27/08/2023
কোরআন কি পৃথিবীকে চ্যাপ্টা বলেছে?
"''""'"''"'"'""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""
চন্দ্রযানের সফল অবতরনের পরে কিছু মানুষ উপহাস করে বলছেন কোরআনে জমিকে চ্যাপ্টা বলা হয়েছে। সর্বপ্রথমে আমি আপনাদের জানিয়ে রাখি কোরআন কোনো বিজ্ঞানের পুস্তক নয়, এটাই সত্য। কিন্তু এমনও নয় যে কোরআন অন্ধবিশ্বাস আর মূর্খামি ছড়ায়।
জমি চ্যাপ্টা আছে এই কথা নিয়ে হাঙ্গামা করা হচ্ছে, কিছু হলেই কোরআনকে টেনে এনে উপহাস করা হচ্ছে। বলা হচ্ছে কোরআনে লেখা আছে জমি চ্যাপ্টা। আর এর প্রভাব এতোই বেড়ে গেছে যে, মুসলিমরা এর পাল্টা জবাব দিলেও বলতে পারছেন না কোরআনে এই কথা লেখা নেই।
কোরআন আল্লাহ প্রদত্ত পবিত্র পুস্তক। এই পুস্তকের আসল উদ্দেশ্য মানুষকে আল্লাহর দিকে, আল্লাহর পথে আহ্বান করা। তাদের বলা কেবলমাত্র এক আল্লাহর ইবাদত করো। এই বিষয়টাকে বিভিন্ন ভাবে বোঝানো হয়েছে। কখনো আল্লাহ তাঁর দয়া, করুনার কথা বলে, কখনো পুরস্কারের কথা বলে, কখনো মারাত্মক শাস্তির কথা বলে।
কোরআনে যেখানেই জমি সৃষ্টির কথা এসেছে সেটা মানুষের সঙ্গে আল্লাহর ভালোবাসা এবং মানুষের উপরে আল্লাহর দয়া, করুনার কথা জানানোর জন্য বলা হয়েছে।
যেমন আল্লাহ কোরআনে বলছেন - জমিকে তোমাদের জন্য বিছানা বানিয়ে দেওয়া হয়েছে, কোথাও আবার বলা হয়েছে - জমিকে তোমাদের পালন করার জন্য সৃষ্টি করে দেওয়া হয়েছে। এর অর্থ হলো যেমন এক মা তার সন্তানকে পালন করার জন্য বাচ্চাকে সুরক্ষিত রাখেন, যতো তার সন্তানকে ভালোবাসেন তেমনি আল্লাহও তার বান্দাদের ভালোবাসেন। অপর এক স্থানে বলা হয়েছে- আমি তোমাদের জন্য জমিকে বিস্তার করে দিয়েছি। আর এই বিস্তার করে দেওয়ার জন্য "দাহাহা" (دحاها) আরবী শব্দের প্রয়োগ করা হয়েছে। আরবী ভাষায় 'দহা' কাকে বলছে! যখন উটপাখির ডিম পাড়ার সময় হয় তখন সে অনেক দূর পর্যন্ত জমিকে সমতল করে দেয়, সেখান থেকে সমস্ত আবর্জনা সরিয়ে ফেলে, যাতে ডিম থেকে বেরোনো বাচ্চার কোনো কষ্ট না হয়। বাচ্চাদের প্রতি ভালোবাসার জন্য সে এরকম করে। তেমনি আল্লাহও তার বান্দাদের ভালোবাসেন বলেই জমিকে সমতল করে দিয়েছেন। অতএব এই প্রেম, ভালোবাসায় বিজ্ঞানকে খোঁজ করা বৃথা।
সুরা 'অল গাশিয়া', আয়াত নং - ২০ তে আল্লাহ রব্বুল আলামিন বলছেন - " وإلى الأرض كيف سطحت " "ওয়া ইলাল আরদে কাইফা সুতিহ্ত"...... আর জমির দিকে দেখো কেমনভাবে বিছিয়ে দেওয়া হয়েছে, বা সমতল করে দেওয়া হয়েছে। এর তর্জুমা এমনও হতে পারে, কেমন জমিকে চ্যাপ্টা করে দেওয়া হয়েছে। এই আয়াতকে কেন্দ্র করে কোরআনের উপরে আক্রমণ করা হচ্ছে। এখানে দু-তিনটি বিষয় লক্ষ্য করার আছে।
প্রথমতঃ জমিকে সমতল করে দেওয়া হয়েছে কিংবা চ্যাপ্টা করে দেওয়া হয়েছে অর্থাৎ জমি আসলে চ্যাপ্টা নিজে নয়। যদি হতো তবে কোরআনে বলা হতো 'আল আরদু মুস্তাহাতুন' الأرض مسطحة জমি চ্যাপ্টা আছে। অতএব এই দুটি কথার অর্থের মধ্যে বিস্তর পার্থক্য রয়েছে।
দ্বিতীয়তঃ পৃথিবী ছাড়া যতো যতো গ্রহ রয়েছে সেগুলো সবগুলোতেই রয়েছে বড়ো বড়ো গহ্বর। বিজ্ঞানের ভাষায় একে Crater বলা হয়। কিন্তু পৃথিবীতে এতো নেই, চাঁদে রয়েছে হাজার হাজার বিশাল বিশাল Crater, কিন্তু পৃথিবীতে রয়েছে মাত্র ১৮২ টি গহ্বর। অতএব এটা পরিষ্কার যে জমি সমতল থাকার কারণেই এখানে জীবিত থাকা সম্ভব হয়েছে। কোরআনের ইশারা এটাই, এরসঙ্গে পৃথিবীর গোল হওয়া আর না হওয়ার সঙ্গে কোনো সম্পর্ক নেই।
তৃতীয়তঃ এই আয়াতে জমির জন্য 'সুতিহত' শব্দের প্রয়োগ করা হয়েছে। যার সৃষ্টি 'সতহ' শব্দ থেকে। যার অর্থ জমির উপরের অংশ, Level, Surface
ভূগোলবিদরা সমুদ্রের পৃষ্ঠ সম্পর্কে কথা বলেন, প্লাম্বাররা জলের পৃষ্ঠ সম্পর্কে কথা বলেন, বিজ্ঞানীরা ভূমির ভূত্বক সম্পর্কে কথা বলেন, কৃষি বিজ্ঞানীরা ভূত্বক শব্দটি ব্যবহার করে বর্ণনা করেন যে জমি উর্বর বা উর্বর নয়।
একজন প্লাম্বার, একজন ইঞ্জিনিয়ার, একজন বিজ্ঞানী, একজন কৃষি বিজ্ঞানী, একজন ভূগোলবিদ সবাই জানেন পৃথিবী গোল। তবুও ভূমির জন্য তারা ভূপৃষ্ঠ শব্দটি ব্যবহার করছেন। তবে কোরআন কেন এই শব্দটি ব্যবহার করতে পারে? কোরআনে শব্দ প্রয়োগ দেখেই আপনারা ঠাট্টা করা শুরু করে দিলেন, হাসতে শুরু করে দিলেন!
আরে মূর্খের দল সত্য হল আপনারা হতাশ হয়ে যাচ্ছেন, আপনারা কুন্ঠিত বোধ করছেন। এটি কোরআনের ভুল নয়, এটি আপনাদের ভুল, ইসলাম - কোরআন - মুসলমানের আক্রমণ করা আপনাদের স্বভাব।
Taha Ali Khan
Taha Ali Khan