17/07/2025
তথ্যপ্রযুক্তিতে কলকাতার ভূমিকা সম্পর্কে কিছু অজানা তথ্য...
আজ আমাদের দৈনন্দিন সবরকম কাজে সবসময়ের সঙ্গী হয়ে উঠেছে মুঠো ফোন অর্থাৎ মোবাইল ফোন হিসেবে যা পরিচিত। এই মোবাইল ফোনের যাত্রা ভারতবর্ষে শুরু হয় প্রায় ৩০ বছর আগে ১৯৯৫ সালের ৩১শে জুলাই আমাদের প্রাণের শহর কলকাতাতেই। তখন ভারতবর্ষের নবম প্রধানমন্ত্রী ছিলেন মাননীয় Shri P.V. Narasimha Rao মহাশয় এবং তাঁর সরকারের যোগাযোগ মন্ত্রী ছিলেন মাননীয় Pandit Sukh Ram মহাশয় এবং পশ্চিমবঙ্গের তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন মাননীয় শ্রী জ্যোতি বসু মহাশয়। ভারতবর্ষের প্রথম মোবাইল কলটি করেছিলেন তৎকালীন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মাননীয় শ্রী জ্যোতি বসু মহাশয় রাইটার্স বিল্ডিং থেকে দিল্লীর সঞ্চার ভবনে বসে থাকা তৎকালীন ভারত সরকারের যোগাযোগ মন্ত্রী মাননীয় Pandit Sukh Ram মহাশয়কে। এই কলটি করার মাধ্যমে ভারতবর্ষে মোবাইল পরিষেবা শুরু হয়। মোবাইল নেটওয়ার্ক অপারেটর ছিল Shri Bhupendra Kr. Modi-র টেলিকম সংস্থা এবং অস্ট্রেলিয়ার টেলিকম সংস্থা Telstra-র যৌথ উদ্যোগে গড়ে ওঠা সংস্থা Modi Telstra, যা পরবর্তীকালে Spice Telecom হিসেবে পরিচিতি পায় এবং তারও পরে ২০০১ সালে Spice Telecom সংস্থাটির কলকাতার ব্যবসা অধিগ্রহন করে নেয় Bharti Cellular Ltd. যা AirTel নামে পরিচিত। যে সময়ে ভারতবর্ষে এই মোবাইল পরিষেবা শুরু হয় তখন কেবল ধনী ব্যক্তিরাই মোবাইল পরিষেবা ব্যবহার করতে পারতেন। Incoming এবং Outgoing Call দুটোর জন্যই প্রত্যেক মিনিটে মোটা অঙ্কের টাকা খরচ করতে হত।
ঐ একই বছর ঠিক ১৫ দিন পর ১৫ই আগস্ট ১৯৯৫ সালে ভারতবর্ষে প্রথমবারের জন্য প্রত্যেক সাধারণ মানুষের সুবিধার্থে আরেকটি টেলিকম পরিষেবা শুরু করে ভারত সরকার। যা আজকে আমাদের দৈনন্দিন কাজের সঙ্গী হয়ে ওঠা ‘Internet’ পরিষেবা। ভারতবর্ষে সর্বসাধারণের জন্য ইন্টারনেট পরিষেবা শুরু হয় ভারত সরকারের অধীনস্থ সংস্থা Videsh Sanchar Nigam Ltd. (VSNL)-এর মাধ্যমে যা বর্তমানে বেসরকারিকরণের পর TATA Sons-এর অধীনস্থ সংস্থা TATA Communications নামে পরিচিত। কলকাতার পাশাপাশি ঐদিন এই পরিষেবা শুরু হয় দিল্লী, মুম্বাই, চেন্নাই এবং পুনে শহরে। তখন একজন সর্বসাধারণ ব্যক্তিকে তার ব্যক্তিগত কাজের জন্য ইন্টারনেট পরিষেবা নিতে গেলে ২৫০ ঘণ্টা ব্যবহার করার জন্য খরচ করতে হতো ৫,২০০/-। ইন্টারনেটের গতি ছিল মাত্র 9.6 kbit/s। সেই সময়ে ইন্টারনেট পরিষেবা ব্যবহার করা ছিল অত্যন্ত ব্যয়বহুল এবং ইন্টারনেটের গতি ছিল অত্যন্ত ধীর গতি।
বর্তমানে একজন ব্যক্তি চাইলে ফাইবার অপটিক কেবেলের মাধ্যমে ইন্টারনেট পরিষেবা নিলে সর্বাধিক 1 Gbps গতি পাবেন এবং সাথে পাবেন Unlimited Data ও Unlimited local ও STD ফোন কল করার সুবিধা, সাথে বিনোদনের জন্য OTT ও IPTV পরিষেবা। ভারতবর্ষে প্রথম ইন্টারনেট পরিষেবা চালু করার পিছনে যে ব্যক্তিটি ছিলেন তিনি হলেন ভারত সরকারের অধীনস্থ সংস্থা Videsh Sanchar Nigam Ltd. (VSNL)-এর CMD Shri B.K. Syngal মহাশয় যাকে ‘Father of Indian Internet’ বলা হয়।
এবার ফিরে আসা যাক মোবাইল ফোনের কথায়। প্রযুক্তিগত উন্নতিকরণের মাধ্যমে বর্তমানে মোবাইল ফোন পরিষেবা 5G VoNR প্রযুক্তিতে উপলব্ধ। বর্তমানে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে প্রায় সর্বাধিক 1 Gbps Download speed সমেত ইন্টারনেট পরিষেবা, Unlimited Voice পরিষেবা এবং বিনোদনের জন্য OTT পরিষেবার সাথে উপলব্ধ। বর্তমানে এই মোবাইল ফোন ছাড়া একপ্রকার কোনরকম দৈনন্দিন প্রয়োজনীয় কাজ করা প্রায় অসম্ভব। এই মোবাইল পরিষেবার প্রযুক্তিগত উন্নতিকরণের সময় আরেকটি পরিষেবা প্রথম শুরু হয় আমাদের এই প্রাণের শহর কলকাতায়, সেটি হল 4G (TD-LTE) পরিষেবা। এই পরিষেবাটি ২০১২ সালের ১০ই এপ্রিল শুরু করে AirTel সংস্থা।
এছাড়াও ইংরেজ সরকারের আমলে ভারতবর্ষে প্রথম টেলিকম পরিষেবা শুরু হয় ১৮৫০ সালে আমাদের এই প্রাণের শহর কলকাতায়, যা হয়তো অনেকেরই অজানা। কলকাতা থেকে ডায়মন্ড হারবার পর্যন্ত টেলিগ্রাফ লাইন পাতার মধ্যে দিয়ে এই পরিষেবার সূচনা ঘটে। এছাড়াও ২৮শে জানুয়ারী ১৮৮২ সালে ৯৩ জন গ্রাহক নিয়ে টেলিফোন এক্সচেঞ্জ স্থাপিত হয় কলকাতায় এবং সেই এক্সচেঞ্জটির নাম রাখা হয় ‘সেন্ট্রাল এক্সচেঞ্জ’, পরিষেবা প্রদানকারী সংস্থাটির নাম ছিল ‘Oriental Telephone Company Limited’ যা বর্তমানে BSNL নামে পরিচিত।
এভাবেই আমাদের কলকাতা বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিপ্লবের পাশাপাশি টেলিকম ক্ষেত্রের বিপ্লবেরও সাক্ষী থেকেছে।
বিঃ দ্রঃ - ভারতবর্ষের মধ্যে প্রথম পাতাল রেল পরিষেবা শুরু হয়েছিল ২৪শে অক্টোবর ১৯৮৪ সালে আমাদের এই কলকাতাতেই । এরই পাশাপাশি ভারতবর্ষের মধ্যে প্রথম গঙ্গার নীচ (জলের নীচ দিয়ে) দিয়ে মেট্রোরেল পরিষেবা সর্বসাধারণের জন্য চালু হয় ১৫ই মার্চ ২০২৪ আমাদের কলকাতাতেই। এই মেট্রো পরিষেবার মাধ্যমে হাওড়া-র সঙ্গে কলকাতার আবারও একটি সংযোগ স্থাপন হয়।
১৯০৭ সালে ভারতবর্ষের প্রথম সিনেমা হলও স্থাপিত হয়েছিল কলকাতায় যার নাম ছিল ‘Chaplin Cinema’। বর্তমানে এই সিনেমা হলের কোনো অস্তিত্ব নেই।
বিশ্ব রঞ্জন চৌধুরী
Ramex Media
তারিখঃ ১৭ই জুলাই ২০২৫
ভিডিও-র সৌজন্যে - www.wildfilmsindia.com