
30/06/2024
সন্তান বড় হলে, সন্তানের বিছানা আলাদা করা অবশ্য কর্তব্য ! কেন করবেন❓
রিবা (ছদ্ম নাম) । বয়স সাত । ওয়ানে পড়ে । ধবধবে ফর্সা । মাথা ভর্তি কোকড়ানো চুল । টলটলে চোখ । মনে হয় একটু ছুঁয়ে দিলেই ব্যস । চোখের মায়া আবীর হয়ে হাতে লেগে যাবে । প্রজাপতির রঙের মতো ।
ওর মায়ের সাথে সেদিন চেম্বারে এসেছে । প্রসাবে জ্বালা পোড়া । তল পেটে ব্যথা । মায়ের ভাষ্য, ম্যাডাম, পিসাব করনের সময় খালি কান্দে আর লাফায় । পেট চেপে খিচ্চা বইসা থাকে ।
পরীক্ষা করে দেখতে চাইলে, প্যান্ট খুলে রিবার মা যা দেখালো তার জন্য প্রস্তুত ছিলাম না, বললেই ভালো । সরাসরি জিজ্ঞেস করলে মা বলবে, কী যে কন, ছোট মানুষ । মনেমনে দু-একটা গালিও যে দিবে না, বলা যায় না ।
ডাক্তারদের এ এক জীবন ! কত কী যে দেখতে হয় ! ঘুরিয়ে প্যচিয়ে জিজ্ঞেস করি, বাড়িতে কে কে আছে ❓
ওর বাপ আর আমি ।
আর কেউ না ❓
না ম্যাডাম । তবে পাশেই ভাসুরের বাসা ।
ও কার সাথে খেলাধুলা করে ❓
আমার ভাসুরের পোলার সাথে । বয়স এগারো বারো । সিক্সে পড়ে । সারাদিন দৌড়াদৌড়ি ঝাঁপাঝাপি । ভিডিও গেমস, ইউটিউব নাকি কি কয় এসব নিয়া থাকে । সারা বাড়িতে আর বাচ্চাকাচ্চা নাই তো । অরা অরাই খেলে । আমিও তেমন খেয়াল করি না । আহারে বাচ্চারা !
বাড়িতেই তো থাকে সারাদিন । হয় দাদির ঘর, নয় চাচির ঘর । আসলে মাইয়া আমার এই একটাই । মিছা কইয়া লাভ নাই । চাচা চাচিও আদর করে খুব । মিতুল (ছদ্ম নাম) তো বইন বলতে অজ্ঞান ।
কখনো জিজ্ঞেস করেছেন, কি খেলা খেলে ❓
না ম্যডাম । কী খেলব আর, চোর পলান্তি । পুতুল খেলা । এই সব আরকি । জিগানোর কী আছে ❓
আছে, এখন জিজ্ঞেস করেন তো ।
রিবা, মিতুল ভাইয়ার সাথে কি খেলাধুলা করো বলো তো মা ❓
বউ জামাই খেলি ।
বউ জামাই খেলা কী করে খেলো ❓
মেয়ে যা বর্ণনা দিলো, শুনে মা মুর্ছা যান আরকি ! ছোট বাচ্চার আর দোষ কি ❓ বাচ্চারা অনুকরণ প্রিয় । এটা সবাই জানে । বড়রা অবিবেচকের মতো কাজ করবে আর বাচ্চাকাচ্চা দেখে শুনে চুপ করে বসে থাকবে, এটা ভাবার কারণ নেই । আসলেই নেই ।
ওহ, ভালো কথা । রিবা, মিতুল কাকে অনুসরণ করল❓ বাবা মাকে❓ টিভি সিনেমাকে❓ নাকি ইউটিউবকে❓ কাউকে না কাউকে তো অবশ্যই ।
রিবা, এ ধরনের খেলা তো ভালো না মা । এটা পঁচা কাজ । কথা শেষ করতে দেয়না পাকনি বুড়িটা । টাসটাস করে মুখের ওপর বলে ওঠে, বাবা-মা খেলে যে ! তাহলে বাবা-মা কি পঁচা❓
কী উত্তর দেবে রিবার মা❓ উত্তর দেয়ার কি মুখ থাকে❓ মহিলা হতবিহ্বল হয়ে পড়ে । যেনো পায়ের তলায় কোন মাটি নেই । বেচারা !
রিবার মাকে প্রশ্ন করি, আপনারা কি স্বামী-স্ত্রী রিবাকে নিয়ে এক বিছানায় ঘুমান❓
হ ম্যাডাম । ছোট বাচ্চা । ওর বাপে কয়, কী বুঝব❓ ও ঘুমালেই তো কাদা । লোকটার খাই বেশি । বাচ্চা ঘুমালো কি ঘুমালো না । তর সয় না । আমি আগেই কইছিলাম । হাহাকার থই থই কান্না হয়ে ঝরে পড়ে । আহারে !
দেখুন, আমরা বাচ্চাদের যতটা নির্বোধ মনে করি, আসলে ততটা নির্বোধ ওরা না । বরং একটু বেশিই বুদ্ধি রাখে ওরা । শুধু আমরা বড়রাই এ কথাটা মানতে চাই না । আমাদের দিয়ে ওদের হিসেব করি । কিন্তু ওরা হিসেবে বাবা-মা'দের চেয়ে পাকা । যে কাজটা বাবা মা করে, সে কাজটা খারাপ কিভাবে হয়❓ কাজেই বাবা-মা, বউ-জামাই খেলা তারা খেলতেই পারে । তাদের তো দোষ দেয়া যায় না । একটু ভেবে বলুন তো, যায় কি❓
আসলে একটা নির্দিষ্ট সময় পর সন্তানদের বিছানা আলাদা হওয়াই বাঞ্চনীয় । সবার পক্ষে হয়তো, সন্তানদের জন্য আলাদা আলাদা রুম দেয়া সম্ভব না । সে ক্ষেত্রে অন্তত বিছানাটা আলাদা করা যায় । বাবা-মায়ের বিছানাটা কাপড় দিয়ে পার্টিশন দেয়া যায় । মশারির মতো । আর নিতান্তই যদি সম্ভব না হয়, শিশু সম্বলিত সংসারে দম্পতিদের অবশ্যই সর্বোত্তম সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে । কী সেটা আমি জানিনা । আর সবার ঘরে নিশ্চয় একরকম ফর্মূলা চলবে না । নিজের ঘর অনুযায়ী নিজেদের ফর্মূলা তৈরী করুন প্রিয় অভিভাবক ।
আমরা বাচ্চাকাচ্চা নিয়ে ঘুরতে যাই । মজার মজার খাবার খাই । দামী দামী গেজেট দেই । নতুন নতুন ট্রেন্ডি জামা কাপড় পরাই । কিন্তু সবচেয়ে দামী যে লেসন সেটাই দেই না । হেলথ এডুকেশন, সেক্স এডুকেশন । কত্ত জরুরি যে এসব জীবনমুখী শিক্ষা । কী আজব আমরা ! কবে বুঝব এর গুরুত্ব❓ আর কত ভুল বার্তা দেহ মনে নিয়ে বড় হবে আমাদের শিশুরা❓
বাচ্চাদের কি কি করা উচিৎ আর কি কি না সেটা বলুন । ছোটদের কাজ, বড়দের কাজ কি কি জানান । ধীরে ধীরে নিজের শরীর সম্বন্ধে শিক্ষা দিন । গুড টাচ, ব্যাড টাচ সম্পর্কে জানান । নারী-পুরুষের যৌন জীবন সম্বন্ধে শিক্ষা দিন । ধীরে ধীরে, সহজ করে । কাজের লোক কিংবা ক্যানভাসারের কাছে ভুল জানার চেয়ে, বাবা মার কাছে জানা ভালো নয় কি❓
প্রিয় অভিভাবকগন, সন্তানের কথা বিশ্বাস করুন । সন্তানের বন্ধু হোন । ধর্মীয় শিক্ষায় শিক্ষিত করুন এবং ধর্মীয় অনুশাসন মেনে চলতে উদ্বুদ্ধ করুন । মনে রাখা ভালো, লালন পালন করাই কিন্তু শেষ কথা না । সন্তানকে সুরক্ষিত রাখাও বাবা-মার পবিত্র দায়িত্ব ।
আসুন ঠিকঠাক দায়িত্ব পালন করি । ওদের জীবনটা আরেকটু সহজ করি ।
_______________________________
লিখেছেন - ডাঃ সাবিকুন নাহার