12/12/2024
সদ্য শেষ হয়েছে তৃণমূল কংগ্রেসের জাতীয় কর্মসমিতির বৈঠক। বৈঠকে দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বেশ কিছু বিধায়কের উপর ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। পাশপাশি বেশ কয়েকজন মন্ত্রীর কাজেও অখুশি তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সূত্র মারফত জানা গিয়েছে, বিধানসভা ভোটের আগে দলকে ঢেলে সাজানোর ঘোষণা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। একদিকে যেমন সাংগঠনিক রদবদলের কথা জানা গিয়েছে, অন্যদিকে, মন্ত্রিসভাতেও বড় রকমের রদবদলের প্রস্তুতির কথা উঠে এসেছে।বর্তমানে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের মন্ত্রিসভায় ছ’টি শূন্য পদ রয়েছে। সেই শূন্য পদগুলিতে নতুন মন্ত্রী নিয়োগের ভাবনা রয়েছে শাসক শিবিরে। তৃণমূল সূত্রে খবর, যাদের হাতে একাধিক দফতর দিয়ে রাখা হয়েছে, সেগুলি নতুন হাতে ছাড়তে চান মুখ্যমন্ত্রী। বর্তমান মন্ত্রিসভা থেকে বাদ যেতেও পারেন কয়েকজন। * কারা কারা হতে পারেন রাজ্য মন্ত্রীসভার নতুন মুখ? ১.উত্তম বারিক: অধিকারী পরিবার তৃণমূল থেকে সরে যাওয়ার পর তমলুক ও কাঁথি সাংগঠনিক জেলার রাজনীতি সব সময় নজরে থাকে তৃণমূল রাজ্য নেতৃত্বের। কয়েক মাস আগেই বনদপ্তরের মহিলা আধিকারিককে কটু কথা বলার কারণে মন্ত্রিত্ব খোয়াতে হয়েছে অখিল গিরিকে। সাংগঠনিক দক্ষতার প্রমাণ দিয়ে বারবার দলনেত্রীকে খুশি করেছেন পটাশপুরের বিধায়ক উত্তম বারিক। পুরস্কার হিসেবে পেয়েছেন পূর্ব মেদিনীপুর জেলা পরিষদের সভাধিপতির দায়িত্ব, লোকসভা নির্বাচনে কাঁথি আসনে লড়াই করবার টিকিট। লোকসভা ভোটে হেরে গেলেও রাজ্য মন্ত্রিসভায় নতুন মুখ হিসেবে তাঁর নাম চর্চায় রয়েছে। তবে সম্প্রতি, উত্তমের কাজকর্মে অসন্তোষ প্রকাশ করে তাঁকে ভর্ৎসনা করেন মুখ্যমন্ত্রী। তাই চর্চায় থাকলেও পূর্ব মেদনীপুর থেকে অন্য কোন মুখ বেছে নেওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে।২. মুকুটমণি অধিকারী: বিজেপি ছেড়ে তৃণমূল কংগ্রেসে যোগ দেওয়া মুকুটমণি অধিকারী লোকসভা ভোটে হেরে গেলেও উপনির্বাচনে তৃণমূলের টিকিটে জয়লাভ করেন রানাঘাট দক্ষিণ কেন্দ্র থেকে। মতুয়া সম্প্রদায়ের নেতা মুকুটমণি। মতুয়া সম্প্রদায় অধ্যুষিত এলাকায় লোকসভা ভোটে মুখ থুবড়ে পড়েছে শাসক দল। তাই মতুয়া ভোট আয়ত্বে আনতে মুকুটমণি অধিকারীকে রাজ্য মন্ত্রীসভার সদস্য় করা হতে পারে।৩. বুলু চিক বরাইক: ঠিক নতুন মুখ নয়! রাজ্য সরকারের অনগ্রসর শ্রেণি কল্যাণ ও আদিবাসী উন্নয়ন দফতরের স্বাধীন দায়িত্ব প্রাপ্ত প্রতিমন্ত্রী বুলু চিক বরাইক। উত্তরবঙ্গে ঘাসফুলকে আরও জোরদার করতে পুর্ণমন্ত্রীর দায়িত্ব দেওয়া হতে পারে মালবাজারের বিধায়ক বুলু চিক বরাইককে।৪.মোশারফ হোসেন: ইটাহারের তৃণমূল বিধায়ক মোশারফ হোসেন। সামলাচ্ছেন তৃণমূলের সংখ্যালঘু সেলের রাজ্য সভাপতির দায়িত্বও। জাতীয় কর্মসমিতির বৈঠকের পর তাঁকে দেওয়া হয়েছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘ঘনিষ্ঠ ও আস্থাভাজন’ হিসেবে পরিচিত মোশারফকে রাজ্য মন্ত্রিসভায় নিয়ে আসা হতে পারে। ৫. হুমায়ুন কবীর: ভরতপুরের তৃণমূল বিধায়ক হুমায়ুন কবীর। বহরমপুর লোকসভা নির্বাচনে অধীর চৌধুরীকে পরাজিত করার ক্ষেত্রে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা নিয়েছিলেন। সে দিক থেকে হুমায়ুন কবীরের মন্ত্রিসভায় জায়গা পাওয়া নিয়ে একাধিকবার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছ। তবে ইদানিং দলের জেলা নেতৃত্ব থেকে শুরু করে রাজ্য নেতৃত্বের বিরুদ্ধে সুর চড়িয়েছেন হুমায়ুন। বেঁফাস মন্তব্যের কারণে শোকজের জবাব দিতে হয়েছে তৃণমূলের শৃঙ্খলারক্ষা কমিটির কাছে। কিন্তু তাঁর সাংগঠনিক দক্ষতায় তিনি বারবার দলের কাছে নিজের গুরুত্ব বাড়িয়েছেন। তাই তাঁকেও রাজ্য মন্ত্রীসভার দায়িত্ব দেওয়া হতে পারে বলে শোনা যাচ্ছে। তবে ইদানিং বিতর্কের কারণে তাঁকে জায়গা দেওয়া হবে কিনা সেটাও বড় প্রশ্ন।৬. অভিজিৎ সিনহা (রানা): লাভপুরের বিধায়ক তথা বীরভূম জেলার কোর কমিটির সদস্য অভিজিৎ সিনহা ওরফে রানা। সম্প্রতি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্য়োপাধ্যায়ের মুখে একাধিকবার শোনা গিয়েছে অভিজিৎ সিনহার নাম। মুখ্যমন্ত্রী অভিজিৎ সিনহার নাম নেওয়ায় তিনি বিশেষ দায়িত্ব পেতে পারেন বলে মনে করা হচ্ছে।*বর্তমান মন্ত্রীসভা থেকে বাদ পড়তে পারেন বা দায়িত্ব কমানো হতে পারে যাদেরবেশ কিছু জায়গায় লোকসভা ভোটের ফলাফলে অসন্তুষ্ট দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য মালদহ জেলা। জেলার দুটো লোকসভা আসনেই ভরাডুবি হয়েছে রাজ্যের শাসক দল। অথচ রাজ্যের মন্ত্রীসভায় এই জেলা থেকেই দুটো মন্ত্রী রয়েছেন। এক তাজমূল হোসেন অন্যজন সাবিনা ইয়াসমিন। তাই এঁদের মধ্যে থেকে একজনের বাদ যাওয়ার সম্ভাবনা প্রবল। জেলায় শাসক দলের ভোট টানতে উল্লেখযোগ্যভাবে সংখ্যালঘু ভোট টানতে মালদহ থেকে নতুন কাউকে রাজ্যের মন্ত্রী করা হতে পারে। তবে কে হতে পারেন সে বিষয়ে এখনও সেভাবে জানা যায়নি।যে সব মন্ত্রীর হাতে একাধিক দফতর দিয়ে রাখা হয়েছে সেগুলি কমানো হতে পারে বলে জানা গিয়েছে। সেক্ষেত্রে মন্ত্রীসভায় দায়িত্ব কমতে পারে ফিরহাদ হাকিম, মলয় ঘটক, চন্দ্রিমা ভট্টাচার্যর, বাবুল সুপ্রিয়র, ইন্দ্রনীল সেনের। মন্ত্রীসভায় থাকলেও দায়িত্ব কমতে পারে চন্দ্রনাথ সিনহার।২০২৫ সালের জানুয়ারি মাসে ‘বিশেষ অধিবেশন’ তৃণমূল কংগ্রেসের। ইতিমধ্যেই দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় এবং রাজ্য সভাপতি সুব্রত বক্সির তৈরি করা রদবদলের একটি তালিকা তালিকা পৌঁছে দেওয়া হয় তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে। রদবদল নিয়ে তৈরি হওয়া তালিকা কাটাছেঁড়া করে চূড়ান্ত অনুমোদন করবেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। জানুয়ারি মাসের মাঝামাঝি এই রদবদলের নতুন তালিকা প্রকাশ করতে পারে ‘তৃণমূল ভবন’।