
03/09/2025
আজ সকালে ট্রেনে টিটি উঠেছেন। ক'দিন ধরেই দেখছি সকালের আপ ট্রেনে টিটি উঠছেন টিকিট পরীক্ষার জন্য। বিনা টিকিটের যাত্রী হিসেবে কাউকে না কাউকে পেয়েই যান। তারপর ফাইন করেন। অবশেষে তারা ফাইন দিতে বাধ্য হয়।
আজকের ঘটনা একটু ব্যতিক্রম। উলুবেড়িয়া থেকে দুজন টিটি উঠলেন। ট্রেন চলতে শুরু করতেই দুজন টিটি এবার টিকিট দেখা শুরু করলেন। আমি জানি আমার কাছে এসেও টিকিট দেখতে চাইবেন। তাই মোবাইলে ইউ.টি.এস অ্যাপস থেকে মান্থলি টিকিট বের করে রাখলাম। কাছে এসে দেখতে চাইলে দেখাব। আজ আর আমার কাছ পর্যন্ত আসতে হলো না। তার আগেই ধরা পড়লেন একজন, তারপর শুরু হলো নাটক। বিনা টিকিটের যাত্রী হিসেবে যিনি ধরা পড়লেন, সেই ভদ্রলোকের বয়স হবে আনুমানিক চল্লিশের কাছাকাছি। যেমনি লম্বা তেমনি বিশাল মোটাসোটা। টিটি উঠেছেন সেই আঁচ পেয়ে ঘুমের ভান করে পড়ে রইলেন ভদ্রলোক। অবশ্য তার আগে মোবাইল নিয়ে কিছু ভিডিও মিডিও দেখছিলেন। টিটি এসে ভদ্রলোককে ডেকে বললেন,
-এই যে শুনছেন, আপনার টিকিটটা দেখান।
ভদ্রলোক চোখ বুজে পড়ে আছেন। তিন চার বার ডাকার পর সাড়া না দিতে টিটি তখন গায়ে টোকা দিলেন। উঁহু, অসাড়ের মতো পড়ে রইলেন ভদ্রলোক। টিটি বললেন, আদৌ ঘুমোচ্ছে তো? উপায় না দেখে টিটি ভদ্রলোককে ঝাঁকাতে লাগলেন জোরে জোরে। একটু কাত হয়ে চোখ মেলে এবার দেখলেন। টিটির সাথে শুভদৃষ্টি হতেই মেজাজ নিয়ে ভদ্রলোক বললেন,
-কী হয়েছে? এত ডাকাডাকি করছেন কেন? আমার বৌ আমাকে এত বার ঝাঁকায় না। আপনি আমাকে ঝাঁকাচ্ছেন? বসবেন তো বসুন না, ওদিকেও তো সীট আছে।
-আরে মশাই টিকিটটা দেখান।
ভদ্রলোক গভীর ভাবে টিটিকে নিরীক্ষণ করে বাম পকেটে হাত দিয়ে টিকিট না পেয়ে অন্য পকেটে হাত ঢোকালেন। সেখানেও টিকিট পেলেন না। তারপর জামার পকেট। অবশেষে টিকিট না পেয়ে বললেন,
-মনে হয় পকেট থেকে পড়ে গেছে।
টিটি বললেন,
-কোথায় যাবেন আপনি?
-খড়্গপুর।
-ওকে। দুশো আশি টাকা বের করুন।
ভদ্রলোক চোখ বড়ো বড়ো করে তাকালেন। তারপর খ্যাক খ্যাক করে হেসে বললেন,
-কি! দুশো আশি? টাকা কি গাছে ফলে নাকি? তাছাড়া আমি টিকিট কেটেছি। হারিয়ে গেলে আমি কি করব?
-অত কথা বুঝি না। টাকা বের করুন। অমন কথা অনেকেই বলে।
ভদ্রলোক একটু খুক খুক করে কেশে নিয়ে বললেন,
-আমি কি মিথ্যে বলছি নাকি?
টিটি জবাব দিলেন,
-মনে তো হচ্ছে তাই।
এবার ভদ্রলোক উঠে খাড়া হয়ে বসলেন। বললেন,
-আপনি যে টিটি সেটা আগে প্রমাণ করুন।
টিটি তখন গলায় ঝোলানো কার্ডটা এগিয়ে দিয়ে বললেন,
-এই যে দেখুন ।
ভদ্রলোক অট্টহাসির মতো হাসলেন। তারপর বলে বসলেন,
-ওটা যে আসল আমি কি করে বুঝব? আপনি নকল। দেশে এখন নকল টিটিতে ভরে গেছে। তাছাড়া ওরকম কার্ড আমারও আছে। আমি আপনাকে ফাইন দেব না।
ততক্ষণে আর একজন টিটি, তিনিও চলে এসেছেন। তিনি এসে বললেন,
-আর.পি.এফ কে ফোন করো। টাকা দিতে বাধ্য তখন।
ভদ্রলোকও কম যান না। বললেন,
-আমারও আর পি এফ আছে। আমিও কল করব।
এদিকে টিটি আর.পি.এফকে কল করতে শুরু করলেন। দুর্ভাগ্য। কল করে পেলেন না। একটু রেগে গিয়ে টিটি বললেন,
-আপনি বাগনানে নামুন। যা বলার অফিসে গিয়ে বলবেন।
ভদ্রলোক বললেন,
-আমি কেন নামব?
টিটি বললেন,
-না নামলে জোর করে নামাব।
এবার ভদ্রলোক খুব হাসছেন। হাসতে হাসতে বললেন,
-ক্ষমতা থাকে তো আমাকে নামান দেখি ? আপনাদের দুজনের ক্ষমতা আছে তো ? আমার ওজন কত জানেন? আপনাদের দুজনকে ওজন করলে যা হবে, তার থেকে দশ কেজি হলেও বেশি।
টিটি দুজনেই তখন চুপ। ট্রেনে সবাই তখন হাসছে। ইতিমধ্যে এক বয়স্ক লোক,উনি এবার মুখ খুললেন। টিটিকে বললেন,
-আরে ছেড়ে দিন না।
টিটি গেলেন রেগে। বললেন,
-আপনি তাহলে ভাড়াটা দিয়ে দিন।
-আমি? আমি কেন দেব? আপনারা যখন ছাড়বেন না, তখন আপনাদের ক্ষমতাটাই একটু দেখি। ক্ষমতা থাকলে ওনাকে নামিয়ে দেখান।
ততক্ষণে ট্রেন বাগনান স্টেশন ছেড়ে বেরিয়ে গেছে। একজন টিটি বললেন, ঠিক আছে মেচেদাতে আপনাকে নামাচ্ছি। বলে গেটের কাছে গিয়ে দাঁড়ালেন। ভদ্রলোক বললেন,
-ঠিক আছে। খড়্গপুরের আগে আমাকে নামাতে পারলে দুশো আশি কেন, আমি পাঁচশো আশি দেব। এক্সট্রা ফাইন যখন দেব ততক্ষণে আমি ঘুমিয়ে নিই। কেমন?
কলমে: সরজিৎ ঘোষ