30/06/2025
শ্রীমার কথা
কমলাকান্ত চট্টোপাধ্যায়
শ্রীশ্রীমায়ের কাছে দীক্ষা নেওয়ার বাসনায় একদিন আমরা তিন জন — চিন্ময় মুখোপাধ্যায়, মন্মথ মুখোপাধ্যায় ও আমি জয়রামবাটী অভিমুখে যাত্রা করলাম বিষ্ণুপুর থেকে। সেটা ছিল বর্ষাকাল, খুব বৃষ্টি হচ্ছে। বৃষ্টির আঘাত এড়িয়ে অবশেষে যখন জয়রামবাটী পৌঁছলাম তখন দুপুর গড়িয়ে গিয়েছে। আমরা তিন জন ভিজে কাপড়ে কর্দমাক্ত হয়ে মায়ের বাড়িতে পৌঁছালে মা তাঁর এক সেবককে আমাদের খোঁজখবর নিতে পাঠালেন। সেবক আমাদের অবস্থা দেখে মাকে নিবেদন করল যে, তিনটি যুবক বাঁকুড়া থেকে জলে ভিজে ভিজে এসে হাজির হয়েছে। মা তখন খেতে বসতে যাচ্ছিলেন। আমাদের সংবাদ শুনে তিনি আর খেতে বসলেন না। আমাদের দর্শন দিতে বৈঠকখানায় এলেন। এসে আমাদের বললেন, "বাবা, পুকুরে যাও, তাড়াতাড়ি স্নান সেরে মায়ের কাছে হাজির হলে তিনি তাঁর খাওয়ার থালা থেকে দুটি ভাত মুখে দিয়ে সেবককে বললেন, "ওই ছেলেদের প্রসাদ দিয়ে এসো। পরে তাদের মুড়িমুড়কি দেবে, নাহলে ওদের পেট ভরবে না।" সেবক মায়ের নির্দেশমতোই আমাদের আহারের ব্যবস্থা করলেন। সে রাত্রে আমরা মায়ের বাড়িতে থাকলাম। রাত্রে মায়ের কাছে আমাদের মনোবাসনা ব্যক্ত করলে মা জানালেন, "কাল সকালেই তোমরা স্নান করে তৈরী থেকো বাবা। তোমরা ঝড়বৃষ্টি মাথায় নিয়ে যখন হাজির হয়েছ, কালই তোমাদের মন্ত্র দেব।" পরের দিন আমাদের দীক্ষা হয়ে গেল।
দীক্ষার পর অনেক দিন মায়ের কাছে যাইনি। হঠাৎ একদিন স্বপ্ন দেখলাম, মা আমাকে বলছেন, "বাবা, এতদিন আসনি কেন? আমার শরীর তো দেখছ, তোমার কথাই ভাবছিলাম।" ঘুম ভেঙে গেল। বিভূতি ঘোষ ও ডাক্তার মহারাজের মাধ্যমে জেনেছিলাম যে, মা কোয়ালপাড়ায় তাঁর ভাইঝি রাধুর প্রসবের জন্য অবস্থান করছেন। আমাদের বাড়ির দুটি বাতাবিলেবু সঙ্গে নিয়ে মায়ের উদ্দেশে রওনা দিলাম। বিষ্ণুপুর থেকেই হেঁটেই যখন কোয়ালপাড়ায় পোঁছালাম তখন দুপুর। ঐদিন রাধুর সুখপ্রসব ঘটানোর জন্য মা নানারকম চেষ্টা চালাচ্ছিলেন। ডাক্তাররা বলেছিলেন রাধুকে বাতাবিলেবুর রস খাওয়াতে। কাছাকাছি অনুসন্ধান করে সেবকরাও কোথাও বাতাবিলেবু না পাওয়ায় মা খুবই চিন্তিত ছিলেন। এমন সময়ে আমি পৌঁছে দুটি বড় বাতাবিলেবু মায়ের চরণে নিবেদন করলাম। মা খুব আশ্বস্ত হলেন এবং আনন্দ করে কেদারবাবু, বরদা মহারাজ প্রমুখকে বলতে লাগলেন, "দেখ, কমল আমার মনের কথা ঠিক বুঝতে পেরে বাতাবিলেবু নিয়ে এসেছে।" লেবু পেয়ে মায়ের আনন্দ দেখে আমারও খুব আনন্দ হলো। মায়ের চরণে সাষ্ঠাঙ্গ প্রণিপাত করে বললাম, "মা, আপনাকে স্বপ্নে দেখে ছুটে এলাম।" মা আমার চিবুক ধরে চুমো খেয়ে বললেন, "বাবা, তোমাদের জন্য সবসময় চিন্তা হয়। ঠাকুরের কাছে তোমাদের কল্যাণ প্রার্থনা জানাই। তা বাবা, তুমি এসে আমার চিন্তা দূর করেছ।" দুপুরে খাওয়া-দাওয়া সেরে আমি বাড়ি ফেরার পথে যাত্রা করার সময় মা আমার মাথায় হাত রেখে আশীর্ব্বাদ করলেন।
------------------------------************----------------------------
তথ্যসূত্র : কমলাকান্ত চট্টোপাধ্যায় প্রসঙ্গে তথ্য পাওয়া গিয়েছে পুত্র হীরালাল চট্টোপাধ্যায় (৭০ ছর বয়স্ক) এবং বাঁকুড়ার বিভূতি ঘোষের পুত্র কেদারনাথ ঘোষের (৮০ বছর বয়স্ক) সৌজন্যে।