Joydeep Chakraborty

Joydeep Chakraborty Joydeep Chakraborty.

09/03/2024

সন্দেশখালিকে চিনিয়েছিলেন উত্তমকুমার, হ্যারিকেন হাতে লঞ্চ ঘিরে ধরেছিলেন গ্রামবাসী।

'কী আশায় বাঁধি খেলাঘর'...গানটার দৃশ্যের কথা হৃদয়ে বাঁধাই করা নেই, এমন 'অমানুষ' কম আছেন। কিন্ত, এটা জানেন কী, শক্তি সামন্ত পরিচালিত ১৯৭৪ সালের অমানুষ ছবিটির শুটিং হয়েছিল সন্দেশখালির গ্রামেই। সুন্দরবন অঞ্চলের এই প্রত্যন্ত এলাকার নদী, মাঠঘাট, আর সেই বিখ্যাত গানের লঞ্চটিও এখানকার সম্পত্তি। তখনকার সঙ্গে এখনকার সন্দেশখালির বিন্দুমাত্র কোনও মিল না থাকলেও এখানেই শুটিং করতে এসে ভক্তদের মিনতিতে তাঁদের সঙ্গে দেখা করতে হয়েছিল উত্তমকুমারকে। কারণ নদীর পাড়ে দাঁড়িয়ে থাকা শয়ে শয়ে মানুষের একটাই দাবি ছিল, উত্তমকুমারকে দেখতে চাই। আর সেখানেই কিনা গত প্রায় দুমাস ধরে চলছে অশান্তি। রাজনৈতিক জমি দখলের লড়াই।

শুধু উত্তমকুমার কেন, শর্মিলা ঠাকুর, উৎপল দত্ত, অনিল চট্টোপাধ্যায় সকলকেই আজও মনে ধরে রেখেছেন বর্ষীয়ান মানুষ। যাঁদের স্মৃতিতে আজও অটুট রয়েছে সেইসব দিনগুলি। অমানুষের শুটিং স্পটের দৌলতেই আনন্দ আশ্রম থেকে আরও অনেক ছবি হয়েছে এখানকার প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের ফ্রেমে। যেমন, ধামাখালিতে যেখানে মঙ্গলবার শুভেন্দু অধিকারীর পথরোধ করা হয়েছিল, সেখানে এসেছেন মুনমুন সেন, সন্তু মুখোপাধ্যায়। সিনেমার নাম ছিল বান্ধবী। চাঁদের পাহাড় ছবির জন্য এসেছিলেন অভিনেতা দেব। দক্ষিণ আখড়াতলায় তাঁর আসার দিনের কথা যুবকদের মুখে মুখে ফেরে এখনও। আরও এক চিত্রতারকা নুসরত জাহান তো খোদ এখানকার তৃণমূল সাংসদ।

রামপুরা নদীকে সামনে রেখে তখন ভোরের আকাশ সবে লাল হচ্ছে। সেই লাল রঙ গলে পড়েছে নদীর জলে। শক্তি সামন্ত সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেললেন, অমানুষ ছবির শ্যুটিং করবেন এই গ্রামেই। সন্দেশখালি ২ ব্লকের ভাঙা তুষখালি গ্রামে শক্তিপদ রাজগুরুর লেখা ‘নয়া বসত’ উপন্যাস অবলম্বনে অমানুষ ছবির শ্যুটিংয়ের তোড়জোড় শুরু হয়ে গেল। কলকাতার বেলেঘাটার এক ব্যবসায়ী মোহনলাল গঙ্গোপাধ্যায়ের বাংলো ছিল ভাঙা তুষখালি গ্রামে। সেই সূত্রেই তাঁর লেখক বন্ধু শক্তিপদ মাঝে মধ্যে আসতেন ওই গ্রামে। চিনেছিলেন সন্দেশখালিকে।

ফলে ধামাখালি ও সন্দেশখালির রাজনৈতিক চিত্রনাট্যের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে রয়েছে পর্দার চিত্রনাট্যেরও গভীর যোগাযোগ। যে শান্ত, নিরিবিলি, নদীঘেরা সুন্দরবনের এই অংশ লক্ষ লক্ষ মানুষের চোখে সৌন্দর্যের ছবি এঁকে রেখেছে, সেখানেই আজ উত্তেজনার পারদ রোজ বাড়ছে।

'নায়িকা সংবাদ'-এ সুচিত্রাকে সরিয়ে অঞ্জনাকে আনেন উত্তম, হিট হয় উত্তম-অঞ্জনা জুটি

লঞ্চে করে সন্দেশখালি পৌঁছলেন ডিজি রাজীব কুমার, নিরাপত্তা খতিয়ে দেখতে থানায় বৈঠক।

কিছুদিন আগে পর্যন্তও অক্ষত ছিল সিনেমায় উত্তমকুমারের ব্যবহার করা লঞ্চটি। সেটি চলে গিয়েছিল জলপুলিশের মালিকানাধীনে। পর্যটকদের নিয়ে নদীবক্ষে প্রমোদ ভ্রমণের পরিবর্তে চোলাই মদের কারবারি ও গরুপাচারকারী ধরতেই ব্যবহার করা হতো উত্তমকুমারের স্মৃতিবিজড়িত লঞ্চ ‘বিশ্বপ্রেম’। মোট ২১ দিনের জন্য এই লঞ্চ ভাড়া করা হয়েছিল। শ্যুটিং হয়েছিল সন্দেশখালিতে। আর দাঁড়িয়ে রয়েছে পিডব্লুডির পুরনো বাংলোটি। সিনেমার গোটা ইউনিট কলকাতা থেকে যাতায়াত করলেও উত্তমকুমার নিজে থেকে যেতেন এই বাংলোতেই। সকালে সিনেমার শুটিং-এর পর বিকাল থেকে চলত গ্রামের মানুষদের সঙ্গে মেলামেশা, আড্ডা। এখনও গ্রামবাসীদের অনেকের মনে আছে সেই স্মৃতি।

এই প্রসঙ্গে একটি ঘটনার কথাও এখানে উল্লেখ করা যায়। গানের শুটিংয়ের সময় সন্ধ্যা নেমে আসায় আলো কমে আসে। আর ছবি তোলা সম্ভব নয় জেনে শক্তি সামন্ত লঞ্চ ঘোরানোর নির্দেশ দেন। হঠাৎই বনের মধ্যে ঘন সন্ধ্যা নেমে এল। লঞ্চের ভিতর উত্তমকুমার, শর্মিলা ঠাকুর, উৎপল দত্তসহ আরও কয়েকজন। অন্ধকারে বনের ভিতর ছোট ছোট নদী, চালক ঠিক দিক খুঁজে পাচ্ছিলেন না। কিছু দূর চলার পর মনে হচ্ছিল আরও গভীর বনের ভিতর তাঁরা ঢুকে পড়ছেন।

শর্মিলা ঠাকুর ভীষণ ভয়ে অস্থির। লঞ্চের উপর শক্তি সামন্ত। কিছু দূর যাওয়ার পর তাঁরা একটা আলো দেখতে পেলেন। চালককে বলেন, আলোর কাছে লঞ্চ নিয়ে চলো। কাছে গিয়ে দেখা গেল একটা ছোট্ট দোকান। লঞ্চ থেকে নেমে শক্তি সামন্ত বলেন, আপনাদের এখানে কোন শুকনো খাবার হবে। আমরা শহর থেকে এসেছি খাবার শেষ। দোকানদার এক ধামা মুড়ি নিয়ে লঞ্চের ভিতর এসে দেখেন উত্তমবাবুকে!

তাঁকে দেখে মুড়ির ধামা রেখে প্রণাম করলেন। তারপর বললেন, আপনারা একটু অপেক্ষা করুন আমি আসছি। এই বলে তিনি চলে গেলেন, কিছুক্ষণ পর দেখা গেল নদীর পাড়ে শত শত মানুষের হাতে হ্যারিকেন। তারা চিৎকার করে বলছে, আমরা উত্তমকুমারকে দেখতে চাই! শেষে শক্তি সামন্তের অনুরোধে উত্তমকুমার লঞ্চ থেকে বের হয়ে সবার সঙ্গে দেখা করেন। তা না হলে তাঁদের নিস্তার ছিল না।

কাকতালীয় হলেও সত্যি যে, অমানুষ সিনেমার চিত্রনাট্যের সঙ্গেই আজকের সন্দেশখালিরও যেন কোথাও অদৃশ্য মিল রয়েছে। সিনেমার গল্পেও উত্তমকুমারের লড়াই ছিল অন্যায়-অবিচারের বিরুদ্ধ লড়াই। সেই প্রতিবাদে গর্জে উঠেছিল গ্রামের মানুষও।

©️ The Wall 🧱

ছবি ও লেখা - সংগৃহীত

01/03/2024
আছেন  - শুধু চোখে দেখা যাবে না আর!
09/01/2024

আছেন - শুধু চোখে দেখা যাবে না আর!

Address

Dum Dum

Website

Alerts

Be the first to know and let us send you an email when Joydeep Chakraborty posts news and promotions. Your email address will not be used for any other purpose, and you can unsubscribe at any time.

Share