
24/02/2025
ভূতের গল্প: 🤔সেকেন্দারপুরের সেই রাত🤔
আমার নাম ইমরান। ছোটবেলায় সেকেন্দারপুর গ্রামে থাকতাম, কিন্তু আঁট বছর বয়সে হাউয়া জেলায় চলে আসি। এখন বয়স পঁচিশ, পুরোনো স্মৃতি মাঝে মাঝে মনে পড়ে। আমার একমাত্র শৈশবের বন্ধু রমজান এখনো সেকেন্দারপুরে থাকে। ওর সাথে ফোনে কথা হয় প্রায়ই। একদিন ও আমন্ত্রণ জানালো সেকেন্দারপুরে আসার জন্য। আমিও ঠিক করলাম, এতদিন পরে গ্রামে ঘুরে আসি।
হাউয়া জেলা থেকে বাস, ট্রেন, আর অটোরিকশা বদলে আমি বিকেলবেলা সেকেন্দারপুর পৌঁছালাম। সন্ধ্যে হয়ে আসছিল, আর গ্রামটা বেশ চুপচাপ মনে হচ্ছিল। রমজান বাড়িতে না থাকায় আমি ভাবলাম, একটু হাঁটাহাঁটি করি পুরনো স্মৃতি খুঁজতে। গ্রামটা দেখে মনে হলো, সময় যেন থমকে আছে।
হাঁটতে হাঁটতে আমি চলে গেলাম গ্রামের পুরনো বটগাছের কাছে। ছোটবেলায় এই গাছের নিচে খেলতাম, কিন্তু এখন গাছটা ভয়ানক লাগছিল। বটগাছটা গ্রামের বাইরে একটা নির্জন জায়গায়। হঠাৎ বাতাসে কেমন একটা শীতল অনুভূতি এলো। চারদিকে অন্ধকার হয়ে গেল, আর চাঁদের আলো গাছের পাতার ফাঁক দিয়ে এসে কেমন যেন ভৌতিক পরিবেশ তৈরি করলো।
আমি ভাবছিলাম ফিরে যাব, এমন সময় একটা ফিসফিস শব্দ শুনতে পেলাম। পেছন ফিরে দেখি, একটা মেয়ে দাঁড়িয়ে আছে। গায়ে সাদা শাড়ি, চুল খোলা, চোখে অদ্ভুত এক শূন্যতা। মেয়েটা আমাকে চুপ করে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে দেখছিল। আমার শরীর যেন জমে গেছে। সাহস করে বললাম, "তুমি কে?"
সে কোনো উত্তর দিল না, শুধু হাত দিয়ে আমাকে ইশারা করলো তার দিকে যেতে। আমার পা যেন নিজে থেকেই তার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। কাছে গিয়ে দেখলাম, মেয়েটার মুখে কেমন একটা রহস্যময় হাসি। সে বলল, "তুমি তো আমাকে চিনবে না, কিন্তু আমি তোমাকে চিনি। তুমি ছোটবেলায় এখানে থাকতেন। আর আমার নাম রুপা।"
রুপার নাম শুনে মনে পড়লো, ছোটবেলায় শুনেছিলাম, গ্রামের এই বটগাছের নিচে এক মেয়ে আত্মহত্যা করেছিল। তার নামও ছিল রুপা। আমি কাঁপা কাঁপা গলায় বললাম, "তুমি কি...তুমি কি..."
রুপা মাথা নাড়ল আর হেসে বলল, "হ্যাঁ, আমি সেই রুপা। অনেক বছর ধরে এখানে আছি। এই গাছটা আমার একমাত্র সঙ্গী। তুমি কি আমার সঙ্গী হবে?"
আমার মাথা ঝিম ঝিম করছিল। মনে হলো, পেছন থেকে কেউ আমাকে জোরে টান দিল। পিছন ফিরে দেখি রমজান। সে চিৎকার করে বলল, "ইমরান, তাড়াতাড়ি পালাও!"
আমরা দুজন দৌড়ে গ্রামের দিকে চলে এলাম। পেছনে তাকিয়ে দেখলাম, বটগাছের নিচে দাঁড়িয়ে থাকা রুপার শরীর আস্তে আস্তে অদৃশ্য হয়ে গেল। সেদিনের পর আমি আর সেকেন্দারপুর যাইনি। রমজান বলেছিল, গ্রামের সবাই জানে রুপার আত্মা এখনো ওই বটগাছের কাছে থাকে।
আজো সেই রাতের কথা মনে পড়লে আমার শরীর কাঁপতে থাকে। সেকেন্দারপুরের বটগাছের নিচে রুপা এখনো কারও সঙ্গীর অপেক্ষায়...