11/09/2025
মঙ্গলগ্রহের বুকে নতুন করে জীবন খুঁজে পাবার সম্ভাবনা নিয়ে বিজ্ঞানের জগতে আবারো উত্তেজনা তৈরি হয়েছে। নাসার পারসিভিয়ারেন্স রোভার, যা ২০২১ সালে জেজেরো ক্রেটারে অবতরণ করে, সম্প্রতি নেরেটভা ভ্যালিস নামের এক প্রাচীন নদী উপত্যকায় অদ্ভুত সব শিলা আবিষ্কার করেছে। এই শিলাগুলোতে এমন সব দাগ, দানা ও রাসায়নিক যৌগ পাওয়া গেছে যা পৃথিবীতে সাধারণত অণুজীবের কর্মকাণ্ডের ফলেই সৃষ্টি হয়। নাসার বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, এগুলোকে সরাসরি প্রাণের প্রমাণ বলা না গেলেও এগুলোকে সম্ভাব্য বায়োসিগনেচার বা জীবনের চিহ্ন হিসেবে বিবেচনা করা উচিত।
প্রতিবেদনটি প্রকাশিত হয়েছে Nature সাময়িকীতে, যেখানে গবেষক দল উল্লেখ করেছেন যে উজ্জ্বল অ্যাঞ্জেল ফর্মেশনের শিলায় পাওয়া বৈশিষ্ট্যগুলো—রাসায়নিক গঠন, খনিজ বৈচিত্র্য এবং জৈব যৌগ—সবই এমন ইঙ্গিত বহন করে যা এক সময়ের জীবনের সঙ্গে সম্পর্কিত হতে পারে। রোভারের যন্ত্রপাতি শিলায় কার্বন-ভিত্তিক যৌগ শনাক্ত করেছে এবং ছবিতে দেখা গেছে পৃষ্ঠে দাগ ও নডিউল, যা পৃথিবীতে অণুজীবের কার্যকলাপের সঙ্গে মিলে যায়।
এই শিলায় ভিভিয়ানাইট (এক ধরনের লৌহ-ফসফেট খনিজ) এবং গ্রেইগাইট (লৌহ-সালফাইড খনিজ) পাওয়া গেছে। গবেষক ড. জোয়েল হুরোভিৎজের মতে, এগুলো সম্ভবত কাদার সঙ্গে জৈব পদার্থের রাসায়নিক বিক্রিয়ার মাধ্যমে সৃষ্টি হয়েছে, আর পৃথিবীতে এমন প্রক্রিয়া প্রায়শই অণুজীব দ্বারা পরিচালিত হয়। তবে সমস্যাটা হলো, এসব খনিজ শুধুমাত্র জৈব প্রক্রিয়ায় নয়, সম্পূর্ণ অজৈব রাসায়নিক বিক্রিয়াতেও তৈরি হতে পারে। তাই এটিকে চূড়ান্ত প্রমাণ বলা সম্ভব নয়।
নাসার বিজ্ঞানীরা স্পষ্ট জানিয়েছেন, এটি জীবন নয় বরং জীবনের সম্ভাব্য চিহ্ন। যদি সত্যিই এরা এক সময়ের অণুজীবের অবশিষ্ট চিহ্ন হয়, তবে তা ছিল কোটি কোটি বছর আগে, যখন মঙ্গল ছিল অনেক বেশি আর্দ্র আর প্রাণবান্ধব। আজকের শুকনো, ধূলিমাখা গ্রহ আসলে একসময় নদী ও হ্রদে ভরা ছিল—যা জীবনের জন্য সহায়ক পরিবেশ তৈরি করেছিল।
তবে নিশ্চিত হওয়ার জন্য প্রয়োজন শিলাগুলোকে পৃথিবীতে এনে বিস্তারিত বিশ্লেষণ করা। পারসিভিয়ারেন্স রোভার ইতিমধ্যে নমুনা সংগ্রহ করে সংরক্ষণ করেছে, কিন্তু সেগুলো ফিরিয়ে আনার নাসার পরিকল্পনা বর্তমানে বাজেট সংকটে আটকে গেছে। ট্রাম্প প্রশাসনের বিজ্ঞান বাজেটে “বিলুপ্তি-সমতুল্য কাটছাঁট” হওয়ায় মঙ্গল নমুনা প্রত্যাবর্তন মিশন কার্যত ঝুঁকিতে পড়েছে। নাসার কর্মকর্তারা যদিও নমুনা ফিরিয়ে আনার সম্ভাবনা উড়িয়ে দেননি, তবে এখনও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি।
বিজ্ঞানীরা আশা করছেন, এ আবিষ্কার পৃথিবীর ল্যাবরেটরিতে পরীক্ষানিরীক্ষাকে অনুপ্রাণিত করবে, যেখানে একই খনিজ প্রক্রিয়াগুলো জীবজগতের মাধ্যমে ও অজৈব উপায়ে কিভাবে গড়ে উঠতে পারে তা যাচাই করা হবে। একইসঙ্গে পৃথিবীর সেসব প্রাচীন ভূতাত্ত্বিক স্থানেও গবেষণা বাড়ানো হবে, যেখানে এমন বিক্রিয়া ঘটেছিল।
এই আবিষ্কার মানবজাতির সবচেয়ে বড় প্রশ্নের দিকে আরেক ধাপ এগিয়ে দিল—আমরা কি সত্যিই মহাবিশ্বে একা? উত্তর হয়তো এখনও অধরা, কিন্তু মঙ্গলের এই রহস্যময় শিলা নিঃসন্দেহে এক নতুন দরজা খুলে দিয়েছে।