
07/05/2025
Hasmat Ali Sahidul Islam Roni Ccs Champa Mukherjee Hussain Ali .com Moumita das mondal ভারতের সংবিধান ও ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র: একটি বিশ্লেষণ**
**প্রস্তাবনা**
ভারতের সংবিধান অনুসারে, ভারত একটি ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র। "ধর্মনিরপেক্ষতা" শব্দটি ১৯৭৬ সালে ৪২তম সংবিধান সংশোধনের মাধ্যমে প্রস্তাবনায় যোগ করা হয়। এটি রাষ্ট্রের মৌলিক চরিত্রকে নির্দেশ করে, যেখানে কোনো বিশেষ ধর্মকে রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতা দেওয়া হয় না। সংবিধানের বিভিন্ন অনুচ্ছেদে এই নীতি স্পষ্টভাবে প্রতিফলিত হয়েছে।
**সংবিধানের অনুচ্ছেদসমূহ**
১. **অনুচ্ছেদ ২৫**: ধর্মীয় স্বাধীনতার অধিকার
- প্রতিটি নাগরিকের নিজের ধর্ম পালন, প্রচার ও প্রসারের স্বাধীনতা রয়েছে (অনুচ্ছেদ ২৫(১))।
- তবে, এই অধিকার "জনশৃঙ্খলা, নৈতিকতা ও স্বাস্থ্য"-এর সাথে সাংঘর্ষিক হলে রাষ্ট্র হস্তক্ষেপ করতে পারে।
- **গুরুত্বপূর্ণ দিক**: রাষ্ট্র কোনো ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠানে সরাসরি অংশ নেয় না বা তাকে উৎসাহিত করে না।
২. **অনুচ্ছেদ ২৬**: ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান পরিচালনার অধিকার
- ধর্মীয় গোষ্ঠীগুলো তাদের নিজস্ব প্রতিষ্ঠান গঠন ও পরিচালনার স্বাধীনতা পায়।
- কিন্তু রাষ্ট্রীয় আইন, নৈতিকতা ও স্বাস্থ্যের পরিপন্থী কোনো কাজে রাষ্ট্র বাধা দিতে পারে।
৩. **অনুচ্ছেদ ২৭**: ধর্মীয় উদ্দেশ্যে কর আদায় নিষিদ্ধ
- "কোনো ব্যক্তিকে বিশেষ ধর্ম বা ধর্মমতের প্রচার বা রক্ষার জন্য কর দিতে বাধ্য করা যাবে না" (অনুচ্ছেদ ২৭)।
- এটি রাষ্ট্রীয় অর্থের মাধ্যমে কোনো ধর্মকে বিশেষ সুযোগ দেওয়ার পথ রুদ্ধ করে।
৪. **অনুচ্ছেদ ২৮**: শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ধর্মীয় শিক্ষা নিষেধ
- সরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ধর্মীয় শিক্ষা দেওয়া নিষিদ্ধ (অনুচ্ছেদ ২৮(১))।
- বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে ধর্মীয় শিক্ষা দেওয়া গেলেও তা বাধ্যতামূলক নয় এবং সকল ধর্মের শিক্ষার্থীর জন্য উন্মুক্ত থাকতে হবে।
**ধর্মনিরপেক্ষতার মর্মার্থ**
ভারতের ধর্মনিরপেক্ষতা মানে "সর্বধর্ম সমভাব" (Sarva Dharma Sambhava)। রাষ্ট্রের দায়িত্ব হলো সকল ধর্মের মানুষের অধিকার রক্ষা করা, কিন্তু কোনো বিশেষ ধর্মকে প্রাধান্য দেওয়া নয়। উদাহরণস্বরূপ, সরকারি অনুষ্ঠানে কোনো নির্দিষ্ট ধর্মের আচার-অনুষ্ঠান পালন করা হয় না। এমনকি রাষ্ট্রপ্রধানের শপথগ্রহণও ধর্মীয় গ্রন্থের পরিবর্তে সংবিধানের প্রতি নিষ্ঠার ভিত্তিতে হয়।
সংবিধানের এই বিধানগুলো প্রমাণ করে যে ভারতীয় রাষ্ট্র কখনই কোনো ধর্মের সঙ্গে যুক্ত নয়। বরং এটি সকল নাগরিকের ধর্মীয় স্বাধীনতা নিশ্চিত করার পাশাপাশি সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির ভিত্তি মজবুত করে। ধর্মনিরপেক্ষতা ভারতের বহুত্ববাদী সমাজের মৌলিক স্তম্ভ এবং সংবিধানের প্রাণস্বরূপ।