12/09/2023
ঐতিহাসিকদের মতে, কোটিবর্ষের খ্যাতি ও মর্যাদা কৌশাম্বী, প্রয়াগ, মথুরা, উজ্জয়িনী, পাটলীপুত্র প্রভৃতি নগরের চেয়ে কম ছিল না। বায়ুপুরাণ শান্ত্রে কোটিবর্ষ নগরের উল্লেখ দেখতে পাওয়া যায়। পঞ্চম শতক হতে আরম্ভ করে পাল আমলের শেষ পর্যস্ত কোটিবর্ষ নগরই পুন্ড্রদেশের প্রধান জেলারূপে চিহ্নিত ছিল। পুন্ড্রবর্ধনের শাসন কাজ এখান থেকেই পরিচালিত হত। প্রাচীন বাংলার দেবকোট নগরীতে ‘পাল’, ‘কম্বোজ’ ও ‘তুর্কী’ শাসকেরা বিভিন্ন সময়ে শাসন করেছিলেন। ‘বাণগড়’ থেকে পাওয়া ‘তৃতীয় বিগ্রহ পালের’ একটি শিলালিপি থেকে জানা যায় যে, ‘প্রথম মহীপালদেব’ সেখানে শাসন করতেন এবং তিনি ‘মহীপাল দীঘি’ নামে একটি দীঘিও সেখানে খনন করিয়েছিলেন। ‘নারায়ণ পালের তাম্রলিপি’ থেকে জানা যায় যে, সেখানে নারায়ণ পাল ছাড়াও বিভিন্ন পাল রাজারা শাসন করেছিলেন। পরবর্তী সময়ে বঙ্গদেশে তুর্কী-আফগান শাসনের সূচনাকালে, খ্রীস্টিয় ত্রয়োদশ শতকে ‘ইখতিয়ারুদ্দিন মহম্মদ বখতিয়ার খিলজি’ দেবকোট দখল করেছিলেন এবং দেবকোটকে একটি নগরের রূপ দিয়ে তিনি বঙ্গদেশে ইসলাম ধর্মের আধিপত্য বিস্তার করেছিলেন। পাল ও সেন আমলে কোটিবর্ষে জৈনদের অস্তিত্বের প্রমাণ পাওয়া যায় মুর্তি প্রতিমার মাধ্যমে। নবম থেকে দ্বাদশ শতকের তৈরি খষভনাথ, আদিনাথ, নেমিনাথ, শাস্তিনাথ, পার্শনাথ বিভিন্ন জৈন মূর্তি দিনাজপুর অঞ্চলে পাওয়া যায়। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্যোগে ইতিহাসবিদ্ কুঞ্জগোবিন্দ গোস্বামীর নেতৃত্বে ১৯৩৮ খ্রিস্টাব্দের ৬ মার্চ বাণগড়ের খনন কাজ শুরু হয়েছিল। যদিও বাণগড় খননের প্রারম্ভিক কার্যাবলী সূচিত হয়েছিল ১৯৩৭ খ্রিস্টাব্দ থেকে। বাণগড় খননের কাজ চলে ১৯৩৭-৩৮ খ্রিস্টাব্দ থেকে ১৯৪০-৪১ হিস্টাব্দ পর্যস্ত। দুই থেকে তিন মাসের মত ওই সময় খনন কাজ চলত।। ১৯৩৭-৪১ খ্রিস্টাব্দে বাণগড় গবেষণা পর্যবেক্ষণ খননের কাজে যুক্ত ছিলেন কুঞ্জগোবিন্দ গোস্বামী, সরসীকুমার সরম্বতী, তারাচাঁদ ঘোষাল, সন্তোষ কুমার, অশোককুমার ভট্টাচার্য, দেবীপ্রসাদ গুহ ও নীরেন মল্লিক, অমল রায়চৌধুরী, লক্ষ্মীনারায়ণ চক্রবর্তী, দিলীপ কুমার ব্যানার্জী, দিনেশ চন্দ্র দাস, জীতেন্দ্র নাথ ব্যানার্জী, সুধাকর চ্যাটার্জী, কেশবচন্দ্র রায় ও কৃষ্ণচন্দ্র সরকার।