29/09/2025
পাখির শাবকদের নিয়ে থানায়
থানায় মৃত, আহত পানকৌড়িদের নিয়ে পশুপ্রেমী অর্চি চক্রবর্তী।
হরিশ্চন্দ্রপুর, ২৮ সেপ্টেম্বর রবিবার হরিশ্চন্দ্রপুর থানার পুলিশকর্মীরা এমনই এক অভিনব প্রতিবাদের সাক্ষী থাকলেন। এদিন সকালে এক তরুণী পাখির দেহ ও সদ্য মাতৃহারা পানকৌড়ি ছানাদের প্লাস্টিকের বাক্সে নিয়ে হরিশ্চন্দ্রপুর থানায় এসে উপস্থিত হন। থানা প্রাঙ্গণে দাঁড়িয়ে তিনি কাঁদতে থাকেন। ঘটনার আকস্মিকতায় স্থানীয় বাসিন্দা থেকে পুলিশ আধিকারিকরা হতভম্ব হয়ে যান।
স্থানীয় সূত্রে খবর, পাখিপ্রেমী ওই তরুণীর নাম অর্চি চক্রবর্তী। বাড়ি হরিশ্চন্দ্রপুর থানা এলাকার পিপলা গ্রামে। অর্চির বাড়ির একদম পাশে ওই গ্রামের একটি প্রভাবশালী ক্লাবের পুজো হয়। অভিযোগ, অর্চির বাড়ির একটি আম গাছের ডাল প্রায় জোর করে এদিন ক্লাবের সদস্যরা কেটে দেন। ওই গাছে বেশ কয়েকটি পানকৌড়ি বাসা বেঁধেছিল। গাছের ডাল কেটে দেওয়ার পরে কয়েকটি পানকৌড়ি পড়ে গিয়ে মারা যায়। মৃত্যুযন্ত্রণায় ছানারা ছটফট করতে থাকে। ত্রিশ বছর বয়সি ওই তরুণী ছানাগুলিকে উদ্ধার করেন। এরপর মৃত ও আহত ছানাদের বাক্সবন্দি করে থানায় ছুটে যান। থানায় কাঁদতে কাঁদতে অর্চি বলেন, 'আমার বাড়ির কম্পাউন্ডের মধ্যে গাছ রয়েছে। ওতে প্রচুর পাখি বাসা বেঁধেছে। শামুকখোল, পানকৌড়ি থেকে বিভিন্ন প্রজাতির পাখির বাস সেখানে। | ওদের খাওয়ানো ও পরিচর্যার
দায়িত্ব আমার। অনেকদিন থেকে এলাকার একটি ক্লাবের সদস্যরা ওদের তাড়ানোর জন্য উঠেপড়ে লেগেছেন। তাঁদের অভিযোগ, পাখিরা শৌচকর্ম করে নাকি পরিবেশ নোংরা করছে। এবার পুজোর অজুহাতে আমার কোনও অনুমতি না নিয়ে জোরপূর্বক বেআইনিভাবে গাছের ডাল কেটেছেন। এর জেরে পাখিগুলির মৃত্যু হয়েছে। পাখিরা শৌচকর্ম কোথায় করবে? ওদের তো মানুষের মতো শৌচালয় নেই। এই সামান্য ব্যাপারের জন্য তাদের মেরে ফেলতে হবে?'
বিষয়টি নিয়ে অর্চি চাঁচল ফরেস্ট রেঞ্জ অফিসার দুলাল সরকারের কাছে অভিযোগ জানিয়েছেন। তবে লোকবলের অভাবে এদিন তাঁরা ওই পাখিগুলি উদ্ধার করতে পারেননি। দুলালের কথায়, 'আমি ওই তরুণীকে আদিনা ফরেস্ট রেঞ্জ অফিসে ওই পাখিগুলিকে পৌঁছানোর ব্যবস্থা করতে বলেছি। ওখানে আহত পাখিগুলির পরিচর্যা ও রক্ষণাবেক্ষণের ব্যবস্থা করব। এবিষয়ে থানায় অভিযোগ জানাতে বলা হয়েছে।' পুলিশ সমস্ত ঘটনা খতিয়ে রাখার আশ্বাস দিয়েছে।
এদিন দিদির সঙ্গে ভাই অর্কদ্যুতি চক্রবর্তী আহত পাখিদের নিয়ে থানায় এসেছিলেন। অর্কদ্যুতির বক্তব্য, 'দিদি ছোটবেলা থেকে পশুপাখি নিয়ে থাকতে ভালোবাসে। জেলার একটি নেচার ক্লাবের সঙ্গে জড়িত। এলাকার অনেক অসুস্থ পশুপাখি উদ্ধার করে বন দপ্তরের হাতে তুলে দিয়েছে।'