18/08/2025
ইষ্ট ইণ্ডিয়া কোম্পানীর গর্ভনর জেনারেল লর্ড কর্ণওয়ালিশ ইংল্যাণ্ডের জেলা গঠনের ধাঁচে শাসনকার্যের সুবিধার জন্য ভারতেও ইংরেজ কোম্পানীর অধিকৃত অঞ্চলগুলিকে নিয়ে কতকগুলি জেলার গঠন করেছিলেন।১৮১৩ সালে মালদা জেলার জন্মও তার তত্ত্বাবধানে।বলা যায় মালদহই উত্তরবঙ্গের প্রাচীনতম জেলা।
১৮১৩ সালে মালদহ জেলা স্থাপন করা হলেও প্রকৃতপক্ষে একটি স্বাধীন ও স্বতন্ত্র জেলা হিসাবে মালদহ রূপ পেয়েছিল ১৮৫১ সালে। কারণ ১৮১৩ থেকে ১৮৫৯ সাল অব্দি মালদহ জেলা রাজস্ব বিচার ও প্রশাসনিক ব্যাপারে প্রতিবেশী জেলার উপর নির্ভরশীল ছিল। শুরুতে মালদহ জেলা রাজশাহী বিভাগের অধীন ছিল। কিন্তু ১৮৭৬ থেকে ১৯০৫ অবধি মালদহ জেলা ভাগলপুর বিভাগের অধীনে চলে গিয়েছিল (ডিস্ট্রিক্ট সেন্সাস হ্যাণ্ড বুক, ১৯৫১, এ. মিত্র, পৃ-১)। ১৯০৫ সালে বঙ্গ বিভাগের ফলে পূর্ববঙ্গ ও আসাম নামে নতুন প্রদেশ গঠিত হলে মালদহ পুনরায় রাজশাহী বিভাগের অন্তর্ভুক্ত হয়। ১৯৪৭ অব্দি এই ব্যবস্থা বজায় ছিল।
১৯৪৭ সালের আগষ্ট মাসেই ভারতের স্বাধীনতা প্রাপ্তি সুনিশ্চিত হয়ে যায়। ১৪ই আগষ্ট রাত ১২টায় সেই আকাঙ্ক্ষিত স্বাধীনতা এলেও মালদহ জেলার ভাগ্য তখনও অনিশ্চিত। কিন্তু বঙ্গীয় সীমানা কমিশনের চেয়ারম্যান স্যার সিরিল র্যাডক্লিফ রোয়েদাঁদের সেই রায়ের মধ্যে স্পষ্ট লেখা ছিল না যে, মালদহ ঠিক কোন দেশের অন্তর্ভুক্ত। তাই ১২ই আগষ্ট থেকে ১৫ই আগষ্ট পর্যন্ত মালদহ জেলা পূর্ব পাকিস্তানের প্রশাসনের অধীনে ছিল; উড়েছিল পাকিস্তানের পতাকা। এরই মধ্যে পাকিস্তানের সাব ডেপুটি আবদুল করিম চৌধুরীকে মালদহ ট্রেজারীর চার্জ বুঝিয়ে দেওয়া হয়। পাকিস্তানের স্বাধীনতা দিবস ১৪ই আগষ্টে পাকিস্তানের জাতীয় পতাকা মালদহ কালেক্টরেটের মাথায় শোভা পেতে থাকে।
এইভাবেই কয়েকদিন কেটে যাবার পর দুই পক্ষের চুক্তি অনুসারে ১৭ই আগষ্ট সীমানা কমিশনের পাকাপাকি সিদ্ধান্ত ঘোষিত হয়। এই বিভাগের ফলে অখণ্ড মালদহ জেলার ১৫টি থানার মধ্যে হরিশ্চন্দ্রপুর, খরবা, রতুয়া, মাণিকচক, কালিয়াচক, ইংরেজবাজার, মালদা, গাজোল, বামনগোলা ও হবিবপুর এই ১০টি থানা ভারতবর্ষের অন্তর্গত পশ্চিমবঙ্গের মধ্যে পড়ল। বাকি শিবগঞ্জ, নবাবগঞ্জ, ভোলাহাট, নাচোল ও গোমস্তাপুর এই পাঁচটি থানা পূর্ব পাকিস্তানের অংশে পড়ল। অখণ্ড মালদহ জেলার ২০০৪ বর্গমাইল আয়তনের ভূমিখণ্ডের মধ্যে মালদহ জেলার মধ্যে এল ১৪০৮ বর্গমাইল আর বাদবাকি পূর্ব পাকিস্তানের, অর্থাৎ বিতর্কিত ভূমিখণ্ডের ১০টি থানা নিয়ে তৈরী হল মালদহ জেলা আর বাদবাকি পাঁচটি থানা নিয়ে পূর্ব পাকিস্তানের রাজশাহী জেলা (ওয়েস্ট বেঙ্গল ডিস্ট্রিক্ট গেজেটিয়ার্স, মালদা, জে. সি. সেনগুপ্ত, পৃ-৩)। সরকারী হিসাবে তাই মালদহের স্বাধীনতা দিবস ধরা যায় ১৭ই আগষ্ট। পরদিন ১৮ই আগষ্ট সোমবার মালদহ জেলার কালেকটরেটের মাস্তল থেকে পাকিস্তানের পতাকা নামিয়ে ভারতীয় পতাকা সগৌরবে উত্তোলিত হল। এই আপাত নিরীহ অথচ সুকঠিন কাজটি সুসম্পন্ন করলেন তৎকালীন পাবনা জেলার এ. ডি. এম মঙ্গল আচার্য। এরপর ১৯৪৮-এর ১৬ই জানুয়ারী ভারতের মালদহ জেলার প্রথম কালেকটর হিসাবে যোগদান করেন বিখ্যাত জনগণনাতত্ত্ববিদ, চিত্র সমালোচক ও সাহিত্যরসঙ্গ অশোক মিত্র।
শুভ স্বাধীনতা দিবস প্রাণের জেলা।
তথ্য সংগ্রহে : আকাশ
অলংকরণ: নীলার্ঘ্য
#বং_Quotes
𝗙𝗼𝗹𝗹𝗼𝘄 𝗨𝘀 𝗢𝗻 𝗜𝗻𝘀𝘁𝗮𝗴𝗿𝗮𝗺 👇
instagram.com/Bong_Quotes_19