10/03/2024
🟢‘বিগলু’ নামের বিড়ম্বনা🟢
রীতিমতো আমাকে রেসিস্ট তকমা দিয়ে দিল। করেছিটা কী আমি? যে চা বেচে তাকে চাওয়ালা বলিনি, যে হাওয়াই চটি পরে তাকে চটিওয়ালা বলিনি কিংবা যে সব হারিয়ে বিদ্রোহ করছে তাকে সর্বহারা বিপ্লবী বলিনি। কেবল আমার পোষ্য, যে কিনা বিগেল প্রজাতির, তার নাম দিয়েছি বিগলু। এটা জানাজানির পর গেল গেল রব উঠেছে, কেন জাত তুলে নাম রাখব, আমি জাতিভেদ সমর্থন করছি, ওই নিরীহ জাতের প্রাণীর বংশকে অপমান করছি, এই একবিংশ শতকেও আমি জাতপাত নিয়ে পড়ে আছি, আমি নিশ্চিত আমার বিরুদ্ধে এরপর মানবাধিকার কমিশন বসতে চলেছে।
মানুষের হিপোক্রেসি দেখার মতো। এই পাশের বাড়ির কাকিমার কথাই ধরুন। আমি কুকুর আনার আগে শুনতাম ঐ কাকিমা কুকুরদের নামে দিনরাত গালাগালি দিচ্ছে, রাস্তার কুকুরদের হেঁটা করছে, যেই আমি ঘরে নিয়ে এলাম, অমনি দেখি রিল বানাচ্ছে, হ্যাজ নামাচ্ছে মানুষ বিদেশি কুকুর কেন পুষবে, রাস্তার কুকুরদের অ্যাডপ্ট তো করতে পারত, তাতে তারা অন্তত পরিবার পেত। তারপর যেই বিগলু নামটা শুনেছে, কুকুরদের প্রতি ভালোবাসা যেন উথলে পড়েছে, এমন ভাব করছে যেন আমার জন্য আবার মধ্যযুগীয় বর্বরতা ফিরে আসবে, আবার কোনো মহাপুরুষ এসে মানুষ এবং কুকুরকে উদ্ধার করবে।
এদের দেখে মনে হয় এই নাম রাখা নিয়ে এরা এত কষ্ট পাচ্ছে অত দুঃখ মানুষ পরম-পিয়ার বিয়েতে অনুপমের জন্য পায়নি।
ব্যাপারটা এমন জায়গায় চলে গেছে, আমি আজ বাজার গেছি, একজন এসে গান্ধীজীর আত্মজীবনী আমায় ধরিয়ে দিল, বলল “জাতপাতের আঁধার থেকে বেরোতে মহাত্মা গান্ধীকে জানতে হবে।” মাইরি বলছি তখন নিজেকে ‘রকি রানী কি প্রেম কাহানি’র রণভীর রণভীর ফিল হচ্ছিল। তবু ভাবলাম বেঁচে গেছি, থাপ্পড় তো আর বসায়নি।
কিন্তু তারপর যে ঘটনাটা ঘটল ভয়ে তো আমার শিরদাঁড়া দিয়ে ঠান্ডা একটা স্রোত বয়ে গেল। বাজার থেকে গান্ধীজীর আত্মজীবনী নিয়ে ফিরছি, সেদিন এক বিশ্ববিখ্যাত মন্দিরের উদ্বোধন, তাই অনুরাগীরা আনন্দ করতে করতে ফিরছে, আমার হাতে বইটা দেখে কটমট করে তাকাল। আমি ভাবলাম, আমি তো গেলাম। দরদর করে ঘামতে ঘামতে দিদিকে স্মরণ করলাম, কাজও দিল তাতে, আমার গায়ে একটা আঁচড়ও পড়ল না। কারণ এটা পশ্চিমবঙ্গ, আর এখানে ডান্ডা হাতে ঠান্ডা করার ফ্রি লাইসেন্স একমাত্র শাসকের আছে।
এখন ভাবি, ভুলটা কী করেছি আমি। আগে যে নামগুলো ঘরে পোষ্যদের দেওয়া হত সেগুলো রাখলে অসুবিধে আছে, কারণ মানুষ জাতে ওঠার জন্য সেই বিদেশি নামগুলো নিজের ছেলেমেয়েদের রেখে দিয়েছে। এখন টমি ডাকলে পাশের বাড়ির কোনো ছেলে এসে যদি হামি দেয় তো বিপদের তাইনা। নাম নিয়ে তাই ভাবনা চিন্তার শেষ নেই, ভাবতে ভাবতে গরম চাকে সরবত ভেবে খেয়ে মুখ পুড়িয়ে ফেললাম, পোড়ামুখে এটা ভেবেই গর্ববোধ করলাম, অন্য কিছু করে তো মুখ পোড়েনি। ছাত্রাবস্থায় পড়ার সময় যদি এত ভাবতাম তাহলে নির্ঘাৎ আজ মঙ্গলগ্রহে ইসরোর মাধ্যমে ধান রোপণ করতাম।
এই ডগির নাম রাখা নিয়ে আমার উপরে ওঠা অভিযোগের ভিত্তিতে আমার একটা অভিযোগ আছে। একটা বিশেষ কাজের বিশেষ পজিশনের নাম মানুষ আবিষ্কার করে ফেলেছে, ঐ অবলা প্রাণীগুলো জানলই না মানুষ ওদের নাম দিয়ে দিব্যি এনজয় করে যাচ্ছে। ওরা যদি জানত যে এরকম নাম ওদের নামে রাখা হয়েছে তাহলে প্রথমেই ওদের হার্ট অ্যাটাক আসত, কারণ ওদের বায়োলজিকাল প্রক্রিয়াটা তো আলাদা, তাছাড়া ওরকম পজিশন প্রায় সব চতুষ্পদ প্রাণীর ক্ষেত্রে দেখা যায়। তাই প্রশ্ন তুলত কেন কেবল ওদের নামেই এরকম পজিশনের নামকরণ করবে মানুষ, তাছাড়া মানুষ কেনই বা ওই পজিশন নেবে, মানুষ তো দুপেয়ে প্রাণী, প্রাইভেসি বলে ব্যাপার আছে তো।
কিন্তু দুঃখের কথা ওই অবোলা প্রাণীদের নিয়ে কেউ লড়াই করার কথা ভাবেনা, ওদের ভাবনা কেবল আমার বিগেলকে বিগলু নাম রাখা নিয়ে।
🔸(বিগলু বাদে বাকি সব চরিত্র এবং ঘটনা কাল্পনিক)🔸