19/11/2025
WRITTEN BY SOMTIRTHAA TITHI BHATTACHARJEE (ARANYAMRITTIKA)
এক নীরব সন্ধ্যায়, যখন শহরজুড়ে আলোর খেলা, তখন আমি কেবল একটি কথাই মনে মনে ভাবে; "এ কেমন বৈপরীত্য, এ কেমন দেশের ছবি!" সেই ছবিটিরই কিছু ঝলক সবার সামনে তুলে ধরতে চাই, যা একইসঙ্গে সুন্দর ও বিষাদের সুর বহন করে।
এ এক অদ্ভুত দেশ। এখানে সমাজের মূল্যবোধগুলো যেন উল্টে গিয়েছে। যেখানে সামান্যতম জুতো বিক্রি হয় শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ঝলমলে ঘরে (এ.সি. রুমে) সর্বোচ্চ যত্ন সহকারে, সেখানে জ্ঞানের আধার, যুগ-যুগান্তরের বইগুলো পড়ে থাকে পথের ধারে, ধূলোমাখা ফুটপাতে। এই বৈষম্যের ঢেউয়ে ভেসে আসে আরও করুণ চিত্র। দুর্নীতিবাজ যারা, তাদের আস্তানা হয় পাঁচতলা আলিশান বিলাসবহুল বাড়ি, যেখানে আরাম আর ঐশ্বর্যের মেলা। আর যারা গুণীজন, জ্ঞানী ও প্রকৃত শিল্পী, তাদের স্থান হয় হয়তো একফালি গাছতলায় কিংবা সমাজের কোণায়।
এই উল্টো রথের টান এতটাই তীব্র যে, দেশের ও রাজ্যের শাসনভার চলে যায় অশিক্ষিত বা অযোগ্য মানুষের হাতে, আর ডিগ্রিধারী, শিক্ষিত মানুষেরা বাধ্য হন সেই অশিক্ষিতদের পথ অনুসরণ করতে, তাদের দেখানো পথে চলতে। এ যেন এক মেধার অপমান, এক আলোর পরাজয়।
তবে সবথেকে মর্মান্তিক হলো সেই গোপন সত্য, যা সবকিছুর নেপথ্যে রয়েই যায়।
যারা মন্দিরের সর্বোচ্চ পদে বসে আছেন, সেই পুরোহিতেরা—তাঁরা হয়তো খুব ভালো করেই জানেন যে, 'ভগবান' বলে আসলে বস্তুগত বা তাৎক্ষণিক কোনো প্রাপ্তিযোগ নেই।
যারা হাত দেখেন, সেই হস্তরেখা বিশ্লেষকেরা—তাঁরাও খুব ভালো করে জানেন যে, হাতের রেখা কেবল চামড়ার ভাঁজ, এতে ভবিষ্যৎ লুকিয়ে নেই।
ঠিক তেমনিভাবেই, যারা দেশ ও রাজ্যের শাসন-ব্যবস্থার কর্ণধার, তাঁরাও ভেতরে ভেতরে জানেন যে, এই দেশের ও রাজ্যের সাধারণ মানুষের জন্য 'স্বাধীনতা' বলে আসলে কিছুই অবশিষ্ট নেই। দেশটা যেন এক অলিখিত পরাধীনতার জালে বন্দী।
কিন্তু এই চরম সত্যটি কেউ স্বীকার করতে চান না—না পুরোহিত, না হস্তরেখা বিশ্লেষক, না শাসকবর্গ। কারণ, যদি সত্য প্রকাশিত হয়, যদি এই তঞ্চকতা বা ছলনার পর্দা সরে যায়, তবে যে তাঁদের সুপ্রতিষ্ঠিত ব্যবসাটাই চিরতরে বন্ধ হয়ে যাবে। তাই নীরবতাই এখানে সবচেয়ে বড় অস্ত্র।
এই বৈপরীত্যের খেলা, এই নীরব সত্যের ভার—সব মিলিয়ে একটি ছোট্ট পদ্য, যা মনের কথা বলে যায়....
জুতো যখন দামি, জ্ঞান কেবল পথচারী,
ধনী তখন চালক, গুণী কেবল সহকারী।
সত্যটা তাই আজও থাকে গোপন,
কারণ এ পথেই চলে তঞ্চকতার জীবন।
তবু আশা রাখি, একদিন এই ছবি হবে শেষ,
যেখানে সত্য জিতবে, গড়বে এক নতুন দেশ।
এই উপাখ্যানটি কেবল একটি দেশের বা রাজ্যের নয়, এটি মানব সমাজের এক গভীর সমস্যার প্রতিচ্ছবি। আশা করি, একদিন এই বৈষম্যের অবসান ঘটবে এবং প্রকৃত মূল্যবোধ ফিরে আসবে, যেখানে জ্ঞানের কদর হবে সর্বোচ্চ।