12/08/2023
বিকালের দিকে আমার স্ত্রী বাবলির সাথে তুমুল ঝগড়া শুরু হয়ে গেলো। ঝগড়ার এক পর্যায়ে আমি পাশের রুম থেকে একটা কোলবালিশ এনে মাথায় তুলে আছাড় মারলাম। বাবলি অবাক হয়ে গেলো,আমার দুবছরে মেয়ে অবন্তিকা খুব কান্না করছিল আমাদের ঝগড়া দেখে ।
আমার বউ বললো - আরে, এমন করছো কেন?
আমি রেগে গিয়ে বললাম,
--কি আর করবো, তোমায় তো মারতে পারি না কারণ প্রথমত তুমি মেয়ে মানুষ আর দ্বিতীয়ত তোমার বাবা পুলিশ(কা,,,পনিক)| তোমার গায়ে হাত তুললে তোমার বাবা আমাকে চৌদ্দশিকের ভাত খাওয়াবে। তাই কোলবালিশকে মেরে মনের জ্বালা মিটাচ্ছি
আমার কথা শুনে বাবলি বললো,
- আজ জ্বালা মিটানোর জন্য কোলবালিশ আছাড় মারলে কাল তো আমায় মাথায় তুলে আছাড় মারবে
আমি মুচকি হেসে বললাম,
-- আরে না, তোমার মত মুটকিকে কখনোই মাথার উপর তুলা সম্ভব না
বাবলি আমার কথা শুনে প্রচন্ড রেগে গেলো। ব্যাগ গুছিয়ে ফেলেছে বাপের বাড়ি চলে যাবে। আমার সাথে আর সংসার করবে না। কয়েকদিন পর আমাকে নাকি ডিভোর্স লেটার পাঠাবে। রুম থেকে বের হবার সময় আমায় বললো,
- আমি তো এখন পুরাতন হয়ে গেছি তাই আমাকে মুটকি লাগে। কিন্তু কলেজ লাইফে এই মুটকির পেছন পেছন অনাথ কুকুরের বাচ্চার মত ঘুরতে,
-- তুমি আমাকে কুকুর বললে?(আমি)
(বউ) - তুমি কুকুরের চেয়েও নিচু স্তরের...
||
বাবলি এক অটোতে উঠে যাচ্ছে আর আমি পিছন পিছন অন্য একটা অটো দিয়ে ওকে ফলো করছি। শ্বশুরবাড়ি সামনে আসলে আমি অটো থেকে নেমে ওর কাছে গিয়ে বললাম,
-- তোমার পিছন পিছন এসেছি বলে এটা ভেবো না আমি তোমাকে নিতে এসেছি। সন্ধ্যা হয়ে গিয়েছিলো রাস্তায় তোমার কোন সমস্যা হলে তোমার বাপ আমাকে জেলে ঢুকাতো। তাই তোমার সাথে সাথে এসেছি
বাবলি রেগে গিয়ে বললো,
- তোমার কি ধারণা? তোমার মতো নিচু চরিত্রের মানুষ আমাকে নিতে চাইলেই আমি যাবো? যে পুরুষ স্ত্রীকে সম্মান না দিয়ে মুটকি বলে সেই পুরুষের সাথে সংসার করার কোন মানেই হয় না
---
-----
বেলকনিতে দাঁড়িয়ে থাকা দুলাল সাহেব(শ্বাশুড়মশাই) উনার স্ত্রী আরতিকে(শ্বাশুড়ী মাকে) বললো,
~ওদের ভবিষ্যৎ কি হবে বলো তো? ওরা দুইজন পরস্পরকে ছাড়া একটুকু থাকতে পারে না ,
আর দুইজন একসাথেও থাকতে পারে না
দুলাল সাহেবের স্ত্রী আরতি মুচকি হেসে বললো,
~ওরা আর পাল্টাবে না।ওরা এমনি থাকবে
দুলাল সাহেব তখন বললো,
~যাও দরজাটা খুলো এখন গিয়ে। দেখো গিয়ে আজ আবার নতুন কি নাটক নিয়ে এসেছে । আমি গেলে তো আমাকে দেখে জামাই দৌড়ে পালায়। আমি বুঝি না এই ছেলে আমাকে দেখে এত ভয় পায় কেন?
কলিংবেলের আওয়াজ শুনে শ্বাশুড়ি দরজা খুললো। মা কে দেখেই বাবলি বললো,
-আমি কিন্তু আর ওর সাথে যাচ্ছি না। ও আজ আমায় মুটকি বলছে, আর বালিশ দিয়ে মেরেছে।
আমি তখন শ্বাশুড়িকে বললাম,
-- মা, আপনার মেয়ে আমায় অনাথ কুকুরের বাচ্চা বলছে। আপনাদের মেয়ে আপনাদের কাছে দিয়ে গেলাম এখন আমি যাই ।
শ্বাশুড়ি তখন বললো,
~এসেছো যখন রাতের খাবারটা খেয়ে যাও ?..
মা, আমি কিন্তু খেতে আসি নি। তারপরও আপনি যেহেতু বলছেন শুধু আপনার কথা রাখার জন্য হলেও আমি রাতে খেয়ে যাবো
পাশ থেকে বাবলি মুখ বাঁকিয়ে বললো,
- কুকুর কি আর এমনি এমনি বলেছি? কার্যকলাপে বলেছি। এতকিছুর পরেও উনি রাতে খেয়ে যাবেন...হুম শয়তান একটা.,,,,
এই অপমান আর সহ্য করা যায় না। আমি রাগে শ্বশুরবাড়ি থেকে বের হয়ে গেলাম। মনে মনে প্রতিজ্ঞা করলাম আর যায় হোক বাবলীকে আর বাড়িতে আনবো না। ওর কথা মনে করারও চেষ্টা করবো না।আজ থেকে আমি ওকে ছাড়াই একা শান্তিতে থাকবো ।
নিজের বাড়িতে এসে পরলাম। কিন্তু বাড়িতে ঢুকার সাথে সাথেই রাগ কমতে লাগলো আর প্রাণের চেয়ে প্রিয় বউ আর মেয়ে অবন্তিকার জন্য প্রচন্ড মিস করতে শুরু করলাম। ফ্রিজ থেকে যখন ঠান্ডা জলের বোতলটা বের করলাম তখন মনে পরলো, এই ফ্রিজ কিনার সময় আমাদের কত ঝগড়া হলো। আমি বলেছি কালো রঙের ফ্রিজ কিনবো না, আর ও বলে কালো রঙের ফ্রিজ নিবে। কিছু ভালো লাগছিলো না দেখে ....
টিভিটা যখন অন করি তখনও বাবলির কথা মনে পরলো। মুম্বাই এর প্রাইভেট কোম্পানিতে চাকরির বেতন পেয়ে আমি ৪২ ইঞ্চি এই টিভিটা কিনেছিলাম বলে বাবলি খুব রাগ করেছিলো। ও বলেছিলো, "আমার ২১ ইঞ্চি হলেই চলতো শুধু শুধু এত টাকা কেন নষ্ট করলে।"
নিজের রুমে এসে ড্রেসিং টেবিলের আয়নায় সামনে দাঁড়াতেই বাবলি(পূজা) এর কথা মনে হলো। প্রতিবার সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখতাম বাবলি এই আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে চুল ঠিক করছে
খুব ক্লান্ত লাগছিলো দেখে বিছানায় শুয়ে পরি কিন্তু পাশের বালিশটা দেখে বাবলি কথা মনে পরে গেলো। ও সব সময় এই বালিশে মাথা রেখে ঘুমাতো
বিছানা থেকে উঠে বসলাম আর মনে মনে ভাবতে লাগলাম, এই সব আমি কি ভাবছি। বাবলির কথা আর ভাববো না। ও একটা বদরাগী মেয়ে। নিজের স্বামীকে কুকুর বলেছে। চোখ মুখে জল দেওয়ার জন্য ওয়াশরুমে যখন ঢুকলাম তখন মনে পরলো, স্নানের সময় বাবলি যতবার আমাকে তোয়ালেটা দিতে এসেছে ততবারি আমি বাবলিকে ... ওয়াশ....ভিতর .....এসেছি। তারপর ... ঠোঁ**...
এমন সময় দেয়াল ঘড়ির ঢং ঢং আওয়াজ হতে লাগলো। রাত ১২টা বাজে। এই দেয়াল ঘড়িটাও বাবলি কিনে এনেছে ঘড়ি না ওটা স্বামী- স্ত্রি সুন্ধর ঘড়ির পুতুল যা আমাকে প্রথম দিয়েছিল আমার প্রিয়তমা.......
না আর সহ্য করতে পারছি না। বাবলি ছাড়া এক মুহুর্ত থাকা সম্ভব না। এই বাড়ির প্রতিটা কোণায় প্রতিটা আসবাবপত্রে বাবলির অস্তিত্ব লুকিয়ে আছে... ওহ্।
---
----
তরকারির ঘ্রাণ পেয়ে দুলাল সাহেব আর উনার স্ত্রী আরতি রান্নাঘরে গেলেন। গিয়ে দেখেন উনাদের মেয়ে রান্না করছে। বাবা অবাক হয়ে মেয়েকে বললো,
~এত রাতে মা কার জন্য রান্না করিস?
মেয়ে মুচকি হেসে বললো,
-তোমাদের জামাইয়ের জন্য। রাতে না খেয়ে থাকলে ও আবার অসুস্থ হয়ে যায়
বাবা(দুলাল সাহেব) বলল
~জামাই তো রাগ করে চলে গেছে
মেয়ে মুচকি হেসে বললো,
- গিয়ে দেখো হয়তো গেইটের বাইরে ঘুরঘুর করছে। তুমি ডেকে বাড়িতে নিয়ে আসো আমি টেবিলে খাবার দিচ্ছি ।
বেলকনিতে এসে বাবা দেখে বাড়ীর গেইটের সামনে দাঁড়িয়ে আছে । দুলাল সাহেব উনার স্ত্রীকে বললেন,
~জামাইকে ডেকে বলো উপরে আসতে। আমি ডাকলে ভয়ে আবার আসবে না
---
-----
বাসায় ঢুকে দেখি ডাইনিং টেবিলে আমার পছন্দের সব খাবার। নিশ্চয়ই বাবলির রান্না করেছে। এই মেয়েটা আমায় অসম্ভব রকম ভালোবাসে। আমি তখন শ্বাশুড়িকে বললাম,
-- মা, আমি কিন্তু আপনার মেয়েকে নিতে আসি নি। খাবার রেখে রাগ করে চলে গিয়েছিলাম বলে আবার এসেছি
আমার কথা শুনে শ্বাশুড়ি হাসতে লাগলো আর আড়চোখে বাবলি দিকে তাকিয়ে দেখি বাবলিও মিটিমিটি হাসছে। এই সেই হাসি, যে হাসি দেখে আমি যখন প্রথম বাবলির প্রেমে পরেছিলাম
অনুপ্রেরণাঃ G.n.banik😄
হাসি
পূজা অধিকারী বণিক।
.
👉গল্পঃ কাল্পনিক।
যারা আইডি ফলো না করে গল্প পড়ছেন আইডি ফলো করুন গল্প গুলো মন ছুঁয়ে যাবে ।