02/08/2024
✨ ঈশ্বর মঙ্গলময় ✨
এক গ্রামে এক বৃদ্ধ ভদ্রলোক বাস করত। তিনি ছিলেন ঈশ্বর বিশ্বাসী। তার পাঁচটি পুত্র ছিল। ছোট ছেলেটি ছিল রাম। সে ছিল পিতার মতো ঈশ্বর বিশ্বাসী এবং সরল সহজ। ভদ্রলোক তার ছোট ছেলেকে ভীষণ ভালোবাসতো বলে অন্য ছেলেরা তাকে হিংসা করত। তাই রামের দাদারা মিলে তাকে মারার পরিকল্পনা করে। একদিন দাদাদের জমি থেকে বাড়ি আসতে দেরি হচ্ছে দেখে সে নিজেই খোঁজ করতে যায়। সেখানে যাওয়ার পর সে জানতে পারে দাদাদের পরিকল্পনার কথা। দাদারা তাকে মেরে ফেলতে চাইলে তাদের মধ্যে একজন বলে ওকে না মেরে বিক্রি করে দেয়া হোক। তখন এক ব্যক্তির কাছে কুড়ি হাজার টাকার বিনিময়ে তাকে বিক্রি করে দেয়া হয়। সেই ব্যক্তি রামকে এক মন্ত্রীর দাস হিসাবে নিয়ে যায়। কিন্তু রামের মধ্যে মহৎ গুণ থাকার জন্য মন্ত্রী তাকে দাস হিসাবে না রেখে সেই শহরে বিচারকর্তা করে রাখলেন। বেশ কিছুদিন সেখানকার বিচারের দায়িত্ব সুন্দরভাবে পালন করার জন্য রাম হয়ে উঠলো সবার খুব কাছের মানুষ। মন্ত্রী ছিলেন চরিত্রবান ও দয়ালু প্রকৃতি। অন্যদিকে তার স্ত্রী ছিলেন দুশ্চরিত্রা। রাম ছিল সুদর্শন পুরুষ যাকে দেখলে যে কোন মেয়ের পছন্দ হয়ে যাবে। তাই মন্ত্রীর স্ত্রী রামকে দেখে ভালোবেসে ফেলে এবং তাকে বিয়ে করতে চায়। কিন্তু রাম এমন প্রস্তাবকে প্রত্যাখ্যান করাতে সেই মহিলা ভীষণ রেগে যায়। তাই সবার কাছে রামের মান সম্মান নষ্ট করার জন্য একটি পরিকল্পনা করেন। একদিন একটি দাসীকে দিয়ে রামকে ডেকে পাঠায়। যেহেতু মন্ত্রীর স্ত্রী ডেকে পাঠিয়েছে তাই সেখানে যেতে রাম বাধ্য হয়। সে জানতে পারছিল এই মহিলার চিন্তা ভাবনা মোটেই ভালো নয়। তাই সে সেখান থেকে চলে আসতে চেয়েছিল কিন্তু সেই মহিলা তাকে ঘরের মধ্যে বন্দী করে তার বদনাম করতে চাইলো। এমন এক পরিস্থিতিতে রাম সেখান থেকে বেরিয়ে আসে। কারন সে জানত মন্ত্রীর স্ত্রীর প্রস্তাবে রাজি হলে হয়তো তার মান সম্মান নষ্ট হতো না। সে নিজের মান সম্মানের কথা না ভেবে বাইরে বেরিয়ে এসেছিল শুধুমাত্র ঈশ্বরের কাছে পবিত্র থাকার জন্য। চরিত্রের স্বচ্ছতা প্রমাণের জন্য জগতের মানুষের কাছে মহৎ হওয়ার প্রয়োজন নেই। সে জানতো তার শ্রেষ্ঠ সম্পদ হলো চরিত্র। আর এই চরিত্র যদি পবিত্র থাকে তাহলে যিনি তাকে সৃষ্টি করেছেন যতই খারাপ পরিস্থিতি আসুক না কেন তিনি তাকেই রক্ষা করবেন। এরপর তাকে মিথ্যে শ্লীলতাহানির অপরাধে অভিযুক্ত করা হয় এবং কয়েক মাসের জন্য জেল হয়ে যায়। জেলে বন্দি থাকাকালীন সেখানকার বড় বাবুর সাথে তার আলাপ হয়। যখন তিনি বড়বাবু হননি তখন তার একমাত্র ছেলেকে হারাতে হয়। তার ছেলে একটি রাজনীতিবিদের কন্যাকে ভালোবাসার জন্য মিথ্যা অপবাদে জেলবন্দী হয়। আর সেই লজ্জায় তার ছেলে আত্মহত্যা করে মারা যায়। সেই ছেলেটি ছিল রামের মতো সহজ সরল। তাই রামের সাথে কথা বলাতে বড় বাবুর মনে হয়েছিল তাকে মিথ্যা অপরাধে ফাঁসানো হয়েছে। তারপর বড়বাবু নিজেই নামকরা উকিল ঠিক করে রামকে জেল থেকে মুক্ত করে নিজের হারিয়ে যাওয়া ছেলের জায়গায় বসিয়ে মনের মত করে মানুষ করলেন। বেশ কয়েক বছর পর সে হয়ে উঠল নামকরা এক জজসাহেব। বিভিন্ন জায়গা থেকে নানান ধরনের মানুষ আসতো তার কাছে নানান সমস্যা নিয়ে। হঠাৎ একদিন একটি মামলার দায়িত্ব এসে পড়ে রামের হাতে। যিনি মামলার অভিযুক্ত ছিলেন তার সাথে রামের অনেক দিনের শত্রুতা কারণ সেই অভিযুক্তকারী ছিলেন রামের পরিচিত মন্ত্রীর দুশ্চরিত্রা স্ত্রী। এই মহিলা প্রেমের জালে এক রাজনীতিবীদকে ফাঁসানোর চেষ্টা করেছিল বলেই সেই ব্যাক্তি এই মহিলার বিরুদ্ধে মানহানির মামলা করেছিল। তারপর সমস্ত স্বাক্ষপ্রমাণের ভিত্তিতে এই মহিলার বেশ কয়েক মাসের জেল হয়ে যায়। তখন মন্ত্রী নিজের ভুল বুঝতে পেরে রামের কাছে ক্ষমা চায় এবং তিনি জানতে পারেন সেদিনের করা অন্যায়ের আসল অপরাধী হলেন তার স্ত্রী।
বেশ কয়েক বছর পর রামের হাতে আরও একটা মামলার দায়িত্ব আসে। সেই মামলাটি ছিল তার দাদাদের মধ্যে সম্পত্তি নিয়ে। একদিন যে দাদারা তার ভাইকে মেরে তার সম্পত্তি আত্মসাৎ করতে চেয়েছিল আজ কিনা তারাই এসে উপস্থিত সেই ভাইয়ের কাছে সম্পত্তির মীমাংসার জন্য। জজসাহেব সুন্দরভাবে মামলার রায় দেন এবং সমস্ত সম্পত্তি তার দাদাদের মধ্যে সমানভাবে ভাগ করে দেন। তারপর দাদারা তাদের ভাইকে চিনতে পেরে নিজেদের করা ভুলের জন্য ক্ষমা চায়। একদিন নিজের রক্তের সম্পর্ক থাকা মানুষগুলো তার চরম ক্ষতি করেছিল কিন্তু রাম মনের মধ্যে কোন রাগ পুষে না রেখে দাদাদের ক্ষমা করে দিয়েছিল বলেই ঈশ্বরের চোখে শ্রেষ্ঠ। কেননা সে জগতের কোন মানুষের উপর বিশ্বাস রাখেনি কারণ সে জানত মানুষের পক্ষে যাহা সম্ভব নয় তাহা ঈশ্বরের পক্ষে সম্ভব। তাই আমরা যেন নিজেদের চরিত্রটাকে ঠিক রেখে সৎ পথে থেকে সর্বদা ঈশ্বরকে বিশ্বাস করি। কারণ ঈশ্বর অমঙ্গলের নয় মঙ্গলের।