08/07/2025
গল্পের নাম: কেবিন নম্বর ১৭ – শেষ চিৎকার
(ভিত্তি: উত্তর ২৪ পরগনার একটি নার্সিংহোমের অজানা কাহিনি)
সালটা ২০২৩, উত্তর ২৪ পরগনার এক পুরনো নার্সিংহোম—“জীবনদীপ নার্সিংহোম”, বহু বছর ধরে চলছে, তবে সম্প্রতি হঠাৎই লোকমুখে একটার পর একটা গুজব ছড়াতে থাকে।
ডা. সৌম্যজিৎ চক্রবর্তী, ৩৮ বছর বয়সী, বরাবর যুক্তিবাদী এবং নাস্তিক মনের ডাক্তার, যিনি বিশ্বাস করেন বিজ্ঞানের বাইরে কিছু নেই। তিনি এই নার্সিংহোমের অন্যতম অভিজ্ঞ মেডিসিন বিশেষজ্ঞ।
একদিন গভীর রাতে তাকে ফোনে ডাকা হয়—
“স্যার, এক আগুনে পোড়া রোগী এসেছে... অবস্থা খুব খারাপ।”
রাত তখন ১টা। ঝড়বৃষ্টির মধ্যেই তিনি ছুটে আসেন নার্সিংহোমে।
কেবিন নম্বর ১৭।
ভিতরে প্রবেশ করেই গন্ধটা টের পান—পোড়া মাংসের গন্ধ। রোগীকে দেখে চমকে যান। পুড়ে যাওয়া শরীরের অধিকাংশ জায়গা কালচে হয়ে গেছে, চোখ দুটো অদ্ভুতভাবে খোলা, যেন মারা যাবার আগে শেষ মুহূর্তে কিছু ভয়ঙ্কর জিনিস দেখেছিল।
তিনি চেক করে জানান—
“মৃত্যু হয়েছে প্রায় ১ ঘন্টা আগে। CPR চেষ্টা করারও কিছু নেই।”
পরদিন থেকেই অদ্ভুত সব ঘটনা শুরু হয় কেবিন ১৭-তে—
• রাত ৩টার দিকে বাইরের গার্ড শোনে কেবিনের ভিতর থেকে চাপা গলায় কেউ কাঁদছে।
• নার্স রুপালী একদিন ভিতরে ঢুকে দেখে, জানালার কাঁচে ভেতর থেকে আঁচড়ের দাগ, অথচ কেবিনটা তালাবন্ধ ছিল।
• আরেক নার্স, শিপ্রা, কেবিন পরিষ্কার করতে গিয়ে দেখে, বেডের নিচে পড়ে আছে অদ্ভুত এক ছেঁড়া জুতো—যেটা আগুনে আধপোড়া, কিন্তু সেই জুতো কোনো রোগীর না।
সবাই আস্তে আস্তে বুঝে যায়, কিছু একটা আছে ওই কেবিনে। কেউ আর রাতে ওখানে রোগী রাখতে চায় না।
তিন দিন পর...
নতুন রোগী, মৃণাল সেন (৬৫), অসুখ তেমন গুরুতর না, কিন্তু কেবিন না পেয়ে কেবিন ১৭-তেই রাখা হয়।
রাতে আবার ডা. সৌম্যজিৎ দেখতে আসেন। বাইরে বজ্রপাত, আলো মাঝে মাঝে নিভে যাচ্ছে।
তিনি ফাইল দেখছেন, হঠাৎ খেয়াল করেন—রোগীটা হাঁ করে তাকিয়ে আছে কেবিনের এক কোণে। চোখ স্থির।
ডাকেন, “মৃণালবাবু?”
কোনো সাড়া নেই।
তিনি এগিয়ে যান রোগীর দিকে। তখন হঠাৎ...
কেবিনের দরজা পিছন থেকে বন্ধ হয়ে যায়!
হাতের টর্চ জ্বলে ওঠে—আলো পড়ে দেয়ালে লেখা:
"আমি মারা যাইনি"
ডা. সৌম্যজিৎ চমকে পেছনে ঘোরেন—কিন্তু পেছনে কেউ নেই।
রোগীর চোখ তখন রক্তবর্ণ। সে ফিসফিস করে বলে,
“সেই রাতটা কি মনে আছে, ডাক্তারবাবু?”
ডা. সৌম্যজিৎ পিছিয়ে যান, গলা শুকিয়ে আসে। তাঁর মনে পড়ে—
তিনিই সেদিন পুড়ে যাওয়া রোগীকে দেখে ঘোষণা করেছিলেন, “মৃত।”
কিন্তু পরে স্টাফরা বলেছিল, রোগী তখনো নাকি কিছুটা নাড়াচাড়া করছিল।
ডা. সৌম্যজিৎ তখন ভাবেন, তিনি কি ভুল করেছিলেন? একজন জীবিত মানুষকে মৃত ঘোষণা করেছিলেন?
সেই মৃত্যুর প্রতিশোধই কি চলছে?
হঠাৎ লাইট জ্বলে ওঠে।
রোগী অচেতন।
দরজা খুলে যায়। বাইরে দাঁড়িয়ে নার্স রুপালী।
কিন্তু ডা. সৌম্যজিৎ স্পষ্ট জানেন, এই কয়েক মিনিট তিনি যেটা দেখেছেন, সেটা স্বপ্ন না, হ্যালুসিনেশন না— কিছু সত্যিই এসেছিল তাঁর সামনে।
এরপর থেকে—কেবিন ১৭ চিরতরে বন্ধ।
ডা. সৌম্যজিৎ নার্সিংহোম ছেড়ে দেন এক মাসের মধ্যেই।
কিন্তু আজও, যারা রাতের শিফটে কাজ করে, তারা অনেক সময় শুনতে পায়—
একজন পুরুষ গলা ফিসফিস করে বলে,
“এবার আমি বাঁচব… তোমাকে নিয়ে।”
Susmita Ghosh Samir Sil Sudipta Das Tanusri Mallah Ami Tinni Das Adi Soumi Saha Rakhi Ghosh Salini Ghosh Bhadra Gopa Dey Pampa Biswas