28/03/2024
রমজান মাস মুসলিম উম্মাহর বহু আকাংক্ষিত মাস।এই মাস কে পাওয়া সত্যিই খুব ভাগ্যের ব্যাপার।তবে ছেলেবেলার রমজান মানেই আমার মনে হতো বাহারি সব মুখরোচক খাবার।তবে রোজা রাখার জন্য ছোটবেলা থেকেই খুব ব্যাকুল হতাম।আম্মুকে বলতাম রোজা রাখব।আম্মু সাহারিতে ডেকে তুলতো।কারন আম্মু বলতো রোজা না রাখতে পারলেও সাহারী খাওয়ার মাঝে ও সওয়াব হয়।যদিও ছেলেবেলা ঘুম থেকে উঠতে চাইতাম না।কারন শীতের সময় সাহারী খেতে বড় মানুষরাই উঠতে চায় না।আমি ছোট হয়ে কিভাবে উঠতে চাইবো বলেন তো??কিন্তু এই আমিই আবার সকালে উঠে কান্নাকাটি করতাম না উঠতে পারার জন্য।তখন অবশ্য আম্মু বলতো,বেলা ১২ টা পর্যন্ত দুইদিন রোজা রাখলে একটা রোজা হয়।এটা বাচ্চাদের জন্য আল্লাহ কবুল করে নেন।এই কথা শুনে মনে ভালো লাগা কাজ করতো।আর সাহারীতে উঠতে যেদিন না পারতাম এভাবেই রোজা রাখতাম।
আমার ছেলেবেলা কেটেছে যৌথ পরিবারে।আমরা ভাই-বোনরা সব সেইম বয়সেরই ছিলাম।সাহারিতে আমার একমাত্র খাবার ছিল দুধ ভাত খাওয়া।সেই সময় থেকেই এখনও পর্যন্ত সাগর কলা আমার পছন্দের এক নাম্বারেই আছে।এইতো সেদিন আব্বু এসেছিল।আমার জন্য খুব ভালো কিছু সাগর কলা এনেছিল। আর আব্বুকে খুশী করতে হাতের কাজ রেখে আমি একটি সাগর কলা আব্বুর সামনে বসে খেয়ে দেখাই।আমি সেদিন সেই সময় আব্বুর সামনে বসে কলাটি খাওয়াতে আব্বু অনেক খুশি হয়েছিল।সাহারিতে সবাই যখন সাহারি খেতে উঠে তখন এতো মানুষের সমাগমে মনেই হতো না তখন রাত।যেদিন উঠতে পারতাম সেদিনের ঘরের পরিবেশ অনেক বেশি ভালো লাগতো আমার।
এরপর ইফতারের আগেই আমরা আর কাজিনরা পাশের রুমে পড়তে বসে যেতাম।পাশের রুমে খাটের উপর গোল রাউন্ড করে বসে যেতাম সবাই।অন্যদিকে আম্মু,আমার বড় আম্মা (চাচী) সবকিছু গুছিয়ে ইফতার রেডি করতেন।আমাদের বলা হতো আমাদের জন্য ইফতার রেডি করে দিয়ে যাবে পাশের রুমে।আমরা যাতে কোন হৈ চৈ না করি এমনটা বলা হতো।আমরা সুবোধ বালক-বালিকার মতো পড়াশুনায় মন দিতাম।এক রুমে সবার বসা সম্ভব ছিল না।কারন আমরা এতো জন ছিলাম বাচ্চা এক রুমে বসা সম্ভব হবে নাএজন্য রোজাদার সবাই আমাদের পাশের রুমে আর আমরা এই রুমেই বসতাম।।আর আমরা তো সব হাফ বেলার রোজাদার।সেদিন গুলো কতোই না মধুর ছিল।
আমাদের রুমে বড় প্লেটে করে সব খাবার সাজিয়ে দেয়া হতো।আর শরবত জগে আর গ্লাস দিয়ে দেয়া হতো।আমাদের মধ্যে যে বড় সেই ই সবাইকে পরিবেশন করতো।আমার বড় চাচার বড় মেয়ে সেই আপুই সব কিছু ম্যানেজ করতো।এরপর আসছে মুড়ি বানানো।যখন মুড়ি বোলের মধ্যে দিয়ে যেতো,আমি আর আমার এক কাজিন মুড়ি থেকে ছোলা বেছে বেছে হাতে নিয়ে জোড়-বেজোড় খেলতাম।সেদিন গুলি আর ফিরে আসবে না।সুখকর এই অনুভূতি গুলো আজ ও আমার মনের মধ্যে লালন করে চলেছি।রমজান মাস এলেই সেই স্মৃতিগুলো মনিকোঠায় ভেসে উঠে।একই শহরে আছি অথচ কাজিনদের সাথে দেখা খুব একটা হয়না।সবার সাথে সময়ের সাথে মিলে না।তাইতো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে তাদেরকে দেখে থাকি।তারাও আমাকে দেখে থাকেন।একটা ব্যাপার আমি খুব ফিল করি তা হচ্ছে -আমরা আর কাজিনরা মিলে আমরা মেট ৭ জন।অথচ আমরা বসে একসাথে ইফতার করতাম।কারো সাথে কারো কোন ঝগড়া বা খাবার নিয়ে টানাটানি এমনটা কখনও হয়নি।এখনকার বাচ্চারা ২ জনই একসাথে বেশী সময় মিল থেকে কিছু করতে পারে না।আর আমরা ছেলেবেলা থেকেই একতাবদ্ধ হয়েই থেকেছি।পারিবারিক এই শিক্ষা আমরা যেমন শিখেছি তেমন পালন ও করেছি।আর এখনকার সময়ের বাচ্চারা খুব অস্থির।
ভাই-বোনের সেই মধুর সম্পর্ক আর রমজান মাসের স্মৃতি তা মনের ক্যানভাসে বড্ড বেশী ভালো লাগা নিয়ে আজ ও আছে।আশাকরি আমার এই ব্লগটি আপনাদের কাছে ভালো লাগবে।আপনাদের ভালো লাগার মাঝে আমার এই স্মৃতি রোমন্থন ব্লগটির সার্থকতা।
Abujamjam Gazi ❤️