05/05/2025
আগড়পাড়া থেকে একটি বিশ-বাইশ বছরের ছোকরা আসে ঠাকুরের কাছে । এসে, কি সাহস, দূরে দাঁড়িয়ে ঠাকুরকে ইশারা করে ডাকে । ঠাকুরও তেমনি, উঠে যায় সেই অচেনা ছোকরার ইশারায় । ছেলেটি ঠাকুরকে নিয়ে যায় নির্জনে ।
ঠাকুর: -'এখানে কেন ?'
ছেলেটি:- 'আপনার সঙ্গে দুটো মনের কথা কইবো । ওখানে বড্ড ভিড় । চুপি চুপি না হলে কি মনের কথা কওয়া যায় ?'
ঠাকুর:--'বেশ তো, কও না মনের কথা । চুপি চুপিই কও ।'
ছেলেটি নির্ভয় হয়ে বললে,--' বলতে পারেন আমার কামভাব কি করে যাবে ?'
ঠাকুর বললেন,--' নিজেকে মেয়ে বলে ভাবো । এ-ও একটা উপায় কামজয়ের । প্রকৃতি ভাব আরোপ করলে কামভাব নষ্ট হয়ে যায় । ঠিক মেয়েদের মতন ব্যবহার হয় । যাত্রাতে যারা মেয়ে সাজে, তাদের নাইবার সময় দেখেছি, মেয়েদের মতই কথা কয়, দাঁত মাজে ।'
ঠাকুর আরো বললেন,--' নির্জন না হলে বিরঙ্কুশ হবে কি করে ? নির্মুক্ত না হলে কইবে কি করে মনের কথা ? তাই তাঁর(ঈশ্বরের) তাঁর সঙ্গে খেল, যে এই সৃষ্টির আসল খেলুড়ে । মাটিতে বীজ পুঁতলে অঙ্কুর হয়, এ কৃষকের গুন নয়, সৃষ্টিকর্তার নিয়মের গুণ । অঙ্কুরের মধ্যে তাঁকে দেখো । তাঁর নিয়ম দেখাই তাঁকে দেখা ।
ছেলেটির আবার প্রশ্ন:-' সাধুরা ধুনি জ্বালায় কেন ? শীতের থেকে ত্রাণ পাবার জন্যে, না, গাঁজা খাবার জন্যে ?
ঠাকুর:---মোটেই না । কাম-ক্রোধকে ইন্ধন করে আহুতি দেবার জন্যে । তারা কাঠের একটা করে কুঁদো নেয়, কোনটাকে কাম ভাবে কোনটাকে বা ক্রোধ । আর আগুনকে মনে ভাবে ইষ্ট, মনোবাঞ্ছার পরিপূর্তি ! আগুনের কাছে বসে খুব তেজের আঙ্গে নাম করলে আগুনেরও দাহ-দীপ্তি বাড়তে থাকে । কাঠের কুঁদো ভস্ম না হওয়া পর্যন্ত কেউ আসন ছাড়ে না, অবিশ্রান্ত নাম করে । নিরিন্ধন হয়ে যায় ।'
ছেলেট:--' সাধুর চিমটে কেন ? ধুনি খোঁচাবার
জন্যে ?'
ছেলেটি:-- 'মোটেই না । চিমটে হচ্ছে বাকসংযোমের প্রতীক । যার জিহ্বা সংযত হয়নি, সে ধরতে পারবে না চিমটে ।'
ছেলেটি:--'আর কমন্ডলু ? জল খানার জন্যে নিশ্চয়ই ?'
ঠাকুর :--' মোটেই না । টইটম্বুর করে জল রাখো কমন্ডলুতে । নির্মল ঠান্ডা জল । জলের ঐ সাম্য শৈত্য ও স্থৈর্য তাদের সঙ্গে মনের যোগ রেখে সাধু ভগবানের নাম করে । সব সময়েই দেহ-মন ঠান্ডা থাকে, তৃপ্ত হয় না । চিত্ত অবিকৃত অচঞ্চল থাকে । মনে বিরাজ করে পক্ষপাতনিরপেক্ষ সমতা ।'
ছেলেটি:' আর ত্রিশূল ? হিংস্র জন্তুর আক্রমনের থেকে বাঁচবার জন্যে ?'
ঠাকুর : --' মোটেই না সপ্ত রজ আর তম এই তিন গুণ যার করায়ত্ত, সেই-ই ত্রিশূল ধারনের অধিকারী হয় ।'
প্রণাম ঠাকুর জয় ঠাকুর
সংগৃহীত