23/09/2024
দেশের নামকরা এক পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে সেন্টমার্টিন ট্যুরে গিয়েছিলাম। যেই বিশ্ববিদ্যালয় শিবির নিষিদ্ধ।
সেন্টমার্টিন পাওয়ার আগেই আমি পাচজনকে শিবিরের বড় কোনো নেতা বলে ডিটেক করে ফেললাম। মাদরাসায় পড়ার ফলে তাদের চেনার প্রসেসটা আমার জন্য সহজ ছিল।
সেন্টমার্টিন যাওয়ার পর প্রথম রাত ছিল রামপার্টি। কটেজের সামনে বসে সবাই রাম নাম জপতেছে। আমার ডিটেক করা মানুষগুলোও দেখি একটু পর পর ওয়ানটাইম গ্লাসে রাম নিতেছে। হাতে নিয়া গল্প করতেছে। গল্পের রেশ ধরে পেছনে চলে যাইতেছে। খুব খেয়াল কইরা বালিতে রাম ঢাইলা দিতেছে। একটু পর আবার নিতেছে।
আমি ছিলাম টিচারের গেস্ট। ফলে ওসব খাইতে পারি না বলার পর কেউ জোর জবরদস্তি করে নাই।
রামের আসরে আমি আরও দশজনরে আলাদা করি। বুঝতে পারি এরা শিবিরের বড় কোনো দায়িত্বে আছে।
একশ বিশ জনের ওই ট্যুরে প্রায় বিশ বাইশজনরে পাই যারা উচ্চমানের শিবির।
ট্যুর থেকে ফেরার পথে জাহাজের ডেকে একা একা বসে ছিলাম। এক বড় ভাই পাশে এসে বসল। এই গল্প সেই গল্প করতে করতে মুখ ফস্কে একটা শব্দ বের করে ফেলল।
আমি স্বভাবশুলভ হাসি আনন্দের কথা বলতেছি। একের পর এক ঘটনার সাথে মিলায়া জোকস বলতেছি। উনি চট করে বলে ফেললেন, আপনে তো মিয়া “হাসির বাক্স”।
আমি হাসি থামায়া উনার চোখের দিকে তীক্ষ্ণ চোখে তাকায়া থাকলাম কিছুক্ষণ। উনিও থতমত খেয়ে গল্প ঘুরাইতে চাইল। আমি চাইপা ধরলাম। এমন ধরা ধরলাম, স্বীকার করতে বাধ্য হলো যে সে সাথী। অভয় দিয়ে বললাম, এগ্লা আপনাদের ব্যাপার। আমি কাউরে কিছু বলব না।
তারসাথে দীর্ঘসময় গল্প করলাম। জানলাম ট্যুরের বাকি সদস্যদের ব্যাপারে সে কিছুই জানে না। তিন চারজনকে কেবল চেনে যার সাথে তার সরাসরি দলীয় কারণে যোগাযোগ হয়।
আমার অবজার্ভেশন থেকে কয়েকটা নাম বললাম। সে অবাক হয়ে গেল।
গল্প দীর্ঘায়িত করতে পারলাম না। কারণ ততক্ষণে জাহাজের ছাদে গানের আসর বসছে। ছাত্রলীগের এক নেতা এসে আমাদের নিয়ে গেল। বসলাম সেই নেতারও নেতার পাশে। যেই নেতা আসলে ছাত্রলীগ না কিন্তু ছাত্রলীগের বড় পদ বাগায়া রাখছে। নেতার হাতে ব্যানসন। ধরাইতেছে না। আঙ্গুলে ব্যানসন নিয়া গান গাইতেছে। অন্যদের গানে তাল দিতেছে। আর কিসের যেন অপেক্ষা করতেছে।
একটু পর টিচার আসা দেখে সিগারেট সমুদ্রে ফেলে দিল। আমি ডেকে বসে গল্প বলা লোকটাকে বিষয়টা খেয়াল করার জন্য ইশারা দিলাম। সে হেসে ফেলল।
অবজার্ভেশন সত্য প্রমাণিত হওয়ায় আমিও হাসলাম।
ফিরতে ফিরতে আরও কয়েকজনকে পাইলাম। বাম, লীগ, সাংবাদিক সমিতি, কালচারাল সংগঠন, সন্ধানীসহ, ডিবেট কমিটিতে তাদের মিশে যাওয়ার এবং নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার ক্ষমতা দেখে বিস্মিত হলাম।
এইসব ভার্সিটিতে টিচার জানে না স্টুডেন্ট শিবির, স্টুডেন্টও জানে না টিচার এক্স শিবির।
©