01/08/2025
নির্বাচন গণতান্ত্রিক, স্বপ্ন খেলাফতি, রোডম্যাপটা কোথায়?
ইসলামে রাষ্ট্রব্যবস্থার নাম খেলাফত। এটা কেবল একটি শাসনপদ্ধতির নাম নয়, বরং একটি নৈতিক কাঠামো যেখানে চূড়ান্ত কর্তৃত্ব আল্লাহর, আর খলীফা হচ্ছেন সেই বিধানের বাস্তবায়নকারী। এই আদর্শে আইন বানানোর অধিকার মানুষের নয়, বরং আল্লাহর। শাসন চালানোর উদ্দেশ্য হচ্ছে ইহকালীন সুবিচার আর পরকালীন দায়বদ্ধতা।
অন্যদিকে গণতন্ত্র একটি ভিন্ন ভিত্তির উপর দাঁড়ানো কাঠামো। এখানে শাসক আসে জনগণের ভোটে, আইন তৈরি হয় সংসদে, এবং চূড়ান্ত কর্তৃত্ব মানুষের হাতে ন্যস্ত থাকে।
দুটি পদ্ধতির মধ্যে মৌলিক পার্থক্য অস্বীকার করা যায় না।
কিন্তু প্রশ্ন হলো বাংলাদেশে ইসলামি দলগুলো খেলাফতের পক্ষে নাকি গণতন্ত্রের?
তারা কি ভোটের রাজনীতি করছে কেবল ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য?
নাকি তারা গণতন্ত্রকে খেলাফতের পথে পৌঁছানোর একটি মাধ্যম ভাবছে?
যদি মাধ্যমও হয়, তাহলে প্রশ্ন আসে, আদর্শ যেখানে আল্লাহর বিধানকে চূড়ান্ত মনে করে, সেখানে জনগণের সংখ্যাগরিষ্ঠতাই চূড়ান্ত হবে কেন?
বাস্তবতা হলো, আজকের ইসলামী দলগুলো এক ধরনের দ্বৈত সংকটে ভুগছে। একদিকে তারা নিজেদের আদর্শিক দল হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে চায় যারা কুরআন-সুন্নাহ ভিত্তিক রাষ্ট্র গঠনের কথা বলে। অন্যদিকে তারা সেই আদর্শের মুখে উচ্চারণ করতেও ভয় পায়। পাছে কেউ “অসাংবিধানিক”, “বিপদজনক”, “গণতন্ত্রবিরোধী” বলে।
তারা জানে, খেলাফতের কথা জোরে বললে মিডিয়া, নির্বাচন কমিশন, এমনকি রাষ্ট্রের পক্ষ থেকেও চাপে পড়তে হবে।
তাই তারা বেছে নেয় ‘কৌশল’। বলা হয় “আমরা আদর্শিক আছি, তবে বাস্তবতাও মানি।” কিন্তু এখানেই আরেকটি প্রশ্ন জাগে যখন কৌশলই মুখ্য হয়ে দাঁড়ায়, তখন আদর্শ কি পেছনে পড়ে যায় না?
একটা সময় কি এমন আসবে না, যখন আদর্শ শুধু একটি আবেগঘন স্লোগান হয়ে থাকবে কিন্তু রাজনৈতিক অস্তিত্ব নির্ভর করবে কেবল বাস্তবতার সাথে মানিয়ে চলার উপর?
যখন আদর্শ আর বাস্তবতার মধ্যে সমঝোতা হয়, সেটা ভালো।
কিন্তু যখন বাস্তবতা আদর্শকে গিলে ফেলে তখন সেটা কৌশল নয়, নৈতিক আত্মবিসর্জন।
নতুন প্রজন্ম প্রশ্ন করে, আপনারা খেলাফত চান ঠিক আছে, কিন্তু আপনারা বলতে ভয় পান কেন? আপনারা কি আদর্শ ধরে রাখতে চান, নাকি ক্ষমতার গেমে টিকে থাকতে চান?
আপনারা যদি সত্যিই বিশ্বাস করেন শাসন আল্লাহর বিধান অনুযায়ী হওয়া উচিত, তাহলে সেই বিশ্বাসের চর্চা কোথায়? আপনারা কি ভেবে দেখেছেন এই দ্বৈততা আপনাদের প্রতি বিশ্বাস কমিয়ে দিচ্ছে?
ইসলামী রাজনীতির সমস্যা নয়, সংকটটা হচ্ছে আদর্শিক পরিচয় ঝাপসা হয়ে যাওয়া। শুধু খেলাফত শব্দটা পোস্টারে রাখলে চলবে না। সাহস করে বলতে হবে, বোঝাতে হবে, এবং যুক্তির মাধ্যমে জনসম্পৃক্ততা তৈরি করতে হবে।
আর না পারলে নিজেদের রাজনৈতিক ব্যানার থেকে 'ইসলামী' শব্দটা সরিয়ে ফেলাই ভালো।
আদর্শ ধরে রাখতে হলে সাহস লাগে। আর সাহসহীন আদর্শ হলো কাগজে লেখা এক পরিত্যক্ত স্বপ্ন যেটা কেউ পড়ে না, কেউ অনুসরণও করে না।
পুনশ্চঃ আমার কোথাও ভুল হলে ধরিয়ে দিবেন। সামারে পাগল থাকি। হেডে ডিস্টার্ব।
Mahmud Hasan Tabib