
03/05/2025
অনেক অনুভূতি থাকে, যেগুলোর কোনও উচ্চারণ হয় না—তারা শুধু অস্তিত্বের গভীর প্রান্তে বসবাস করে। আরমান জানে, সে এমনই এক অনুভবের ধারক—যার কোনও ভাষা নেই, শুধু রোদ্দুরের মতো হালকা পোড়া গন্ধ থাকে তার বুকে।
সে হাসে। প্রতিদিন, নিয়ম মেনে। মানুষ ভাবে—এ এক পরিপূর্ণ জীবন।
কিন্তু কেউ জানে না, সে বেঁচে আছে... একটা না-বলা সংলাপের শেষ লাইনের অপেক্ষায়।
তার হৃদয়ে বাস করে একজন। নয়, “বাস করে” বলা ভুল হবে। বরং, সে একরকম মিশে গেছে তার রক্তপ্রবাহে। ঠিক যেভাবে পুরনো দাগ কখনো পুরোপুরি মুছে যায় না, কেবল ফিকে হয়।
সে নেই এখন—তবুও, আরমান তাকে প্রতিদিন খুঁজে পায়।
একটা হঠাৎ বাতাসের ঝাপটা, বা ভীড়ের মাঝে এক চেনা গন্ধ…
তখনই মনে পড়ে যায় সেই চোখদুটো—যা কেবল তাকিয়ে বলতো, “তুমি আছো আমার মাঝে।”
তার নাম বলা নিষিদ্ধ হয়ে গেছে আজকাল।
সে এখন কারো স্ত্রী, কারো ঘরের নাম—তার জন্য আর নয়।
তবু, নামটা প্রতিবার উচ্চারিত হলে আরমানের বুকের ভেতর কোনো এক ক্ষত যেন আবার ফেটে যায়।
শুধু চিৎকার হয় না…
কেননা সেই শব্দ আর শোনা যায় না, তা এখন নিঃশব্দতার শব্দ।
তার অনুপস্থিতি এখন আর অনুপস্থিত নয়।
সে এক অলিখিত উপস্থিতি—যেটা খাটের বাম পাশটা শূন্য রাখে,
রাতের খাবারে তার প্রিয় পদটাকে আর রান্না হতে দেয় না,
যে কান্নার শব্দকে জল ফেলে মুছে ফেলে দেয়ার অভিনয় শিখিয়ে দিয়েছে।
আরমান মাঝে মাঝে ভাবে, ভালোবাসা কি কখনো মারা যায়?
নাকি সে একটা জীবন্ত ভূত হয়ে যায়—যে প্রতিদিন মরে, কিন্তু দাফন হয় না।
অনেক বছর কেটে গেছে।
তার ফোনে এখনো সেই “last seen 5 years ago” লেখা থাকে।
সে চায় না, সেই অনলাইন আসুক। কারণ সে জানে—
যদি কোনওদিন সে আবার অনলাইন হয়,
তবে এই শোক, এই তীব্র না-পাওয়ার সৌন্দর্য ভেঙে যাবে।
সে জানে, এই ভালোবাসার কোনও ঘর নেই।
তবু প্রতিটি সন্ধ্যায়, এক কাপ চায়ের ধোঁয়ায় সে চোখ রাখে—
যদি সেই চোখের প্রতিচ্ছবি একবার ফেরে, ধোঁয়ার মাঝে গলে যায়।
কিছু ভালোবাসা পূর্ণ না হয়েও এতটা গভীর হয়,
যেখানে শূন্যতা হয়ে ওঠে জীবনের সবচেয়ে জীবন্ত অনুভব।