলছে—
“এবার আমায় কেউ থামাতে পারবে না... রক্ত চাই... আর রক্ত।”
সায়ন্তনের শরীর জমে গেল। হঠাৎ সেই মহিলা ঘুরে তাকাল।
তার চোখ ছিল না। শুধু কালো গর্ত।
পরের মুহূর্তেই দরজা নিজে থেকে ধপ করে বন্ধ হয়ে গেল। ভিতর থেকে লক।
অধ্যায় ৪: আঁচড়
সকালে উঠেই অভ্র মুখ কালো করে বলল,
“রাতে কেমন যেন দুঃস্বপ্ন দেখছিলাম… আর এখন পিঠটা জ্বলছে।”
তিয়াসা ওর জামা তুলে দেখে চমকে গেল—চারটে গভীর নখের আঁচড়, একদম সমান ভাবে।
তিয়াসা ধীরে বলল,
“এটা তার সিগনেচার চিহ্ন… লেডি এভলিন যার দিকে রাগ দেখায়, তার পিঠে আঁচড় রেখে যায়। ও মনে করে, সবাই পুরুষ মানেই শত্রু… ঠিক যেমন ওর স্বামী ছিল।”
অভ্র তখনও ভয় পায়নি পুরোপুরি।
কিন্তু সে কিছু বলেনি—রাত তিনটের দিকে হঠাৎ সে জেগে উঠে দেখেছিল, একটা ঠান্ডা শ্বাস তার গলায় লাগছে। আর ফিসফিস করে কেউ বলছে—
“Why are you in my house?”
অধ্যায় ৫: ব্রাউন সাহেবের ভিলা
পরদিন তারা চলে গেল ব্রাউন সাহেবের পুরনো ভিলায়। লোকেরা বলে এখানে কয়েকজন ব্রিটিশ অফিসার নাকি বন্দুক দিয়ে আত্মহত্যা করেছিল।
ভিলার ভেতর ঢুকে সায়ন্তন একটু শান্ত বোধ করছিল।
তিয়াসা একটা পুরনো আয়নার সামনে গিয়ে দাঁড়াল। ছবি তুলছিল।
হঠাৎ তিয়াসা চিৎকার করে উঠল,
“এই আয়নায় আমরা তিনজনের বদলে চারজনের প্রতিবিম্ব! এই চতুর্থ জন কে?”
সবার চোখ পড়ে গেল—চতুর্থ প্রতিবিম্বে একজন লোক দাঁড়িয়ে, যার মাথা নেই, শুধু রক্তমাখা শার্ট, আর গলায় একটা ছেঁড়া দড়ি।
হঠাৎ সেই লোক ঘুরে তিয়াসার দিকে তাকাল। আয়নার ভিতর থেকে।
অধ্যায় ৬: তিয়াসার পরিবর্তন
সন্ধ্যার পর হঠাৎ তিয়াসা উধাও হয়ে যায়।
অনেক খোঁজার পর অভ্র আর সায়ন্তন দেখে, সে বসে আছে ব্রাউন সাহেবের ভিলার ভিতরের একটা ঘরে, চেয়ারে, একদম নিঃশব্দে।
তার ঠোঁট ফাঁটা, চোখ ঘোলা। সে ব্রিটিশ অ্যাকসেন্টে ফিসফিস করে বলছে—
“She’s coming… Evelyn never left… she just changed faces…”
তারপর সে মুখ তুলে বলে,
“আমায় রেখে পালাও... আমি আর আমি নেই… আমি এখন ও।”
ঘরের মধ্যে বাতাস ঠান্ডা হয়ে আসে, দেয়াল কাঁপতে থাকে, আর ছাদের কোনে দেখা যায় এক নারীমূর্তি ধীরে ধীরে নামছে।
অভ্র আর সায়ন্তন দৌড়ে পালায়। তিয়াসা আর ফিরে আসেনি।
উপসংহার: এভলিনের অভিশাপ
আজও গ্রেভলিন কটেজ আর ব্রাউন সাহেবের ভিলা সেখানে দাঁড়িয়ে আছে।
দু’টি জায়গাতেই নাকি মাঝে মাঝে মহিলা কণ্ঠে ফিসফাস শোনা যায়—
“তুমি আমার ঘরে এসেছো কেন?”
অনেকেই ছবি তুলতে গিয়ে ফিরে আসে ফাঁকা ফোন গ্যালারি নিয়ে।
কেউ কেউ শোনে দরজা বন্ধ হওয়ার শব্দ, অথচ কেউ ছিল না।
আর কেউ কেউ—ফিরেই আসে না।
এভলিনের অভিশাপ এখনও বেঁচে আছে।
কালিম্পং-এর কুয়াশার মধ্যে আজও সে খোঁজে…
আরও এক শিকার।
Susmita Ghosh Samir Sil Sudipta Das Tanusri Mallah Ami Tinni Das Adi Soumi Saha Rakhi Ghosh Salini Ghosh Bhadra