23/09/2023
*মৃত্যু কোনো যুক্তি মানে নাঃ-*
গত ২৯ অক্টোবর ২০২১ সালে ব্যাঙ্গালোরের জনপ্রিয় অভিনেতা , সঙ্গীত শিল্পী এবং টেলিভিশন প্রেজেন্টার পুনীথ রাজকুমার মাত্র ৪৬ বছর বয়সে মারা যাবার পর প্রখ্যাত কার্ডিওলজিস্ট ডা. দেবী শেঠি ( Dr. Devi Shetty) একটি সবিস্তার বিবৃতি দিয়েছিলেন। পছন্দ হয়েছে খুব - তাই একটি কাছাকাছি বাংলা অনুবাদ করার চেষ্টা করছি নীচে :
▪️" গত কয়েক বছরে আমার ৮/৯ জন প্রিয় পরিচিত জন এবং কিছু সেলিব্রেটিকে চিরতরে হারিয়েছি। তারা চল্লিশের ঘরে ছিলেন এবং "শারীরিকভাবে ফিট'" থাকার অতিরিক্ত চেষ্টার কারণে মারা গেছেন।
দুর্ভাগ্য হলো - তারা শুধু দেখতেই ছিলেন সুঠাম , সিক্স প্যাক বা এরকম। পুনীথও সে তালিকায় যুক্ত হলেন।
জীবনে যা কিছু হোক - সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো মধ্যপন্হা।
"জিরো ফিগার" বা একশোর বাড়াবাড়ি কোনোটাই ঠিক না।
প্রতিদিন মাঝারি পরিমান ব্যায়াম দরকার- ২০ মিনিট মত। সবকিছুই খেতে হবে , কোনো বিষাক্ততা অপসারণের দরকার নেই (no detoxification) , কোনো কিটো মটো ডায়েট দরকার নেই , আপনার পূর্বসূরীরা যা খেতেন, সব খান, আপনার শহরে পাওয়া যায় এমন সব স্থানীয় এবং মৌসুমি খাবার - তবে অল্প পরিমানে। বিদেশি কিউই ফল , ক্যাল বা জলপাই তেলের দরকার নেই। ৭ ঘন্টার নিবিড় ঘুম চাই ,শরীরের চাহিদা পূরণ প্রয়োজন তবে সেটা স্টেরয়েড বা ক্ষমতাবর্ধক ড্রাগের মাধ্যমে হওয়া চলবে না।
বেড়ে ওঠার সময় যা খেয়েছেন, সবই খান , তবে অল্প পরিমাণে ; বিশ / তিরিশ মিনিট হালকা ব্যায়াম করুন আর একটু হাঁটুন নিয়মমত আর সাপ্লিমেন্ট খাওয়া বাদ দিন। ( যারা একান্ত সূরাসক্ত, সপ্তাহে নিন সর্বোচ্চ দু'পেগ, যারা ধূমপান ছাড়তে পারছেনই না , তাদের জন্য দিনে সর্বোচ্চ দুটির বেশি না! )
আপনারা কি বুঝতে পারছেন আমার বার্তা?
কিছুই না, শুধু মধ্যপন্হা।
দিনে কিছু সময়ের নীরব ধ্যান যোগ করুন রুটিনে। খুব জরুরি হলো - শরীরকে শোনা আর গুরুত্ব দেয়া।
৪০ এর পর বেশ কিছু শারীরবৃত্তীয় পরিবর্তন শুরু হয়, ৫০ এর পর আরো বেশি , ৬০ এর পর শরীর শিথিল হতে থাকে , ৭০ এর পর বন্ধ হতে থাকে , ৮০ এর পর প্রতিটি বছর হলো বোনাস। তাই ৬০ মানে নতুন করে ৪০ বা বয়স হলো শুধুই একটি সংখ্যা - এসব কথা বলা বন্ধ করুন। এগুলো ঠিক কথা নয়। ৪০ বা ৫০ পরবর্তী সময়ে আপনার স্বাস্থ্য অটুট থাকলে কৃতজ্ঞতা অনুভব করুন , কিন্ত কাজের গতি একটু কমান যাতে হৃৎপিন্ডের গতি বহাল থাকে।
দয়া করে বোঝার চেষ্টা করুন - অবসরের সময় নির্ধারণের যৌক্তিক কারণ আছে। একসময় আপনার শরীর আর মন যে চাপ বইতে পারতো এখন আর ততটা পারবে না। বাহ্যত চমৎকার আছেন , ধন্যবাদ আপনার "জিন" কে (genes), কিন্ত অঙ্গপ্রত্যঙ্গের (organs ) অভ্যন্তরীণ ক্ষয় তো হচ্ছেই।
সুখী সুন্দর হোন , বাহ্যিক ভাবে নয়, অন্তর্গত ভাবেও। "
( ফুটনোট ১ | সারকথা হলো ৬টি নির্দেশনা :
▪️২০ মিনিট হালকা ব্যায়াম
▪️নিয়মিত নিয়ম মত হাঁটা
▪️সাত ঘন্টা নিবিড় ঘুম
▪️কিছু সময় একাকী ধ্যান
▪️সব খাবারই খাওয়া - কম পরিমানে
▪️শরীরের কথা শোনা ও সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া।
ফুটনোট ২ | কোনো তত্ত্বই সর্বজনীন না, যারা একমত নন , সেটা তাদের অধিকার - সম্মান করি তাদের মত।
Be *Happy* internally and not externally.)
*মূল রচনা Prof. Dr. Devi Shetty.*
ছেড়ে দিলেই তো ছেড়ে দেওয়া যায় । থেকে যাওয়াটাই তো কঠিন।
এক একটা বছর যাচ্ছে, একেকটা করে কাছের মানুষ কমে যাচ্ছে জীবন থেকে।
আগের বছর যে প্রথম New Year এর শুভেচ্ছা জানিয়েছিল, এ বছর সে আর নেই।
কেউ বা নিজের ইচ্ছেয় সরে গেছে লক্ষ যোজন দূরে ।
কেউ যেতে বাধ্য হয়েছে, অনিচ্ছা সত্ত্বেও, জীবন বাধ্য করেছে তাকে। স্বামী, সন্তান, সাজানো গোছানো ফ্ল্যাট, আলমারি ভর্তি শাড়ি, স্কার্ট, কুর্তি,ম্যাচিং জুয়েলারী, নিজের হাতে কেনা জলের বোতল, tupperware এর টিফিন বক্স,রান্না ঘরের গ্যাস ওভেন মোছার ন্যাতা, ঘরের জানালায় রাখা যত্নে বড়ো করা aloevera গাছ সব ছেড়ে চলে যেতে।
আজ ইচ্ছে করলেও তাদের গলার আওয়াজ পাবার উপায় নেই।
*মনে আছে, যখন বাবা বেঁচে ছিলেন, তখন সন্ধ্যায় অফিস থেকে ফিরে কিছুক্ষন বাবার কাছে বসে যখন উঠে চলে আসতাম, তখন বাবা বলতেন "আরেকটু বোস না"।
আর চেয়ে থাকতেন আমার চলে যাওয়ার দিকে, ওই নির্বাক চোখে আকুতি থাকত আরেকটু বসার জন্য।
বিরক্ত হতাম, ব্যস্ত হয়ে পড়তাম অন্য সব দরকারী বা অদরকারী কাজে। আজ এই সময়ে দাঁড়িয়ে কি ভীষণ ভাবে ইচ্ছে করে বাবার গলাটা একবার শুনতে। কোথাও নেই... কোনদিন আর ওই গলাটা শুনবো না।
এমনিতেই দূরত্ব তৈরী হওয়াই নিয়ম। প্রকৃতিগত ভাবেই হয়তো মানুষের মধ্যে এই প্রবণতা আছে।
আজ যাকে ছাড়া বাঁচবো না মনে হয়, সে কাল আর কোথাও নেই।
যে বন্ধুদের সঙ্গে রোজ দেখা না করলে, আড্ডা না দিলে, ভাত হজম হতো না, আজ তাদের অনেকের সঙ্গে দেখাই হয় না বছরের পর বছর।
নিজের আত্মজ-এর সঙ্গেও দূরত্ব তৈরী হয়।যে স্কুল থেকে বেরিয়ে গলগল করে যাবতীয় কথা উগড়ে দিত,আজ তার বয়সোচিত গম্ভীর্য। সে শিখে গেছে সব কথা বাবা মা কেও বলতে নেই।
যারা সব চাওয়া পাওয়ার বাইরে চলে গেছে তাদের আর ফিরিয়ে আনতে পারবো না কোন মতেই । কিন্তু যাঁরা আছেন, যাঁরা প্ৰিয় ছিল, সামান্য কিছু ভুল বোঝাবুঝিতে সরে গেছে, আমরাও আর তাঁদের ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করিনি । পড়ে থাকা জীবনের শেষ কটা দিনের আলোয় তাঁদের ফিরিয়ে আনার চেষ্টাটুকু করি। মৃত্যু কখন এসে বলবে... চলো,টাইম ইজ ওভার, সময় শেষ, তখন আর কোন ভুল বোঝাবুঝি মেটানোর বা প্ৰিয় কণ্ঠস্বর শোনার অবকাশ থাকবে না।
যে কদিন আছে গল্পে, ভালোবাসায়, উদারতায়, সহানুভূতিতে, দল বেঁধে ভ্রমণে, ভাল থাকবেন সকলে । সকলকে নিয়ে। ছেড়ে দিলেই তো ছেড়ে দেওয়া যায় । থেকে যাওয়া টাই তো কঠিন ।
কবিরের দোহাটা ভীষণ মনে পড়ছে।
"যো কাল কারে সে আজ করো,
যো আজ কারে সে আভ্ভি,
পারলে পারমে হোয়েগি,
বহুরী কারোগী কব ?
সংগৃহীত।