07/10/2025
পূর্বে প্রকাশিত লেখাটি আবার ভাগ করে নিলাম আপনাদের সাথে
----------
#লক্ষী_পদ্মা_ধন্যা (স্মৃতি কথা)
✍️ Soumik Dey
্ব_সংরক্ষিত
কোজাগরী লক্ষ্মীপুজো। কোজাগরী পূর্ণিমায় হয় এই পুজো। প্রতিটি ঘরে পূর্ণিমার রাতে এই লক্ষী পুজো ভক্তিভরে পালিত হয়। প্রতি বছর দুর্গা পূজার পরেই হয় এই লক্ষী পুজো। গৃহের মঙ্গল কামনায়, ধণ সম্পদ বৈভব রক্ষায়,গৃহের শ্রী বৃদ্ধির কামনায় এই পুজো প্রতিটি হিন্দু গৃহে পালন করা হয় ।
স্মৃতি চারন করতে নেমে অনেক সুখ স্মৃতি এই পুজো উপলক্ষে মনে পড়ে। মামার বাড়িতে দিদিমাকে দেখতাম এই পুজো উপলক্ষে রকমারি ব্যবস্থা করতে । নারকেল নাড়ু সেটা গুড় দিয়ে পাক হোত। আবার চিনির নাড়ু ও হোত। খই আর গুর দিয়ে উপড়া বানান হোত। মুড়ির মোয়া চিড়ের মোয়া বানাতেন। তিলের নাড়ু ও বানান হোত। ক্ষীর মালপোয়া এই সবই দিদিমা বানাতেন নিজের হাতে পরিপাটি করে ভক্তি সহকারে । ফল পাকুর দিয়ে লক্ষী ঠাকুরকে পুজো নিবেদন করা হোত। আসে পাশের বাড়ি থেকে মামার বাড়ি পুজো দেখতে আসত। সেই সময় মামার বাড়ি মফস্বল অঞ্চলে থাকার দরুন অনেক গাছ গাছালি পূর্ন ছিল । ফলে আশ্বিনের শেষে পূজোর রাতে একটা হালকা হিমেল পরশ অনুভব করতাম। যাই হোক আমিও যেতাম পাড়ার অনেক বাড়িতে পুজো দেখতে । তখন পুজো দেখার আকর্ষন তো ছিলই সেই সাথে পূজোর রকমারি প্রসাদের প্রতি আকর্ষন কম ছিল না। বাড়িতে তৈরি প্রসাদের সাথে রকমারি মিষ্টিও প্রসাদের পদ হিসেবে বিবেচিত হোত। মাটির ঠাকুর নিয়ে আসা হোত। ভীষন মজা করতাম।
একটু বড় হবার পর আমাদের বাড়িতে যৌথ পরিবারের লক্ষী পুজো হোত লক্ষীর সরা এনে। কারন আমার ঠাকুরদা মূর্তি পূজায় বিশ্বাসী ছিলেন না। প্রধান উদ্যোক্তা ছিলেন আমার কাকা। উনি পূজোর সব টুকু বাজার করে আনতেন । মা কাকিমা আর সব মহিলারা হাত লাগাতেন পূজোর কাজে। সারা বাড়ি আলো দিয়ে সাজান হোত। কেউ পূজোর প্রসাদ তৈরিতে ব্যস্ত। কেউ পূজোর আলপনা দিতে ব্যস্ত। কেউবা পূজোর জোগাড় করতে ব্যস্ত। হৈ হৈ রৈ রৈ সে এক অভূতপূর্ব সাড়া পড়ে যেত। বাজার থেকে কলাগাছের থোর কাকা কিনে আনতেন । সেই থোরের ছাল থেকে কাকা ছোট নৌকো বানাতেন পূজোর উপাচার হিসেবে। চাঁদমালা কদমফুল গাঁদা রজনী ফুলের মালা দিয়ে বাড়ি সাজান হোত। তারপর রাতে পন্ডিত মশাই আসতেন পুজো করতে । বাড়ির ছোটরা বড়রা সবাই মিলে লক্ষী পুজোকে পরিপূর্ন করে তুলতাম। আতস বাজি পোড়াতাম ।
এখন আবার মূর্তি পুজোয় ফিরে আসা হয়েছে। পরিবার বড় হয়েছে। যৌথ পরিবার টুকরো হয়েছে। পূজোর জোগাড় এখন ১০/১২ জনের পরিবর্তে ৩/৪ জনে এসে ঠেকেছে। পুজোও কলেবরে মেদবর্জিত হয়েছে। এখন পা বাড়ালেই পাড়ার দোকান থেকে মুড়কি মোয়া নাড়ু মালপোয়া নারকেল সন্দেশ ইত্যাদি পূজোর পদগুলি নিয়ে আসা যায়। সময়ও বেঁচে যায় আর দোকাদার ও ব্যবসা করতে পারে । লক্ষী পুজো আগে যা ছিল এখনও তাই আছে । শুধু ভক্তি আড়ম্বরে তখন আর এখন আঙ্গিকে পরিবর্তিত হয়েছে। মানসিকতায় পরিবর্তিত হয়েছে।
“ এসো মা লক্ষী বসো ঘরে
আমার এ ঘরে থাক আলো করে ”
゚