18/02/2025
মাজার ভাঙছে কারা? মুসলমান। হিন্দুর মন্দির, প্রতিমা ভাঙছে কারা? মুসলমান। পাহাড়ে আগুন ও পাড়াহিদের রক্তাক্ত করেছে কারা? মুসলমান। ইজতেমায় মানুষ মেরেছে কারা? মুসলমান। নারীদের আক্রমণ করেছে কারা, কক্স বাজারে নারীকে ধরে শারিরীক নির্যাতন, নারীদের খেলা ভঙ্গ, নারীদের স্বাধীন বিচরণে বাধা সৃষ্টি করেছে কারা? মুসলমান। বই মেলায় স্টল ভাঙা, প্রকাশককে মারমুখী আক্রমণ করেছে কারা? মুসলমান। কিন্তু এরা বলছে সব নাকি ষড়যন্ত্র? ষড়যন্ত্র করে এদের লাভ কী? তাদের তো দাবিই হলো এগুলো না করার বিরুদ্ধে।
আপনারা নিজের দোষ কখনোই স্বীকার করেন না। সবকিছুইতেই ষড়যন্ত্র দেখেন। তাহলে আপনারা সংখ্যাগুরু হয়ে কী করছেন? যখন কেউ টুপি পাঞ্জাবি পরে ভালো কাজ করে, তখন তা টুপি পাঞ্জাবির গুণ— যখন খারাপ কাজ করে, তখন বলেন ষড়যন্ত্র। মানে কী? বই মেলায় যারা আক্রমণ করেছে, ইজতেমায় যারা মানুষ হত্যা করেছে, পাহাড়িদের যারা রক্তাক্ত করেছে, তাদের গায়ে জোব্বা, মাথায় টুপি ছিল। জোব্বা ও টুপির অপমান ঠেকাতে বলছেন ষড়যন্ত্র। যে জীবনে নামাজ পড়ে না, শরিয়ত মানে না, ব্যক্তিজীবনে ধর্মকে গুরুত্ব দেয় না, তাকে নিয়ে আপনাদের কত গর্ব— মুসলিম বিজ্ঞানী, মুসলিম কবি। অথচ উগ্রবাদীর বেলায়, সন্ত্রাসীর বেলায়, চোরের বেলায়, ধর্ষকের বেলায়, মুসলিম সন্ত্রাসী, মুসলিম উগ্রবাদী, মুসলিম চোর, মুসলিম ধর্ষক বলেন না কেন? তখন বলেন— সব ষড়যন্ত্র কিংবা অপরাধীর ধর্ম নেই। হোয়াটেবাউটারি!
এভাবে চলতে থাকলে সমস্যা কখনোই দূর হবে না। দোষ নিজেদের মধ্যে, আগে নিজেদের ঠিক করুন। অনুসন্ধান করুন ফাঁক কোথায় রয়েছে। চিন্তাভাবনাকে কাজে লাগান, চোখ ও মগজকে করে তুলুন স্ক্যানার। চোখ দিয়ে দেখুন, মগজ দিয়ে বিশ্লেষণ করুন। এখানে যাদের নাম বললেন, কী করবেন তাদের? হত্যা, এইতো? তাতে কি সব ঠিক হয়ে যাবে? চুরি, ডাকাতি, খুন, ধর্ষণ, দুর্নীতি, লুটপাট, ভাঙচুর ইত্যাকার নৈরাজ্য বন্ধ হয়ে যাবে? যাবে না। দেশে যে হারে ধর্ম চর্চা বেড়েছে, মানুষকে তো নিষ্পাপ, ফেরেশতা হয়ে যাওয়ার কথা। শান্তির বাতাসে চারপাশে মঁ মঁ করা কথা। কিন্তু তার বদলে উল্টোটা হচ্ছে কেন, এবং এত নজিরবিহীন? ডেনমার্ক, জাপানে তো ধর্মের বালাই নেই, সেখানে এসব কুকীর্তি নেই কেন? নিজেকে প্রশ্ন করুন। নামাজ শেষ করে এসে বসেছেন ঘুসের চেয়ারে, কুৎসা রটনায়, হিংসা-বিদ্বেষ ও পরচর্চায়। নারী ও শিল্পবিদ্বেষের তলোয়ারে দিচ্ছেন জিঘাংসার শান। আর বলছেন অমুক তমুক মিলে ষড়যন্ত্র করছে ইসলাম ও দেশের বিরুদ্ধে।
বাঙালি হওয়ার সুবিধা হলো সব দোষ চাপানোর জন্য কাউকে না কাউকে, কিছু না কিছু একটা হেতু পাওয়া যায় খুব সহজেই। শেখ রাসেলকে হত্যা করে বলা যায়, হত্যা না করলে বড়ো হলে স্বৈরাচার হতো। বই মেলায় স্টল ভেঙে বলা যায়— তারা অনুমোদন নেয় নি। এদেশে এত এত কওমি মাদ্রাসা, কই সেগুলোর অনুমোদন খোঁজেছেন? যেখানে সেখানে মাইক বাজিয়ে সারা রাত ওয়াজের নামে হিংসা বিদ্বেষ আর রাজনীতিক প্রোপাগাণ্ডা ছড়ায়, এগুলোর অনুমোদন আছে কি না খোঁজেছেন? খোঁজেন নি। খোঁজবেন না। কারণ— আপনি নিজেই অনুমোদন ছাড়া মাদ্রাসায় চাকরি করেন। কিংবা আপনি মস্তিষ্ক বর্গা দিয়ে রেখেছেন হুজুরের পায়ে। আইনস্টাইনকে আল্লাহ ব্রেইন দিয়েছেন, তাই সব কৃতিত্ব আল্লাহর৷ আল্লাহ আপনাকে ব্রেইন দেন নি? নাকি আপনার তার দরকার পড়ে না?