
17/05/2025
নৈহাটির রক্তাক্ত বিকেল: কটা আমের মাশুলে ঝরে গেল ১৭ বছরের প্রাণ
মাত্র কয়েকটা আম কুড়িয়েছিল বন্ধুরা মিলে। হাসি-ঠাট্টার ছলে ঢুকে পড়েছিল কাঁচরাপাড়ার এক আমবাগানে। সেদিন বিকেলে অনুষ্ঠানবাড়ি থেকে ফেরার পথে এই আমবাগানে ঢুকে পড়ে ১৭ বছরের সুদীপ্ত পণ্ডিত ও তার বন্ধুরা। হয়তো তারা জানতও না, মাটিতে পড়ে থাকা কয়েকটা আম তাদের জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দেবে এত ভয়ঙ্কারে।
সেই বাগানে পাহারার দায়িত্বে ছিল শেখ ফারহাদ মণ্ডল। সুদীপ্তকে ধরে ফেলে সে। এরপর শুরু হয় অমানবিক অত্যাচার— বেধড়ক মারধর। বাকিরা পালিয়ে গেলেও সুদীপ্তকে একা পেয়ে ফারহাদ যা করল, তা যেন বর্বরতাকেও হার মানায়। রক্তাক্ত, জর্জরিত অবস্থায় যখন তাকে নৈহাটির এসজি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়, চিকিৎসকরা জানিয়ে দেন—সব শেষ। ১৭ বছরের ছেলেটা আর নেই।
প্রশ্ন উঠছে—ঠিক কতটা অপরাধ করেছিল সুদীপ্ত? কয়েকটা আম? মাটিতে পড়ে থাকা আম কুড়ানো কি এমন ভয়ানক অপরাধ? একমাত্র ফারহাদই জানে, কতগুলো আমের দাম সে নির্ধারণ করেছে একটি তরতাজা কিশোরের জীবনের বিনিময়ে!
আরও একটি তিক্ত সত্য সামনে এসে দাঁড়ায়। যদি আজ খুনির নাম হতো ‘সুদীপ্ত’ আর নিহতের নাম ‘ফারহাদ’, তাহলে কি চিত্রটা অন্যরকম হতো? তাহলে কি তথাকথিত বামপন্থী এবং মানবাধিকার মঞ্চগুলোর কণ্ঠে প্রতিবাদের ঝড় উঠত? কেন তারা আজ চুপ? আজ কেন এত নিশ্চুপ এই মানবিক মুখোশধারীরা?
এই ঘটনা কেবল এক কিশোরের মৃত্যুই নয়—এ এক সামাজিক মৃত্যু। এক ভয়ানক প্রশ্ন উঠে পড়ে—মানুষ কি আর মানুষ আছে? কোথা থেকে আসে এত হিংসা? এত অমানবিকতা? একজন পাহারাদার হয়ে কীভাবে সে পারল এক ১৭ বছরের ছেলেকে এমন নৃশংসভাবে মারতে?
আমরা কোথায় চলেছি? আমাদের সমাজে মানবিকতা কোথায় হারিয়ে গেল? এই প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে। দিতে হবে এখনই, নইলে কাল হয়তো আর এক ‘সুদীপ্ত’ ফিরে আসবে না।