10/06/2025
হিমন্ত বিশ্ব শর্মা: আসামের গদি দখলের পর যিনি বিভাজন, ভয়ের রাজনীতি এবং দুর্নীতিকে প্রতিষ্ঠা করেছেন
ভারতবর্ষের উত্তর-পূর্বাঞ্চল, বিশেষ করে অসম, বহু সংস্কৃতি, জাতি ও ধর্মের এক অপূর্ব সংমিশ্রণ। কিন্তু এই ঐতিহ্য আজ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে একজন মুখ্যমন্ত্রীর নেতৃত্বে, যিনি নিজের রাজনৈতিক উচ্চাকাঙ্ক্ষা পূরণ করতে গণতন্ত্র, সংবিধান ও মানবিক মূল্যবোধকে একে একে বিসর্জন দিচ্ছেন।
হিমন্ত বিশ্ব শর্মা, যিনি একসময় কংগ্রেসের শীর্ষ পর্যায়ের নেতা ছিলেন, আজ বিজেপির সবচেয়ে আগ্রাসী মুখ হয়ে উঠেছেন। মুখে উন্নয়নের কথা বললেও, বাস্তবে তার রাজনীতি ঘুরপাক খাচ্ছে হিন্দুত্ববাদ, বিভাজন, রাজনৈতিক প্রতিহিংসা এবং দুর্নীতির চারপাশে।
💸 ১. দুর্নীতির ছায়ায় মুখ্যমন্ত্রী
🔍 কোভিড PPE দুর্নীতির অভিযোগ
২০২১ সালে ভারতের অন্যতম আলোচিত কেলেঙ্কারি ছিল আসামে করোনা মহামারির সময় PPE কিট কেনা নিয়ে দুর্নীতি। অভিযোগ ছিল, হিমন্ত শর্মার স্ত্রীর কোম্পানি JCB Industries–কে কোনো টেন্ডার ছাড়াই সরকার বড় অঙ্কের চুক্তি দেয় PPE সরবরাহের জন্য। এই সংস্থা সরাসরি সরকারের কাছে কিট বিক্রি করে, অথচ পরে দাবি করা হয়—সেটা ‘দান’। প্রশ্ন হলো: দান যদি হয়ে থাকে, সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত ফাইলে বিল কেন তৈরি হয়েছিল?
এই কেলেঙ্কারি প্রমাণ করে যে প্রশাসনিক ক্ষমতা কীভাবে ব্যক্তিগত স্বার্থে ব্যবহার করা হয়েছে। এরপরও কোনও স্বাধীন তদন্ত হয়নি, কোনও জবাবদিহি হয়নি—এটাই প্রমাণ করে দুর্নীতির উপর কতটা রাজনৈতিক রক্ষাকবচ তৈরি করা হয়েছে।
🏗️ সরকারি প্রকল্পে স্বজনপোষণ
বিভিন্ন সরকারি নির্মাণ, স্বাস্থ্য পরিষেবা ও অবকাঠামোগত প্রকল্পে রাজনৈতিক ঘনিষ্ঠ ও আত্মীয়দের প্রতিষ্ঠানকে চুক্তি দেওয়া হচ্ছে বলে একাধিক রিপোর্টে উঠে এসেছে। সরকারি টাকায় ব্যবসায়িক স্বার্থ মেটানো আজ আসামের প্রশাসনিক সংস্কৃতির অংশ হয়ে উঠেছে।
🔥 ২. সাম্প্রদায়িক উস্কানি ও ঘৃণার রাজনীতি
🕌 সংখ্যালঘু মুসলিমদের বিরুদ্ধে ধারাবাহিক অপমানজনক মন্তব্য
হিমন্ত শর্মা অনেকবার প্রকাশ্যে মুসলিমদের বিরুদ্ধে অবমাননাকর, উস্কানিমূলক বক্তব্য রেখেছেন। উদাহরণস্বরূপ:
তিনি একাধিকবার বলেছেন: “মাদ্রাসা শিক্ষা বন্ধ করা উচিত”, “মুসলিমরা বহিরাগত”, ইত্যাদি।
'Love Jihad', 'গোরক্ষা', 'বোরকা নিষিদ্ধকরণ' ইত্যাদি বিষয়ে তিনি এমন ভাষায় কথা বলেন যা সরাসরি ধর্মীয় সম্প্রদায়কে নিশানা করে।
📄 NRC ও D-Voter অপব্যবহার
অসমে NRC তালিকায় বহু প্রকৃত ভারতীয় নাগরিকের নাম বাদ পড়েছে, বিশেষত দরিদ্র মুসলিম জনগোষ্ঠীর। যাদের ভোটাধিকার কেড়ে নেওয়া হয়েছে, জোর করে বিদেশি ট্রাইব্যুনালে পাঠানো হয়েছে, অথচ প্রশাসন বারবার এর পেছনে ‘জাতীয় নিরাপত্তা’ ছাড়াও কোনও মানবিক দৃষ্টিকোণ দেখাতে ব্যর্থ হয়েছে।
🚫 ৩. মতপ্রকাশের অধিকার ও বিরোধী কণ্ঠের দমন
📰 মিডিয়া ও সাংবাদিকদের দমন
হিমন্ত শর্মার শাসনে অসমে সাংবাদিকদের ওপরে নজরদারি, হুমকি, এমনকি মিথ্যা মামলায় গ্রেপ্তারের অভিযোগ রয়েছে। যারা সরকারের সমালোচনা করে, তাদের বিরুদ্ধে "আইনশৃঙ্খলা" লঙ্ঘনের অভিযোগ আনা হয়।
👨🎓 ছাত্র আন্দোলনের উপর আঘাত
CAA বিরোধী আন্দোলনে বহু ছাত্র নেতা ও নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিকে গ্রেপ্তার করা হয়। অসমের মতো শিক্ষিত রাজ্যে ছাত্র সমাজের কণ্ঠরোধ গণতন্ত্রের পক্ষে অত্যন্ত বিপজ্জনক সঙ্কেত।
🧠 ৪. গণতন্ত্রকে বিকৃত করার নতুন কৌশল
হিমন্ত বিশ্ব শর্মার শাসনের সবচেয়ে ভয়াবহ দিক হলো—তিনি জনগণকে এমন এক "জাতীয়তাবাদ"-এর গল্প শোনান, যা তাদের মূল সমস্যা ভুলিয়ে দেয়।
শিক্ষার মান নিম্নমুখী
সরকারি চাকরির সংখ্যা কমছে
কৃষকের আয় নেই
স্বাস্থ্য পরিকাঠামো দুর্বল
কিন্তু এই সব প্রকৃত সমস্যা থেকে মানুষের দৃষ্টি ঘোরাতে তিনি হিন্দু-মুসলিম বিভাজন, জাতীয়তাবাদী স্লোগান, এবং চরমপন্থী ভাষার আশ্রয় নেন।
⚖️ উপসংহার: সময় এসেছে প্রশ্ন করার
আমরা যদি মুখ বন্ধ রাখি, যদি কেবল "চকচকে উন্নয়ন" এর মোড়কে বাস্তব দুর্নীতি ও অবিচারকে আড়াল করি, তাহলে গণতন্ত্র মৃত হবে। হিমন্ত বিশ্ব শর্মার নেতৃত্বে আসাম ধীরে ধীরে একটি পুলিশি রাষ্ট্রে রূপ নিচ্ছে, যেখানে শুধু সরকার-বান্ধব লোকেরা নিরাপদ।
আমি একজন ভারতীয় নাগরিক হিসেবে, সংবিধানের ১৯(১)(a) ধারা অনুযায়ী, আমার মতপ্রকাশের অধিকার চর্চা করছি। কোনো ভয়, হুমকি বা রাজনৈতিক অপপ্রচারে এই অধিকার কেড়ে নেওয়া যাবে না।
আমার পোস্ট কোন ব্যক্তি ঘৃণা করে না, বরং একটি অন্যায়-ভিত্তিক শাসনের বিরুদ্ধে গণতান্ত্রিক প্রতিবাদ।