18/07/2024
ডাকনাম আলো। বাংলা গানের জগতে তাঁর উত্থান চোখধাঁধানো আলোর মতোই। তিনি সংগীতের স্বর্ণযুগের গায়িকা। বাংলা ছবি, আধুনিক সর্বত্রই তাঁর গান অন্য আবেশ, সীমাহীন মুগ্ধতা মিষ্টি সুরের সাথে আরও মিষ্টি কণ্ঠ। তিনি সংগীত শিল্পী আরতি মুখোপাধ্যায় । মাধবী মধুপে হল মিতালী, এক বৈশাখে দেখা হল দুজনায়, কথা কিছু কিছু, অথবা আজ তোমার পরীক্ষা ভগবান কিংবা হংসরাজ ছবিতে ছোট অরিন্দম গাঙ্গুলীর লিপে লোকগীতি, সবই সুপারহিট। 'বাবা তারকনাথ', 'ময়না', 'ধন্যি মেয়ে', 'বসন্ত বিলাপ', 'দাদার কীর্তি'…একের পর এক ছবিতে শ্রোতাদের গান সুপারহিট গান উপহার দিয়েছেন আরতি মুখোপাধ্যায়। 'আনন্দ আশ্রম' ছবিতে শ্যামল মিত্রের সুরে আরতির কণ্ঠে 'কথা কিছু কিছু' গানটি কখনও কী ভোলা সম্ভব!
© ধ্রুবতারাদের খোঁজে
গানের পরিবেশে বড় হয়েছেন। মায়ের কাছেই প্রথম গান শেখার শুরু। বাবা মনোরঞ্জন মুখোপাধ্যায় অর্গ্যান এবং হারমোনিয়াম বাজাতেন দারুণ। ঠাকুমা একবার পুজোর সময়ে ছোট্ট আলোকে জামাকাপড়ের বদলে উপহার দিয়েছিলেন বেশ দামী তানপুরা। সঙ্গীত শিক্ষক সুশীল বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাত ধরেই প্রথম আরতির গানের মঞ্চে পদার্পণ। চেতলার আদি শাস্ত্রীয় সঙ্গীত প্রতিযোগিতা 'মুরারি সঙ্গীত সম্মেলন' - এ প্রথম হয়েছিলেন আরতি। আর এই সঙ্গীত প্রতিযোগিতায় বিচারকমণ্ডলীতে ছিলেন স্বনামধন্য শিল্পী ধনঞ্জয় ভট্টাচার্য। তিনিই আরতির গান শুনে সিনেমায় প্লেব্যাকের সুযোগ দেন। 'মামলার ফল’ ছবিতে বিখ্যাত সুরকার রবীন চট্টোপাধ্যায়ের হাত ধরেই আরতির প্রথম প্লেব্যাক। এর পাশাপাশিই চলছিল ওস্তাদ মোহাম্মদ সাগিরউদ্দিন খান, পণ্ডিত চিন্ময় লাহিড়ী, পণ্ডিত লক্ষ্মণ প্রসাদ জয়পুরওয়ালা এবং পণ্ডিত রমেশ নাদকর্ণির অধীনে শাস্ত্রীয় সংগীতের তালিম। অল ইন্ডিয়া মেট্রো মারফি কনটেস্টও তখন জেতেন আরতি মুখোপাধ্যায়।
© ধ্রুবতারাদের খোঁজে
খুব অল্প সময়ের মধ্যেই বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠলেন আরতি মুখোপাধ্যায়। আর অচিরেই সুযোগ এল ফরিয়াদ ছবিতে সুচিত্রা সেনের লিপে গান গাওয়ার। 'সে আমার বুক ভরা ছোট্ট একটা চিঠি' শুনে কাঁদেনি এমন দর্শক পাওয়া কঠিন। এরপর একে একে সুচিত্রা, তনুজা, মাধবী, সুপ্রিয়া, মৌসুমী, অপর্ণা সেন, সন্ধ্যা রায়ের কণ্ঠে সব এক একটি সুপারহিট গান উপহার দিলেন আরতি। মাধবী মধুপে হল মিতালী, এক বৈশাখে দেখা হল দুজনায়, কথা কিছু কিছু, আজ তোমার পরীক্ষা ভগবান কিংবা হংসরাজ ছবিতে ছোট অরিন্দম গাঙ্গুলীর লিপে লোকগীতি। সবই সুপারহিট।
১৯৬৬ সালে আরতি 'গল্প হলেও সত্যি' ছবিতে গেয়ে সেরা মহিলা নেপথ্য কণ্ঠশিল্পীর 'বিএফজেএ' পুরস্কার পান। পরে ১৯৭৬ সালে 'ছুটির ফাঁদে' ছবিতে অপর্ণা সেনের লিপে গেয়ে আবার বিএফজেএ পুরস্কার পান। নচিকেতা ঘোষ আফ্রিকান মিউজিকে বাংলা গান আরতিকে দিয়েই গাওয়ান। 'জলে নেমো না' থেকে 'বন্য বন্য এ অরণ্য'। ঋত্বিক ঘটকের 'সুবর্ণরেখা' ছবিতে কলাবতী রাগের বিস্তার গেয়ে তাক লাগিয়ে দেন আরতি। সেই গান শুনেই বম্বের তারাচাঁদ বারজাটিয়ার প্রস্তাবে বোম্বে যাত্রা। প্রথম হিন্দি ছবিতে প্লেব্যাক 'সওদাগর' ছবিতে। অন্যদিকে ঋত্বিক ঘটক রবীন্দ্রসংগীতে এক নতুন আঙ্গিকের পরীক্ষা করালেন আরতিকে দিয়েই। 'যুক্তি তক্কো গপ্প'-তে আরতির কণ্ঠে নতুন প্রাণ পেল 'আমার অঙ্গে অঙ্গে কে বাজায় বাঁশি'। হিন্দিতে রবীন্দ্রসঙ্গীতের বেসিক অ্যালবামেও আরতি বেস্টসেলার।
© ধ্রুবতারাদের খোঁজে
অথচ ভারতীয় সংগীতের অসামান্য প্রতিভা , প্রতিষ্ঠিত সংগীত শিল্পী হয়েও কিছুটা অভিমানে, কিছুটা চক্রান্তে, আর কিছুটা সংসারের চাপে নতুন করে কিছু গাইলেন না আরতি। অনেকদিন আগে আনন্দবাজার ডিজিটাল কে এক সাক্ষাৎকারে আরতির কাছে জানতে চাওয়া হয় পরজন্মে কী হয়ে জন্মাতে চান আরতি? “এক সময় যাঁরা বলতেন, আরতি মুখোপাধ্যায় মুম্বইয়ে গিয়ে কল্কে পাচ্ছে না, ও শেষ হয়ে গিয়েছে, তাঁদের আরও গান শোনাতে চাই। এক জীবনে অত গান গেয়ে উঠতে পারব না। তাই আবার আরতি হয়ে জন্মাতে চাই। তবে একটা কথা, নিজের স্বভাবে একটু বদল দেখতে চাই। আবার যদি জন্মাই, তবে যেন একটু ধূর্ত হয়ে জন্মাতে পারি। সারা জীবনে শুধু আঘাত পেয়েই গেলাম। এড়িয়ে যাওয়ার কায়দাটা পরজন্মে শিখে আসব।” আজ আরতি মুখোপাধ্যায়ের জন্মদিন , শিল্পী কে আমাদের অনেক অনেক শুভেচ্ছা।
লিখেছেন - শ্রেয়সী সেন।।
© ধ্রুবতারাদের খোঁজে
সংগৃহীত।