10/05/2025
বাংলাদেশী মুসলিম ভাইদের প্রতি আমাদের কিছু খোলামেলা কথা :
ভারতের মুসলমানদের পক্ষ থেকে আমরা বলতে চাই—আমরা RSS ও BJP-র বিরোধী, আমরা বর্তমান সরকারের রাষ্ট্র পরিচালনার নীতির বিরুদ্ধে। কিন্তু আমাদের দেশের বিরোধী নই। আমরা আমাদের দেশকে ভালোবাসি, যেমন আপনারা আপনাদের দেশকে ভালোবাসেন। আপনাদের অধিকার থাকলে আমাদের অধিকার কেন নয়!
يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُوا۟ كُونُوا۟ قَوَّٰمِينَ بِٱلْقِسْطِ شُهَدَآءَ لِلَّهِ وَلَوْ عَلَىٰٓ أَنفُسِكُمْ أَوِ ٱلْوَٰلِدَيْنِ وَٱلْأَقْرَبِينَ إِن يَكُنْ غَنِيًّا أَوْ فَقِيرًا فَٱللَّهُ أَوْلَىٰ بِهِمَا فَلَا تَتَّبِعُوا۟ ٱلْهَوَىٰٓ أَن تَعْدِلُوا۟ وَإِن تَلْوُۥٓا۟ أَوْ تُعْرِضُوا۟ فَإِنَّ ٱللَّهَ كَانَ بِمَا تَعْمَلُونَ خَبِيرًا
হে মুমিনগণ, তোমরা ন্যায়ের উপর সুপ্রতিষ্ঠিত থাকবে আল্লাহর জন্য সাক্ষীরূপে। যদিও তা তোমাদের নিজদের কিংবা পিতা-মাতার অথবা নিকটাত্মীয়দের বিরুদ্ধে হয়। যদি সে বিত্তশালী হয় কিংবা দরিদ্র, তবে আল্লাহ উভয়ের ঘনিষ্ঠতর। সুতরাং ন্যায় প্রতিষ্ঠা করতে তোমরা প্রবৃত্তির অনুসরণ করো না। আর যদি তোমরা ঘুরিয়ে- পেঁচিয়ে কথা বল কিংবা এড়িয়ে যাও তবে আল্লাহ তোমরা যা কর সে বিষয়ে সম্যক অবগত।
সূরা নিসা ৪:১৩৫ ;সূরা মায়েদা ৫:৮)
পাকিস্তান ১৯৪৭ সালের পর থেকে ভারতের মুসলমানদের কোনো উপকারে আসেনি। বরং ওদের ভুল পদক্ষেপ আর কুকর্মের খেসারত বারবার আমাদেরই দিতে হয়েছে। ওদের দ্বারা একটি হামলা ঘটলে তার দায়ভার গিয়ে পড়ে নিরপরাধ ভারতীয় মুসলমানদের উপর।
“ইসলামিক রিপাবলিক অফ পাকিস্তান” নাম থাকলেই কেউ ইসলামী রাষ্ট্র হয়ে যায় না। সেখানেও চলে মানব-নির্মিত সংবিধান, আছে যৌনপল্লী, সমকামিতা, পর্নোগ্রাফি—যা ইসলাম স্পষ্টভাবে হারাম ঘোষণা করেছে। ওখানে ৯০% মুসলমান হয়েও শরীয়াহ প্রতিষ্ঠা করতে পারেনি—তাহলে কিসের ‘ইসলামিক রাষ্ট্র ’? এটি একটা ব্যর্থ রাষ্ট্র!
আপনারা ইসলামিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার কথা বলে ভারত থেক পাকিস্তান গড়েছেন ভালো কথা। অথচ সেই পাকিস্তানই ইসলামী খিলাফত কায়েম তো দূরের কথা, ইসলামবিরোধী কর্মকাণ্ডে মগ্ন। এরপর তো আবার পাকিস্তান ভেঙে বাংলাদেশ হয়েছে। নিজেদের মধ্যে মুসলিম ভাইদের র|ক্ত ঝরিয়ে এখন ভরতীয় মুসলিমদের জাতীয়তাবাদ নিয়ে প্রশ্ন করছেন? মুনাফিক মুসলিম বলে অভিযোগ করছেন। আগে নিজের দিকে তাকান। ২০ টি বছর পাকিস্তানিদের সাথে মুসলিম হয়েও থাকতে পারেননি।
যখন শেখ হাসিনার সরকার বাংলাদেশের বিজ্ঞ আলেমদের ধরে ধরে জেলে পুরে দিচ্ছিল, নির্যাতন করছিল, তখন তো মুখ খুলেননি। এখন পশ্চিমবঙ্গের মুসলমানদের ‘শিক্ষা’ দিতে এসেছেন? ভারতীয় মুসলিমদের কাপুরুষ বলছেন। আমরা ভারতের মুসলমান, এখানে সংখ্যালঘু হিসেবে আমাদের প্রতিটি পদক্ষেপে চিন্তাভাবনা করতে হয়। তা সত্ত্বেও আমরা স্পষ্টভাবে RSS-BJP-এর বিরোধিতা করে থাকি এবং করব— এই হিম্মত ভারতীয় মুসলিমদের আছে। নিজেদের ধর্মীয় অধিকার ও আত্মমর্যাদা রক্ষায় কখনোই আপস করে না। যখনই ইসলাম ও মুসলিমদের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে অবমাননাকর বক্তব্য বা আচরণ হয়েছে, ভারতীয় মুসলমানরা রাস্তায় নেমে প্রতিবাদ জানিয়ে সরকার পক্ষকে অনেক সময় ভুল স্বীকার করতে বাধ্য করেছে।
নুপুর শর্মার বিতর্কিত মন্তব্য হোক কিংবা মুস্কান খানের হিজাবকে ঘিরে সাম্প্রতিক ঘটনাবলি—ভারতীয় মুসলমানরা ঐক্যবদ্ধভাবে প্রতিবাদ করেছে। ওয়াক্ফ বোর্ডকে ঘিরে কেন্দ্রীয় হস্তক্ষেপের বিরুদ্ধেও ভারতজুড়ে প্রতিবাদ হয়েছে।
এখন প্রশ্ন হলো—আপনারা কি শেখ হাসিনার শাসনামলে কখনো এমনভাবে সরকারবিরোধী ইসলামপন্থী আন্দোলন করতে পেরেছেন? আপনারা কি কখনো সরকারি নিপীড়নের বিরুদ্ধে রাস্তায় নেমেছেন, যেখানে আলেম-ওলামাদের কারাবন্দি করা হয়েছে, কণ্ঠরোধ করা হয়েছে?
আপনারা হাসিনার শাসনামলে আওয়ামী লীগের নাম পর্যন্ত মুখে আনতে পারেননি, আর আজ যখন খানিকটা পরিবর্তন এর কারণে আওয়াজ উঠেছে, তখন বড় বড় ভাষণ দিয়ে ভারতীয় মুসলিমদের ‘জাতীয়তাবাদী মুনাফিক’ বলছেন। আপনাদের মুখেই এমন কথাগুলো মানায় না।
সরকার মানে দেশ নয়। সরকার আসবে, যাবে—কিন্তু দেশ থাকবে। ভারতীয় মুসলমানরা আজও হাজারো আলেম, দারুল উলুম দেওবন্দ ও জামিয়া সালাফিয়া-র মতো প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে জ্ঞান ও যুক্তিবাদ দিয়ে প্রতিকূল পরিস্থিতির মোকাবিলা করছে। আমাদের বুদ্ধিবৃত্তিক ও কৌশলী লড়াইকে ফেসবুকীয় আবেগ দিয়ে মাপা ঠিক নয়।
বাংলাদেশে আজও খিলাফত কায়েম হয়নি। আপনারা ইসলামিক রাষ্ট্রের দাবিদার হয়েও শরীয়াহ প্রতিষ্ঠায় কোনও কার্যকর উদ্যোগ নিচ্ছেন না। বরং দ্বিতীয়বারের মতো ‘ফেলিওর’ (ব্যর্থ) মুসলিম রাষ্ট্রে পরিণত হয়েছেন।
আর হ্যাঁ, জুলাই মাসের ছাত্র আন্দোলন—যা ছাত্রদের অধিকার আদায়ের আন্দোলন ছিল—তাকে ইসলামি আন্দোলন বানিয়ে বাহাদুরি দেখানো হাস্যকর। বাস্তবতা ও কল্পনার ফারাক বুঝতে শিখুন।
আমরা ভারতে সংখ্যালঘু, আমাদের চারপাশে শত্রুতা, কটাক্ষ, পক্ষপাত চললেও আমরা ধৈর্য ও বিচক্ষণতার সঙ্গে পথ চলি। আমাদের প্রতি ‘অভিযোগ’ নয়, বরং আমাদের জন্য দোয়া করুন। আমরা জানি আমাদের কিভাবে চলতে হবে।
আল্লাহ আমাদের রক্ষা করুন, হিদায়াত দান করুন—আমিন।